নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ১১ জুলাই, ২০১৮
রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট তিন সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ৩০ জুলাই। গতকাল ১০ জুলাই প্রতীক বরাদ্দের মধ্যে দিয়ে শুরু হয়েছে এই তিন সিটি নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচারণা। প্রচারণার দ্বিতীয় দিনে এসে দেখা যাচ্ছে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীরা জোরেশোরে তাঁদের নির্বাচনী প্রচারণার কাজ চালালেও মূল প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির নেতাকর্মীদের মাঝে এক ধরনের হতাশা কাজ করছে। তাঁদের নির্বাচনী প্রচারণায় নেই তেমন কোনো গতি। অনুসন্ধানে দেখা যায় বিএনপির নেতা কর্মীদের হতাশার পেছনে পাঁচটি বিষয় কাজ করছে। এগুলো হলো:
১. উদ্যমহীনতা: গাজীপুর ও খুলনা সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয়ী হবার পর বিএনপি নেতাকর্মীরা ধারনা করছে যে, ‘আসন্ন তিন সিটি নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ যে কোনো উপায়ে জয় লাভ করবে।’ তাই পরাজয় নিশ্চিত জেনে সিটি নির্বাচনের শুরু থেকেই বিএনপির নেতাকর্মীদের মাঝে উৎসাহ ও উদ্দীপনার অভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যেমন, গতকাল বরিশালে নির্বাচন পরিচালনার জন্য ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে যে কমিটি গঠন করা হয় স্থানীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে, সেই কমিটি গঠন করতে পারে নাই বিএনপি। নয়টি ওয়ার্ডে বিএনপির লোকজনই আসে নাই।
২. মামলা-মোকদ্দমার ভয়: বিএনপির পক্ষ থেকে সিটি নির্বাচনে হতাশা ও অনাগ্রহের অন্যতম আরও একটি কারণ বলা হচ্ছে মামলা-মোকদ্দমা ভয়। বিএনপির অনেক নেতা কর্মীর নামে অনেক মামলা চলছে। বিগত সময়ে তিন সিটিতেই বিএনপির প্রার্থীরা তৃণমূলের কর্মীদের খোঁজ খবর রাখেন নাই। মামলা মোকদ্দমা চলাকালে কোনো সহযোগিতাও করে নাই। তাই নেতাকর্মীরা নতুন করে আর মামলা মোকদ্দমার ঝুঁকি নিয়ে বিএনপি প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে চাইছেন না আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে।
৩. অর্থসংকট: শুধু বিএনপির কর্মীরা নয় মেয়র প্রার্থীরাও হতাশাগ্রস্ত হয়ে আছেন। প্রার্থীরা ভাবছেন, ‘আমি যে এত টাকা খরচ করব আমার লাভটা কি? আমি তো হেরেই যাব।’ গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রচারণায় শেষদিনে লক্ষ্য করা যায়, হাসান উদ্দিন সরকার হাল ছেড়ে দিয়ে তাঁর নির্বাচনী প্রচারণা গুটিয়ে ফেলেছিল নিশ্চিত পরাজয় জেনে। আসন্ন তিন সিটি নির্বাচনেও বিএনপির প্রার্থীরা পরাজয়ে ভয়ে টাকা পয়সা ব্যয় করতে রাজি হচ্ছে না। যার কারণে সিটি নির্বাচনে চরম অর্থসংকটে ভুগছে বিএনপি।
৪. এজেন্ট নিয়ে অবিশ্বাস: চতুর্থ যে সমস্যা দেখা দিচ্ছে তা বিএনপির নেতা ও কর্মীদের মাঝে অবিশ্বাস প্রচণ্ডভাবে দানা বেঁধেছে। কেউ কাউকে বিশ্বাস করতে পারছে না। খুলনা ও গাজীপুর সিটি নির্বাচনের পর কেন্দ্রের কাছে রিপোর্ট আসছে যে বিএনপির পোলিং এজেন্টদেরকে কিনে ফেলা হয়েছে। পোলিং এজেন্টদের কিনে ফেলার পর তাঁরা এলাকায় থাকে না। প্রথমে বিএনপি ভেবেছিল সরকার পোলিং এজেন্টদের গুম বা আটক করেছে। পরবর্তীতে দেখা যায় সরকার এদের কিছুই করে নাই। তারাই কয়েকদিনের জন্য এলাকায় বাহিরে চলে গিয়েছে। এজেন্ট নিয়ে অবিশ্বাসের কারণে এই তিন সিটি নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীরা এখন আর কাউকে পোলিং এজেন্ট দিতে কাউকে বিশ্বাস করতে পারছে না। আবার কর্মীরা ভাবছে তিনি (মেয়র প্রার্থী) তো আমাদের বিশ্বাসই করে না তাঁর সঙ্গে কি কাজ করব। সুতরাং অবিশ্বাস বিএনপির সিটি নির্বাচনে বর্তমান অবস্থায় জন্য অন্যতম একটি কারণ।
৫. জামাত ও অন্যান্য ইসলামি দলের ভোট: সিলেট সিটিতে বিএনপির ২০ দলীয় জোটের শরিক জামাত তাঁদের মেয়র প্রার্থী দিয়েছে। রাজশাহী ও বরিশালে সিটিতে মেয়র পদে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী অংশগ্রহণ করেছে। যার কারণে দেখা যাচ্ছে যে জামাত ও অন্যান্য কট্টরপন্থী ইসলামি দলগুলোর ভোট, যা বিগত বেশির ভাগ সময়ে বিএনপির বাক্সে পরত। কিন্তু এবারের চিত্র ভিন্ন জামাত ও অন্যান্য ইসলামি দলগুলোর ভোট কয়েক ভাগে ভাগ হয়ে যাবে। জামাত ও অন্যান্য ইসলামি দলের ভোটে অংশগ্রহণ করাটাও বিএনপির জন্য হতাশার অন্যতম একটি কারণ।
দলীয় নির্দেশে বিএনপির মেয়র প্রার্থীরা আসন্ন রাজশাহী, সিলেট ও বরিশাল সিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেও তাঁদের মধ্যে ভোটের যে আনন্দ ও জয়ের জন্য যে স্পৃহা তাঁর কোনটাই নাই।
বাংলা ইনসাইডার/আরকে/জেডএ
মন্তব্য করুন
কাউন্সিল বিএনপি তারেক জিয়া মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বেগম খালেদা জিয়া
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
চার ধাপে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এ পর্যন্ত (তৃতীয় ধাপ) ২০৪ জনকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় তাদের বহিষ্কার করা হয়।
এরমধ্যে তৃতীয় ধাপের নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় তৃণমূলের ৫৫ নেতাকে বহিষ্কার করে বিএনপি। আর প্রথম ধাপে ভোটের জন্য ৮০ জন, দ্বিতীয় ধাপে ৬৯ জনকে বহিষ্কার করে দলটি।
বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে উপজেলাসহ কোনো নির্বাচনে অংশ না নিচ্ছে না বিএনপি। গত ১৬ এপ্রিল দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, শেখ হাসিনার সরকার ও তার আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন, বেসামরিক ও পুলিশ প্রশাসন একটি অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করতে পারে না। অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিবেশ নেই। তাই উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেবে না দল।
দেশে চার ধাপে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তফসিল অনুযায়ী, গত ৮ মে প্রথম ধাপে ১৩৯টি উপজেলায় ভোট গ্রহণ হয়। এই ধাপের নির্বাচনে বিএনপির বহিষ্কৃত ৭ জন চেয়ারম্যান পদে, ৩ জন ভাইস চেয়ারম্যান পদে জয়লাভ করে বলেও জানা যায়।
দ্বিতীয় ধাপের ১৬১টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের ভোট গ্রহণ করা হবে ২১ মে। তৃতীয় ধাপে ১১২টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচন ২৯ মে অনুষ্ঠিত হবে। চতুর্থ ধাপের উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ৫ জুন।
মন্তব্য করুন
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরে যেতে পারেন এমন গুঞ্জন রয়েছে। তিনি জেল থেকে বেরিয়ে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে মহাসচিবের দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। বেগম খালেদা জিয়া এই বিষয়টি নিয়ে তাকে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন। তবে তারেক জিয়া এ বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া দেননি বলে জানা গিয়েছে। বরং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যদেরকে তারেক জিয়া জানিয়েছেন, কাউন্সিলের আগে বিএনপিতে নেতৃত্বের পরিবর্তন নয়। তবে বিএনপির কাউন্সিল কবে, কীভাবে হবে- এ সম্পর্কে কোন বিস্তারিত তথ্য জানা যায়নি।
সরকারের বিরুদ্ধে নতুন করে আন্দোলন শুরু করার লক্ষ্যে প্রস্তুতি গ্রহণ করছে দীর্ঘ দিন ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি। তারা সাম্প্রতিক সময়ে আবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক শুরু করেছে। তবে এসব বৈঠকে যুগপৎ আন্দোলনের কথা বলা হলেও বিএনপি এখন পর্যন্ত সরকার বিরোধী কোন জোট করতে রাজি নয়। ২০ দলীয় জোট আনুষ্ঠানিকভাবে ভেঙে যাওয়ার পর বিএনপি এখন পর্যন্ত জোটগত ভাবে কোন আন্দোলন করেনি। তবে বিভিন্ন সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তারা সম্পর্ক রেখেছে। ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত এই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তারা যুগপৎ আন্দোলন করেছিল। এখন আবার নতুন করে যুগপৎ আন্দোলন শুরু করার জন্য বিএনপির পক্ষ থেকে এই সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে যোগাযোগ করা হচ্ছে। তবে রাজনৈতিক দলগুলো বিএনপির ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব দেখাচ্ছে না।