ইনসাইড বাংলাদেশ

বিএনপির দুর্নীতিবাজ নেতারা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০:২৮ এএম, ০১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮


Thumbnail

বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল দাবি করা বিএনপির আজ প্রতিষ্ঠাবাষিকী। দলটি এবার নির্বাচনে যাবে কি যাবে না এ নিয়ে অনেক প্রশ্ন আছে। আবার দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দুর্নীতির দায়ে পাঁচ বছর দণ্ড নিয়ে কারান্তরীণ। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান লন্ডনে পলাতক। এই মধ্যে দুর্নীতি ও অথ কেলেঙ্কারির মামলায় ১৭ বছর দণ্ডিত তারেক জিয়া। বিএনপির সিনিয়র নেতাদের বিরুদ্ধেও আছে অনেক দুর্নীতি মামলা। আজ জানবো বিএনপি দুর্নীতি বাজ নেতা ও তাঁদের বিরুদ্ধে মামলার বিস্তারিত।

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা

২০১১ সালের ৮ আগস্ট দুর্নীতি দমন কমিশন তেজগাঁও থানায় এই মামলা করে। জিয়াউর রহমানের নামে একটি চ্যারিটেবল ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠা করে ৩ কোটি ১৫ লক্ষ টাকার বেআইনি লেনদেনের কারণে এই মামলা করা হয়। খালেদা জিয়াসহ চার জনকে আসামী করে চার্জশীট প্রদান করা হয়।

জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা

২০০৮ সালের ৩ জুলাই দুর্নীতি দমন কমিশন রমনা থানায় খালেদা জিয়া, তার বড় ছেলে তারেক রহমান ও আরো চারজনকে অভিযুক্ত করে মামলা দায়ের করে। অভিযোগে বলা হয়, অভিযুক্তরা অরফানেজ ট্রাস্টের নামে দেশের এতিমদের জন্য বিদেশি দাতা সংস্থা থেকে আসা ২ কোটি ১০ লক্ষ টাকার অনুদান আত্মসাৎ করে। ২০১০ সালের ৫ আগস্ট কোর্টে চার্জশীট দাখিল করা হয়। মামলার কাজ শেষ হয়েছে এবং ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ তারিখে রায় ঘোষণা কথা রয়েছে।

বড়পুকুরিয়া দুর্নীতি মামলা

২০০৮ সালের ২৬ জানুয়ারি দুর্নীতি দমন কমিশন শাহবাগ থানায় খালেদা জিয়াসহ ১৬ জনকে অভিযুক্ত করে এই মামলা দায়ের করে। মামলায় বলা হয়, বড়পুকুরিয়া কয়লা খনিতে কন্ট্রাক্টর নিয়োগের ব্যাপারে অভিযুক্তরা দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছেন এবং প্রায় ১৫৯ কোটি টাকা ঘুষ হিসেবে আদায় করেছেন। মামলাটি এখন ঢাকা জজকোর্টে প্রক্রিয়াধীন আছে। খালেদা জিয়া এই মামলার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্ট বিভাগে আবেদন করেন যা ২০১৬ সালের ২৫ মে আদালত খারিজ করে দেন।

গ্যাটকো দুর্নীতি মামলা

২০০৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশন খালেদা জিয়াসহ আরো ১৪ জনের নামে এই মামলা দায়ের করে। মামলায় বলা হয় চট্টগ্রাম বন্দর ও ঢাকা ইনল্যান্ড কন্টেইনার ডিপোর কন্টেইনার ওঠানামার কাজ গ্যাটকোকে দেওয়ার ফলে রাষ্ট্রীয় কোষাগারের ১৪৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। খালেদা জিয়া দুই দফায় এই মামলার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আবেদন করেন যা আদালতে খারিজ হয়ে যায়। বর্তমানে অভিযোগপত্র দাখিলের অপেক্ষায় আছে মামলাটি।

নাইকো দুর্নীতি কেলেঙ্কারী

২০১১ সালের ২৩ জুন কানাডার একটি আদালত বেগম জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন তাঁর সরকারের জ্বালানী প্রতিমন্ত্রী একেএম মোশাররফ হোসাইনের দুর্নীতি মামলার বিষয়ে উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণ পেয়েছিল। মোশাররফ কানাডার কোম্পানী নাইকোকে অনৈতিকভাবে সুবিধা দেওয়ার বিনিময়ে একটি দামি গাড়ি উপহার পেয়েছিল নাইকোর কাছ থেকে। যার আর্থিক মূল্য ছিল কানাডিয়ান ডলারে ১ লক্ষ ৯০ হাজার ৯৮৪ ডলার। নাইকো আরও ৫ হাজার কানাডিয়ান ডলার ঘুষ দিয়েছিল মোশাররফকে তার স্বপরিবারে যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণের জন্য। আর নাইকো একেএম মোশাররফ হোসাইনকে ওই ঘুষ দিয়েছিল এটা নিশ্চিত করতে যে, নাইকো বাংলাদেশ থেকে তাদের ঠিক করা দামে গ্যাস কিনতে পারবে এবং তা বিক্রিকরতে পারবে। আর গ্যাসক্ষেত্রে বিস্ফোরণের কারণে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত জরিমানা আরও কমানো হবে। ২০১৭ সালের ২৪ আগস্ট বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট রিট পিটিশনের ( পিটিশন নম্বর ৫৬৭৩) রায় দেয়। রয়্যাল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশ, এফবিআই এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের সমস্ত তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে আদালত এই সিদ্ধান্তে পৌঁছে যে, ২০০৩-০৬ সাল পর্যন্ত অর্থাৎ খালেদা জিয়ার প্রধানমন্ত্রীত্বকালীন সময়ে নাইকোর কাছ থেকে বড় ধরনের ঘুষ লেনদেনের ঘটনা ঘটেছিল অনৈতিকভাবে তাদের সুবিধা দেয়ার নামে। বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের আদেশের লক্ষণীয় বিষয় হলো, নাইকো একেবারে নির্লজ্জভাবে ঘুষ দিয়েছিল। নাইকোর এজেন্ট কাশিম শরীফকে ৪ মিলিয়ন ডলার দিয়েছিল এবং ঢাকা ক্লাবের সাবেক সভাপতি সেলিম ভুইয়ার মাধ্যমে ৫ লাখ ডলার দিয়েছিল। আর নাইকো তাদেরকে পরামর্শক হিসেবে এই টাকা দিয়েছিল যা তৎকালীন সরকারের উচ্চ পদস্থ কর্তাদের প্রদান করতে এবং তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দিয়েছিলেন। আর তথ্যপ্রমাণ জোগাড় করেছে রয়্যাল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশ এবং মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই। তাদের তথ্যপ্রমাণ এটাই প্রমাণ করে যে, নাইকো তাদের বাংলাদেশি এজেন্টদেরকে সুইস ব্যাংকের মাধ্যমে প্রথমে বার্বাডোজের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে কাশিম শরিফ এবং সেলিম ভুইয়ার অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে টাকাগুলো দেন। পরে ওই টাকা চলে যায় তারেকের ঘনিষ্ঠ বন্ধু গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের অ্যাকাউন্টে।

