নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:৫৯ পিএম, ১২ জুলাই, ২০১৮
তিন দিনের সফরে শুক্রবার বাংলাদেশের আসছেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোসহ লক্ষ্য নিয়েই ভারতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই সফর। আর সফরে তিনটি সমঝোতা স্মারক ও চুক্তি সই হবে। এই সফরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসবেন রাজনাথ সিং। দুই দেশের সীমান্ত পরিস্থিতি ও সীমান্ত ব্যবস্থাপনা নিয়েও দুই দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের মধ্যে আলোচনা হবে বলে জানা গেছে। ঢাকা সফরকালে রাজনাথ সিং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গেও বৈঠক করবেন। এছাড়া এই সফরে নতুন ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্রও উদ্বোধন করবেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। প্রায় ৫০টি ভিসা আবেদন কাউন্টার সংবলিত বারিধারায় যমুনা ফিউচার পার্কে ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্রটি হতে যাচ্ছে বাংলাদেশে ভারতের সবচেয়ে বড় ভিসা আবেদন কেন্দ্র। রোববার রাজশাহীর সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে যাবেন এবং বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তথ্য প্রযুক্তি ও ফরেনসিক ল্যাবের উদ্বোধন করবেন রাজনাথ সিং। ভারতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে আসছেন দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সেক্রেটারি (বিএম) বারজ রাজ শর্মা, অতিরিক্ত সচিব এ কে মিসরা, যুগ্মসচিব সাতিনদিয়া গর্গসহ ১২ জনের এক প্রতিনিধিদল।
ভারতে ক্ষমতাসীন বিজেপির দ্বিতীয় শক্তিশালী ব্যক্তি বলা হয় রাজনাথ সিংকে। তাই নির্বাচনের আগে তাঁর বাংলাদেশে সফর উল্লিখিত বিষয়গুলোর বাইরেও বিশেষ রাজনৈতিক গুরুত্ব বহন করে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
বাংলাদেশের আওয়ামী লীগ সরকারের ওপর ভারতের আস্থার অন্যতম কারণ হলো ‘ক্রস বর্ডার ভায়োলেন্স‘ বন্ধ হওয়া। আগে বাংলাদেশের ভূমি ব্যবহার করে ভারতে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালাতো। শেখ হাসিনার সরকার এটি পুরোপুরি বন্ধ করতে পেরেছে। আর এ কারণেই এখনো বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকারের উপর আস্থা রেখেছে ভারত। সম্প্রতি বিএনপির নেতাদের ভারত সফর এবং সেখানে ক্ষমতাসীন বিজেপির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে যোগাযোগের পরও আওয়ামী লীগেই আস্থা অটুট ভারতের। রাজনাথ সিংয়ের বাংলাদেশে সফরের প্রাক্কালে তিনটি বিষয়ের মধ্যে দিয়ে সরকারের ওপর ভারতের এখনো আস্থাশীলতার প্রতিফলন দেখা গেছে। ঘটনা তিনটি হলো:
১. বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ব্রিটিশ আইনজীবী লর্ড কার্লাইলকে দিল্লি বিমানবন্দর থেকেই লন্ডনে ফেরত পাঠিয়েছে ভারত। গতকাল বুধবার স্থানীয় সময় রাত ১০টার দিকে দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছালে ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা কার্লাইলকে জানান ভিসা বাতিল করায় তাঁর ভারতে প্রবেশের অনুমতি নেই। এরপর তাঁকে লন্ডনের ফিরতি ফ্লাইটে তুলে দেওয়া হয়। দিল্লিতে একটি সংবাদ সম্মেলন করে বেগম জিয়ার দণ্ড নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের সমালোচনাই ছিল কার্লাইলের উদ্দেশ্য। তবে ভারতের হস্তক্ষেপে বিতর্কিত এই ব্রিটিশ আইনজীবীর সেই ইচ্ছা পূরণ হয়নি।
২. ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সঙ্গে দেখা করতে সময় চেয়েছিল বিএনপি। কিন্তু সময় দেওয়া হয়নি বিএনপিকে। বলা হয়েছে, রাজনাথ সিংয়ের সফরসূচি কর্মসূচিতে ঠাসা। এমন কর্মসূচির মধ্যে থেকে বিএনপির সঙ্গে আলোচনার জন্য আলাদা করে সময় বের করা সম্ভব নয়। এর আগে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিজয় কেশব গোখলে ঢাকায় এসেছিলেন। তখনও বিএনপি ভারত সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এই কর্মকর্তার সময় চেয়েও পায়নি।
৩. গতকাল বুধবার ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলাকে গণভবনে ডেকেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে ভারতীয় হাইকমিশনার আশ্বস্ত করেছেন যে, বাংলাদেশ যেমন তার জমি ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী, সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করতে দেয় না, তেমনি ভারতও বাংলাদেশের কোনো সন্ত্রাসী, বিচ্ছিন্নতাবাদী বা বাংলাদেশ বিরোধী কোনো তৎপরতায় ভারতের ভূখন্ড ব্যবহার করতে দেবে না।
সম্প্রতি ভারতে একাধিকবার সফর করেছেন বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। বিএনপির দাবি, ক্ষমতাসীন বিজেপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃত্বের সঙ্গেই আলোচনা করেছেন নেতারা। এরপরও এখনো ভারতের আস্থাশীলতার জায়গায় কেন যেতে পারেনি বিএনপি? সম্প্রতি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেল উত্তর। নিজেদের মতোই ভারতেও ক্ষমতাসীনদের উগ্রবাদী শরিকদের সঙ্গেই যোগাযোগ করেছিল বিএনপির নেতারা।
