নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:৫৯ পিএম, ১৯ জুলাই, ২০১৮
সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির বিদ্রোহী মেয়র প্রার্থী বদরুজ্জামান সেলিম নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীকে সমর্থন দিয়ে তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। এরপরও অবশ্য বিএনপির প্রতিদ্বন্দ্বী আছে তাঁদেরই শরিকেই। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের দল এবং তাদের দীর্ঘদিনের সহযোগী জামাত থেকে দেওয়া প্রার্থীও প্রচারণা চলিয়ে যাচ্ছে সিলেটে। আর নগরের সাম্প্রতিক প্রচারণায় দেখা গেছে জামায়াতের প্রার্থী সিলেট মহানগর আমির এহসানুল মাহবুব জুবায়ের পক্ষে বিএনপি ছাড়া ২০ দলের শরিকদের সবাই কাজ করছে। সিলেটের স্থানীয় ‘এলডিপি’, ‘ন্যাপ’ এবং ২০ দলীয় জোটের অন্যান্য ইসলামী দলগুলো জামায়াতের মেয়র প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণার কাজ করছেন। প্রচারণার শুরু থেকেই জামাত ও অন্যান্য শরিকদের চাপে বেকায়দায় সিলেট সিটি নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী।
সিলেটের মতোই নিজেদের জোটের শরিক জামাতের কারণেই রাজশাহীতেও চাপে পড়েছে বিএনপি। মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করলেও জামাত কাউন্সিলর পর্যায়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। আর মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের পক্ষে এখনো পর্যন্ত কোনো প্রচারণায় দেখা যায়নি জামাতকে। অনানুষ্ঠিকভাবেই রাজশাহীতে বিএনপি বর্জন করেছে জামাত।
সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির জামাত নির্ভরতার কথা কারও অজানা নয়। কিন্তু খুলনা ও গাজীপুরে বিপুল ব্যবধানে বিএনপির মেয়র প্রার্থীদের ব্যর্থতার পর এখন জোটের মধ্যে থেকে বিরোধিতায় দিশেহারা বিএনপি। আওয়ামী লীগ প্রার্থী যেখানে তাদের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের নিরঙ্কুশ সমর্থন পাচ্ছে, সেখানে নিজেদের জোট থেকেই পাচ্ছে বিরোধিতা বিএনপি। অতি সম্প্রতি বিএনপি নেতারা নিজেদের জোটের বিরোধীতার জন্য দায়ী করছেন সরকারকে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, ‘বিরোধী রাজনৈতিক কণ্ঠ স্তব্ধ করার জন্য ২০ দলীয় জোটের উচ্চ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। জামায়াতকে আলাদা চাপে রাখা হয়েছে।’ আজ বৃহস্পতিবার রাজশাহীর লক্ষ্মীপুর এলাকায় বিএনপির মেয়র প্রার্থী মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের সঙ্গে নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন গয়েশ্বর। এসময় তিনি জামাতকে পাশে না পাওয়ার দোষ দেন সরকারকে। বিএনপি নেতাদের অভিযোগ সত্যতা আসলে কতটুকু?
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বরাবরই জামাত ছিল ইসলামিক ভোটের মূল দাবিদার। কিন্তু নির্বাচনের মাঠে না থাকায় অন্য ইসলাম পছন্দ দলগুলো তাঁদের ভোট পাচ্ছিল। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত খুলনা ও গাজীপুর সিটিতে দেখা গেছে, নির্বাচনে একাধিক ইসলাম পছন্দ দল থাকলেও মূলত ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনই জামাতের ভোট কেড়ে নিচ্ছে। জামাত নেতৃত্বের উপলব্ধি হলো, তারা নির্বাচনে না গেলে ইসলামিক ভোটগুলো ধীরে ধীরে বেহাত হয়ে যাবে। সিলেটে ইসলামিক ভোটের ব্যাংক বেশ সমৃদ্ধ। তাই বেশ আঁটঘাট বেঁধেই সেখানে মাঠে নেমেছে জামাত। অন্তত সিলেটের ইসলামিক ভোট বেহাত হতে দিয়ে চায়না জামাত।
জামাত ও ২০ দলীয় জোটের শরিকদের বিএনপি বিরোধিতার আরেকটি বড় কারণ হলো জোটে কোনো পাত্তা না পাওয়া। ২০ দল বলা হলেও সব নির্বাচনেই শুধু প্রার্থী দিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। গত ৪ জুন বিকেলে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে ২০ দলীয় জোটের এক বৈঠকে রাজশাহী, সিলেট ও বরিশাল এই তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে একক প্রার্থীর দেওয়ার কথা বলা হয়। ঐদিন বৈঠক শেষে ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়ক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান গণমাধ্যমকে এই কথা বলেন। কিন্তু এরপর বিএনপি সব ভুলে গেছে বলে দাবি জামাত নেতাদের। জামাতের পক্ষ থেকে একমাত্র সিলেট সিটিতেই মেয়র পদে ২০ দলের পক্ষ থেকে তাঁদের প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়ার প্রস্তাব ছিল। বিএনপির পক্ষ থেকে এই প্রস্তাবে শুরুতে সায়ও ছিল বলে দাবি জামাতের। তবে বাস্তবে তার প্রতিফলন দেখা যায়নি। যে কারণে জামাত বাধ্য হয়ে সিলেটে প্রার্থী দিয়েছে বলে দাবি দলটির নেতাদের।
