নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০০ পিএম, ১১ জুলাই, ২০১৮
বিএনপির নেতৃবৃন্দ ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছেন যে, দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া শিগগিরই মুক্তি পাচ্ছেন না। এদিকে নির্বাচন কমিশন অনানুষ্ঠানিক ভাবে বিএনপিকে জানিয়ে দিয়েছে, তাদের গঠনতন্ত্র কমিশনে গ্রহণযোগ্য হচ্ছে না। বেগম জিয়ার মুক্তির আন্দোলন, আইনি লড়াই, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে অন্দোলন, তিন সিটি নির্বাচনসহ নানা রকম চাপের মধ্যে আছে বিএনপি। এরমধ্যেই নির্বাচন কমিশনের এই তথ্য নতুন চাপ হিসেবে দেখা দিয়েছে। কারণ নির্বাচনে গঠনতন্ত্র গ্রহণযোগ্য করতে হলে বাদ দেওয়া ৭ ধারা বলবৎ রাখতে হবে। আর তখন দুর্নীতির দায়ে কারান্তরীণ খালেদা জিয়া ও লন্ডনে পলাতক তারেক জিয়া বিএনপির নেতৃত্বে থাকতে পারবেন না। তাই এখন বিএনপির মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে, কে হবেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান?
গতকাল মঙ্গলবার বিএনপির চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে দলটির সিনিয়র নেতাদের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বেগম জিয়ার মুক্তির আন্দোলন, আইনি লড়াই, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে অন্দোলন, তিন সিটি নির্বাচনের চেয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান প্রশ্নেই আলোচনা হয় বেশি। নির্বাচন কমিশনের অনানুষ্ঠানিক তথ্য নিয়ে আলোচনায় বসেন বিএনপি নেতারা। এখন পদক্ষেপ কী হবে তা নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করেও কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেননি তাঁরা।
গতকাল গুলশানের বৈঠক থেকেই বিএনপি নেতারা বেগম জিয়ার ভাই শামীম ইস্কান্দারের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করেন। নির্বাচন কমিশনের অনানুষ্ঠানিক তথ্যের কথা শামীম ইস্কান্দারকে জানানো হয়। বেগম জিয়ার সঙ্গে কথা বলেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা হয়। আর এ কারণেই বেগম জিয়ার সঙ্গে দেখা করার জন্য হঠাৎ করেই এতটা উদগ্রীব হয়ে পড়েছেন বিএনপি নেতারা। বিএনপি দ্রুত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বিষয়ে সিদ্ধান্তে আসতে চায়, যেন নির্বাচন কমিশনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণার পর বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যেই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বিষয়টি জানাতে পারে।
জানা গেছে, গতকাল বৈঠকে ভারপ্রাপ্ত হতে পারেন সম্ভাব্য এমন কয়েকজনের বিষয়ে কথা হয়। সম্ভাব্য প্রার্থীদের শুরুতেই ছিলেন ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তালিকা অনুযায়ী স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মধ্যে তিনি সবচেয়ে সিনিয়র। কিন্তু ড. মোশাররফকে এই পদে আনা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কয়েকজন বলেন, তাঁর বিরুদ্ধে অনেকগুলো মামলা আছে। তাঁর কোনো কিছু হলে তখন কি আবার পরিবর্তন করা হবে? এমন পরিবর্তন তো বার বার করা যায় না। এই প্রেক্ষাপটে বাদ পড়েন ড. মোশাররফ।
বিএনপির মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করা নিয়েও আলোচনা হয়। কিন্তু সেখানেও বিপত্তি। কারণ ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করা মহাসচিব হবেন কে? বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘মির্জা ফখরুলকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করা হলে পদক্রম অনুযায়ী মহাসচিব হন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। রিজভী দল চালাবে, কথা বলবে আর আমরা তাই শুনবো?’ এই বিবেচনায় সম্ভাব্য ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আলোচনা থেকে বাদ পড়েন মির্জা ফখরুলও।
