ইনসাইডার এক্সক্লুসিভ

ড. মুহাম্মদ ইউনূস : মুখোশের আড়ালে আসল মানুষটি!

প্রকাশ: ০৪:১৬ পিএম, ০২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩


Thumbnail ড. মুহাম্মদ ইউনূস : মুখোশের আড়ালে আসল মানুষটি!

বাংলাদেশের প্রথম নোবেল জয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ১৯৭৬ সালে তিনি গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন। যার মাধ্যমে তিনি এবং গ্রামীণ ব্যাংক যৌথভাবে ২০০৬ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেন। নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তির পর থেকেই মুহম্মদ ইউনূস বিভিন্ন বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। ২০০৬ সালে তিনি নিজে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন। ওয়ান ইলেভেন আনার পেছনেও তার একটি ভূমিকা আছে বলে অনেকে মনে করেন। কিন্তু বর্তমানে তিনি একাধিক ফৌজদারী আইনী জটিলতায় পড়েছেন। তার বিরুদ্ধে শ্রম আইন লঙ্ঘন ও দুর্নীতির বেশ কয়েকটি মামলা চলমান রয়েছে। নিজে দুর্নীতির দায় থেকে বাঁচার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে বিবৃতি সংগ্রহ করেছেন। ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে ইতিমধ্যে বিশ্বের নোবেল বিজয়ী বিভিন্ন ব্যক্তি এবং নেতারা তার বিচার কার্যক্রম স্থগিত করার জন্য বিবৃতি দিয়েছেন। তার বিচার স্থগিতের জন্য প্রভাবশালী অন্তর্জাতিক মহল থেকে সরকারের উপর চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। কিন্তু বিশ্বের সেই খ্যাতিমান ব্যক্তি এবং নেতারা জানেন কি মুখোশের অন্তরালের মানুষটিকে? 

অন্তরালের অন্তর্নিহিত বার্তা  

ড. মুহাম্মদ ইউনূস। দেশের সমস্যা নিয়ে তিনি নীরব। দেশের কোন সংকটে, উৎসবে তিনি থাকেন না। ব্যক্তি স্বার্থে বিদেশে তিনি সরব। ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমে দারিদ্রকে জাদুঘরে পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন। দারিদ্র জাদুঘরে যায়নি বটে, তবে তিনি অর্থ, বিত্ত-বৈভবের জাদু দেখিয়েছেন। এখন ‘সামাজিক ব্যবসার’ আওয়াজ তুলে বিশ্বে বক্তৃতা দিচ্ছেন। সামাজিক ব্যবসা প্রবর্তন হোক না হোক তার বিত্তের প্রসার ঘটেছে। এখন শিক্ষক থেকে তিনি হয়ে উঠেছেন বিলিয়নিয়ার। কিন্তু তার এই বিত্ত বেড়ে ওঠেছে গরীবের সম্পদ লুটে; সরকারকে ঠকিয়ে; রাষ্ট্রীয় সম্পদ আত্মসাৎ করে। 

ড. মুহাম্মদ ইউনূস। পেশাগত জীবনে অর্থনীতিবিদ হলেও নোবেল বানিয়ে নিয়েছেন শান্তিতে। অর্থনীতিবিদ কিভাবে শান্তিতে নোবেল পেলেন সেটাও ভাবার বিষয়। নোবেল বিজয়ী হিসেবে বিদেশে বক্তৃতা করে পান কোটি কোটি টাকা। কিন্তু প্রশ্ন ওঠেছে, দেশ এবং জাতির জন্য তিনি কি করেছেন? জোবরা গ্রামে গবেষণা শুরু করেছিলেন ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রম নিয়ে। এক সময় এই দরিদ্র, হতদরিদ্র মানুষদের স্বাবলম্বী করে তোলার কথা বলে দারস্থ হয়েছিলেন বাংলাদেশ সরকারের কাছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রস্তাবেই এরশাদ সরকার গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করে। ড. ইউনূস সেখানে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের চাকরি নেন। ১৯৮৩ সালে এটি একটি বৈধ এবং স্বতন্ত্র ব্যাংক হিসেবে যাত্রা শুরু করে। সরকার গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করে একটি আইনের মাধ্যমে এবং সেখানে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় ড.  মুহাম্মদ ইউনূসকে। 

১৯৮৩ সালের ৪ সেপ্টেম্বর সরকার গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশ নামে একটি অধ্যাদেশ (অধ্যাদেশ নম্বর-৪৬) জারি করে। সে সময়ে গ্রামীণ ব্যাংক শুরু হয় মাত্র তিন কোটি টাকা মূলধন দিয়ে। এর মধ্যে বেশিরভাগ টাকা অর্থাৎ ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা ছিল সরকারের এবং ১ কোটি ২০ লাখ টাকা ছিল ঋণ গ্রহীতাদের। অর্থাৎ গ্রামীণ ব্যাংকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ব্যক্তিগত কোনো টাকা ছিল না। অথচ গ্রামীণ ব্যাংককে ব্যবহার করেই ড. ইউনূস পেয়েছেন সবকিছু। কাগজে কলমে গ্রামীণ ব্যাংকের মালিক সরকার এবং ঋণ গ্রহীতা জনগণ। কিন্তু ‘অসাধারণ’ মেধায় রাষ্ট্র ও জনগণের অর্থ ড. ইউনূস পুরে ফেলেন তার পকেটে। গ্রামীণ ব্যাংকের টাকায় ড. মুহাম্মদ ইউনূস গড়ে তুলেছেন তার নিয়ন্ত্রণাধীন ২৮টি প্রতিষ্ঠান এবং গ্রামীণ ব্যাংক তথা সরকারের টাকা আত্মসাৎ করে তিনি এখন হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। 

গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠার পর থেকেই দাতা গোষ্ঠী অনুদান এবং ঋণ দেয় গ্রামীণ ব্যাংককে। অনুদানের সব অর্থ যদি রাষ্ট্র এবং জনগণের কাছে যায় তাহলে ড. ইউনূসের লাভ কি? তাই দাতাদের অনুদানের অর্থ দিয়ে গঠন করলেন সোশাল ভেনচার ক্যাপিটাল ফান্ড (এসভিসিএফ)। ১৯৯২ সালের ৭ অক্টোরব ঐ ফান্ড দিয়ে আলাদা একটি প্রতিষ্ঠান গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ১৯৯৪ সালে ‘গ্রামীণ ফান্ড’ নামের একটি লিমিটেড কোম্পানী গঠন করা হয়। তাতে ঐ ফান্ডের ৪৯ দশমিক ১০ কোটি টাকা স্থানান্তর করা হয়। গ্রামীণ ব্যাংক দেখিয়ে বিদেশ থেকে টাকা এনে তা সরিয়ে ফেলার চেষ্টা ছিলো শুরু থেকেই। গ্রামীণ ব্যাংক সরকারি প্রতিষ্ঠান হলেও ড. ইউনূস- এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে সব সিদ্ধান্ত একাই নিতেন। পরিচালনা পর্ষদ এমনভাবে গঠন করা হয়েছিল, যাতে কেউ ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে কথা না বলেন। ড. ইউনূস এই সুযোগটি কাজে লাগান। ১৯৯৩ সালের ১৯ ডিসেম্বর গ্রামীণ ব্যাংকের ৩৪ তম বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত হয়। ঐ সভায় সিদ্ধান্ত হয় দাতা গোষ্ঠীর অনুদানের অর্থ এবং ঋণ দিয়ে সোশাল এডভান্সমেন্ট ফান্ড (এসএএফ) গঠন করা হয়। কিন্তু দাতারা গ্রামীণ ব্যাংক থেকে এভাবে অর্থ সরিয়ে ফেলার আপত্তি জানায়। দাতারা সাফ সাজিয়ে দেন, এভাবে অর্থ স্থানান্তর জালিয়াতি। এবার ভিন্ন কৌশল গ্রহণ করেন ড. ইউনূস। আনুষ্ঠানিক চিঠি দিয়ে তিনি জানান এটি একটি ভুল সিদ্ধান্ত। ভবিষ্যতে এ ব্যাপারে সতর্ক থাকবেন বলে অঙ্গীকার করেন তিনি। পরে ২৫ এপ্রিল, ১৯৯৬ সালে তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের বোর্ড সভায় ‘গ্রামীণ কল্যাণ’ গঠনের প্রস্তাব আনেন। 