আরাফাত রহমান কোকোর সিমেন্সের দুর্নীতি কেলেঙ্কারী

বেগম খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোকে ঘুষ দেওয়ার কথা স্বীকার করে সিমেন্স। বিভিন্ন অভিযোগ ও সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে মার্কিন জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট  কোকোর কয়েকটি ব্যাংক হিসাবের বিরুদ্ধে ২০০৯ সালের ৮ জানুয়ারি সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের মামলা করে। সেটির নম্বর ছিল 1:09-cv-00021(JDB)। এই ব্যাংক হিসাবগুলোতে ৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার গচ্ছিত ছিল। কোকো সিমেন্স এবং চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং এর কাছ থেকে তাঁর অ্যাকাউন্টে ঘুষ হিসেবে টাকাটা নিয়েছিল। মার্কিন বিচার বিভাগ কোকোর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বাজেয়াপ্ত করার মামলা করেছিল কারণ তাঁর সিঙ্গাপুরের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের কিছু টাকা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসে। কোকোর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে মার্কিন ডলারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকেই তাঁর ঘুষের টাকা পরিশোধ করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রকে ব্যবহার করে বিদেশ থেকে ঘুষ ও জোরপুর্বক টাকা আদায় করলে তা যুক্তরাষ্ট্রের মানি লন্ডারিং আইনের আওতায় পড়ে। তাঁর মামলার বিষয়টি পর্যালোচনায় দেখা যায়, তাঁর অ্যাকাউন্টের লেনদেন হয়েছে বিদেশে বসে এবং ঘুষ ও জোর করেই তিনি ওই অর্থ নেন। যুক্তরাষ্ট্রে কোকোর ওই অর্থ বাজেয়াপ্তের কারণে বাংলাদেশ  এবং যুক্তরাষ্ট্র যৌথভাবে কোকোর মানি সিমেন্স ঘুষ কেলেঙ্কারী নিয়ে কাজ করে। কোকো জাসজ (ZASZ) নামে সিঙ্গাপুরে একটি কোম্পানির নামে তার ঘুষের অর্থ রেখেছিল যা তার পরিবারের সদস্যদের অদ্যাক্ষর নিয়ে গঠিত। ( যাফরিয়া কোকোর বড় মেয়ে, আরাফাত রহমান কোকো নিজে, কোকোর স্ত্রী শর্মিলা এবং জাহিয়া কোকোর ছোট মেয়ে এই চার জনের অদ্যাক্ষর নিয়ে জাসজ গঠিত হয়েছিল।) কোকো ঘুষের মাধ্যমে সিঙ্গাপুরে বিপুল পরিমাণে অর্থ জমা করেছিল, এমন প্রমাণ পাওয়ার পর সেদেশের সরকার ২০১৩ সালে বাংলাদেশ সরকারকে ২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ফেরত দিয়েছিল। এর আগে অবৈধভাবে অর্থ উপার্জনকারী হিসেবে কোকোকে বাংলাদেশের একটি আদালত ২০১১ সালে ৬ বছরের জেল দেয়। এছাড়াও কোকোর সিঙ্গাপুরে ফেয়ারহিল নামে একটি কোম্পানি ছিল। এর মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের মামলায় তাকে আরও ৫ দশমিক ২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার জরিমানা দিতে হয়।

তারেক রহমানের যতো দুর্নীতি

অর্থপাচার ও দুর্নীতির অভিযোগে দুটি মামলায় সাজা পেয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান। এই দুই মামলায় সাজা হওয়া ছাড়াও তার বিরুদ্ধে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় দুটিসহ ঢাকার আদালতগুলোয় এখনও ১৯টি মামলার কার্যক্রম চলমান। এসব মামলার প্রায় প্রত্যেকটিতে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে। ঢাকার বাইরে বিভিন্ন মামলায়ও তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে শতাধিক মামলা আছে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাসহ অন্যান্য অভিযোগে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে বর্তমানে আটটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে।

অর্থপাচারের অভিযোগে ২০০৯ সালের ২৬ অক্টোবর তারেক রহমান ও তার বন্ধু গিয়াস উদ্দিন আল মামুনকে আসামি করে ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট থানায় একটি মামলা দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ২০১১ সালের ৬ জুলাই এ মামলার বিচার শুরু হয়। বিচারিক কার্যক্রম শেষে ২০১৩ সালের ১৭ নভেম্বর ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩-এর বিচারক তারেক রহমানকে খালাস দিয়ে গিয়াস উদ্দিন আল মামুনকে সাত বছর কারাদণ্ড ও ৪০ কোটি টাকা জরিমানার আদেশ দেন। এরপরে রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের পর উচ্চ আদালত ২০১৬ সালের ২১ জুলাই নিম্ন আদালতের রায় বাতিল করে তারেক রহমানকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

এ বছরের গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় তারেক রহমানকে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ তাকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দেন। ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা দায়ের করে দুদক।

মামলা সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় মতিঝিল থানায় দায়ের হওয়া হত্যা ও বিস্ফোরক আইনের দুটি মামলা ঢাকার দ্রুত বিচার আদালত ১ এ বিচারাধীন রয়েছে।

ঢাকার বিশেষ জজ আদালত ৫-এ বিচারাধীন রয়েছে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলাটি। এ মামলায় খালেদা জিয়ার সঙ্গে আসামি তারেক রহমানও। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে দায়ের হওয়া আরেকটি মামলা ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কামরুল হোসেন মোল্লার আদালতে ছিল।

এছাড়া ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম দেবব্রত বিশ্বাসের আদালতে বিচারাধীন ছিল ১২৩৩/১৪ নম্বরের মামলাটি। আগামী ২৯ মে গ্রেফতারি পরোয়ানা তামিলের প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য রয়েছে। ৯৫৪/১৪, ৮৪১/১৪, ৩৮০/১৫, ৭২০/১৫ এবং ১৯৬/১৫ নম্বর মামলা ছিল ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের বিচারক আহসান হাবিবের আদালতে। মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের বিচারক সুব্রত ঘোষ শুভ-এর আদালতে বিচারাধীন ছিল ৩৮০/১৪ নম্বর মানহানির মামলাটি। আগামী ২৫ জুন মামলাটির শুনানির দিন ধার্য রয়েছে। এছাড়া ঢাকার অন্যান্য আদালতে বিচারাধীন রয়েছে ১৯৬/১৫, ৬১৭/১৫, ৯৪১/১৫ ও ৩৯৩/১৪ নম্বরের মামলা। সব মামলাতেই তারেক রহমানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি রয়েছে। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নসহ অন্যান্য অভিযোগে গুলশান থানার ১০২(৩)৭ ও ১৩(৫)০৭ নম্বর মামলা এবং কাফরুল থানার ৫২(৯)০৭ ও ৬৮(৩)০৭ নম্বর মামলাটি এখনও তদন্তাধীন রয়েছে।

তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলাগুলোর মধ্যে বেশিরভাগই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি ও মানহানির অভিযোগে দায়ের করা। এছাড়া ঘুষ গ্রহণ, দুর্নীতি ও অর্থপাচার, আইনশৃঙ্খলা বিঘ্ন, হত্যা ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা রয়েছে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে।

প্যারাডাইস পেপারসে জিয়া পরিবার

প্যারাডাইস পেপার কেলেঙ্কারিতে উঠে আসে জিয়া পরিবারের নাম। জিয়া পরিবারের অন্তত ৫ জন সদস্য গোপনে বিনিয়োগ এবং অর্থ পাচার করেছেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে। বেগম খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমান, তার স্ত্রী জোবায়দা রহমান, বেগম জিয়ার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার, তাঁর স্ত্রী এবং বেগম জিয়ার প্রয়াত ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমানের নাম উঠে এসেছে ফাঁস হওয়া গোপন নথিতে।

প্যারাডাইস পেপারসে দেখা যায়, তারেক জিয়া ২০০৪ এবং ২০০৫ সালে কেইম্যান আইসল্যান্ড এবং বারমুডায় ২ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেন। এছাড়াও তার বন্ধু গিয়াসউদ্দিন আল-মামুনের ওয়ান গ্রুপের তিনটি কোম্পানি খোলা হয় ট্যাক্স হেভেনে। আরাফাত রহমান কোকো বারমুডার বিভিন্ন কোম্পানিতে ২০০৫ সালে প্রায় ১ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছিলেন। কোকোর মৃত্যুর পর এই বিনিয়োগ শর্মিলা রহমানের নামে স্থানান্তরিত হয়।

তারেক রহমানের স্ত্রী জোবায়দা রহমান বিভিন্ন সদ্যসের কোম্পানিতে প্রায় দেড় মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছিলেন। বেগম জিয়ার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার ও তাঁর স্ত্রীর যৌথ ২ মিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ আছে বারমুডায়। অর্থাৎ, অবৈধ ভাবে ট্যাক্স হেভেনে জিয়া পরিবারের বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। এসব টাকার বিনিয়োগ হয়েছে অবৈধ পন্থায় এবং থার্ড পার্টির (তৃতীয় পক্ষ) মাধ্যমে। অর্থাৎ প্রথমে একজন স্থানীয় বিনিয়োগকারী ট্যাক্স হেভেনের কোনো একটি দ্বীপে কোম্পানি খুলেছেন। তারপর সেখানে জিয়া পরিবারের সদ্যসদের বিনিয়োগ দেখানো হয়েছে। ওইসব দ্বীপপুঞ্জে বিনিয়োগকারীর নাম গোপন রাখা হয় এবং বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে মুনাফার টাকা নিরাপদে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হয়।

সিঙ্গাপুরেও জিয়া পরিবারের অবৈধ সম্পদ

জিয়া পরিবার এবং বিএনপির দুর্নীতি সিঙ্গাপুরেও ছড়িয়ে পড়ে। সিঙ্গাপুরের ট্রেড ডেভেলপমেন্ট বোর্ড এস টি ডি বি এবং ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট বোর্ড যে ১৮টি বিদেশি কোম্পানিতে অবৈধ সম্পদ আছে বলে সন্দেহ করছে, তার চারটিই জিয়া পরিবারের এবং বিএনপির অন্তত দুজন নেতার নাম সেখানে ছিল। প্রাথমিকভাবে ট্রেড ডেভেলপমেন্ট বোর্ড ধারণা করছে ৮ কোটি সিঙ্গাপুর ডলার যা বাংলাদেশি টাকায় অন্তত ৫০৪ কোটি টাকার অবৈধ পন্থায় বিনিয়োগ করা হয়।

সৌদি দুর্নীতিতে জিয়া পরিবার

সৌদি আরবে দুর্নীতি বিরোধী অভিযানে জিয়া পরিবারের নাম এসেছে। ১১ জন যুবরাজ সহ আটক ২০১ জনের মধ্যে বেশ ক’জন টাকার উৎস সম্পর্কে বিদেশি রাষ্ট্র থেকে আসা অবৈধ অর্থের কথা বলেছেন। তাঁরা বলেছেন, সৌদি আরবে বিনিয়োগ নিরাপদ ভেবে তাঁরা যুবরাজ বা ব্যবসায়ীদের কাছে বিনিয়োগের জন্য টাকা দিয়েছেন। বিভিন্ন দেশের রাজনীতিবিদরাই মূলত তাঁদের অবৈধ অর্থ সৌদি প্রভাবশালীদের কাছে বিনিয়োগের জন্য গচ্ছিত রাখতেন। ওই অর্থ সৌদি প্রভাবশালীরা বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করতো। যাঁরা তাঁদের কালোটাকা যুবরাজদের দিতেন, তাঁরা মাসিক ভিত্তিতে লভ্যাংশ পেতেন। যুবরাজ সহ সৌদি প্রভাবশালীদের আয়ের উৎস সম্পর্কে এতকাল প্রশ্ন করা হতো না। যেভাবে পারতো টাকা রাখতো। সম্প্রতি সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান সৌদি আরবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করেন। ৪ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া দুর্নীতি বিরোধী অভিযানে ১১ জন সৌদি প্রিন্স সহ ২০১ জন প্রভাবশালীকে আটক করা হয়েছে। দুর্নীতি বিরোধী অভিযানে এক হাজার ৭০০ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা হয়েছে। এখন আটকদের জিঙ্গাসাবাদ চলছে। জিঙ্গাসাবাদে অন্তত দুজন বলেছেন, তাঁদের অন্তত ১০ কোটি রিয়াল (বাংলাদেশি টাকায় ২৩০ কোটি টাকা) জিয়া পরিবারের সম্পত্তি।

সিনিয়র নেতাদের মামলা

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিরুদ্ধে প্রায় ৮৫টি মামলা আছে। এর মধ্যে প্রায় অর্ধেক মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। বিশেষ ট্রাইব্যুনালে কয়েকটি মামলার বিচারকার্যও শুরু হয়েছে। সব মামলাতেই তিনি জামিনে আছেন। এসব মামলায় সপ্তাহে দুইদিন তাকে আদালতে হাজিরা দিতে হয়।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে বর্তমানে ১১টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ওয়ান-ইলেভেনের সময় ৮টি এবং বর্তমান সরকারের আমলে ৩টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মানি লন্ডারিংয়ের দায়ে দুদকের করা মামলায় তিনি গ্রেফতার হয়ে জেলও খাটেন। ওয়ান ইলেভেনের সময় করা মামলাগুলো বিচারাধীন। বর্তমান সরকারের আমলে দেয়া প্রায় সব মামলার চার্জশিট হয়েছে। বিচারকাজও শুরু হয়েছে কয়েকটির।

ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের বিরুদ্ধেও মামলা রয়েছে। স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে ৯৬টি মামলা রয়েছে। অবৈধ প্লট বরাদ্দ দিয়ে সরকারের সাড়ে ১৫ কোটি টাকা আর্থিক ক্ষতি সাধনের অভিযোগে তার নাম চার্জশিটে যুক্ত করেছে দুদক।

গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের বিরুদ্ধে ৪০টি মামলার কয়েকটিতে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। এছাড়া স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলামের নামে ২২, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়ার নামে ১৯ ও সালাহউদ্দিন আহমেদের নামে ৪৭টি মামলা রয়েছে। দলের ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহানের বিরুদ্ধে ৭টি, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর নামে ৩৭, এজেডএম জাহিদ হোসেন ১৫, বরকতউল্লা বুলুর বিরুদ্ধে ৮৮টি, আবদুল আউয়াল মিন্টুর নামে ১২, শামসুজ্জামান দুদু ২২, শওকত মাহমুদ ৪৫, আবদুল্লাহ আল নোমান ১৩, সেলিমা রহমান ১১, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন ১৮, মেজর (অব) হাফিজউদ্দিন আহমেদের নামে ৬টি মামলা রয়েছে। চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান ১২৬, জয়নুল আবদিন ফারুক ৩১, মিজানুর রহমান মিনু ১৩, দলের সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর নামে ৫০টি, যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের নামে ১৩০টি, হাবিব-উন-নবী খান সোহেল ১১০টি, সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুদুর বিরুদ্ধে ৫০টি, ফজলুল হক মিলন ১২ ও নাদিম মোস্তফার নামে ২৭টি মামলা রয়েছে। এসব মামলার বেশিরভাগেরই চার্জশিট দেয়া হয়েছে। এছাড়া যুবদল সভাপতি সাইফুল আলম নিরবের নামে ২১৫ ও সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর বিরুদ্ধে ২১২টি মামলা রয়েছে। স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি সফিউল বারী বাবুর নামে ৩১টি মামলা রয়েছে। এসব নেতার বিরুদ্ধে দায়ের করা অনেক মামলায় ইতিমধ্যে আদালতে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। বিচারকাজও চলছে।

গত এপ্রিলের শুরুতে বিএনপির শীর্ষ ৮ নেতাসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে ১২৫ কোটি টাকা সন্দেহজনক লেনদেনের অভিযোগে অনুসন্ধানে নামে দুদক। মাত্র ৩০ দিনের মধ্যে তারা ১২৫ কোটি টাকা উত্তোলন করেছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এ ছাড়া শীর্ষ এক ডজনের বেশি নেতার বিরুদ্ধেও সচল রয়েছে বিভিন্ন দুর্নীতির মামলা। এ দিকে দুদকের মামলায় দণ্ডিত হয়ে এখন কারাগারে রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। দলটির যেসব নেতার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে তারা হলেন- স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান ও আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান এম মোর্শেদ খান ও আবদুল আওয়াল মিন্টু, নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল, এম মোর্শেদ খানের ছেলে ফয়সাল মোর্শেদ খান এবং ঢাকা মহানগর বিএনপির (দক্ষিণ) সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেল।

দুদকের উপপরিচালক ঋত্বিক সাহার সই করা চিঠিতে আবদুল আউয়াল মিন্টুসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে ৩০ দিনে তাদের অ্যাকাউন্ট থেকে মানি লন্ডারিং ও সন্দেহজনক লেনদেনের মাধ্যমে ১২৫ কোটি টাকা লেনদেনসহ জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগের বিষয়ে কমিশন থেকে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

বিদেশে বিএনপি নেতাদের সম্পদের পাহাড়

গ্লোবাল ইন্টেলিজেন্স নেটওয়ার্ক’ (জিআইএন) এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, শুধু বেগম জিয়া এবং তাঁর পরিবারের বাইরে বিএনপির নেতারা হাজার কোটি টাকার সম্পদ গড়েছেন দেশের বাইরে। বাংলাদেশ থেকে টাকা লুট করে সম্পদ গড়েছেন তারা নিরাপদ দেশগুলোতে। বিএনপির এরকম ২৩৭ জনকে পাওয়া গেছে, যাঁরা বিদেশে অবৈধ সম্পদ রেখেছেন।

জিআইএন সূত্র মতে, শুধু দুবাই নয়, অন্তত ১২ টি দেশে জিয়া পরিবারের সম্পদ আছে, যার মূল্য এক হাজার ২০০ কোটি টাকার মতো। সৌদি আরবের জনৈক আহমদ আল-আসাদের নামে ‘আল আরাবা’ শপিং মলটি। কিন্তু শপিং মলের মালিকানার দলিলে দেখা যায় বেগম জিয়ার নাম। কাতারে বহুতল বাণিজ্যিক ভবন ‘ইকরা’র কাগজে কলমে মালিক একজন বাংলাদেশি। কিন্তু নথিতে দেখা যায়, এই সম্পদের পুরো মালিকানা আরেক দলিলের মাধ্যমে কোকোর কাছে হস্তান্তর করা। বেগম জিয়ার ভাস্তে শাহিন আহমেদ তুহিনের নামে কানাডায় তিনটি বাড়ি পাওয়া গেছে। অটোয়ার ওই বাড়িগুলো তুহিন ২০০৪ থেকে ২০০৬ সালে কিনেছেন। শামীম ইস্কান্দারের নামে মরিশাসের ‘বিচ হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট’ কেনা।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশারফের রয়েছে সিঙ্গাপুরের মেরিনা বে তে বিলাসবহুল হোটেলের শেয়ার। মেরিনা বে হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টের ১৩ হাজার শেয়ারের মালিক তিনি। প্রতিটি শেয়ারের মূল্য ২০ হাজার সিঙ্গাপুর ডলার অর্থাৎ ১১ লাখ টাকা। খন্দকার মোশারফের সিঙ্গাপুরে দুটি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে। মালয়েশিয়ায় রয়েছে তিনটি অ্যাপার্টমেন্ট।

বিএনপির সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার আমিনুল হকের নামে লন্ডনের স্ট্রাটফোর্ড ও অলগেটে দুটি অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে। লন্ডনে বাড়ি আছে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদেরও। এই সব বাড়িই ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে কেনা।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের স্ত্রীর নামে দুবাইতে রয়েছে বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট। সিঙ্গাপুরে মির্জা আব্বাস তাঁর সন্তানের নামে কিনেছেন দুটি অ্যাপর্টমেন্ট। মালেশিয়ায় মির্জা আব্বাসের স্ত্রীর নামে রয়েছে ‘সিটি সেন্টার-২’ এ তিনটি ২৫০০ বর্গফুটের বাণিজ্যিক স্পেস।

বিএনপির আরেক নেতা নজরুল ইসলাম খানের রয়েছে সিঙ্গাপুরে বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট। এসব স্বনামে সম্পত্তির পাশাপাশি বিদেশে বিএনপি নেতাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে বেনামে। যেগুলো পৃথক গোপন দলিলের মাধ্যমে মালিকানা নিশ্চিত রাখা হয়েছে বলে জিআইএন- এর রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।


বাংলা ইনসাইডার/জেডএ 



মন্তব্য করুন


ইনসাইড বাংলাদেশ

কেন চাকরির বয়সসীমা ৩৫ করা উচিত নয়?