বিশ্লেষকরা বলেন, বিএনপি যখনই কোনো বড় চাপে পড়েছে তখনই উদ্ভট কোনো সিদ্ধান্ত নিয়েছে, পদে নিয়ে এসেছে সম্পূর্ণ বাইরের কাউকে। এর আগে ডা. বদরুদ্দোজ্জা চৌধুরীকে রাষ্ট্রপতি থেকে বাদ দেওয়া হলে সেই স্থলে নিয়ে আসা হয়েছিল ইয়াজউদ্দিন আহমেদকে। ৯১ সালে রাষ্ট্রপতি করা নিয়ে বিপদে পড়লে বিএনপি নিয়ে এসেছিল আবদুর রহমান বিশ্বাসকে, যিনি ছিলেন ওই সময় সম্পূর্ণ অপরিচিত। আর এই অপরিচিত, ‘আউট অব দ্য বক্স’ ব্যক্তিদের রেকর্ডও ভালো না।
জানা গেছে, এবার বিএনপির এমন অকুল পাথার সময়ে জিয়া পরিবারের পক্ষ থেকে ভারপ্রাপ্ত পদের জন্য ভাবা হয়েছে ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকারকে। এই প্রবীণ আইনজীবীর সবচেয়ে বড় সুবিধাটি হলো তাঁর বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। বিএনপি আমলে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি ও স্পিকার থাকা ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন কখনো বেগম জিয়া ও তারেকের কোনো কথার বাইরে যাবে না, অন্তত আগের রেকর্ড তাই বলে। তবে জমির উদ্দিন সরকারকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করায়ও বিপদ আছে। সেক্ষেত্রে ব্যারিস্টার মওদুদ, ড. খন্দকার মোশাররফের মতো সিনিয়র নেতারা স্বভাবতই তাঁকে মানবেন না।
এখন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আলোচনায়ই চাপা পড়েছে সব ইস্যু। খালেদার মুক্তির জন্য আন্দোলন, নির্বাচনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন, সিটি নির্বাচনের প্রচারণা সবকিছু ছাপিয়ে এখন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হওয়া নিয়েই টালমাটাল বিএনপি।
বাংলা ইনসাইডার/জেডএ
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রথম দফায় ১৩৯টি উপজেলা নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। যথারীতি বিরোধী দল বিহীন এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয় জয়কার। আওয়ামী লীগের নেতারাই অধিকাংশ উপজেলায় নিরঙ্কুশভাবে বিজয়ী হয়েছে। কিন্তু তারপরেও উপজেলা নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে সন্তুষ্টি নেই। আওয়ামী লীগের মধ্যে এক ধরনের অস্বস্তি এবং শীর্ষ নেতাদের মধ্যে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিরক্তি কাজ করছে।
নানা কারণে উপজেলা নির্বাচন আওয়ামী লীগের জন্য ইতিবাচক ফলাফল আনতে পারেনি বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। তারা উপজেলা নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করে উদ্বিগ্ন এবং দল ও গণতন্ত্রের জন্য সামনের দিনগুলোতে আরও সংকট অপেক্ষা করছে বলেই মনে করছেন আওয়ামী লীগের একাধিক দায়িত্বশীল নেতা।
প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সামনে পাঁচটি সংকটকে উন্মোচন করেছে। এর মধ্যে রয়েছে-
১. ভোটার উপস্থিতি কম: উপজেলা নির্বাচনে ভোটের হার এবার সর্বনিম্ন হয়েছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর যতগুলো উপজেলা নির্বাচন হয়েছে তার মধ্যে এবার ভোট পড়েছে সবচেয়ে কম। ২০০৮ এর ভূমিধস বিজয়ের পর প্রথম আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচন হয় ২০০৯ সালে। সেই উপজেলা নির্বাচনে ৬৮ ভাগের বেশি ভোট পড়েছিল। দ্বিতীয় দফায় ৬১ ভাগ ভোটার উপজেলা নির্বাচনে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছিলেন। ২০১৯ সালে এই হার ছিল ৪০ শতাংশের বেশি।
কিন্তু এবার নির্বাচন কমিশনের হিসেব অনুযায়ী ৩৬ দশমিক ১০ শতাংশ ভোটার উপজেলা নির্বাচনে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছে। এটি কখনোই স্বস্তি দেওয়ার খবর নয়। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সাধারণত ভোটাররা উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে ভোট দেয়। কিন্তু এবার উপজেলা নির্বাচনে ভোটাররা উৎসাহ নেয়নি। এমনকি আওয়ামী লীগের যে রিজার্ভ সমর্থক বলে যারা পরিচিত সেই ভোটাররাও ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত ছিল না।