প্রস্তাবে বলা হয়, গ্রামীণ ব্যাংকের সদস্য ও কর্মীদের কল্যাণে ‘কোম্পানী আইন ১৯৯৪’ এর আওতায় ‘গ্রামীণ কল্যাণ’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান গঠন করা হলো। গ্রামীণ ব্যাংকের বোর্ড সভা এই প্রস্তাব অনুমোদন করে। এটি গ্রামীণ ব্যাংকেরই অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। ‘গ্রামীণ কল্যাণ’ যে গ্রামীণ ব্যাংকেরই শাখা প্রতিষ্ঠান, তা আরও স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় এর মূলধন গঠন প্রক্রিয়ায়। গ্রামীণ কল্যাণ-এ গ্রামীণ ব্যাংকের সোশাল এডভ্যান্সমেন্ট ফান্ড (এসএএফ) থেকে ৬৯ কোটি টাকা প্রদান করা হয়। গ্রামীণ কল্যাণের মেমোরেন্ডাম অব আর্টিকেলেও গ্রামীণ ব্যাংকের সাথে এর সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ মেলে। মেমোরেন্ডাম আব আর্টিকেল অনুযায়ী গ্রামীণ কল্যাণের ৯ সদস্যের পরিচালনা পরিষদের ২ জন সদস্য হবেন গ্রামীণ ব্যাংকের মনোনীত প্রতিনিধি। এছাড়াও গ্রামীণ কল্যাণের চেয়ারম্যান হবেন গ্রামীণ ব্যাংকের মনোনীত প্রতিনিধি। গ্রামীণ ব্যাংকের মনোনীত প্রতিনিধি হিসেবে ড. ইউনূস গ্রামীণ কল্যাণের চেয়ারম্যান হন। এরপরে ‘গ্রামীণ কল্যাণ’ হয়ে ওঠে ড. ইউনূসের ‘সোনার ডিম পাঁড়া রাঁজহাস’। গ্রামীণ কল্যাণের মাধ্যমে তিনি গড়ে তোলেন একাধিক প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানগুলো হলো:-

১.গ্রামীণ টেলিকম লি: ২. গ্রামীণ ডিস্ট্রিবিউশন লি: ৩. গ্রামীণ শিক্ষা ৪. গ্রামীণ নিটওয়্যার লি: ৫. গ্রামীণ ব্যবস্থা বিকাশ ৬. গ্রামীণ আইটি পার্ক ৭. গ্রামীণ ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট ৮. গ্রামীণ সলিউশন লি: ৯. গ্রামীণ ডানোন ফুডস: লি: ১০. গ্রামীণ হেলথ কেয়ার সার্ভিসেস লি: ১১. গ্রামীণ স্টার এডুকেশন লি: ১২. গ্রামীণ ফেব্রিক্স এ্যান্ড ফ্যাশন লি: ১৩. গ্রামীণ কৃষি ফাউন্ডেশন। 

অন্যদিকে, গ্রামীণ কল্যাণের আদলে প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ফান্ডের মাধ্যমে গঠন করা হয় আরো কিছু প্রতিষ্ঠন। এগুলো হল:-

১.গ্রামীণ ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লি: ২. গ্রামীণ সল্যুশন লি: ৩. গ্রামীণ উদ্যোগ ৪. গ্রামীণ আইটেক লি: ৫. গ্রামীণ সাইবারনেট লি: ৬. গ্রামীণ নিটওয়্যার লি: ৭. গ্রামীণ আইটি পার্ক ৮. টিউলিপ ডেইরী এ্যান্ড প্রোডাক্ট লি: ৯. গ্লোব কিডস ডিজিটাল লি: ১০. গ্রামীণ বাইটেক লি: ১১. গ্রামীণ সাইবার নেট লি: ১২. গ্রামীণ স্টার এডুকেশন লি: ১২. রফিক আটোভ্যান মানুফ্যাকটার লি: ১৩. গ্রামীণ ইনফরমেশন হাইওয়ে লি: ১৪. গ্রামীণ ব্যবস্থা সেবা লি: ১৫. গ্রামীণ সামগ্রী।

মজার ব্যাপার হলো গ্রামীণ ব্যাংকের অর্থে এবং বোর্ড সভার সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ‘গ্রামীণ কল্যাণ’ এবং ‘গ্রামীণ ফান্ড’ গঠিত হয়। এই দুটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে যে প্রতিষ্ঠানগুলো গঠিত হয়েছে- তা সবই আইনত গ্রামীণ ব্যাংকের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। কিন্তু ২০২০ সাল পর্যন্ত গ্রামীণ ফান্ড এবং গ্রামীণ কল্যাণের পরিচালনা পর্ষদে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিনিধি থাকলেও ২০২১ সাল থেকে এই প্রতিষ্ঠান দুটিতে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিনিধি নেই। গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ দু’টি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান হবেন গ্রামীণ ব্যাংকের মনোনীত ব্যক্তি। কিন্তু ড. মুহাম্মদ ইউনূস এখনও গ্রামীণ কল্যাণ এবং গ্রামীণ ফান্ডের চেয়ারম্যান পদে বহাল আছেন। প্রশ্ন হলো; কোন কর্তৃত্ব বলে তিনি এখনও চেয়ারম্যান? এক্ষেত্রে গ্রামীণ ব্যাংকের নীরবতাও এক রহস্য। ড. ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব থেকে অবসরে গেলেও ব্যাংকটি নিয়ন্ত্রণ করছে তার অনুগতরাই। একারণেই তাদের নীরবতা। গ্রামীণ ব্যাংক কর্তৃপক্ষের রহস্যময় আচরণের কারণেই গ্রামীণ ব্যাংকের অর্থে প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকানা বঞ্চিত রাষ্ট্র ও জনগণ। রাষ্ট্রের অর্থ দিয়ে ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার এ এক অদ্ভুদ জালিয়াতি। রাষ্ট্রীয় সম্পদের টাকা দিয়ে ব্যক্তিগত কোম্পানী গঠন রাষ্ট্রের সাথে ভয়ংকর প্রতারণা।

লাভে গ্রামীণ টেলিকম এবং বাকি সব লোকসানী প্রতিষ্ঠান কেন? 