প্রকাশ: ১০:০০ পিএম, ১৫ মে, ২০২৪


Thumbnail

বাংলাদেশের চাকরির বাজারের প্রথম শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা হওয়ার জনপ্রিয়তা সবচাইতে বেশি। চাকরিপ্রত্যাশীদের মতে সরকারি চাকরির মত পেশাগত নিরাপত্তা আর কোথাও নেই। আর সেজন্যই অনেক দেশে বেশি বয়সে সরকারি চাকরির আবেদনের সুযোগ থাকলেও বাংলাদেশে এর সীমাবদ্ধতা ৩০ বছরে রয়েছে। সরকারি চাকরির কোন কোন ক্ষেত্রে বিশেষ দক্ষতার দরকার হয়। সেই দক্ষতা অর্জনের জন্য বাড়তি সময়ের প্রয়োজন হয়। তাছাড়া চাকরির আবেদনের বয়স যতই থাকুক না কেন, পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ অনির্দিষ্ট হয় না। একজন প্রার্থী সর্বোচ্চ ৫ বা ৭ বার সিভিল সার্ভিসের জন্য আবেদন করতে পারেন। আমাদের দেশেও যেকোন যুক্তিতে বয়স বাড়াতে গেলে বিষয়গুলো খেয়াল রাখা উচিত।

চাকরিপ্রত্যাশী অনেকেই মনে করেন, বাংলাদেশে পড়াশোনা বিশেষ করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যারা উচ্চশিক্ষা শেষ করে বের হন তাদের সেশন জটের কারণে ২৬-২৭ বছর লেগে যায়। সেক্ষেত্রে ৩০ বছরের বয়সসীমা তাদের জন্য অন্য শিক্ষার্থীদের তুলনায় বৈষম্যমূলক। বিশ্বের অনেক দেশেই চাকরির বয়সসীমা নেই। বাংলাদেশে বয়সসীমার বাধাটিও বৈষম্যেরই সামিল। প্রতিবেশী দেশ ভারতেও সরকারি চাকরির বয়সসীমা ৩৫ থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে। কিন্তু বাংলাদেশে সেটি নেই। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাধারণত চাকরিপ্রত্যাশীদের মধ্যে যাদের বয়স একটু বেশি থাকে তারাই আবেদনের বয়সসীমা বাড়ানোর আন্দোলন করে থাকেন। দুই দশক ধরে এ রকম আন্দোলন নিয়মিতভাবে সংবাদমাধ্যমে আসতে দেখা যায়। আন্দোলনকারীদের যুক্তি-বিভিন্ন দেশে চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ থেকে ৫৯ বছর পর্যন্ত দেখা যায়। সুতরাং, বাংলাদেশের গ্র্যাজুয়েটরা কেন এই সুযোগ পাবেন না? তাদের মতে, বয়স নয়, যোগ্যতাই হতে পারে একজন প্রার্থী বাছাইয়ের প্রধান বিবেচ্য। তাছাড়া মানুষের গড় আয়ু বেড়ে যাওয়ার ব্যাপারটিও তারা উল্লেখ করেন।

সম্প্রতি জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেছেন, সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর বিষয়টি নীতিগত সিদ্ধান্তের বিষয়। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আরও আলাপ-আলোচনা করবেন উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, আপাতত বয়সসীমা বাড়ানোর কোনো সিদ্ধান্ত সরকারের নেই। গত ১৫ বছরে সরকার অনেক যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। চাকরির বয়স ছিল ২৭ বছর সেখান থেকে বৃদ্ধি করে ৩০ বছরে উন্নীত করা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য সেটা ৩২ বছর করা হয়েছে। চাকরি থেকে অবসরের বয়স ৫৭ বছর থেকে বাড়িয়ে ৫৯ বছর করা হয়েছে। আমরা সবসময় যুগের সাথে তাল মিলিয়ে জনবল কাঠামো ও নিয়োগ প্রক্রিয়া আধুনিকায়ন করে থাকি। যুগের সাথে সম্পর্ক রেখে আমরা পরিবর্তনও করে থাকি।

সরকারি চাকরিজীবীদের অবসরের বয়স বেশি বাড়ানোর প্রধান অসুবিধা হিসেবে ওপরে সরকারি চাকরিতে তারুণ্যের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সেটি ছাড়াও একটি সামাজিক সমস্যা রয়েছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানের পদবিন্যাস বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো খোলা (ওপেন) বা পরিবর্তনশীল (ডাইনামিক) নয়; এখানকার পদবিন্যাস প্রায় স্থির। বয়োজ্যেষ্ঠদের অবসরে যাওয়ার ফলে এখানে অপেক্ষাকৃত তরুণ চাকরিজীবীদের পদপ্রাপ্তি তথা পদোন্নতির সুযোগ তৈরি হয়। বয়োজ্যেষ্ঠরা দীর্ঘদিন পদ ধরে রাখলে তরুণেরা আরও বেশি দিন পদোন্নতিবঞ্চিত থাকবেন। এতে বয়োজ্যেষ্ঠরা ঘটনাক্রমে বয়ঃকনিষ্ঠদের বিরক্তির কারণ হতে পারেন।

বাংলাদেশে চাকরির বয়সসীমা ৩০ কেন উপযুক্ত বয়স? কারণ, সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে তরুণদের কাজে লাগাতে চায় কর্তৃপক্ষ। তরুণরা যাতে তাদের মেধার সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে পারে। এমনকি চাকরিতে প্রবেশের একটা মানসিক বয়সও রয়েছে। সাধরণত সামরিক বাহিনীতে চাকরির ক্ষেত্রে যেমন শারীরিক সক্ষমতার বিষয় থাকে, বেসামরিক চাকরিতে সেটা না থাকলেও মানসিক সক্ষমতার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

চাকরিতে প্রবেশের পর সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় পিক-আপ (গ্রহণ) করা এবং সে অনুযায়ী সার্ভিস বা সেবাদান ঠিক রাখতে হলে একটা নির্দিষ্ট বয়স দরকার হয়। এছাড়া ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার বিষয়টি এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য হতে পারে। চাকরিতে ‘কন্ট্রিবিউট’ করা বা অবদান রাখতে হলেও একটা নির্দিষ্ট বয়সের প্রয়োজন রয়েছে। কারণ সে যাতে অবদান রাখতে পারে তার জন্যও পর্যাপ্ত সময় দরকার হয়।

