নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০০ পিএম, ১৬ জুলাই, ২০১৮
বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে ইইউসহ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অনান্য দেশগুলোর আগ্রহ প্রচণ্ড। কিন্তু সরকারের শীর্ষ মহলের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ সেভাবে পাচ্ছেন না তারা। সম্প্রতি সরকারের নীতি নির্ধারক পর্যায়ের ব্যক্তিদের সঙ্গেও কূটনীতিকদের দেখা-সাক্ষাতের সুযোগ যৎসামান্য বলে জানা গেছে। আর এই কারণেই ইইউ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য সহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা একজোট হয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে যোগাযোগের পুরো দায়িত্বটিই তারা ভারতকে দেবেন। বর্তমান সময়ে ভারতের কূটনীতিকদের সঙ্গে বাংলাদেশের নীতি নির্ধারক পর্যায়ের যোগাযোগ ভালো। আর এই লক্ষ্যেই বাংলাদেশের নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলাকে একটি চায়ের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন কূটনীতিকরা। জানা গেছে, ওই চা চক্রে বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে ভারতের কূটনীতিকদের সঙ্গে অন্যান্য দেশের কূটনীতিকদের আলোচনা হবে।
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, ইইউ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের উপলব্ধি, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি বাংলাদেশের এই দুই প্রধান রাজনৈতিক দলই ভারতের উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। বাংলাদেশের রাজনীতিকে ভারতের প্রভাব যেকোনো দেশের চেয়ে বেশি বলে মনে করা হচ্ছে।
বিশ্লেষকদের মতে, আসলে বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারত ছাড়া অন্য কোনো দেশেরই তেমন প্রভাব নেই। চীন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কেউই এখন বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারতের মতো প্রভাব রাখতে পারছে না। আর সেই কারণেই কূটনীতিকরা ভারতের মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি মধ্যস্থতা করতে চাইছে। আর বাংলাদেশে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে মধ্যস্থতা নতুন নয়। এর আগে ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে জাতিসংঘ মধ্যস্থতার চেষ্টা করেছিল। জাতিসংঘের রাজনীতি বিষয়ক সাবেক সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো ঢাকা এসেছিলেন। আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে তিনি সংলাপের ব্যবস্থা করেছিলেন। তবে তাঁর ওই প্রচেষ্টা বিএনপির গো ধরা সিদ্ধান্তের কারণে ব্যর্থ হয়।
বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের মতে, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুটি দলই ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে চায়। বর্তমানে বৃহৎ অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হওয়া প্রতিবেশী ভারতকে চটিয়ে কোনো রাজনৈতিক দলই রাজনীতি করতে চায় না। তাই বাংলাদেশের অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কূটনীতিকদের কাছে ভারতই শেষ ভরসা।
জানা গেছে, আগামী দু-তিন দিনের মধ্যেই ভারতীয় হাইকমিশনার সহ কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে পারেন ইইউ প্রতিনিধি, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা। ওই বৈঠকে বাংলাদেশে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য ভারতকে সঙ্গে কাজ করবেন তারা। তাদের আশা, ভারত দুই পক্ষকে সমঝোতায় আনতে পারবে।