‘গ্রামীণ কল্যাণ’ এবং ‘গ্রামীণ ফান্ড’র মাধ্যমে গঠিত ২৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একমাত্র গ্রামীণ টেলিকম ছাড়া আর সব প্রতিষ্ঠানই লোকসানী। গ্রামীণ টেলিকম দেশের সর্ববৃহৎ মোবাইল নেটওয়ার্ক ‘গ্রামীণ ফোন’র ৩৪ দশমিক দুই শতাংশ শেয়ারের মালিক। ২০২২ সালে গ্রামীণ ফোন ট্যাক্স, ভ্যাট দেয়ার পর নীট মুনাফা করেছে তিন হাজার নয় কোটি ষোল লাখ টাকা। অর্থাৎ গ্রামীণ ফোন থেকে গ্রামীণ টেলিকম প্রতিবছর নীট মুনাফা পায় এক হাজার কোটি টাকার বেশি। গ্রামীণ ফোনের লভ্যাংশ নয়-ছয় করা ছাড়া গ্রামীণ টেলিকমের আর কোন কাজ নেই। এই টাকা দিয়ে ড. ইউনূসের ২৮টি হায় হায় কোম্পানী প্রতিপালন করা হয়। গ্রামীণ টেলিকমের লাভের টাকার একটি অংশ যায় গ্রামীণ কল্যাণে। গ্রামীণ কল্যাণের মাধ্যমে বাকি নাম সর্বস্ব প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাঁচিয়ে রাখা হয়। এই সব প্রতিষ্ঠানই লোকসানী প্রতিষ্ঠান। প্রশ্ন হলো; লোকসান দিয়ে বছরের পর বছর এই প্রতিষ্ঠানগুলো চলবে কেন? একটু লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, গ্রামীণ ব্যাংক থেকে টাকা সরিয়ে গ্রামীণ কল্যাণের মাধ্যমে যে প্রতিষ্ঠানগুলো গঠন করা হয়েছে; তার সবগুলোর চেয়ারম্যান ড. ইউনূস। আর এই প্রতিষ্ঠানগুলোর এমডি পদে নিয়োগ দেয়া হয় ড. ইউনূসের একান্ত অনুগত এবং বিশ্বস্তদের। এরা গাড়ী পান, মোটা অংকের বেতন পান এবং ড. ইউনূসের কথা অনুযায়ী কাজ করেন। এটা এক ধরনের উৎকোচ। এই প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিষ্ঠার এক বড় কার্যক্রম হলো গ্রামীণ টেলিকমের লাভের টাকা আত্মসাৎ করা এবং আয়কর ফাঁকি। 

এই প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমেই ড. ইউনূস আসলে অর্থপাচার করেন। গ্রামীণ টেলিকমের টাকাকে হাতবদল করে করে অর্থ পাচারের পথ তৈরী করা হয়। গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানি আইন ১৯৯৪- এর ধারা ২৮ এবং ২৯ এর বিধান লঙ্ঘন করে গ্রামীণ ফোন লিমিটেড থেকে গ্রামীণ কল্যাণকে তার লভ্যাংশ আয়ের ৪২.৬% বিতরণ করে আসছে। যদিও ‘গ্রামীণ কল্যাণ’ গ্রামীণ ফোন লিমিটেডের শেয়ারহোল্ডার নয়। আইন অনুযায়ী, গ্রামীণ টেলিকমের সমগ্র লভ্যাংশ আয়কে এর আয় হিসেবে ভোগ করতে হবে এবং সেই অনুযায়ী, সংশ্লিষ্ট আর্থিক বছরের জন্য প্রযোজ্য করপোরেট হারে কর দিতে হবে। কিন্তু তাদের নিরীক্ষিত হিসাব পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, তারা গ্রামীণ টেলিকম থেকে গ্রামীণ কল্যাণকে তাদের লভ্যাংশ আয়ের প্রায় অর্ধেক প্রদান করেছে শুধুমাত্র অগ্রিম আয়কর (এআইটি) ১০-২০% হারে। অথচ আইন অনুযায়ী তাদের জন্য প্রযোজ্য করপোরেট করের হার ছিল ৩৫% থেকে ৩৭.৫% পর্যন্ত।

এই করপোরেট রেট এবং ডিভিডেন্ট ট্যাক্সের পার্থক্য কর ফাঁকি। কারণ গ্রামীণ কল্যাণ প্রচলিত আইন অনুযায়ী কোনভাবেই গ্রামীণ টেলিকমের লভ্যাংশ আয়ের অধিকারী নয়। গ্রামীণ টেলিকম শুরু থেকে যে সকল কর ফাঁকি দিয়েছে সেগুলো যোগ করলে- এর পরিমান দাঁড়ায় প্রায় এক হাজার কোটি টাকা। এই কর ফাঁকির হিসাব শুধুমাত্র গ্রামীণ টেলিকমের। ড. ইউনূসের নিয়ন্ত্রিত অন্যান্য কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠান এবং তার ব্যক্তিগত আয়করের ক্ষেত্রেও ব্যাপকভাবে কর ফাাঁকির ঘটনা অনেকটা স্বাভাবিক নিয়মের মতোই বহু বছর ধরে ঘটেছে। ড. ইউনূস নিয়ন্ত্রিত অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোর কর ফাঁকির ঘটনাগুলো হিসাব করলে এই পরিমাণ দাঁড়াবে বিশাল অংকের।

গ্রামীণ টেলিকমের ২৬ বছরের কার্যক্রম চলাকালীন প্রায় এক হাজার কোটি টাকার কর ফাঁকি দেওয়া হয়। এই দীর্ঘ সময়ে ড. ইউনূস প্রতিবছর শতকরা ১৫ থেকে ২৫ ভাগ পর্যন্ত কর ফাঁকি দিয়ে আসছেন। ১৯৯৭ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর গ্রামীণ টেলিকমে ড. ইউনূস ২৫% কর ফাঁকি দিয়েছেন। ওই সময়ে কর ছিল ৩৫%, প্রদান করেছিলেন মাত্র ১০%। ২০০৬ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত এই প্রতিষ্ঠানে ড. ইউনূস কর ফাঁকি দিয়েছেন বছরে ২০%। ওই সময়ে কর ছিল ৩৫%, প্রদান করেছিলেন মাত্র ১৫%। ২০০৯ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ড. ইউনূস নিয়ন্ত্রিত গ্রামীণ টেলিকমে প্রতিবছর ১৫% কর ফাঁকি দেওয়া হয়েছে। ওই সময়ের মধ্যে কর ছিল ৩৫%, আর প্রদান করেছিলেন মাত্র ২০%। 

এটি লক্ষণীয়, ড. ইউনূস তার কর ফাঁকির বিষয়গুলো ধামাচাপা দিতে দেশের আদালতে বেশ কিছু মামলা ও রিট পিটিশন দায়ের করেন। এ সকল মামলা ও রিটের উদ্দেশ্য হচ্ছে কর ফাঁকি সংক্রান্ত বিষয়ে ড. ইউনূসকে যেন আইনের মুখোমুখি হতে না হয়। ড. ইউনূসের কর সংক্রান্ত প্রতিটি ক্ষেত্রেই তার কর ফাঁকির বিষয়গুলো দালিলিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। ড. ইউনূসের কর ফাঁকির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রীয় ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের দ্বারা পরিচালিত তদন্তে এটি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, ড. ইউনূস নিজে এবং তার নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠানগুলো তার নির্দেশনাতেই কর ফাঁকির অপরাধে জড়িত। সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে সম্প্রতি তিনি ১২ কোটির টাকার বেশি দান কর পরিশোধ করেন। 

অস্বচ্ছ ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট, জালিয়াতি এবং অর্থপাচার

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট রয়েছে তিনটি। এই ব্যাংক অ্যাকাউন্ট তিনটি হলো যথাক্রমে:- ১. সাউথ ইস্ট ব্যাংক, (অ্যাকাউন্ট নাম্বার-০২১২১০০০২০০৬১), ২. স্ট্যান্ডার্ট চার্টড ব্যাংক, (অ্যাকাউন্ট নাম্বার- ১৮১২১২৭৪৭০১) এবং ৩. রুপালি ব্যাংক, (অ্যাকাউন্ট নাম্বার-০৪৮৯০১০০০৮০৯৬)। এই তিনটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মধ্যে ২০০০ সালে খোলা সাউথ ইস্ট ব্যাংকের অ্যাকাউন্টটি (অ্যাকাউন্ট নাম্বার-০২১২১০০০২০০৬১) তার মূল ব্যক্তিগত ব্যাংক অ্যাকাউন্ট হিসেবেই প্রতীয়মান হয়েছে। এই অ্যাকাউন্টে ২০০০ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ১শ’ ১৮ কোটি ২৭ লক্ষ ৭৬ হাজার ৩শ’ ৬৮ টাকা রেমিটেন্স এসেছে। এই রেমিটেন্সের বেশিরভাগ ৪৭ কোটি ৮৯ লাখ ৯৬ হাজার ৬শ’ ৫২ টাকা এসেছে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে। সেই সময়েই একটি রাজনৈতিক দল গঠনেরও প্রয়াস করেছিলেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তাহলে কি রাজনৈতিক দল গঠনের জন্য বিদেশি বন্ধুরা ড. ইউনূসকে টাকা দিয়েছিল? বিদেশ থেকে টাকা এনে রাজনৈতিক দল করতে চেয়েছিলেন ইউনূস?  