বাংলাদেশে সাধারতণ চাকরির ক্ষেত্রে বর্তমানে অবসরের বয়সসীমা ৫৯ বছর। দেরীতে চাকরিতে প্রবেশ করলে অবদান রাখার সময়ও কমে আসতে পারে। বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে জনপ্রিয় একটি পদ্ধতি বাংলাদেশে কর্ম কমিশন (বিসিএস) এর আওতাধীন নিয়োগ পরীক্ষাসমূহ। এই পরীক্ষার মাধ্যমে একজন চাকরিপ্রত্যাশীর সম্পূর্ণ নিয়োগ পেতে তিন থেকে চার বছর সময় লাগে। ৩০ বছর বয়সে কেউ এই দীর্ঘ প্রক্রিয়া পেরিয়ে চাকরি শুরু করতে হলে তার বয়স অন্তত ৩৩-৩৪ বছর হয়ে যায়। ফলে তার অবদান রাখার সময়সীমা এমনিতেই কমে যায়। এতে করে যেই সেক্টরে একজন ব্যক্তি চাকরি করেন সেখানে চাকরিতে তার সম্পূর্ণটা দিতে সক্ষম হন না। ফলে দেশের একাংশ ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। 

বিবেচনা করলে দেখা যায়, কোন ব্যক্তি ২৫ বছর বয়সে চাকরিতে যোগদান করলে তার পিক-আপ করার সক্ষমতা যত থাকবে, ৩৪ বছর বয়সী একজনের সেই সক্ষমতা একই হবে না, এসব বিষয় মাথায় রেখেই বয়স নির্ধারণ করা হয় হতে পারে। একজন ব্যক্তি ২৫ বছরে চাকরিতে প্রবেশ করলে সে অপেক্ষাকৃত তরুণ থাকে এবং প্রশিক্ষণসহ নানা ধরণের কর্মসূচীতে অংশ নেয়ার ক্ষেত্রে তার কোন পিছুটান থাকে না। কিন্তু বয়স বেশি হলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিয়ে, অন্য চাকরির মতো পিছুটান তৈরি হয় যা নতুন চাকরি, প্রশিক্ষণ এবং অন্যান্য কর্মসূচীতে বাধার সৃষ্টি করতে পারে।

এছাড়া কর্মক্ষেত্রে যারা সহকর্মী হিসেবে কাজ করবেন সেখানেও, বয়সের পার্থক্য খুব বেশি যাতে না হয় বা একটা নির্দিষ্ট বয়সের ধারা বজায় রাখার প্রতিও নজর দেয়া হয় বলে মনে করেন সমাজের বিশিষ্টজনরা। এমনকি বাংলাদেশে চাকরির সংকটের কারণগুলোও বিবেচনা করা কে তা বিশেষ ভাবে পর্যালোচনা করে সংকট মোকাবিলায় কাজ করা হয়।

দেশের তরুণদের চাকরির সংকটের নানা কারণে হতে পারে বিশষে করে চাহিদা অনুযায়ী দক্ষতার অভাব। ২০১৯ সালে বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক, বিআইজিডি ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণা-জরিপ প্রকাশিত হয়। সেখানে বলা হয়, চাকরির জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতায় মারাত্মকভাবে পিছিয়ে আছেন বাংলাদেশের তরুণেরা। বিশ্ববিদ্যালয় পাস করেও তাঁরা কর্মসংস্থানের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করতে পারছেন না। বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার চাকরির নিয়োগের সময়ে এই ব্যাপারটি দেখা যায়। তাই তরুণদের দক্ষ ও যোগ্য করে তোলার জন্য বাজারের চাহিদার দিকে নজর রেখে নানা ধরনের প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া যায়।

সুতরাং সব দিক ভেবে যুবসম্প্রদায়ের প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র ও সময় প্রসারিত করার উদ্দেশ্যে সরকারি চাকরিতে প্রবেশ এবং অবসরের বয়সের একটি সাম্যতা দরকার। আর একই সঙ্গে বয়োজ্যেষ্ঠদের সেবা একটি যৌক্তিক বয়স পর্যন্ত পেতে এবং নতুন প্রজন্মের জন্য জায়গা ছেড়ে দিতে চাকরি থেকে অবসরের বয়স এক বছর বাড়িয়ে ৬০ বছর করাই বাঞ্ছনীয়।

কিন্তু চাকরি থেকে অবসরের দিক থেকে যদি দেখা হয়, সারাবিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশেও অবসর গ্রহণের সময়সীমা সক্রিয়ভাবে নির্ধারন করা হয়েছে। বিচারকদের অবসর গ্রহণের বয়স ৬৭ বছর এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অবসরের বয়সসীমা ৬৫ রাখা হয়েছে। এমনকি একজন ডাক্তারও বিসিএস দিয়ে সরকারি চাকরিতে যোগদান করে তাকে ৫৯ বছর বয়সে অবসরগ্রহণ করতে হয়। কিন্তু একই ডাক্তার যদি কোন মেডিকেল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রফেসরের চাকরি করেন তাহলে তাকে ৬৫ বছরে অবসরে যেতে হয়। তাহলে সাম্যতা কোথায়? যদি চাকরির আবেদনের ক্ষেত্রে বয়সের সিমাবদ্ধতা দরকার হয় তাহলে চাকরি থেকে অবসরের সময়ও নির্দিষ্ট সিমাবদ্ধতা দরকার।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড বাংলাদেশ

কমলা ভাসিন অ্যাওয়ার্ডের জন্য বাংলাদেশিদের আবেদনের আহ্বান

প্রকাশ: ০৮:৫৫ পিএম, ১৫ মে, ২০২৪


Thumbnail

জেন্ডার সমতা নিশ্চিত করতে কমলা ভাসিন অ্যাওয়ার্ড-২০২৪ প্রদানের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। আজাদ ফাউন্ডেশন, ন্যাশনাল ফাউন্ডেশন ফর ইন্ডিয়া এবং আই পার্টনার-ইন্ডিয়া যৌথভাবে এই অ্যাওয়ার্ড প্রদান করবে। জেন্ডার সমতা নিয়ে কর্মরত দক্ষিণ এশিয়ায় বসবাসকারী যে কেউ এই পুরস্কারের জন্য আবেদন করতে পারেন। আগামী ৭ জুনের মধ্যে এই আবেদন করতে হবে।

বুধবার (১৫ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এ সকল তথ্য জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য উত্থাপন করেন নিজেরা করির নির্বাহী পরিচালক মানবাধিকার কর্মী খুশী কবির। এ সময় আরও বক্তৃতা করেন পুরস্কার কমিটির সদস্য ও আজাদ ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী দোলন গাঙ্গুলী, সাংগাত বাংলাদেশের কান্ট্রি কোর গ্রুপের সদস্য অ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানা প্রমুখ।

মূল বক্তব্যে খুশী কবির বলেন, ‘‘দক্ষিণ এশিয়ার নারী আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ কমলা ভাসিন ছিলেন শান্তি আন্দোলনের অগ্রণী নেত্রী, লেখক, কবি, শিশু সাহিত্যিক ও সমাজবিজ্ঞানী।

২০২১ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর তার মৃত্যুর পর জেন্ডার সমতার উদ্দেশে তার কাজকে এগিয়ে নিতে ‘কমলা ভাসিন অ্যাওয়ার্ডস-ফর ড্রাইভিং জেন্ডার ইকুয়ালিটি অ্যাক্রস সাউথ এশিয়া’ চালু করা হয়। এই পুরস্কারের বিচারকমণ্ডলীতে আছেন দক্ষিণ এশিয়ার স্বনামখ্যাত নারী অধিকার ও মানবাধিকার কর্মী, সমাজসেবী, সাংবাদিকসহ প্রথিতযশা ব্যক্তিবর্গ। আগামী ৩০ নভেম্বর ভারতের নয়াদিল্লির হ্যাবিট্যাট সেন্টারে এই পুরস্কার প্রদান করা হবে।’’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রতি বছর দুটি বিভাগে পুরস্কার দেওয়া হবে।

প্রথা-বহির্ভূত বা অপ্রচলিত পেশায় সফলভাবে কর্মরত নারী (সিস অথবা ট্রান্স) ও জেন্ডার সাম্য প্রতিষ্ঠার উদ্দেশে কাজ করেন এমন পুরুষ (সিস অথবা ট্রান্স) এই পুরস্কার পাবেন। প্রতিটি পুরস্কারের মূল্য ভারতীয় মুদ্রায় এক লক্ষ টাকা। অর্থমূল্য ছাড়াও পুরস্কৃত ব্যক্তি দক্ষিণ এশিয়ার সমাজকর্মীদের নেটওয়ার্কে সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পাবেন।’

পুরস্কার কমিটির সদস্য দোলন গাঙ্গুলী বলেন, ‘২০২২ ও ২০২৩ সালে দক্ষিণ এশিয়ার দেশসমূহ থেকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আবেদনকারী আবেদন করলেও বাংলাদেশ থেকে ২০২৩ সালে কোনো আবেদন জমা পড়েনি। কমলা ভাসিন সত্যিকার অর্থেই নিজেকে একজন দক্ষিণ এশীয় ভাবতেন। তাই এই পুরস্কারের দক্ষিণ এশীয় প্রকৃতি বজয় রাখতে বাংলাদেশ থেকেও অংশগ্রহণের জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে।’ বাংলাদেশের যোগ্য ব্যক্তিবর্গদের এই পুরস্কারের জন্য আবেদন করার আহ্বান জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, কমলা ভাসিন পুরস্কার বিষয়ে গত মঙ্গলবার ঢাকার বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে একাট অবহিতকরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় মহিলা পরিষদ, নারীপক্ষ, একশন এইড, অক্সফাম, বাদাবন সঙ্ঘ, জাগো ফাউণ্ডেশন, সাংগাত বাংলাদেশ, ক্যাম্পি, ডিয়াকোনিয়া, অস্তিত্ব বাংলাদেশ, কর্মজীবী নারী, বন্ধু ফাউণ্ডেশনসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

কমলা ভাসিন অ্যাওয়ার্ড   খুশী কবির  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড বাংলাদেশ

এই সব সুশীলদের এখন কী হবে?

প্রকাশ: ০৮:০০ পিএম, ১৫ মে, ২০২৪


Thumbnail

বাংলাদেশে সুশীল সমাজের কিছু প্রতিনিধি আছেন যাদেরকে মনে করা হয় তারা মার্কিনপন্থী। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখে তারা গর্ব অনুভব করেন। কথায় কথায় মার্কিন দূতাবাসে যান। সেখানে প্রাতঃরাশ, মধ্যাহ্নভোজ, নৈশভোজে মিলিত হন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যা বলে তারা তার চেয়ে তিন ধাপ গলা উঁচিয়ে কথা বলেন। বাংলাদেশ নিয়ে তাদের কোন ভালবাসা নেই, প্রেম নেই, আগ্রহ নাই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান এবং নীতি বাংলাদেশে বাস্তবায়ন করাই যেন তাদের প্রধান লক্ষ্য। এই সমস্ত সুশীলদেরকে বলা হয় যুক্তরাষ্ট্রের মাইক্রোফোন। 

গত প্রায় পাঁচ বছর ধরে এই ধরনের সুশীলের প্রভাব প্রতিপত্তি বাংলাদেশে ব্যাপক লক্ষ্য করা গিয়েছিল। মিডিয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন ফোরামে তারা যেন ছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কণ্ঠস্বর। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যখন গণতন্ত্র সম্মেলনে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি, তখন এই সমস্ত সুশীলরা বাহবা দিয়েছেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সিদ্ধান্ত সঠিক বলেই বিভিন্ন টকশোতে, বিভিন্ন লেখালেখিতে বক্তব্য দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার সময়ও সুশীলদের দেখা গেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে কথা বলতে। এতে যে দেশের ক্ষতি সেটি অনুভব করার সামর্থ্য তাদের নেই। আবার ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নীতি ঘোষণা করল তখন এই সমস্ত সুশীলরা ভিসা নীতি নিয়ে যেন মার্কিন কূটনীতিকের ভূমিকা অবতীর্ণ হয়েছিলেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে যখনই কোনো প্রতিনিধিরা আসতেন তখন এই সমস্ত সুশীলদের সঙ্গে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বৈঠক করতেন এবং এতেই বাজারে তাদের কদর বাড়ত। বিভিন্নভাবে তারা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতেন। আর এই সমস্ত সুশীলদের খুঁটির জোর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এমন কথাটা সর্বত্র চাউর ছিল। কিন্তু সেই সুশীলরাই এখন অপাংক্তেয় হয়ে গেলেন। তারা এখন হতাশার সাগরে নিমজ্জিত। 

ডোনাল্ড লুর সফরে এবার চায়ের দাওয়াত পাননি সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। ডোনাল্ড লুর সঙ্গে তাদের দেখা সাক্ষাৎও হয়নি। এ নিয়ে তাদের ভীষণ মন খারাপ। বিশেষ করে হেফাজতের তাণ্ডবের সময়ে যিনি হেফাজতের কর্মীদের মৃত্যু আবিষ্কার করেছিলেন, মানবাধিকারের নামে যিনি সরকারবিরোধী অপতৎপরতায় লিপ্ত সেই আদিলুর রহমান খান প্রতিবারই মার্কিন দূতাবাসে দাওয়াত পেতেন। কিন্তু এবার তাকে দাওয়াত দেওয়া হয়নি। এই বিতর্কিত তথাকথিত মানবাধিকার কর্মী বাংলাদেশকে নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এক ধরনের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে লিপ্ত। 

জিল্লুর রহমান তৃতীয় মাত্রা উপস্থাপক। পিটার হাস রাষ্ট্রদূত হওয়ার পরপরই লাইমলাইটে আসেন জিল্লুর রহমান। তার সঙ্গে পিটার হাসের সখ্যতার কথা তিনি নিজেই বিভিন্ন জায়গায় বলে বেরিয়েছেন। ডোনাল্ড লু যখন ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে তখন ডোনাল্ড লুর সঙ্গে তিনি এক সাক্ষাৎকারেও আয়োজন করেছিলেন। একদা খুনি রশিদের সাক্ষাৎকার নেওয়া এই বিতর্কিত উপস্থাপক মার্কিন অর্থায়নে এবং মার্কিন আর্থিক সহায়তায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেন। কিন্তু এবার তিনিও অপাংক্তেয় ছিলেন। 

স্বাধীনতাবিরোধীর সন্তান সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের কর্মী। সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের প্রধান কাজ হল সরকারকে নানাভাবে সমালোচনা করা। সরকারের লক্ষ্য ত্রুটি বিচ্যুতি বের করাই যেন তাঁর একমাত্র মিশন। সেই রিজওয়ানা হাসানকেও এবার দাওয়াত দেয়নি মার্কিন দূতাবাস। আর এই সমস্ত ব্যক্তিদেরকে দাওয়াত না দেওয়া ফলে প্রশ্ন উঠেছে। 

তবে বিস্ময়কর ব্যাপার ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক দম নিজস্ব ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত বদিউল আলম মজুমদারের অনুপস্থিতি। বদিউল আলম মজুমদার প্রভাবশালী হয়ে উঠেছিলেন। কারণ তাকে মনে করা হত তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশে মূত্রপাত্র। এমন কী মার্সিয়া বার্নিকাটকে বিদায়ের আগে তাঁর বাসায় নৈশ্যভোজের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। সেই বদিউল আলম মজুমদারের মার্কিন দূতাবাসে চায়ের দাওয়াত না পাওয়াটা বিস্ময়কর। প্রশ্ন হচ্ছে দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি নিয়ে যে সব সুশীলরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পদলেহন করেছেন তাদের এখন কী হবে?

সুশীল   ডোনাল্ড লু   মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র   সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান   বদিউল আলম মজুমদার   আদিলুর রহমান খান  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড বাংলাদেশ

‘ফিলিস্তিনের গাজায় শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র একমত’

প্রকাশ: ০৭:১৩ পিএম, ১৫ মে, ২০২৪


Thumbnail

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ ভূখণ্ড গাজা উপত্যকায় শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রও একমত বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। বুধবার (১৫ মে) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুর সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান।

মন্ত্রী বলেন, “গাজায় শান্তি স্থাপন করার বিষয়টি আমরা আলোচনা করেছি। তিনি (ডোনাল্ড লু) বলেছেন, ইউএস অত্যন্ত টায়ারডলেসলি (অক্লান্তভাবে) কাজ করছে যাতে গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। তিনি আমাকে যেটুকু বলেছেন- ‘তারা আশাবাদী’।”

‘আমরা বলেছি, গাজায় মানবতাবিরোধী অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে, নিরীহ নারী ও শিশুকে হত্যা করা হচ্ছে। ৩৫ হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, তার মধ্যে ৭০ শতাংশ নারী ও শিশু’, যোগ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘এটি আসলে মেনে নেয়া যায় না। আমি বলেছি, টেলিভিশনে যখন এগুলো দেখি, তখন টেলিভিশন দেখা কন্টিনিউ করতে পারি না। সেখানে শান্তি স্থাপন করা দরকার। তিনিও একমত যে, সেখানে শান্তি স্থাপন করা দরকার। তিনি জানিয়েছেন, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেন গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার জন্য টায়ারলেসলি কাজ করছেন।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে বাংলাদেশ সফরে এসেছেন মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। আমাদের দুই দেশের সম্পর্ক খুবই চমৎকার। আমাদের বহুমাত্রিক সহযোগিতার ক্ষেত্র রয়েছে। একইসাথে গত ৫৩ বছরের আমাদের অভিযাত্রায় যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। যে কারণে ডোনাল্ড লুকে ধন্যবাদ জানিয়েছি।’

মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পঞ্চমবারের মতো সরকার গঠনের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন অভিনন্দন জানিয়েছিলেন। তিনি সম্পর্ককে ভিন্নমাত্রায় নিয়ে যাওয়ার অভিপ্রায় প্রকাশ করেছেন। সেই অভিপ্রায়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু বাংলাদেশ সফরে এসেছেন।’

‘আমাদের আলোচনা সেই লক্ষ্যেই হয়েছে। একক দেশ হিসেবে আমাদের রফতানির সবচেয়ে বড় গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় বিনিয়োগকারী দেশও যুক্তরাষ্ট্র। আমি ডোনাল্ড লু’কে অনুরোধ জানিয়েছি, বাংলাদেশে ৪০টি আইটি ভিলেজ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। সেখানে যাতে যুক্তরাষ্ট্র বিনিয়োগ বাড়ায়। যদিও কিছু বিনিয়োগ তারা এরইমধ্যে করেছে।’


হাসান মাহমুদ   ডোনাল্ড লু   ফিলিস্তিন   গাজা  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড বাংলাদেশ

রাজধানীতে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলতে না দেওয়ার নির্দেশ

প্রকাশ: ০৬:১১ পিএম, ১৫ মে, ২০২৪


Thumbnail

রাজধানী ঢাকায় যেন ব্যাটারিচালিত রিকশা চলতে না পারে সে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।  বুধবার (১৫ মে) বনানীতে বিআরটিএর সদর কার্যালয়ে আয়োজিত সড়ক পরিবহন উপদেষ্টা পরিষদের সভায় তিনি এ নির্দেশ দেন।

ওবায়দুল কাদের বলেন, ব্যাটারিচালিত কোনো গাড়ি (তিন চাকার) যেন ঢাকা সিটিতে না চলে। আমরা ২২টি মহাসড়কে নিষিদ্ধ করেছি। শুধু নিষেধাজ্ঞা নয়, চলতে যেন না পারে সে ব্যবস্থা নিতে হবে। এর আগে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ঢাকার মধ্যে অটোরিকশা বন্ধে সম্মতি জানান।

সভায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ভয়াবহ ব্যাপার যখন রিকশাচালকরা দুই পা ওপরে উঠিয়ে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালায়। অনেক প্রতিবন্ধী আছেন যারা চোখে কিছুটা কম দেখেন তারাও এই রিকশা নিয়ে নেমে পড়েন।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, সিদ্ধান্তে আসা দরকার যে ঢাকায় ইজি বা অটোরিকশা চলবে না। এটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।

সভায় বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শাজাহান খান, সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নূরী, বিআরটিএ চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।


রাজধানী   ওবায়দুল কাদের   অটোরিকশা  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন