নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০০ পিএম, ২১ জুলাই, ২০১৮
এই বছরের ডিসেম্বরেই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করে একটি নির্বাচনী জোট করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। বিশেষ করে যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে বিএনপির জোট হবে এমন একটি জোর আলোচনা রাজনীতি পাড়ায় ছিল। গত রমজানে বিএনপি যুক্তফ্রন্টের আহ্বায়ক ও বিকল্পধারার সভাপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে নিজেদের ইফতার পার্টিতে নিয়ে এসেছিল, এমনকি তাঁকে ‘অভিভাবক’ হিসেবেও অভিহিত করেছিল। সে সময় যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে বিএনপির কথা হয়েছিল যে, তাঁরা যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে ২০ দলের বাইরে একটি আলাদা জোট গঠন করবে। জোট করতে বি. চৌধুরী প্রথম দিকে ভালোই উৎসাহী ছিলেন। এই উদ্দেশ্যে তিনি বিএনপির সঙ্গে কথা বলেছেন, মিটিং করেছেন, ইফতার পার্টিতেও গেছেন। কিন্তু পরবর্তীতে একটি পর্যায়ে গিয়ে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন তিনি।
জোট করবার উদ্দেশ্যে কেবল বি. চৌধুরীর সঙ্গেই নয়, অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গেও অনানুষ্ঠানিক আলোচনা করেছিল বিএনপি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিএনপির সঙ্গে কেউই জোট করেনি।
প্রকৃতপক্ষে কোনো দলই বিএনপির সঙ্গে প্রকাশ্য নির্বাচনী জোটে এবং আন্দোলনের জোটে যেতে রাজি নয়। কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী, জেএসডির সভাপতি আ স ম রব, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না - তাঁদের বিএনপির সঙ্গে জোট করার কোনো আগ্রহ নেই। এই নেতারা মনে করছেন বিএনপি যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে জোট করতে চাচ্ছে তা থেকে বিএনপির অন্য দলগুলোকে দেওয়ার কিছুই নেই। দলগুলোর বদ্ধমূল ধারণা, বিএনপি আসলে সঠিক রাজনীতি করছে না। কারান্তরীণ চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের মতো ইস্যুগুলো নিয়ে বিএনপির রাজনীতি স্বচ্ছ এবং সঠিক নয় বলে মনে করছে দলগুলো। পাশাপাশি সামনের নির্বাচনে যে রাজনৈতিক মেরুকরণ হবে তাতে বিএনপি নিজেদের জন্য যতগুলো আসন প্রত্যাশা করছে তাতে যুক্তফ্রন্টের জন্য বাকি যে আসনগুলো বরাদ্দ থাকবে তার সংখ্যা যুক্তফ্রন্টের জন্য খুব সম্মানজনক হবে না বলে মনে করছেন তারা। যুক্তফ্রন্ট বরং মনে করছে, অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জোট করে যদি তারা ৩০০ আসনের জন্য আলাদা নির্বাচন করে, তাদের জন্য সেটিই বেশি সম্মানজনক হবে। তাই যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে বিএনপির ঐক্যজোট করার যে চেষ্টা বিএনপি মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর করেছিলেন, সেই উদ্যোগটা পুরোপুরি ভেস্তে গেছে। এছাড়া বিএনপি যাদের সঙ্গে ঐক্য করতে চাচ্ছিল তাদের মধ্যে অন্যতম হলো কামাল হোসেনের গণফোরাম এবং বাম ফ্রন্ট। এই দলগুলোও ইতিমধ্যে বিএনপির সঙ্গে জোটে যেতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেছে।
আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে জোটের একটি হিড়িক পড়ে গেছে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপির জন্য দুঃসংবাদ হচ্ছে দলগুলোর কোনোটিই তাঁদের সঙ্গে জোটে যেতে আগ্রহী না।
এই মুহূর্তে বিতর্কিত ইসলামী দল জামায়াতে ইসলামী বিএনপির সঙ্গে আছে। এছাড়া বিরোধী দলে অন্য যেসব ইসলামী দলগুলো আছে তাঁরা বিএনপির সঙ্গে জোট করতে মোটেও আগ্রহী না। ইসলামী দলগুলোর জোট ইসলামী ঐক্যজোটও বছর দুয়েক আগে ২০ দলীয় জোট ছেড়ে বেরিয়ে গেছে। অর্থাৎ ২০১৪ সালের নির্বাচনের সময় বিএনপি যেমন সবাইকে নিয়ে একটি ঐক্যজোট করতে পেরেছিল, এবার তেমনটি ঘটছে না। এবার ইসলামী দলগুলোই আলাদা জোট করছে।
দলগুলো কেন বিএনপির সঙ্গে জোট গঠন করতে আগ্রহী না তার পেছনে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণ আছে। প্রথমত, বিএনপির সঙ্গে জোট করলে বিএনপিই সব আসন দখল করে ফেলে, বাকি দলগুলোর জন্য কিছুই বাকি থাকে না। দ্বিতীয়ত, বিএনপির সঙ্গে জোট করার পর শেষ পর্যন্ত তারা যদি নির্বাচনে না যায় তাহলে বাকি দলগুলোর মধ্যে একটি অস্বস্তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে। কারণ বিএনপির নির্বাচনে না যাওয়ার একটি সম্ভাবনা থাকলেও, বাকি দলগুলোর মধ্যে নির্বাচনে যাওয়া নিয়ে কোনো অনাগ্রহ নেই। আর তৃতীয় এবং সবচেয়ে বড় কারণটি হচ্ছে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়াকে দলগুলো পছন্দ করে না। তারেকের নেতৃত্বে তাঁদের আপত্তি আছে। এসব কারণেই দেশের বিরোধী দলে থাকা দলগুলো বিএনপির সঙ্গে জোট করতে আগ্রহী হচ্ছে না। ফলে নির্বাচনের সময় যত ঘনিয়ে আসছে, বিএনপি ততই একঘরে হয়ে যাচ্ছে।
বাংলা ইনসাইডার/এসএইচটি/জেডএ
মন্তব্য করুন