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ট্যাক্স ফাইল বিশ্লেষণে ওঠে এসেছে, ২০০৩ সালের পরে নোবেল বিজয়ীর তকমাধারী ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার ট্যাক্স ফাইলে ২০০৫-০৬ কর বছরে তিনি সর্বমোট ৯৭ কোটি ৪ লাখ ৬১ হাজার ১৯১ টাকা রেমিটেন্স প্রাপ্তির কথা উল্লেখ করেছেন। কিন্তু ওই সময়ে তার ব্যক্তিগত সাউথ ইস্ট ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে রেমিটেন্স প্রাপ্তির পরিমাণ ১১৫ কোটি ৯৮ লাখ ৯৬ হাজার ২৪ টাকা। অর্থাৎ ওই সময়ে তিনি ১৮ কোটি ৯৪ লাখ ৩৪ হাজার ৮শ’ ৩৫ টাকার রেমিটেন্স প্রাপ্তির তথ্য সরকারকে কর ফাঁকি দেওয়ার লক্ষ্যে তার ব্যক্তিগত ট্যাক্স ফাইলে গোপন করেছেন। এটি স্পষ্ট অর্থপাচারের দোষে দুষ্ট। 

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টের ডেবিট অ্যানালাইসিসে ওঠে এসেছে, অপ্রদর্শিত অর্থ সমূহের মূল অংশ তিনি সাউথ ইস্ট ব্যাংকের অন্য দু’টি অ্যাকাউন্ট, সাউথ ইস্ট ব্যাংকের ১৫ নম্বর ব্রাঞ্চের ট্র্যাভেল ইন্টারন্যাশনাল লিঃ নামের (অ্যাকাউন্ট নম্বর- ৭৩৩০০০০০৩৩৩৯) ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ১১ কোটি ১৪ লাখ ৩১ হাজার ৭শ’ ৬৭ টাকা এবং ০০৩৫ নম্বর ব্রাঞ্চের (অ্যাকাউন্ট নম্বর-৯০৩০৩১৬০৯১০) ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ২ কোটি ৫২ লাখ টাকা স্থানান্তর করেছেন। অর্থপাচারের জন্যই এভাবে টাকা এক ব্যাংক থেকে আরেক ব্যাংকে স্থানান্তর করা হয়। 

সরকারকে কর ফাঁকি দেওয়ার লক্ষ্যে বিভিন্ন কর বছরে তিনি তার ব্যক্তিগত ট্যাক্স ফাইলে নিজস্ব সাউথ ইস্ট ব্যাংকে প্রাপ্ত বিপুল পরিমাণ রেমিটেন্সের তথ্য গোপন করেছেন। ২০০৭-০৮ অর্থবছরে তিনি রেমিটেন্স প্রাপ্ত হয়েছেন ১৫ কেটি ১১ লাখ ৩১ হাজার ৪৭ টাকা। কিন্তু তিনি তার ট্যাক্স ফাইলে প্রদর্শন করেছেন ৯ কোটি ১৪ লাখ ৫৮ হাজার ৪শ’ ৮৯ টাকা। ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট এবং ট্যাক্স বা কর ফাইলের সাথে এখানে পার্থক্য রয়েছে ৫ কোটি ৯৬ লাখ ৭২ হাজার ৫শ’ ৫৯ টাকা। ২০০৮-০৯ কর বছরে তিনি রেমিটেন্স প্রাপ্ত হয়েছেন ১১ কোটি ৮৩ লাখ ১৪ হাজার ৪শ’ ১০ টাকা। অথচ তিনি তার ট্যাক্স ফাইলে উল্লেখ করেছেন ১০ কোটি ৪০ লাখ ২৪ হাজার ৮শ’ ৩২ টাকা। এখানে তিনি ১ কোটি ৪২ লাখ ৮৯ হাজার ৫শ’ ৭৮ টাকার তথ্য গোপন করেছেন। ২০০৯-১০ কর বছরে তিনি রেমিটেন্স প্রাপ্ত হয়েছেন ২০ কোটি ৯৫ লাখ ৫১ হাজার ১শ’ ৯৫ টাকা। তিনি তার ট্যাক্স ফাইলে উল্লেখ করেছেন ১৮ কোটি ৯৯ লাখ ২৮ হাজার ৭শ’ ৩১ টাকা। এখানে তিনি ১ কোটি ৯৬ লাখ ২২ হাজার ৪শ’ ৬৫ টাকার তথ্য গোপন করেছেন। ২০১০-১১ কর বছরে তিনি রেমিটেন্স প্রাপ্ত হয়েছেন ৮ কোটি ১৮ লাখ ৬৫ হাজার ২শ’ ৪ টাকা। অথচ তার ট্যাক্স ফাইলে উল্লেখ করেছেন ৬ কোটি ৬০ লাখ ৪৪ হাজার ৯২ টাকা। এখানে তিনি ১ কোটি ৫৮ লাখ ২১ হাজার ১শ’ ১২ টাকার তথ্য গোপন করেছেন। ২০১১-১২ কর বছরে তিনি রেমিটেন্স প্রাপ্ত হয়েছেন ৫ কোটি ৯১ লাখ ৫ হাজার ৫শ’ ৮৬ টাকা। আর ট্যাক্স ফাইলে উল্লেখ করেছেন ৪ কোটি ৬৫ লাখ ৩৬ হাজার ৫শ’ ৭২ টাকা। এখানে তিনি ১ কোটি ২৫ লাখ ৬৯ হাজার ১৪ টাকার তথ্য গোপন করেছেন। ২০১২-১৩ কর বছরে তিনি রেমিটেন্স প্রাপ্ত হয়েছেন ৮ কোটি ৩৭ লাখ ২ হাজার ৭৭ টাকা। তিনি তার ট্যাক্স ফাইলে উল্লেখ করেছেন ৬ কোটি ৫০ লাখ ৬৬ হাজার ৬শ’ ৬৫ টাকা। এখানে তিনি ১ কোটি ৮৬ লাখ ৩৫ হাজার ৪শ’ ১২ টাকার তথ্য গোপন করেছেন। ২০১৩-১৪ কর বছরে তিনি রেমিটেন্স প্রাপ্ত হয়েছেন ১০ কোটি ৫৫ লাখ ৪২ হাজার ৩শ’ ৩৬ টাকা। তিনি তার ট্যাক্স ফাইলে উল্লেখ করেছেন ৭ কোটি ৯৮ লাখ ৫৯ হাজার ৫শ’ ৪৪ টাকা। এখানে তিনি ২ কোটি ৫৬ লাখ ৮২ হাজার ৭শ’ ৯৩ টাকার তথ্য গোপন করেছেন। ২০১৪-১৫ কর বছরে তিনি রেমিটেন্স প্রাপ্ত হয়েছেন ৭ কোটি ১৪ লাখ ৫৭ হাজার ২শ’ ৭ টাকা। অথচ ট্যাক্স ফাইলে উল্লেখ করেছেন ৫ কোটি ১৬ লাখ ৬১ হাজার ৫শ’ ৯৮ টাকা। এখানেও তিনি ১ কোটি ৯৭ লাখ ৯৫ হাজার ৬শ’ ৯ টাকার তথ্য গোপন করেছেন। 

