নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:০০ পিএম, ১০ মে, ২০১৮
প্রধানমন্ত্রীর একজন উপদেষ্টা এবং উর্ধ্বতন দুজন সরকারি কর্মকর্তার সঙ্গে গোপন বৈঠক করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত দক্ষিণাঞ্চলের এক সাবেক হুইপের বাড়িতে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে প্রথমে মির্জা ফখরুল একা থাকলেও পরে ব্যারিস্টার মওদুদ এবং ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনও যোগদান করেন। বৈঠকের ব্যাপারে সরকার এবং বিএনপি কঠোর গোপনীয়তা রক্ষা করলেও বৈঠকের খবর ফাঁস হয়ে যায়। যদিও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তাঁর সহকর্মীদের বলেছেন, এটা কোনো বৈঠক না। তিনি দাবি করেছেন, ঐ সাবেক হুইপের আমন্ত্রণে তিনি সেখানে গিয়েছিলেন। সেখানে সোশ্যাল গ্যাদারিং এ তাঁদের দেখা হয়েছে এবং কুশল বিনিময় হয়েছে, এর বেশি কিছু নয়। বিএনপির ঐ সাবেক হুইপ এক সময় রেড ক্রিসেন্টের চেয়ারম্যান ছিলেন। সংস্কারপন্থী হবার কারণে ২০০৮ সালে তিনি বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত হন। বহিষ্কৃত হলেও বিএনপির সব নেতার সঙ্গেই তাঁর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে।
বাংলা ইনসাইডারের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এটাই বিএনপি মহাসচিবের প্রথম বৈঠক নয়। এর আগেও মির্জা ফখরুল অন্তত দুবার প্রভাবশালী ঐ উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, শেষ পর্যন্ত যদি বেগম জিয়া ও তারেক জিয়া বিএনপিকে নির্বাচনে নিতে রাজি না হন, সেক্ষেত্রেও যেন মির্জা ফখরুলের নেতৃত্বে বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে সেজন্য দরকষাকষি করতেই এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে, একাধিক সূত্র বলছে, দল ভেঙ্গে নয় বরং খালেদা জিয়াকে রাজি করিয়েই বিএনপিকে নির্বাচনে নিতে চান মির্জা ফখরুল। তিনি সরকারের ঐ প্রতিনিধি দলকে জানিয়েছেন, বেগম জিয়াও বুঝতে পারছেন শেষ পর্যন্ত হয়তো তিনি (বেগম জিয়া) নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। বিএনপির মহাসচিব জানিয়েছেন যে তিনি বেগম জিয়াকে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ কেন গুরুত্বপূর্ণ তা বোঝাচ্ছেন। এ ব্যাপারে অনেক অগ্রগতিও হয়েছে বলে মির্জা ফখরুল প্রধানমন্ত্রীর ঐ উপদেষ্টাকে আশ্বস্ত করেছেন। বিএনপি মহাসচিব মনে করেন, শেষ পর্যন্ত যদি বেগম জিয়া নির্বাচনের অযোগ্য হন, তাহলে যেন তিনি নির্বাচন থেকে দলকে প্রত্যাহার না করেন সে চেষ্টা চলছে। সূত্রমতে, বেগম জিয়া নমনীয় হলেও বিএনপির মধ্যে কেউ কেউ অনড় অবস্থানে থাকতে পারে। বিএনপি মহাসচিব, সহায়ক সরকার এবং বেগম জিয়ার অংশগ্রহণ ছাড়া কোনো নির্বাচন নয়, এই মনোভাব পোষণ করে এরকম নেতাদের একটি তালিকা সরকারের প্রতিনিধিদের কাছে হস্তান্তর করেছেন।
সূত্রমতে, মির্জা ফখরুল বিএনপি অখণ্ড রেখে বর্তমান সরকারের অধীনে শর্তসাপেক্ষে নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষে। এ ব্যাপারে দলের শীর্ষ নেতাদের সমর্থনও তিনি পেয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে সরকারের সঙ্গে গোপন বৈঠককে ‘ষড়যন্ত্র’ হিসেবে দেখছেন বিএনপির অধিকাংশ নেতা। তাঁরা মনে করছেন, এসব ‘আঁতাতের’ কারণেই বেগম জিয়ার মুক্তি হচ্ছে না। বিএনপি আন্দোলনে যেতে পারছে না। সংগঠন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মির্জা ফখরুলের সমর্থকরা অবশ্য ভিন্নভাবে বিষয়টি দেখছেন। তারা বলছেন, সরকার যেকোনো প্রকারে এই নির্বাচন থেকে বিএনপিকে দূরে রাখতে চায়। সে কারণেই, মহাসচিব নির্বাচনে যাবার চেষ্টা করছেন। কারণ নির্বাচনে গেলে বিএনপির বিজয় অনিবার্য। বেগম জিয়া নির্বাচন করুক না করুক।
তবে, গোপন বৈঠক ফাঁস হওয়ায় সমালোচনার মুখে মির্জা ফখরুল।
Read In English: https://bit.ly/2ryq5Ll
বাংলা ইনসাইডার/জেডএ
মন্তব্য করুন
ডোনাল্ড লু বিএনপি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ চীন সফর ভারত যুক্তরাষ্ট্র
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছিল বিএনপির আশা ভরসার কেন্দ্রস্থল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করবে; মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নির্দলীয়, নিরপেক্ষ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায়ে সরকারকে বাধ্য করবে; মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কারণ সরকার শেষ পর্যন্ত নির্বাচন করতে পারবে না- এমন বক্তব্যগুলো বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচনের আগে বহুল প্রচারিত ছিল। বিএনপির সব নেতারা প্রকাশ্যেই এ কথা বলত।
বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যখন র্যাবের উপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, বাংলাদেশকে গণতন্ত্র সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানায় না তখন বিএনপি নেতারা উল্লাসে ফেটে পড়েছিলেন। তারা দলীয় কার্যালয়ে মিষ্টিমুখের ব্যবস্থাও করেছিলেন।
আবার ডোনাল্ড লু নির্বাচনের আগে যখন বাংলাদেশ সফর করেছিলেন এবং ভিসা নীতি প্রয়োগ করেছিলেন তখন বিএনপি নেতাদের প্রকাশ্যে মার্কিন বন্দনা করতে দেখা গেছে। ২৮ অক্টোবরের আগ পর্যন্ত প্রায় প্রতিদিনই মার্কিন দূতাবাসে বা মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসের বাসভবনে বিএনপির নেতাদের আনাগোনা ছিল। তারা সেখানে চা চক্রে মিলিত হয়েছেন, নৈশভোজে মিলিত হয়েছেন এবং বিভিন্ন রকমের শলাপরামর্শ করেছেন।
পিটার ডি হাস গত বছরের ১০ অক্টোবর বিএনপি যখন সমাবেশ করতে পারেনি তখনও একতরফা বিবৃতি দিয়েছিলেন। এছাড়াও তিনি বিতর্কিত সংগঠন মায়ের ডাকের এক নেতার বাসায় গিয়েছিলেন এবং সেখানে তিনি বিএনপির প্রতি এক ধরনের সহানুভূতি জানিয়েছিলেন। এভাবেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির উপর এক ধরনের প্রচ্ছন্ন সমর্থন এবং সহানুভূতি দেখিয়েছিল।
অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই সহানুভূতি এবং পরোক্ষ সমর্থনের কারণেই বিএনপির আন্দোলনের পালে হাওয়া লেগেছিল। নেতাকর্মীদের মধ্যে একটি চাঙ্গা ভাব তৈরি হয়েছিল। কিন্তু ২৮ অক্টোবরের পর থেকে পরিস্থিতি পাল্টে যেতে শুরু করে। যদিও ২৮ অক্টোবরের পর এই ডোনাল্ড লু শর্তহীন সংলাপের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন এবং এই আহ্বানের চিঠি নিয়ে পিটার ডি হাস তিনটি দলের নেতাদের কাছে গিয়েছিলেন এবং একটি সংলাপ আয়োজনের শেষ চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সেই সংলাপ আয়োজনে বিএনপি বা আওয়ামী লীগ কেউই সাড়া দেয়নি।
এখন নির্বাচন সমাপ্ত হয়েছে এবং ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর ১১ জানুয়ারি নতুন সরকার গঠিত হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচনকে ত্রুটিপূর্ণ বলার পরও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়া এবং নতুন সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের বার্তা দিয়েছেন। ডোনাল্ড লু’র আগে আফরিন আক্তার নির্বাচনের পরে বাংলাদেশ সফর করেছিলেন এবং সেই সময় তিনি হোটেল ওয়েস্টিনে বিএনপি নেতৃবৃন্দের সাথে সাক্ষাৎ করেছিলেন। তখন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং শামা ওবায়েদ আফরিন আক্তারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। যদিও সেই সাক্ষাতের পর তারা কোনও কিছুই সাংবাদিকদেরকে জানাননি। কিন্তু এবার ডোনাল্ড লু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেননি। আর এটি বিএনপির মধ্যে হতাশা সৃষ্টি করেছে।
বিএনপি মনে করছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন তাদেরকে আর আগের মতো গুরুত্ব দিচ্ছেন না, পাত্তা দিচ্ছে না। বরং সরকারের সঙ্গে সম্পর্কের কারণে বিএনপিকে এড়িয়ে যাচ্ছে। এ নিয়ে বিএনপির মধ্যে হতাশা তৈরি হয়েছে। বিএনপি নেতারা দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ, শামা ওবায়েদ, তাবিথ আউয়ালসহ যারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন এবং মার্কিন দূতাবাসে যাদের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে তাদেরকে দুষছেন। তারা মনে করছেন যে, বিএনপির মধ্যেই সমস্যা রয়েছে। বিএনপির নেতারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে পারেননি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বিএনপির বক্তব্যগুলো তারা সঠিকভাবে ও যথাযথভাবে উপস্থাপন করতে পারেননি। আর একারণেই ডোনাল্ড লু’র সফরের পর বিএনপির মধ্যে চলছে এক ধরনের হতাশা।
ডোনাল্ড লু বাংলাদেশ রাজনীতি বিএনপি
মন্তব্য করুন
আগামী ২৩ জুন আওয়ামী লীগের ৭৫ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পর্যন্ত আওয়ামী লীগ দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গকারী, দলের ভেতর সুবিধাবাদী, লুটেরা এবং দলের নাম ভাঙিয়ে বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করবে না। কিন্তু ২৩ জুনের পর আওয়ামী লীগের ক্র্যাশ প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ক্র্যাকডাউন হবে দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গকারী এবং দলের সুনাম নষ্টকারীদের বিরুদ্ধে। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ব্যাপারে শূন্য সহিষ্ণুতা নীতি অনুসরণ করবে। আওয়ামী লীগের একটি দায়িত্বশীল সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
আওয়ামী লীগ এবং তার আদর্শিক জোট ১৪ দলের নেতাদের চীন সফরে হিড়িক পড়েছে। আওয়ামী লীগ এবং তার সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর এই চীন সফরকে ঘিরে কূটনৈতিক অঙ্গনে চলছে নানামুখী আলাপ আলোচনা। ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উভয় দেশই ১৪ দল এবং আওয়ামী লীগের নেতাদের চীন সফরের ব্যাপারে দৃষ্টি রাখছেন। তবে তারা এই বিষয় নিয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হচ্ছেন না। বিষয়টি তারা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিষয় হিসেবেই মনে করছেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছিল বিএনপির আশা ভরসার কেন্দ্রস্থল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করবে; মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নির্দলীয়, নিরপেক্ষ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায়ে সরকারকে বাধ্য করবে; মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কারণ সরকার শেষ পর্যন্ত নির্বাচন করতে পারবে না- এমন বক্তব্যগুলো বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচনের আগে বহুল প্রচারিত ছিল। বিএনপির সব নেতারা প্রকাশ্যেই এ কথা বলত।