আওয়ামী লীগ সভাপতি দলের নেতা কর্মীদেরকে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করা, তারা যেন ভোটকেন্দ্রে যায় সে জন্য উৎসাহিত করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই নির্দেশ মাঠে প্রতিফলিত হয়নি। ভোটার উপস্থিতি কম থাকার ফলে আওয়ামী লীগের জন্য অস্বস্তির কারণ।
২. অভ্যন্তরীণ কোন্দল: আওয়ামী লীগের জন্য এই নির্বাচন ছিল অভ্যন্তরীণ কোন্দল মেটানোর মাধ্যম। এ কারণেই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরপরই আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপজেলা নির্বাচন উন্মুক্ত করে দেন। তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে, দলীয় প্রতীক উপজেলা নির্বাচনে ব্যবহার করা যাবে না। আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা আশা করেছিলেন, এ ধরনের সিদ্ধান্তের ফলে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের যে কোন্দল এবং বিভক্তি প্রকাশ্য রূপ নিয়েছিল তার কিছুটা হলেও অবসান ঘটবে।
কিন্তু বাস্তবে ঘটেছে উল্টো। উপজেলা নির্বাচন আওয়ামী লীগকে আরও বিভক্ত করেছে। বিশেষ করে যে সমস্ত স্থানে স্বতন্ত্রদের সাথে আওয়ামী লীগের বিরোধ ছিল, সেই বিরোধে গুলো আরও সহিংস রূপ নিয়েছে। এটি আওয়ামী লীগের জন্য একটি অশনী সংকেত।
৩. কেন্দ্রের নির্দেশ অমান্য করার প্রবণতা: আওয়ামী লীগের জন্য উপজেলা নির্বাচনে একটি বড় অস্বস্তির বিষয় ছিল কেন্দ্রের নির্দেশ অমান্য করা। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনদেরকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই নির্দেশ মাঠে প্রতিফলিত হয়নি। দু একজন মন্ত্রী-এমপি ছাড়া অধিকাংশই তাদের আত্মীয় স্বজনদেরকে নির্বাচনে প্রার্থী করেছেন এবং প্রভাব বিস্তার করে জিতিয়ে এনেছেন। এটি আওয়ামী লীগের জন্য একটি সতর্কবার্তা। কেন্দ্রীয় নির্দেশ অমান্য করার এই প্রবণতা যদি বাড়তে থাকে সেটি ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগের জন্য একটি খারাপ পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে বলেও অনেকে মনে করছেন।
৪. এলাকায় এলাকায় জমিদারতন্ত্র-পরিবারতন্ত্র কায়েম: এবার উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত মন্ত্রী-এমপিরা তাদের আত্মীয় স্বজনদেরকে মনোনয়ন দিয়েছেন, তারা এলাকায় এলাকায় একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করার চেষ্টা করছেন। এর ফলে বিভিন্ন এলাকায় একটি গোষ্ঠীতন্ত্র, পরিবারতন্ত্র বা জমিদারতন্ত্র কায়েম হচ্ছে। এটিও আওয়ামী লীগের জন্য একটি খারাপ সংবাদ বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
৫. অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনে অনীহা: আওয়ামী লিগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারবার নেতাকর্মীদেরকে বলেছিলেন যে- অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে হবে। কিন্তু দেখা গেছে, নির্বাচনে যারা শক্তিশালী প্রার্থী হয়েছেন তারা প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেছেন। পেশিশক্তির প্রয়োগ ঘটিয়েছেন, কালো টাকা ছড়িয়েছেন। আর এগুলো আওয়ামী লীগের ইমেজ নষ্ট করেছে এবং জনগণের কাছে ভুল বার্তা দিয়েছে। এই সমস্ত অস্বস্তিগুলো উপজেলা নির্বাচনের মাধ্যমে স্পষ্ট হয়েছে। এখন ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগ কীভাবে এই সংকটগুলো কাটিয়ে উঠবে, সেটাই দেখার বিষয়।
উপজেলা নির্বাচন আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি ওবায়দুল কাদের
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রথম দফায় ১৩৯টি উপজেলা নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। যথারীতি বিরোধী দল বিহীন এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয় জয়কার। আওয়ামী লীগের নেতারাই অধিকাংশ উপজেলায় নিরঙ্কুশভাবে বিজয়ী হয়েছে। কিন্তু তারপরেও উপজেলা নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে সন্তুষ্টি নেই। আওয়ামী লীগের মধ্যে এক ধরনের অস্বস্তি এবং শীর্ষ নেতাদের মধ্যে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিরক্তি কাজ করছে।