নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:০১ পিএম, ১৫ অগাস্ট, ২০১৮
আজ ১৫ আগস্ট। দেশব্যাপী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুদিন পালিত হলো ঘটা করে। ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টারে পোস্টারে ছেয়ে ছিল রাজধানীসহ সারাদেশের রাস্তাঘাট দেয়ালের পর দেয়াল। সেখানে হাস্যোজ্জ্বল নেতা-উপনেতাদের পদ-পদবী সম্বলিত বড় বড় ব্যানারের ছবির এক কোণায় বিমর্ষ ম্লান মুখের শেখ মুজিবকে দেখলে যেকোনো মুজিব ভক্তের মনই মোচড় দিয়ে উঠবে। সেই শোকটা কতটা নিজেকে প্রদর্শনের তা নিয়ে প্রশ্ন জাগতেই পারে। দুই মেয়াদে সরকার ক্ষমতায়। আওয়ামী লীগের ভিতরে শেখ মুজিবের আমলের খন্দকার মোশতাকের মতো বিশ্বাসঘাতকের সংখ্যাটা এই আমলেও যে কম নয় তা সহজেই অনুমেয়।
অবাক বিস্ময়ে ব্যানার পোস্টারের দিকে তাকাই আর বারবার ভাবি, খন্দকার মোশতাকও একসময় আওয়ামী লীগ নেতা ছিল। বঙ্গবন্ধুর বাবার মৃত্যুতে সেই মোশতাকের কান্না দেখে স্বয়ং বঙ্গবন্ধুও স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিলেন। কবর খুঁড়েও যাকে মারার সাহস পায়নি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী সেই বঙ্গবন্ধুকে শরীরে, বুকে ও পিঠে ১৮ টা গুলি করে হত্যাকারীরা। মৃত্যু নিশ্চিত করতে বঙ্গবন্ধুর দুই পায়ের গোড়ালির রগ কেটে দেয়। শুধু বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়না, গোটা পরিবারকেই নৃশংসভাবে হত্যা করে। শিশু শেখ রাসেলকে হত্যা করে দুই সেনা কর্মকর্তার কথোপকথনের মাঝে যখন মেজর হুদা বলে ওঠে ‘অল আর ফিনিশড’ তখনই শেষ হয়ে যায় বাংলাদেশের স্বপ্ন। ক্ষমতার পালাবদলে কৃতঘ্ন শকুনের দল হিংস্র থাবা বসায়। সেই বন্দীদশা থেকে মুক্তি পেতে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের সময় লাগে দীর্ঘ ২১ বছর।
দুঃখজনক হলেও সত্যি, বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভার ২১ জন সদস্য খন্দকার মোশতাকের মন্ত্রিসভায় শপথগ্রহণ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু সরকারের আইনমন্ত্রী ছিলেন মনোরঞ্জন ধর। বঙ্গবন্ধু তাঁকে সম্মান করে দাদা বাবু বলে ডাকতেন। মনোরঞ্জন ধরকে মন্ত্রী হতে অনুরোধ করে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘দাদা আপনার কথার উপরে জীবনে কোনো কথা বলিনি, আপনি যা বলবেন, যা করবেন সেটাতেই আমি রাজি।‘ এই দাদা বাবু ১৫ই আগস্টের পর মোশতাকের আইনমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। এই মনোরঞ্জন ধর ছিলেন কুখ্যাত ইনডেমনিটি নামক অধ্যাদেশের রচয়িতা। শেখ মুজিবসহ বাংলাদেশের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন এরকম অনেকেই।