২০০০ সালের পর থেকে এমন প্রতিটি কর বছরে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিদেশ থেকে রেমিটেন্স প্রাপ্ত হয়ে কোটি কোটি টাকার তথ্য গোপন করে সরকারের কর ফাঁকি দিয়েছেন। ২০০৫-০৬ কর বছর থেকে শুরু করে ২০২২-২৩ কর বছর পর্যন্ত সরকারকে কর ফাঁকি দেওয়ার লক্ষ্যে তিনি ১৮ কোটি ৯৪ লাখ ৩৪ হাজার ৮শ’ ৩৫ টাকা রেমিটেন্সের তথ্য গোপন করেছেন। 

মজার ব্যাপার হলো ২০২০-২১ অর্থবছরে ড. ইউনূস এর ব্যক্তিগত একাউন্ট থেকে প্রায় সব টাকা তুলে ‘ইউনূস ট্রাস্ট’ গঠন করেন। ট্রাস্টের টাকা আয়কর মুক্ত। সে হিসেব থেকেই এমন কান্ড করেন তিনি। কিন্তু এরকম ফান্ডের জন্য ১৫ শতাংশ কর দিতে হয়, এটি তিনি দেননি। এই ট্যাক্স ফাঁকির কারণেই তার বিরুদ্ধে মামলা হয়। এই মামলায় তিনি হেরে যান।

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ব্যাংক অ্যাকাউন্টগুলো বিশ্লেষণে ওঠে এসেছে, তার সব ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বিভিন্ন সময়ে বিদেশ থেকে কোটি কোটি টাকা রেমিটেন্স এসেছে। নির্বাচন মৌসুমগুলোতে তার ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে এই রেমিটেন্সের টাকার প্রবাহ সবচেয়ে বেশি। কিন্তু প্রশ্ন ওঠেছে, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ব্যক্তিগত ব্যাংক অ্যাকাউন্টগুলোতে নির্বাচনী মৌসুমে বিদেশ থেকে বেশি অর্থ আসার উদ্দেশ্য কি? কোন বিশেষ রাজনৈতিক দলের জন্য কি তিনি টাকা এনেছেন?

ড. ইউনূস ট্যাক্স ফাঁকি দেয়ার জন্য যে ট্রাস্ট গঠন করেন- তার একটি মাত্র কার্যক্রম দেখা যায়। তা হলো ড. ইউনূস এবং তার পরিবারের সব ব্যয় বহন করা হয় এই ট্রাস্টের টাকায়। এটাও এক ধরনের জালিয়াতি। এই ট্রাস্ট যে ধরনের সমাজ সেবামূলক কার্যক্রম করবে বলে আঙ্গীকার করা হয়েছে তার কিছুই করে না। তাহলে কি কর ফাঁকি দিয়ে বিলাসী জীবন যাপনের জন্যই এই ট্রাস্ট? একজন নোবেল জয়ী ব্যক্তি, কিভাবে রাষ্ট্র এবং জনগণের সংঙ্গে এ রকম প্রতারণা করতে পারেন? রাষ্ট্রের সম্পদ দিয়ে বানাতে পারেন একের পর এক ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠান। আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন ব্যক্তি কিভাবে আয়কর ফাঁকি দেয়ার জন্য করতে পারেন নানা ছল-চাতুরী ও প্রতারণা? এই প্রশ্নের কি উত্তর দেবেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস?

মুখোশের আড়ালে এই মানুষটি আসলে আইনের প্রতি অশ্রদ্ধাশীল একজন দুর্নীতিবাজ। ড. ইউনূস যদি মনে করেন, তিনি নির্দোষ। তাহলে তার উচিত মামলার মুখোমুখি হয়ে আত্মপক্ষ সমর্থন করে নিজের বক্তব্য পেশ করা। বিতর্কের অবসান করা। কিন্তু তা না করে তিনি মামলা প্রত্যাহারের জন্য বিপুল অর্থ  খরচ করছেন। প্রশ্ন হলো- তার মত গুণী ব্যক্তির আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে বিবৃতি সংগ্রহের প্রয়োজন কি? কেন এই তদবির?


ড. মুহাম্মদ ইউনূস   মুখোশ   অন্তরাল   অন্তর্নিহিত   বার্তা  


মন্তব্য করুন


ইনসাইডার এক্সক্লুসিভ

সরকার পতনের ‘ব্লু প্রিন্ট’: বিমানবন্দর ও বিটিভি দখল করতে চেয়েছিল সন্ত্রাসীরা

প্রকাশ: ০৮:০০ পিএম, ২৪ জুলাই, ২০২৪


Thumbnail

কোটা সংস্কার আন্দোলনের আড়ালে আসলে সরকার পতনের একটি আন্দোলন পরিচালিত হয়েছিল এবং এই আন্দোলন দীর্ঘ পাঁচ মাস ধরে পরিকল্পিত হয়েছিল। সরকার পতনের জন্য সারা দেশে তাণ্ডব সৃষ্টি, নাশকতা এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা দখল করার নীলনকশা বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হয়েছিল। আর এ কারণে ঢাকায় প্রায় পাঁচ লাখ ছাত্রশিবির, ছাত্রদল এবং পেশাদার সন্ত্রাসীদেরকে নিয়ে আসা হয়েছিল।

একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে যে, মূল পরিকল্পনা কোটা সংস্কার আন্দোলনকে বেগবান করে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে সরকার পতনের আন্দোলনে ধাবিত করাই ছিল বর্তমান নাশকতার লক্ষ্য। আর এই নাশকতার জন্য তারা তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট দখল করার পরিকল্পনা করেছিল। এর মধ্যে প্রথমটি ছিল বিমানবন্দর। বিমানবন্দর দখল করে সমস্ত আন্তর্জাতিক বিমান উঠানামা বন্ধ করে সরকারেক জিম্মি করতে চেয়েছিল। আর এ কারণেই ঢাকার উত্তরা এলাকায় ব্যাপক সন্ত্রাসী এবং ছাত্রশিবিরের ক্যাডারদেরকে জড়ো করা হয়েছিল। সেখানে অন্তত ২০ থেকে ৩০ হাজার ছাত্রশিবির এবং ছাত্রদলের ক্যাডার ঢাকার বাইরে থেকে এসেছিল বলে একাধিক গোয়েন্দা সূত্র নিশ্চিত করেছে। 

সহিংসতার দ্বিতীয় টার্গেট ছিল সংসদ ভবন এবং গণভবনে আক্রমণ করা। এ কারণেই মোহাম্মদপুরের বসিলা এলাকায় অন্তত ২০ হাজার ভাড়াটে লোককে আনা হয়েছিল এবং সঙ্গে ছিল পেশাদার ভাড়াটে সন্ত্রাসী। বসিলা এলাকায় যারা সহিংসতার দায়িত্ব গ্রহণ করেছিল তাদেরকে রাখা হয়েছিল কেরাণিগঞ্জে নদীর ওই পাড়ে। লঞ্চ, টলার এবং নৌকার মাধ্যমে তারা এপারে এসে আক্রমণ করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকরী বাহিনীর দৃঢ়তায় তারা সেখান থেকে বেশি দূর এগোতে পারেনি।

আর এই পরিকল্পনারই আরেকটি বাস্তবায়ন করার কথা ছিল ধানমন্ডির সাইন্স ল্যাবরেটরি থেকে। সেখান থেকে ছাত্রদল এবং ছাত্রশিবিরের ক্যাডাররা ২৭ নম্বর পর্যন্ত চলে এসেছিল বটে। কিন্তু ২৭ নম্বর পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিরোধের কারণে তারা আর এগোতে পারেনি। আর এ কারণে মোহাম্মদপুর এবং ধানমন্ডির এলাকায় ব্যাপক সহিংসতার ঘটনা ঘটে।

তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট ছিল বিটিভি দখল করা। আর এ কারণেই রামপুরাতে বিপুল সংখ্যক পেশাদার সন্ত্রাসী, শিক্ষিত জঙ্গিদেরকে জড়ো করা হয়েছিল। বিটিভির ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, যখন পুলিশ সন্ত্রাসীদের সঙ্গে লড়াই করছে সে সময় এক ফাঁকে কিছু শেপাদার দুর্বৃত্ত বিটিভিতে ঢুকে যায় এবং অগ্নিসংযোগ করে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা বিটিভির নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করতে পারেনি। এখানেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। উত্তরা এবং রামপুরা এলাকায় অনেক তাণ্ডব এবং সহিংসতা হলেও শেষ পর্যন্ত জঙ্গি, ছাত্রদল এবং ছাত্রশিবির তাদের লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি। 

এই তাণ্ডবের চর্তুথ টার্গেট ছিল ঢাকা-চট্টগ্রাম মহসড়ক বন্ধ করা যেন সাপ্লাই চেইন বন্ধ হয়ে যায়। আমদানিজাত পণ্য যেন ঢাকায় ঢুকতে না পারে এবং একই সঙ্গে রপ্তানির জন্য কোন পণ্যও যেন চট্টগ্রাম বন্দরে যেতে না পারে সে পরিকল্পনা ছিল নাশকতাকারীদের। এর ফলে সরকার দুর্বল হয়ে যাবে এবং সরকারের পতন ঘটবে। এ রকম একটি মাস্টারপ্ল্যান থেকে নাশকতার ষড়যন্ত্র সাজানো হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হয় এবং বাংলাদেশের সেনাবাহিনী আরেকবার প্রমাণ করল তারা বিশ্বমানেরই শুধু নয়, বিশ্বের অন্যতম সেরা বাহিনী।

কোটা আন্দোলন   সরকার পতন   বিটিভি   বিমানবন্দর  


মন্তব্য করুন


ইনসাইডার এক্সক্লুসিভ

শত কোটি টাকার মালিক প্রধানমন্ত্রীর আরেক চাকর মান্নান

প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ১৫ জুলাই, ২০২৪


Thumbnail সস্ত্রীক মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান।

তার নাম মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাকর ছিলেন দীর্ঘদিন ধরে। প্রধানমন্ত্রীর ফাই-ফরমাস করছেন। বাজার হাট করে দিতেন এবং জাহাঙ্গীরের (প্রধানমন্ত্রীর আরেক চাকর) চেয়ে এক ধাপ নিচের হিসেবে তাকে বিবেচনা করা হতো। সেই মোহাম্মদ আব্দুল মান্নানও এখন ১০০ কোটি টাকার মালিক। আব্দুল মান্নানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন অনুসন্ধান করছে। তবে কুমিল্লা নিবাসী মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান এখন দেশে নেই। তিনি বিদেশে আছেন। 


জানা গেছে, কানাডায় তার বিপুল সম্পত্তি আছে। সেখানে তিনি বাড়ি করেছেন। তার মেয়েকে কানাডায় পড়িয়েছেন। মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত কর্মচারী ছিলেন। তাকে কাজের লোক হিসেবে বিবেচনা করা হতো। কিন্তু কাজের লোক হয়ে আস্তে আস্তে আওয়ামী লীগের নেতা এবং গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেন। প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতির অনেক গুরুত্বপূর্ণ গোপন ফাইল দেখতেন। আগাম সেই ফাইলের খবর বিভিন্ন জনকে জানিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিতেন। পরবর্তীতে তিনি কুমিল্লা অঞ্চলে বিপুল পরিমাণ সম্পদ গড়েছেন। ঢাকায় তার একাধিক বাড়ি রয়েছে। তবে একটা সময় যখন প্রধানমন্ত্রী জানতে পারেন তার (আব্দুল মান্নান) বিপুল বিত্তের কাহিনি, তখন তাকে সেখান থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। অবস্থা বেগতিক দেখে দেশ থেকে পালিয়ে যান মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান। মোহাম্মদ আব্দুল মান্নানের মেয়ে কানাডার দামী ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করেছে। বিপুল পরিমাণ সম্পদ সেখানে পাচার করা হয়েছে। কানাডা ছাড়াও আরও কয়েকটি দেশে মোহাম্মদ আব্দুল মান্নানের সম্পত্তি আছে বলে জানা গেছে। 


এভাবে পোস্টারিং করে প্রতারণার আশ্রয় নিতো মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে যে, জাহাঙ্গীরের মতো মোহাম্মদ আব্দুল মান্নানের যখন অবৈধ কর্মকাণ্ড সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় তথ্য পায় তখনই বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করা হয় এবং প্রধানমন্ত্রী তাৎক্ষণিকভাবে তাকে ব্যক্তিগত কর্মচারী থেকে বাদ দেন। তাকে গণভবনে ও অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়। কিন্তু তার বিরুদ্ধে যে তদন্তগুলো হয়েছিল সেই তদন্তগুলো তিনি প্রধানমন্ত্রীর একদা ঘনিষ্ঠ এরকম একটা ধারণা দিয়ে বাধাপ্রাপ্ত করেছিলেন। এরপর তিনি দেশ থেকে পালিয়ে যান। 


দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা গেছে, মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান এবং তার স্ত্রীর নামে ১০০ কোটি টাকার সম্পত্তি রয়েছে। তার বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ১০০ কোটি টাকা ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে সেই টাকা সবই বিদেশে পাচার করা হয়েছে বলে জানা গেছে। 

উল্লেখ্য যে, আব্দুল মান্নান প্রধানমন্ত্রীর চা সরবরাহকারী, বাজার করার সূত্রে প্রধানমন্ত্রীর কক্ষে যেতে পারতেন এবং সেখানে প্রধানমন্ত্রীর অনুপস্থিতিতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর ফাইলগুলো দেখতেন। বিশেষ করে বিভিন্ন পদোন্নতি এবং নিয়োগ সংক্রান্ত ফাইলগুলো দেখে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে তাদের বিভিন্ন ব্যক্তিকে অবহিত করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিতেন। এছাড়াও বিভিন্ন ব্যবসায়ীকে ব্লাকমেইল করা, ব্যবসায়ীদের গোপন তথ্য দেয়ার মাধ্যমেও বিত্তবান হয়েছিলেন আব্দুল মান্নান। অবশ্য এই সমস্ত ঘটনা নিয়ে এর আগেও তদন্ত হয়েছে এবং এ সমস্ত তদন্তের পর তাকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বিচ্যুতি করা হয়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, আব্দুল মান্নান প্রধানমন্ত্রীর চাকর হিসেবে বহিষ্কৃত হবার পরও বেশ কিছু ধরে অনিয়ম করেছিলেন। তারপর যখন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেয়া হয় তখন তা টের পেয়ে তিনি দেশ থেকে পালিয়ে গেছেন। বর্তমানে তিনি কানাডায় অবস্থান করছেন বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।

মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান   দুর্নীতি  


মন্তব্য করুন


ইনসাইডার এক্সক্লুসিভ

প্রধানমন্ত্রীর এই পিয়ন কে?