কিন্তু অনেক বিশ্লেষক ভিন্ন আরেকটি ইস্যুর কথা তুলেছেন। তাদের মতে, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ইইউ যেমন বাংলাদেশে অংশমূলক নির্বাচন চায়, তেমনি ভারতও চাইবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু সেই নির্বাচনের মাধ্যমে জঙ্গি, সন্ত্রাসী ও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা আছে এমন কেউ ক্ষমতায় আসুক তা নিশ্চয়ই চাইবে না ভারত। কারণ এর ফলে অন্য কোনো দেশের তেমন কোনো ক্ষতি না হলেও সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হবে ভারত।
বিশ্লেষকদের মতে, ভারত তাদের বর্তমান অর্থনৈতিক দৃঢ়তার জন্য অনেকাংশেই বাংলাদেশের ওপর কৃতজ্ঞ। কারণ বাংলাদেশে ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের আশ্রয় প্রশয় বন্ধ হওয়ার কারণেই এই অংশে শান্তি ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। পূর্বাঞ্চল নিয়ন্ত্রণে ভারতকে নিরাপত্তার জন্য বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করতে হতো, যা এখন নেই বললেই চলে। এই বিপুল অর্থ এখন যুক্ত হচ্ছে ভারতের অর্থনীতিতে। ভারত নিশ্চয়ই এমন ধারাই অব্যাহত রাখতে চাইবে। তারা নিশ্চয়ই দেশটির পশ্চিম সীমান্তের মতো কোনো উপদ্রব চাইবে না পূর্ব সীমান্তেও।
সম্প্রতি ভারতের পক্ষ থেকেও বিভিন্ন সময় তাদের স্থিতিশীলতার জন্য বাংলাদেশকে ধন্যবাদও দেওয়া হয়েছে। অতি সম্প্রতি তিন দিনের সফরে বাংলাদেশে এসে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দমনের জন্য ধন্যবাদ জানান। জঙ্গি দমনে বাংলাদেশকে বিশ্বের রোল মডেল হিসেবে মন্তব্য করেন রাজনাথ সিং। আর আসাদুজ্জামান খান কামাল ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে নিশ্চিত করেছেন, বাংলাদেশের এক ইঞ্চি জমিও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের আবাস হতে দেওয়া হবে না।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারত অবশ্যই বাংলাদেশে এমন একটি নির্বাচন চায় যা অংশগ্রহণমূলক হবে। তবে একই সঙ্গে তারা চাইবে এই নির্বাচনে যেন বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মদদদাতা, জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা আছে এমন কোনো দল ক্ষমতায় না আসে। জামাত, যুদ্ধাপরাধী গোষ্ঠীর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কেউ বাংলাদেশ আসুক ভারত নিশ্চয়ই তা চাইবে না। ভারত নিশ্চয়ই চাইবে না আবার ১০ ট্রাকের মতো অস্ত্র আসুক এবং এমন অস্ত্র তাদের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের কাছে যাক। বাংলাদেশের নির্বাচন পাকিস্তানপন্থী কোনো দল আসলে ভারতকে আবার এক দশক আগের অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে ফিরে যেতে হতে পারে।
তাই বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে নিজেদের পরিকল্পনার বাস্তবায়নের চেষ্টার আগে অন্যান্য দেশের কূটনীতিকদের এটাও বুঝতে হবে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ভারত কি চায়। এর পরই ভারতকে দিয়ে নিজেদের চাওয়ার বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা তারা করতে পারে বলে মত দেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা।
বাংলা ইনসাইডার/জেডএ
মন্তব্য করুন
সরকারবিরোধী আগামীর আন্দোলন শুরুর আগে কর্মসূচি প্রণয়ন ও আন্দোলন পরিচালনায় শক্তিশালী লিয়াজোঁ কমিটি চায় বিএনপির মিত্ররা। তারা মনে করে, লিয়াজোঁ কমিটি না থাকায় বিগত আন্দোলন পরিচালনায় এক ধরনের সমন্বয়হীনতা ছিল।
কারণ, যুগপতের সব দল ও জোটের সঙ্গে বিএনপির পৃথক বৈঠক শেষে তাদের স্থায়ী কমিটিতে কর্মসূচি চূড়ান্ত হওয়াকে যথাযথ প্রক্রিয়া এবং আন্দোলনের সঠিক প্ল্যাটফর্ম বলে মনে করে না শরিকরা, বিশেষ করে গণতন্ত্র মঞ্চ। তাই এবার এ প্রশ্নে একটা সিরিয়াস মীমাংসা চান মঞ্চের নেতারা।
বিএনপির সঙ্গে বুধবার (১৫ মে) রাতে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে লিয়াজোঁ কমিটি গঠনের পরামর্শ দিয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা বলেন, প্রতিটি জোট ও দল থেকে একজন করে নিয়ে ১০-১২ সদস্যবিশিষ্ট একটি লিয়াজোঁ কমিটি গঠন করতে হবে। সেই লিয়াজোঁ কমিটিতে আলোচনার ভিত্তিতে আন্দোলনের কর্মসূচি প্রণীত হবে। তার আগে নিজ নিজ দল ও জোটের সিদ্ধান্ত নিয়ে সংশ্লিষ্ট নেতারা বৈঠকে উপস্থিত হবেন।
নব্বইয়ে এরশাদবিরোধী আন্দোলনসহ অতীতের আন্দোলনগুলোতে লিয়াজোঁ কমিটি এভাবে কাজ করেছে। কিন্তু বিগত আন্দোলনে এ প্রক্রিয়ায় কর্মসূচি প্রণীত হয়নি। পাঁচ-দশ মিনিট আগে মিত্রদের কর্মসূচির বিষয়ে জানানো হতো এবং কর্মসূচির সঙ্গে সহমত না হলেও সেটাই তারা ঘোষণা করতেন। বৈঠক সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।
যুগপৎ আন্দোলন পুনরুজ্জীবিত করে সরকারের পদত্যাগ ও নতুন নির্বাচনের দাবিতে ঈদুল আজহার পর মাঠে নামার পরিকল্পনা করছে বিএনপি। সেই আন্দোলনের কর্মকৌশল নির্ধারণে পরামর্শ নিতে গত রোববার থেকে মিত্রদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করছে দলটি। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর এ ধরনের বৈঠক এবারই প্রথম। এর অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার (১৬ মে) এনডিএম, বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ এবং মিয়া মসিউজ্জামান ও ফারুক হাসানের নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গণতন্ত্র মঞ্চ ছাড়াও এর আগে গত সোমবার বিএনপির সঙ্গে বৈঠকে আন্দোলনের কর্মসূচি প্রণয়নে সমন্বয়হীনতা দূরীকরণে যুগপতের সব দল ও জোট থেকে দু-একজন করে নিয়ে শক্তিশালী লিয়াজোঁ কমিটি গঠনের ওপর জোর দেন সমমনা জোটের নেতারা।
মন্তব্য করুন
শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন বিএনপি
মন্তব্য করুন
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জাতীয় প্রেস ক্লাব
মন্তব্য করুন
বিএনপি ভারত বিরোধী মার্কিন বিরোধী মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
মন্তব্য করুন
শেখ হাসিনা বাহাউদ্দিন নাছিম আওয়ামী লীগ ঢাকা-৮
মন্তব্য করুন
১৯৮১ সালের ১৭ মে। স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ সভাপতি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেছিলেন এক বৃষ্টিমুখর দিনে। সেই দিনে লাখো মানুষ মানিক মিয়া এভিনিউতে জড়ো হয়েছিল জাতির পিতার কন্যাকে দেখার জন্য। তাদের শোক এবং আবেগ ছিল হৃদয়স্পর্শী। সারা বাংলাদেশ উত্তাল হয়েছিল। জাগরণের এক গান গেয়ে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বাংলাদেশের জন্ম হওয়ার পর থেকেই প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছে। এই সরকার পুরোপুরিভাবে নতজানু সরকারে পরিণত হয়েছে। শুধু ফারাক্কা নয়, গঙ্গার পানি নয়, বাংলাদেশের ১৫৪টি নদীতে পানি দিতে তারা গড়িমসি করে যাচ্ছে। তিস্তা নদীর পানি বণ্টন, এ করছি, এ হচ্ছে এমন করে সময় শেষ করছে সরকার। এ যে ব্যর্থতা এর মূল কারণ হচ্ছে, সরকারে যারা আছে তারা পুরোপুরিভাবে একটা নতজানু সরকার।