বিদেশে থাকায় বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন ঠিকই কিন্তু পরিবারের সকলকে হারানোর বেদনা, ক্ষমতার পালাবদলে কাছের মানুষগুলির রঙ পালটানো দেখা আর সেই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাইতে দেশে আসতে না পারায় মানসিক মৃত্যু হয়েছিল তাঁদের সেদিনই। বঙ্গবন্ধুর কন্যাদেরও হত্যার কম ষড়যন্ত্র করেনি ঘাতকের দল। বঙ্গবন্ধুর বড় কন্যা শেখ হাসিনাকে বিদেশে হত্যার চেষ্টা করা হয়, দেশে এসে বাবা,মা, ভাই, ভাবী সহ ছোট রাসেলের মুখটাও শেষ বারের মতন দেখতে দেওয়া হয় নি। দেশে ফিরে আসাতেও নানা বাধা বিপত্তি। শত প্রতিকূলতা পাড়ি দিয়ে দেশে ফেরার পর ২১ বার তাঁকে হত্যাচেষ্টা করা হয় শেখ হাসিনাকে। এতবার মৃত্যু মুখ থেকে ফিরে এসেও হাল ছাড়েন নি শেখ হাসিনা। বরং আরও দৃঢ় সংকল্প নিয়ে বলেছেন, ‘প্রাণ গেলে যাক তাও দেশের জন্যে কিছু করে যেতে চাই।‘
কোনো রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ নয়, দেশের যেকোনো সাধারণ মানুষই ভাবতে পারেন পরিবারের সকল সদস্যকে হারানোর পর, নিজের উপর এত এত হত্যাচেষ্টার পর একজন মানুষ কীভাবে দেশে থাকার কথা ভাবতে পারেন। কীভাবে পারেন দেশের উন্নয়ন নিয়ে সারাদিন-রাত ভাবতে, উন্নয়নের জন্য ভাবতে। নামটি শেখ হাসিনা এবং বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেই হয়তো সম্ভব।
জাতির পিতার অসমাপ্ত কাজগুলো সম্পূর্ণ করার জন্য নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন তাঁর কন্যা। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে অনেকটা পথ এগিয়ে গিয়েছেন। রক্ত কথা বলে।
অথচ, হতাশ হতে হয় অনেক নেতাকর্মীর কর্মকাণ্ডে। শোক প্রদর্শনের নামে আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মী, এমপি,মন্ত্রী, অমুক ভাই, তমুক ভাই পদ পদবী প্রদর্শনে ব্যস্ত। ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টার থেকে বিরিয়ানির প্যাকেটে চলে এসেছে ‘ভাইদের” হাস্যোজ্জল ছবির সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর ছবি। কোনো আন্দোলন সংগ্রামে নিজেকে যুক্ত না করে পদ পদবীর জন্য নিজেকে জাহির করার জন্য রেসের ঘোড়ার মত ছুটছেন একেকজন। এরা যে শেখ হাসিনার আমলের মোশতাক হয়ে মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে না সেই গ্যারান্টিই বা কি।
বঙ্গবন্ধুর আদর্শ কতটা ধারণ করেন তাঁরা? বঙ্গবন্ধুর মেধা, শ্রম, আত্মত্যাগ, রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, দেশ স্বাধীনে অবদানসহ বিভিন্ন বিষয় আগামী প্রজন্ম থেকে শুরু করে দেশ ও জনগণের মাঝে ছড়িয়ে দিতে নিজের কতটুকু সময় তাঁরা ব্যয় করেন? সর্বোপরি ব্যানার সর্বস্ব ‘নেতাদের’ হৃদয়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ কতটুকু? আর যদি সেসব না’ই থাকে তাহলে কি অধিকার আছে ব্যানারে, পোস্টারে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে শোক প্রকাশের?
বাংলা ইনসাইডার/এসআর/জেডএ
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৮:১৫ এএম, ১৬ মে, ২০২৪
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৮:১২ এএম, ১৬ মে, ২০২৪
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৮:০৭ এএম, ১৬ মে, ২০২৪
মন্তব্য করুন
সবার জন্য স্বাস্থ্য নিশ্চিতে বিশেষ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর দোরগোড়ায় স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দেয়ার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিক অভাবনীয়, অনন্য এবং যুগান্তকারী একটি মডেল। শিশু স্বাস্থ্য, মাতৃ স্বাস্থ্য এবং কিশোরীদের স্বাস্থ্য পরিসেবা প্রদানের ক্ষেত্রে এটি একটি অসাধারণ উদ্যোগ। নবজাতকের মৃত্যু, মাতৃ মৃত্যু কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিক মডেল আজ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ অনুসরণ শুরু করেছে। গত বছর ১৭ মে কমিউনিটি ক্লিনিক ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিসিয়েটিভ’ হিসেবে জাতিসংঘের স্বীকৃতি পায়। ‘কমিউনিটি ক্লিনিক’ সারা বিশ্বের প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা প্রত্যাশী জনগণের জন্য ‘আলোক বর্তিকা’।
আজকে আমরা ১৭ মে নিয়ে কথা বলছি। যেদিন বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেছিলেন। আবার গত বছর এই দিনে তাঁর চিন্তা প্রসূত কমিউনিটি ক্লিনিককে জাতিসংঘ ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। আজকে আমরা যে ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বলছি, উন্নয়নশীল বাংলাদেশের কথা বলছি, যে স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন আমরা দেখছি, একদিন উন্নত বাংলাদেশ হব বলে স্বপ্ন দেখছি এই সবকিছু শেখ হাসিনার স্বপ্ন, শেখ হাসিনার ইনিশিয়েটিভ। বঙ্গবন্ধু স্বপ্নের বাংলাদেশকে এগিয়ে নিচ্ছেন তাঁরই সুযোগ্য কন্যা আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
১৭৮১ সালে পলাশি যুদ্ধে ইতিহাসের ঘৃণিত সেনাপতি মির্জাফরের বিশ্বাসঘাতকতায় নবাব সিরাজ উদ্দৌলার বিদায়ের মধ্য দিয়ে ২০০ বছরের গোলামী আমাদের ললাটে এসেছিল। ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ স্বাধীন হলেও বাঙালী এবং বাংলাদেশ স্বাধীনতা পায়নি। যার পটভূমিতে বীরদর্পে আবির্ভূত হন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭১ থেকে ৭৫’ বাঙালি জাতির ভাগ্যাকাশে স্বাধীনতার লাল পতাকা উড়েছিল বাঙালী আশায় বুক বেধেছিল।
পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বিয়োগান্তের ঘটনায় জাতি ছিল দিক নির্দেশনাহীন। নারকীয় এই ঘটনায় জনগণ হয়ে পড়েন দিশেহারা। প্রতিবাদ, প্রতিরোধ করার কোন শক্তি সাহস ছিল না। দলের অনেক বড় বড় নেতাও ছিলেন কিংকর্তব্যবিমূঢ়। ধানমন্ডির ৩২ বাড়ি ছিল কবরের নীরবতা। সমগ্র জাতি তখন অন্ধকারে। সামরিক বুটে পিষ্ঠ গণতন্ত্র। নির্বাসনে সংবিধান আর মানুষের মৌলিক অধিকার। বাক স্বাধীনতা বলতে কিছুই ছিল না। এমনকি বঙ্গবন্ধু নাম উচ্চারণ ছিল নিষিদ্ধ।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে দেশের মৌলিক চরিত্রকেই বদলে ফেলা হয়। বিশেষ করে পাকিস্তানি ধারায় সামরিক শাসনের সংস্কৃতির প্রবর্তন ঘটে দেশে। সাম্প্রদায়িকতা ফিরে আসে রাজনীতি, প্রশাসন, শিক্ষা, সংস্কৃতিসহ সমাজের বিভিন্ন স্তরে। একের পর এক স্বপ্নভঙ্গের ঘটনা ঘটতে থাকে দেশে। বাঙালি জাতির জীবনে জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসে ঘোর অমানিশার অন্ধকার। ঠিক এমন প্রতিকূল সময় ১৯৮১ সালের ১৭ মে সামরিক শাসকের রক্তচক্ষু ও নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে বঙ্গবন্ধুর রক্তস্নাত মাতৃভূমিতে ফিরে আসেন বাঙালির মুক্তির মহানায়কের যোগ্য উত্তরসূরি জননেত্রী শেখ হাসিনা।