বিশ্লেষকদের মতে, সরকারের চাপে নয় বরং বিএনপির স্বৈরাচারী মনোভাবের কারণেই এখন জামাত ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে জোট থেকে। আর শুধু জামাতই নয় জোটের অপর দলগুলোর মনোভাবও অনেকটা একই রকম। অতিসম্প্রতি ২০ দলের বৈঠকের দিকে খেয়াল করলেই দেখা যাবে বিএনপি বাদে অন্য দলগুলোর প্রতিনিধি কমছে। তাই বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের ভাঙ্গন এখন শুধু সময়ের ব্যাপার বলেই মত বিশ্লেষকদের।
বাংলা ইনসাইডার/জেডএ
মন্তব্য করুন
কাউন্সিল বিএনপি তারেক জিয়া মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বেগম খালেদা জিয়া
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
চার ধাপে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এ পর্যন্ত (তৃতীয় ধাপ) ২০৪ জনকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় তাদের বহিষ্কার করা হয়।
এরমধ্যে তৃতীয় ধাপের নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় তৃণমূলের ৫৫ নেতাকে বহিষ্কার করে বিএনপি। আর প্রথম ধাপে ভোটের জন্য ৮০ জন, দ্বিতীয় ধাপে ৬৯ জনকে বহিষ্কার করে দলটি।
বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে উপজেলাসহ কোনো নির্বাচনে অংশ না নিচ্ছে না বিএনপি। গত ১৬ এপ্রিল দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, শেখ হাসিনার সরকার ও তার আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন, বেসামরিক ও পুলিশ প্রশাসন একটি অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করতে পারে না। অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিবেশ নেই। তাই উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেবে না দল।
দেশে চার ধাপে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তফসিল অনুযায়ী, গত ৮ মে প্রথম ধাপে ১৩৯টি উপজেলায় ভোট গ্রহণ হয়। এই ধাপের নির্বাচনে বিএনপির বহিষ্কৃত ৭ জন চেয়ারম্যান পদে, ৩ জন ভাইস চেয়ারম্যান পদে জয়লাভ করে বলেও জানা যায়।
দ্বিতীয় ধাপের ১৬১টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের ভোট গ্রহণ করা হবে ২১ মে। তৃতীয় ধাপে ১১২টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচন ২৯ মে অনুষ্ঠিত হবে। চতুর্থ ধাপের উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ৫ জুন।
মন্তব্য করুন
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরে যেতে পারেন এমন গুঞ্জন রয়েছে। তিনি জেল থেকে বেরিয়ে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে মহাসচিবের দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। বেগম খালেদা জিয়া এই বিষয়টি নিয়ে তাকে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন। তবে তারেক জিয়া এ বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া দেননি বলে জানা গিয়েছে। বরং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যদেরকে তারেক জিয়া জানিয়েছেন, কাউন্সিলের আগে বিএনপিতে নেতৃত্বের পরিবর্তন নয়। তবে বিএনপির কাউন্সিল কবে, কীভাবে হবে- এ সম্পর্কে কোন বিস্তারিত তথ্য জানা যায়নি।
সরকারের বিরুদ্ধে নতুন করে আন্দোলন শুরু করার লক্ষ্যে প্রস্তুতি গ্রহণ করছে দীর্ঘ দিন ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি। তারা সাম্প্রতিক সময়ে আবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক শুরু করেছে। তবে এসব বৈঠকে যুগপৎ আন্দোলনের কথা বলা হলেও বিএনপি এখন পর্যন্ত সরকার বিরোধী কোন জোট করতে রাজি নয়। ২০ দলীয় জোট আনুষ্ঠানিকভাবে ভেঙে যাওয়ার পর বিএনপি এখন পর্যন্ত জোটগত ভাবে কোন আন্দোলন করেনি। তবে বিভিন্ন সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তারা সম্পর্ক রেখেছে। ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত এই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তারা যুগপৎ আন্দোলন করেছিল। এখন আবার নতুন করে যুগপৎ আন্দোলন শুরু করার জন্য বিএনপির পক্ষ থেকে এই সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে যোগাযোগ করা হচ্ছে। তবে রাজনৈতিক দলগুলো বিএনপির ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব দেখাচ্ছে না।