গতকাল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গটি আলোচনাই হয়নি। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করে কেবল সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনার জন্য নির্দেশনা দেন। ফলে আওয়ামী লীগের কোন নেতাই আর উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আলোচনায় নিয়ে আসেনি।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বৈঠকে উপস্থিত অন্তত দুজন নেতা বলেছেন যে, আগামী ২৩ জুন দলের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কীভাবে জাকজমকপূর্ণভাবে উদযাপন করা যায় ও ২১ থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা করা এবং শেষদিনে বড় সমাবেশ করার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়। এবার আওয়ামী লীগ ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে করবে। সেই প্রসঙ্গটি সামনে নিয়ে আসা হয়।
আর আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইচ্ছে করেই উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আনেননি বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু তাই বলে আওয়ামী লীগ সভাপতি যারা উপজেলা নির্বাচনে শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছে, দলের নির্দেশনা অমান্য করে আত্মীয় স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন, তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন বলে মনে করলে ভুল হবে।
বিএনপিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় হটকারী ভাবে। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে তাদেরকে বহিষ্কার করে সবকিছু শেষ করে দেওয়া হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন রাজনৈতিক প্রজ্ঞায়, ধীরস্থিরভাবে, আস্তে আস্তে।
জাতীয় সংসদে একবার সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন যে, বাঘে ধরলেও ছাড়ে, কিন্তু শেখ হাসিনা যাকে ধরে তাকে ছাড়ে না। যারা উপজেলা নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন তারা দীর্ঘমেয়াদি প্রায়শ্চিত্ত ভোগ করবেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তারা শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লেখালে রাজনৈতিক পরিণতি কী হয় তা অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়।
এক এগারোর সময় যারা শেখ হাসিনাকে মাইনাস করতে চেয়েছিলেন সেই সমস্ত ডাকসাইটে নেতাদের কাউকেই তিনি দল থেকে বহিষ্কার করেননি। কিন্তু দলে তাদের অকার্য করেছেন, নিষ্ক্রিয় করেছেন। তাদের প্রায়শ্চিত্ত উপলব্ধি করার পথ প্রশস্ত করে দিয়েছেন। এটাই শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কৌশল।
শেখ হাসিনা এক এগারোর পর সংস্কারপন্থিদেরকে দুই ভাগে ভাগ করেছিলেন। যারা কম সংস্কারপন্থী ছিলেন, কম ষড়যন্ত্র করেছেন- তাদেরকে তিনি নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়েছেন। প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ দিয়েছেন। তাদের অনেক হেভিওয়েট নেতাকে প্রেসিডিয়াম থেকে সরিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের আলঙ্কারিক পদ দিয়ে শাস্তি দিয়েছেন। এই শাস্তি দল থেকে বহিষ্কারের চেয়েও ভয়ঙ্কর। তিনি রাজনীতিতে নতুন করে বিদ্রোহী এবং বিশৃঙ্খলা তৈরি করার সুযোগ দেননি। বরং দলে তাদেরকে শাস্তি দিয়ে দলের ঐক্য অটুট রেখেছেন।
আর দ্বিতীয় প্রকার যারা ছিল এক এগারোর সংস্কারপন্থীর মূল হোতা তাদেরকে তিনি মনোনয়ন দেননি। মনোনয়ন না দিয়ে তাদেরকে দলে নিষ্ক্রিয় করেছেন। এদের মধ্যে অনেকে মনোনয়ন না পেয়ে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে নতুন দল করেছে। কিন্তু রাজনীতিতে জীর্ণ শীর্ণ ভিখারীতে পরিণত হয়েছে। এটাই শেখ হাসিনার কৌশল।
কাজেই এবার যারা উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে, তারা আসলে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেনি, তারা শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে। শাস্তি তাদের পেতেই হবে। তবে তারা কবে কীভাবে পাবেন এবং দীর্ঘমেয়াদে তাদের কী হবে সেটি একটি বড় প্রশ্ন।
কারণ যারা আত্মীয়স্বজনদেরকে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী করেছেন তারা অবশ্যই আওয়ামী লীগ সভাপতির কালো খাতায় নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে কী হয় তা অতীতে অনেক নেতাই উপলব্ধি করেছেন। অনেকের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে।
বহিষ্কার হলে একজন রাজনৈতিক নেতা পরিত্রাণ পায়, নির্বাণ লাভ করে। তিনি নতুন সুযোগ পান অন্য কিছু করার। কিন্তু একজন রাজনৈতিক নেতা যখন দলেই উপেক্ষিত হন, অনাহূত হন, পরিত্যক্ত ঘোষিত হন- তখন তার রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠে। আর শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হতে বাধ্য।
শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ তৃণমূল উপজেলা নির্বাচন রাজনীতি ড. আব্দুর রাজ্জাক শাজাহান খান জাহিদ মালেক মোস্তফা কামাল
মন্তব্য করুন
এভারকেয়ার হাসপাতাল খালেদা জিয়া বিএনপি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
তারেক জিয়া বহিষ্কার বিএনপি উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
লোকসভা নির্বাচন আওয়ামী লীগ বিজেপি
মন্তব্য করুন