প্রকাশ: ০৮:০০ পিএম, ১৪ জুলাই, ২০২৪


Thumbnail

আজ গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমার পিয়নও ৪০০ কোটি টাকার মালিক। হেলিকপ্টার ছাড়া এলাকায় যেত না। জানতে পারার পর আমি তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি।

প্রধানমন্ত্রীর ওই পিয়নের নাম বলেননি। কিন্তু বাংলা ইনসাইডারের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, ওই পিয়নের নাম জাহাঙ্গীর। দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত কর্মচারী হিসেবে কাজ করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর ব্যাগ বহন করতেন, প্রধানমন্ত্রীর খাবার সামনে এগিয়ে দিতেন এবং অন্যান্য ফাই-ফরমাশ খাটতেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি যখন বিরোধী দলে তখন থেকেই জাহাঙ্গীর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী ঢাকার বাইরে যখন বিভিন্ন রাজনৈতিক সভায় যেতেন সেখানেও জাহাঙ্গীরকে দেখা যেত। আস্তে আস্তে জাহাঙ্গীরের একটি রাজনৈতিক বলয় তৈরি হয়ে যায়।


নোয়াখলী জেলার চাটখিল উপজেলায় জাহাঙ্গীরের বাড়ি। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ দ্বিতীয়বারের মতো সরকার গঠন করলে জাহাঙ্গীর গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মচারী হন। সেখানে তিনি প্রধানমন্ত্রীর ফাই-ফরমাশ খাটা শুরু করেন। গণভবনে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের আনাগোনা শুরু হলে সকলের সঙ্গে সখ্যতা তৈরি করেন। প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মচারী এই সুবিধা নিয়ে তিনি অনেক গোপন নথির সন্ধান পেতেন। অনেকের তদবির করে দেওয়া শুরু করেন। আস্তে আস্তে তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে একজন প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুরো বিষয়গুলো জানতে পারেন। এটি জানার পর জাহাঙ্গীরকে গণভবন থেকে বের করে দেওয়া হয়। কিন্তু গণভবনে থাকার সময় তিনি আওয়ামী লীগ নেতাদের চেয়ে ক্ষমতাবান হয়ে উঠেছিলেন। আওয়ামী লীগের কিছু কিছু ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ,  গণভবনে থাকেন, তাকে বলে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করা যায় ইত্যাদি ভ্রান্ত ধারণার বশবর্তী হয়ে জাহাঙ্গীরের প্রতি আলাদা ‘শ্রদ্ধাবোধ’ দেখাতে শুরু করেন। তাদের কেউ কেউ জাহাঙ্গীরকে ‘স্যার’ ডেকেছেন বলেও শোনা যায়। এমনকী, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ও জাহাঙ্গীরের কাছে তদবির করতেন। এই জাহাঙ্গীর গণভবনে থেকে বিভিন্ন ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তাকে প্রধানমন্ত্রীর নাম ভাঙিয়ে বিভিন্ন তদবির করতেন। এভাবে আস্তে আস্তে বিত্তশালী হয়ে ওঠেন এই কাজের লোক। পরবর্তীতে অবশ্য গণভবন থেকে রেবিয়ে যাওয়ার পর এখন তাকে রাজনীতিতে দেখা যায় না। 

গণভবন থেকে বহিষ্কৃত হবার পরও জাহাঙ্গীর তার অবৈধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে যান। এর প্রেক্ষিতে গত বছরের ৬ ডিসেম্বর জাহাঙ্গীরের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পক্ষ থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। সেই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী বিশেষ সহকারী পরিচয় ব্যবহার করে বিভিন্ন অবৈধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন জাহাঙ্গীর। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে এবং এ ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকার জন্য আহ্বান জানানো হয়।

আজ প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সন্মেলনে বক্তব্যের পর দুর্নীতি দমন কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে দুদকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন যে, বিষয়টি সম্পর্কে তারা অবহিত এবং জাহাঙ্গীরের ব্যাপারে ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু হয়েছে। খুব শিগগির তার সম্পদ জব্দের প্রক্রিয়া শুরু হবে। 

তবে জাহাঙ্গীর এখন দেশের বাইরে অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে।



মন্তব্য করুন


ইনসাইডার এক্সক্লুসিভ

যুক্তরাজ্যে থাকতে হলে রাজনীতি ছাড়তে হবে তারেককে

প্রকাশ: ১০:০০ পিএম, ১৩ জুলাই, ২০২৪


Thumbnail

যুক্তরাজ্যে নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করার পরই সেই দেশের আভ্যন্তরীণ নীতি, পররাষ্ট্রনীতিতে বেশ কিছু পরিবর্তন এনেছে সরকার। স্টারমার সরকার অভিবাসী নীতির বিপক্ষে নয়। তবে অভিবাসীদের কিছু সীমারেখার মধ্যে আবদ্ধ থাকা উচিত বলে তারা মনে করছেন। স্টারমার সরকার মনে করছে যে, অভিবাসীরা যুক্তরাজ্যে অবস্থান করে যা খুশি তা করলে যেমন পররাষ্ট্রনীতির ওপর তার প্রভাব পড়ছে, অন্যদিকে যুক্তরাজ্যের স্থিতিশীলতা এবং ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। এ কারণেই লেবার সরকার তার প্রথম দিকে যে সমস্ত নীতি এবং উদ্যোগগুলো গ্রহণ করতে যাচ্ছে, তার মধ্যে একটি হল অভিবাসীদের কার্যক্রম সীমিতকরণ। 

অভিবাসীদের মধ্যে দুটো ভাগ রয়েছে। প্রথমত, যারা অবৈধভাবে সেখানে অবস্থান করছেন। তাদেরকে বৈধকরণের ক্ষেত্রে একটি রুপরেখা প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে নতুন লেবার সরকার। এই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে তাদের একটি বড় অংশই বৈধ হওয়ার সুযোগ পাবে। অন্যদিকে যারা অবৈধ অবস্থায় থাকার পর রাজনৈতিক আশ্রয় লাভ করেছে নানা কারণে তাদেরকেও একটি গণ্ডির মধ্যে রাখার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে একটি সুস্পষ্ট নীতিমালা তৈরি করা হচ্ছে। আগামী ১০০ দিনের মধ্যে এই নীতিমালা বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে জানা গেছে। আর এই নীতিমালার প্রধান যে বিষয়টির কথা বলা হয়েছে যে, মানবিক কারণে বা রাজনৈতিক কারণে যারা যুক্তরাজ্যে আশ্রয় লাভ করবেন তাদেরকে একটি সীমিত পরিসরে কাজ করতে হবে। এই সীমিত পরিসরের মধ্যে রয়েছে তারা যুক্তরাজ্য সরকারের আইন নিয়ম কানুন মেনে চলবেন। তারা অবৈধ পথে অর্থ উপার্জন করতে পারবেন না এবং বিদেশ থেকে তাদের কোনো অর্থ আসলে সে ব্যাপারে সরকারকে অবহিত করতে হবে এবং সেই অর্থের উৎস জানাতে হবে। পাশাপাশি সেই অর্থের উচ্চ কর দিতে হবে। পাশাপাশি এটিও নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে, রাজনৈতিক আশ্রয়প্রাপ্ত অভিবাসীরা কোনও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে নিজেদেরকে যুক্ত করতে পারবেন না। 

বর্তমানে লন্ডনে অবস্থান করছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া। লন্ডনে বসে তিনি বিএনপির দল চালাচ্ছেন। কিন্তু লেবার পার্টির এই নতুন অভিবাসন নীতি বাস্তবায়িত হলে তাকে বিএনপির পদ ছাড়তে হবে। বিএনপির কোনো পথ দখল করে তিনি যুক্তরাজ্যে বসবাস করতে পারবেন না। দ্বিতীয়ত, তার আয় ব্যয়ের নিয়মিত হিসাব দিতে হবে এবং রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাকা ব্যক্তি হিসেবে তাকে বলতে হবে। কোথা থেকে কোন খাতে তিনি কত টাকা পেয়েছেন তার বিস্তারিত হিসাব দেখাতে হবে।

তৃতীয়ত, তারেক যে সমস্ত সম্পদ বৈধ পন্থায় যুক্তরাজ্যে নিয়ে যাবেন, সেই সমস্ত সম্পদের ওপর তাকে উচ্চ শুল্ক দিতে হবে। উল্লেখ্য যে, লেবার পার্টির একাধিক এমপি বলেছেন যে, রাজনৈতিক আশ্রয় লাভকারী ব্যক্তিরা এখানে দুর্নীতির অর্থে অর্জিত টাকা দিয়ে রাজকীয় জীবনযাপন করতে পারেন না। এতে ব্রিটিশ সমাজের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়। শুধু তারেক জিয়া নয়, বেশকিছু পলাতক অভিবাসী যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয় লাভ করেছেন। তারা অবৈধ অর্থ দিয়ে রাজকীয় জীবন যাপন করছেন। এটি যুক্তরাজ্য সমাজে একটি বিরূপ প্রভাব তৈরি করেছে। আর এ কারণেই এ সব বন্ধের উদ্যোগ গ্রহণ করছে নতুন লেবার সরকার। লেবার সরকার মনে করছে যে, যারা রাজনৈতিক আশ্রয় লাভ করেছে তারা মানবিক কারণে পেয়েছে এবং তাদের সে রকম জীবন যাপন করা উচিত। কিন্তু মানবিক কারণে আশ্রয় পাওয়া ব্যক্তিরা যখন রাজকীয় জীবন যাপন করে তখন তা দৃষ্টিকুটু এবং অন্যায্য বটে। আর এ কারণে তারা এটা বন্ধের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এটি বাস্তবায়িত হলে তারেক জিয়ার বর্তমান অবস্থায় লন্ডনে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়বে। হয় তাকে রাজনীতি ছাড়তে হবে অথবা যুক্তরাজ্য ছাড়তে হবে।

যুক্তরাজ্য   লেবার পার্টি   বিএনপি   তারেক জিয়া   অভিবাসী   লেবার সরকার   কিয়ার স্টারমার  


মন্তব্য করুন


ইনসাইডার এক্সক্লুসিভ

রিজভীই হচ্ছেন বিএনপির পরবর্তী মহাসচিব

প্রকাশ: ১০:০৫ পিএম, ২৬ জুন, ২০২৪


Thumbnail

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের স্থলাভিষিক্ত হতে যাচ্ছেন। বিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র আজ এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে যে, আজ লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া তৃণমূলের বাছাই করা সদস্যদের মধ্যে ভোটাভুটি করেন। সারা দেশের প্রায় ১০০ জন তৃণমূলের নেতার সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে ধাপে ধাপে মিলিত হয়ে নতুন মহাসচিব হিসেবে কাকে নিয়োগ দেওয়া যায় সে ব্যাপারে মতামত জানতে চান। এই মতামতে রুহুল কবির রিজভীর পক্ষে ৯৬ ভোট পড়েছে বলে দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে।

ইতোমধ্যেই রুহুল কবির রিজভীর সঙ্গে তারেক জিয়ার কথা হয়েছে। আজ রাত ৮টার পর তারেক জিয়ার সঙ্গে রুহুল কবির রিজভীর প্রায় ১৭ মিনিট কথা হয় বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। প্রথম রুহুল কবির রিজভী প্রথমে স্পিকার অন করে কথা বললেও পরবর্তীতে তিনি দলীয় কার্যালয়ের অন্য ঘরে চলে যান এবং সেখান থেকে তিনি তারেক জিয়ার সঙ্গে কথা বলেন। 

সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, এর পরপরই রুহুল কবির রিজভীর ঘনিষ্ঠরা একে অন্যকে মিষ্টিমুখ করিয়েছেন। তবে তারা বিষয়টি চেপে রাখছেন। খুব শীঘ্রই এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

উল্লেখ্য, গত কিছুদিন ধরে রুহুল কবির রিজভীকে নিয়ে জয়জয়কার চলছিল। রুহুল কবির রিজভীর সমর্থক গোষ্ঠীকেই বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হচ্ছিল। এমনকি লন্ডন থেকে বিভিন্ন কমিটি পরিবর্তনের যে বার্তাগুলো তারেক জিয়া দিচ্ছিলেন, সেই বার্তাগুলো মহাসচিবের কাছে নয়, সরাসরি রুহুল কবির রিজভীর কাছে দেওয়া হচ্ছিল এবং রিজভী এই নির্দেশনাগুলো টাইপ করে সকলের অগোচরে গণমাধ্যমে প্রকাশ করেছিলেন। বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা গণমাধ্যমের মাধ্যমেই বিএনপির পরিবর্তনের কথা গুলো জানচ্ছিলেন।

ঢাকা মহানগর উত্তর ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ, চট্টগ্রাম উত্তর এবং দক্ষিণ এবং বরিশাল মহানগর বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত হয়েছে কোন নেতাই কিছু জানাননি। এমনকি যুবদলের কমিটি বিলুপ্তির বিষয়টিও সকলের অজানা ছিল। জানতেন একমাত্র রুহুল কবির রিজভী। 

নাটকীয় ভাবে গত কিছুদিন ধরে রুহুল কবির রিজভীর সঙ্গে তারেক জিয়ার একটি সখ্যতা তৈরি হয়েছে। আর এই সখ্যতার কারণেই এখন রুহুল কবির রিজভীর ওপর নির্ভর করছেন তারেক জিয়া। তবে অন্য একটি সূত্র দাবি করছে যে, দলের তৃণমূলের সঙ্গে আলাপকালে রিজভীকেই তারা নিরঙ্কুশ ভাবে পছন্দ করেছেন। তৃণমূলের নেতারা মনে করছেন যে, দলের দুর্দিনে রুহুল কবির রিজভী আশা ভরসার স্থল এবং তিনি উজ্জ্বীবিত রেখেছেন দলকে। তাই তিনি ছাড়া আর কোন নেতাই পূর্ণকালীন দায়িত্ব পালন করছেন না বলে তৃণমূলের পক্ষ থেকে অভিযোগ উঠেছে। রুহুল কবির রিজভী সম্পর্কে তৃণমূলের নেতারা তারেককে জানিয়েছেন যে তাকে সার্বক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়। ফোন করলে তিনি ফোন ধরেন। কর্মীদের দুঃখ দুর্দশায় পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন। এই রকম সময় রিজভীর কোনো বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেছেন।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কিছুদিন ধরেই মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করার ব্যাপারে অনীহা প্রকাশ করছেন। বিশেষ করে কারাগার থেকে মুক্ত হওয়ার পরে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছেন যে, তিনি দলের মহাসচিব থাকতে চান না। তবে বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক জিয়া দুজনই তাকে মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন অব্যাহত রাখার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন। এর মধ্যে তারেক জিয়া নতুন মহাসচিব খুঁজছেন। তবে বিএনপির কোন সূত্রই নিশ্চিত করতে পারেনি যে, আগে মহাসচিব পদে পরিবর্তন হবে নাকি স্থায়ী কমিটি পুনর্গঠন হবে। তবে যেটিই হোক না কেন রহুল কবির রিজভী যে বিএনপির পরবর্তী মহাসচিব হতে যাচ্ছেন তা মোটামুটি নিশ্চিত। 

তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন যে, রিজভী বিএনপির মধ্যে যতই জনপ্রিয় থাকুক না কেন জাতীয় রাজনীতিতে তার অবস্থান খুব একটা ভালো নয়। জনগণের কাছেও তার গ্রহণযোগ্যতা খুব একটা বেশি নয়। তবে তারেক জিয়ার ঘনিষ্ঠ হবার কারণে রুহুল কবির রিজভী যে বিএনপির পরবর্তী মহাসচিব হতে যাচ্ছেন তা মোটামুটি নিশ্চিত। তবে বিএনপির তরুণ নেতারা বলছেন, তারেক জিয়ার আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে নয়ম বরং তৃণমূলের আকাঙ্খার প্রেক্ষিতেই রিজভীকে বিএনপির মহাসচিব করা হচ্ছে।

বিএনপি   মহাসচিব   তারেক জিয়া   রুহুল কবির রিজভী  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন