নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:০০ পিএম, ১৭ মে, ২০১৮
খুলনা সিটি নির্বাচনের পর কি বিএনপি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জনের পথেই হাঁটবে? বিএনপির একাধিক নেতা এমন ইঙ্গিতই দিয়েছেন। তাঁরা বলতে চাইছেন, আওয়ামী লীগ এমন মেকানিজম করেছে যে, নির্বাচনে জয়লাভ এখন শুধু কঠিন নয়, অসম্ভব। বিএনপির নেতারা বলছেন, ‘নির্বাচন কারচুপির সম্পূর্ণ অভিনব এবং নতুন মডেল আবিষ্কার করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। যে মডেলে নির্বাচন হবে আপাত: সুষ্ঠু, গোলোযোগহীন, কিন্তু এমন ভাবে ভোট হবে যে জিতবে শুধু আওয়ামী লীগই।’ বিএনপির একজন নেতা বলেছেন, ‘খুলনায় কারচুপি হয়েছে, এ ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত কিন্তু কীভবে কারচুপিটা হলো, তা আমরা ধরতে পারিনি।’ বিএনপিতে যাঁরা ‘নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে যেতে অনাগ্রহী’, সেই কট্টরপন্থীরা এখন সোচ্চার। তারা দলের মহাসচিবের কাছে এখনই, বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন নয়, এই ঘোষণা চাইছেন। বিএনপি মহাসচিব অবশ্য এখনই চূড়ান্ত অবস্থান গ্রহণের পক্ষে নন। বরং তিনি সরকারের কৌশলের বিপরীতে পাল্টা কৌশল নিতে চান। কিন্তু দলে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণের পক্ষের লোকের সংখ্যা ক্রমশ: কমছে।
বিএনপির মধ্যে একটা বড় অংশই তিন দফা দাবি আদায় ছাড়া আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণে রাজি না। এই তিন দফার মধ্যে রয়েছে: ১. বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ এবং একজন দল নিরপেক্ষ ব্যক্তির নেতৃত্বে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার গঠন ২. বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ৩. নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন।
এর বিপরীতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বেশ কিছু সিনিয়র নেতা ছিলেন নির্বাচনের পক্ষে। বিএনপি মহাসচিব সবসময়ই বলতেন, বিএনপি নির্বাচনে দাঁড়ালেই পরিস্থিতি পাল্টে যাবে। জনগণ স্রোতের মতো ভোটকেন্দ্রে আসবে এবং বিএনপিকে ভোট দেবে। এরকম পরিস্থিতিতে নির্বাচনে কারচুপি করলে গণবিস্ফোরণ ঘটবে। কুমিল্লা সিটি নির্বাচনের পর ফখরুলের দল আরও ভারী হয়। কিন্তু খুলনা নির্বাচনের পর বিএনপিতে নির্বাচন বর্জনের পক্ষে বক্তব্য আরও বেশি জোরালো হচ্ছে। বিএনপির নির্বাচন বর্জনের পক্ষে অন্যতম হলেন গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। খুলনার পর তিনি বলেছেন, আগেই বলেছিলাম আওয়ামী লীগ এমনভাবে নির্বাচন করবে যে আমরা বুঝতেও পারবো না কি হচ্ছে। শুধু গয়েশ্বর একা নন, নজরুল ইসলাম খান,আমীর খসরু মাহমুদের মত যারা শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নিতে রাজি নন, তারা এখন গ্রেপ্তার। খুলনা নির্বাচনের পর নতুন করে তিন দফা দাবি সামনে আসছে। বেশি কট্টররা একধাপ এগিয়ে বলছেন, গাজীপুরের নির্বাচনও বর্জন করতে হবে। কিন্তু মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, খন্দকার মোশাররফ হোসেন এখনই হাল ছাড়তে রাজি নন।তারা গাজীপুরকে শেষ পরীক্ষা হিসেবে দেখতে চান। গাজীপুরের নির্বাচনে হারলে বিএনপি কি ২০১৪’র পথেই হাঁটবে? একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনও কি হবে বিএনপিকে ছাড়াই? কারণ ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এবং সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দুজনই বলে দিয়েছেন যে, বিএনপিকে নির্বাচনে আনার জন্য আওয়ামী লীগ কোনো উদ্যোগ নিবে না।
Read In English- https://bit.ly/2rLy4Uu
বাংলা ইনসাইডার/জেডএ
মন্তব্য করুন
ডোনাল্ড লু বিএনপি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ চীন সফর ভারত যুক্তরাষ্ট্র
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছিল বিএনপির আশা ভরসার কেন্দ্রস্থল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করবে; মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নির্দলীয়, নিরপেক্ষ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায়ে সরকারকে বাধ্য করবে; মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কারণ সরকার শেষ পর্যন্ত নির্বাচন করতে পারবে না- এমন বক্তব্যগুলো বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচনের আগে বহুল প্রচারিত ছিল। বিএনপির সব নেতারা প্রকাশ্যেই এ কথা বলত।
বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যখন র্যাবের উপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, বাংলাদেশকে গণতন্ত্র সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানায় না তখন বিএনপি নেতারা উল্লাসে ফেটে পড়েছিলেন। তারা দলীয় কার্যালয়ে মিষ্টিমুখের ব্যবস্থাও করেছিলেন।
আবার ডোনাল্ড লু নির্বাচনের আগে যখন বাংলাদেশ সফর করেছিলেন এবং ভিসা নীতি প্রয়োগ করেছিলেন তখন বিএনপি নেতাদের প্রকাশ্যে মার্কিন বন্দনা করতে দেখা গেছে। ২৮ অক্টোবরের আগ পর্যন্ত প্রায় প্রতিদিনই মার্কিন দূতাবাসে বা মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসের বাসভবনে বিএনপির নেতাদের আনাগোনা ছিল। তারা সেখানে চা চক্রে মিলিত হয়েছেন, নৈশভোজে মিলিত হয়েছেন এবং বিভিন্ন রকমের শলাপরামর্শ করেছেন।
পিটার ডি হাস গত বছরের ১০ অক্টোবর বিএনপি যখন সমাবেশ করতে পারেনি তখনও একতরফা বিবৃতি দিয়েছিলেন। এছাড়াও তিনি বিতর্কিত সংগঠন মায়ের ডাকের এক নেতার বাসায় গিয়েছিলেন এবং সেখানে তিনি বিএনপির প্রতি এক ধরনের সহানুভূতি জানিয়েছিলেন। এভাবেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির উপর এক ধরনের প্রচ্ছন্ন সমর্থন এবং সহানুভূতি দেখিয়েছিল।
অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই সহানুভূতি এবং পরোক্ষ সমর্থনের কারণেই বিএনপির আন্দোলনের পালে হাওয়া লেগেছিল। নেতাকর্মীদের মধ্যে একটি চাঙ্গা ভাব তৈরি হয়েছিল। কিন্তু ২৮ অক্টোবরের পর থেকে পরিস্থিতি পাল্টে যেতে শুরু করে। যদিও ২৮ অক্টোবরের পর এই ডোনাল্ড লু শর্তহীন সংলাপের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন এবং এই আহ্বানের চিঠি নিয়ে পিটার ডি হাস তিনটি দলের নেতাদের কাছে গিয়েছিলেন এবং একটি সংলাপ আয়োজনের শেষ চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সেই সংলাপ আয়োজনে বিএনপি বা আওয়ামী লীগ কেউই সাড়া দেয়নি।
এখন নির্বাচন সমাপ্ত হয়েছে এবং ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর ১১ জানুয়ারি নতুন সরকার গঠিত হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচনকে ত্রুটিপূর্ণ বলার পরও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়া এবং নতুন সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের বার্তা দিয়েছেন। ডোনাল্ড লু’র আগে আফরিন আক্তার নির্বাচনের পরে বাংলাদেশ সফর করেছিলেন এবং সেই সময় তিনি হোটেল ওয়েস্টিনে বিএনপি নেতৃবৃন্দের সাথে সাক্ষাৎ করেছিলেন। তখন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং শামা ওবায়েদ আফরিন আক্তারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। যদিও সেই সাক্ষাতের পর তারা কোনও কিছুই সাংবাদিকদেরকে জানাননি। কিন্তু এবার ডোনাল্ড লু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেননি। আর এটি বিএনপির মধ্যে হতাশা সৃষ্টি করেছে।
বিএনপি মনে করছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন তাদেরকে আর আগের মতো গুরুত্ব দিচ্ছেন না, পাত্তা দিচ্ছে না। বরং সরকারের সঙ্গে সম্পর্কের কারণে বিএনপিকে এড়িয়ে যাচ্ছে। এ নিয়ে বিএনপির মধ্যে হতাশা তৈরি হয়েছে। বিএনপি নেতারা দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ, শামা ওবায়েদ, তাবিথ আউয়ালসহ যারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন এবং মার্কিন দূতাবাসে যাদের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে তাদেরকে দুষছেন। তারা মনে করছেন যে, বিএনপির মধ্যেই সমস্যা রয়েছে। বিএনপির নেতারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে পারেননি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বিএনপির বক্তব্যগুলো তারা সঠিকভাবে ও যথাযথভাবে উপস্থাপন করতে পারেননি। আর একারণেই ডোনাল্ড লু’র সফরের পর বিএনপির মধ্যে চলছে এক ধরনের হতাশা।
ডোনাল্ড লু বাংলাদেশ রাজনীতি বিএনপি
মন্তব্য করুন
আগামী ২৩ জুন আওয়ামী লীগের ৭৫ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পর্যন্ত আওয়ামী লীগ দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গকারী, দলের ভেতর সুবিধাবাদী, লুটেরা এবং দলের নাম ভাঙিয়ে বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করবে না। কিন্তু ২৩ জুনের পর আওয়ামী লীগের ক্র্যাশ প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ক্র্যাকডাউন হবে দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গকারী এবং দলের সুনাম নষ্টকারীদের বিরুদ্ধে। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ব্যাপারে শূন্য সহিষ্ণুতা নীতি অনুসরণ করবে। আওয়ামী লীগের একটি দায়িত্বশীল সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
আওয়ামী লীগ এবং তার আদর্শিক জোট ১৪ দলের নেতাদের চীন সফরে হিড়িক পড়েছে। আওয়ামী লীগ এবং তার সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর এই চীন সফরকে ঘিরে কূটনৈতিক অঙ্গনে চলছে নানামুখী আলাপ আলোচনা। ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উভয় দেশই ১৪ দল এবং আওয়ামী লীগের নেতাদের চীন সফরের ব্যাপারে দৃষ্টি রাখছেন। তবে তারা এই বিষয় নিয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হচ্ছেন না। বিষয়টি তারা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিষয় হিসেবেই মনে করছেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছিল বিএনপির আশা ভরসার কেন্দ্রস্থল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করবে; মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নির্দলীয়, নিরপেক্ষ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায়ে সরকারকে বাধ্য করবে; মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কারণ সরকার শেষ পর্যন্ত নির্বাচন করতে পারবে না- এমন বক্তব্যগুলো বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচনের আগে বহুল প্রচারিত ছিল। বিএনপির সব নেতারা প্রকাশ্যেই এ কথা বলত।