ভারতে ক্ষমতাসীন বিজেপিরই একটি শাখা সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস)। আর এই আরএসএসের সঙ্গে সম্প্রতি যোগাযোগ রাখছে অল ইন্ডিয়া মাইনরিটি ফোরাম নামের একটি সংগঠন। আরএসএসের মাধ্যমেই বিজেপির কাছ থেকে সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করছে তারা। কিন্তু আদলে অল ইন্ডিয়া মাইনরিটি ফোরামকে উগ্রবাদী বা জঙ্গি সংগঠন বলেও মনে করেন অনেকে। আর এদের মাধ্যমেই দিল্লিতে লর্ড কার্লাইল সংবাদ সম্মেলনের চেষ্টা করেছিল।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ভারতে বিএনপি নেতারা বারবার সফর করেও মূলধারার সঙ্গে কোনো আলোচনাতেই যেতে পারেনি। যোগাযোগ করেছে ক্ষমতাসীনদের আশেপাশে থাকা বিএনপির মতোই উগ্রবাদী ধর্মান্ধ কিছু সংগঠনের সঙ্গে। তারা আরএসএস এবং অল ইন্ডিয়া মাইনরিটি ফোরামের মতো সংগঠনগুলোর নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে ভারত সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছিলেন। তবে ভারত সরকারের পদক্ষেপই বলছে দৃষ্টি আকর্ষণে বিএনপি ব্যর্থ।
কার্লাইলকে ভারতে সংবাদ সম্মেলন করতে না দিয়ে ফেরত পাঠানো, রাজনাথ সিংয়ের বিএনপিকে সময় না দেওয়া এবং হর্ষবর্ধন শ্রিংলার আশ্বস্ত করা একটি বার্তাই স্পষ্ট করে, আর তা হলো বিএনপি এখনো ভারতের আস্থা আর্জন করতে পারেনি। ভারত এখনো আস্থাশীল হতে পারছে না বিএনপির ওপর। বিএনপিকে এখনো ধর্মনিরপেক্ষ উদারমনা রাজনৈতিক দল হিসেবে গ্রহণ করতে পারছে না ভারত।
বাংলা ইনসাইডার/জেডএ
মন্তব্য করুন
নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিতেই বিএনপি লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি পালন করছে বলে জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন।
শনিবার (১৮ মে) রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির উপজেলা নির্বাচনবিরোধী লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।
বিএনপিকে উপহাস করে ওবায়দুল কাদের বলেন, গণঅভ্যুত্থান থেকে তারা লিটলেট বিতরণ কর্মসূচিতে নেমে এসেছে। এবার বুঝুন তাদের অবস্থা।
তিনি বলেন, সরকারের ধারাবাহিকতার কারণেই আজ দেশের এত উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি হয়েছে। জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর কাছে আবেদন করে বাকশালের সদস্য হয়েছিলেন, কিন্তু বিএনপি এবং মির্জা ফখরুল বাকশালকে গালিতে পরিণত করতে চায়।
তিনি আরও বলেন, গণমাধ্যমও লিখছে ভারত বিরোধিতার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করে দেখবে বিএনপি। ভারত প্রশ্নে এখন মধ্যপন্থা নিতে চায় বিএনপি।
সেতুমন্ত্রী বলেন, দেশে গণতন্ত্রের কোনো ঘাটতি নেই, সংসদ এবং সংসদের বাইরেও সরকারের বিরোধিতা জারি আছে। সরকার কোনো দল বা গোষ্ঠীর ওপর দমনপীড়ন চালাচ্ছে না। গণতন্ত্রের বিচারে বিশ্বের অনেক দেশের চেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ।
মন্তব্য করুন
কাউন্সিল বিএনপি তারেক জিয়া মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বেগম খালেদা জিয়া
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিতেই বিএনপি লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি পালন করছে বলে জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন। শনিবার (১৮ মে) রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির উপজেলা নির্বাচনবিরোধী লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরে যেতে পারেন এমন গুঞ্জন রয়েছে। তিনি জেল থেকে বেরিয়ে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে মহাসচিবের দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। বেগম খালেদা জিয়া এই বিষয়টি নিয়ে তাকে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন। তবে তারেক জিয়া এ বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া দেননি বলে জানা গিয়েছে। বরং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যদেরকে তারেক জিয়া জানিয়েছেন, কাউন্সিলের আগে বিএনপিতে নেতৃত্বের পরিবর্তন নয়। তবে বিএনপির কাউন্সিল কবে, কীভাবে হবে- এ সম্পর্কে কোন বিস্তারিত তথ্য জানা যায়নি।
সরকারের বিরুদ্ধে নতুন করে আন্দোলন শুরু করার লক্ষ্যে প্রস্তুতি গ্রহণ করছে দীর্ঘ দিন ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি। তারা সাম্প্রতিক সময়ে আবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক শুরু করেছে। তবে এসব বৈঠকে যুগপৎ আন্দোলনের কথা বলা হলেও বিএনপি এখন পর্যন্ত সরকার বিরোধী কোন জোট করতে রাজি নয়। ২০ দলীয় জোট আনুষ্ঠানিকভাবে ভেঙে যাওয়ার পর বিএনপি এখন পর্যন্ত জোটগত ভাবে কোন আন্দোলন করেনি। তবে বিভিন্ন সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তারা সম্পর্ক রেখেছে। ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত এই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তারা যুগপৎ আন্দোলন করেছিল। এখন আবার নতুন করে যুগপৎ আন্দোলন শুরু করার জন্য বিএনপির পক্ষ থেকে এই সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে যোগাযোগ করা হচ্ছে। তবে রাজনৈতিক দলগুলো বিএনপির ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব দেখাচ্ছে না।