নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪:০৩ পিএম, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮
আলোকচিত্রী শহিদুল আলমের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত। রমনা থানায় তথ্য প্রযুক্তি আইনে দায়ের করা এক মামলায় জামিন আবেদনের ওপর আজ মঙ্গলবার শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানি শেষে তাঁর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কেএম ইমরুল কায়েশ।
নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে উসকানিমূলক মিথ্যা প্রচারের অভিযোগে তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় দায়ের করা মামলায় ৬ আগস্ট শহিদুল আলমকে সাত দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। এর আগের দিন রাতে ধানমণ্ডির বাসা থেকে তাকে আটক করে ডিবি। সাত দিনের রিমান্ড শেষে গত ১২ আগস্ট শহিদুলকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন নিম্ন আদালত। তখন থেকে শহিদুল আলম কারাগারে।
নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময় আটক-গ্রেপ্তার শিক্ষার্থীদের প্রায় সবাই জামিনে মুক্ত হয়েছেন। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি গুজব ছড়ানোর অভিযোগে তথ্য প্রযুক্তি আইনের মামলায় গ্রেপ্তার অভিনেত্রী কাজী নওশাবা আহমেদও কোরবানি ঈদের আগের দিন ২১ আগস্ট জামিনে মুক্তি পান। কিন্তু শহিদুল আলমের আজও জামিন হলো না। তাঁর জামিন না হওয়ার কারণ হিসেবে জানা গেছে কয়েকটি বিষয়:
এক, আটক-গ্রেপ্তার শিক্ষার্থীদের সবাই ছিলেন বয়সে তরুণ। বুঝে-না বুঝে, আবেগের বসে তারা অনেক কিছুই করেছে। তরুণ বয়সে অনেকে ভুল করে কিছু করতে পারে। পরবর্তীতে এজন্য অনুশোচনায় তাঁদের জন্য যথেষ্ট। কাজী নওশাবা পর্যন্ত এদের মধ্যে পড়তে পারেন। কিন্তু পরিণত বয়স্ক, দায়িত্বশীল ব্যক্তির পর্যায়ে থাকা শহিদুল আলম এদের মধ্যে পড়েন না। তাই শিক্ষার্থীসহ তরুণদের যে যুক্তিতে জামিন হয়েছে, শহিদুল আলমের জন্য তা প্রযোজ্য নয়।
দুই, শান্তিতে নোবেল জয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অতি কাছের মানুষ বলেই পরিচিত শহিদুল আলম। একসময় ড. ইউনূসের ব্যক্তিগত আলোকচিত্রী ছিলেন তিনি। ড. ইউনূসের সহচর্যেই নেলসন ম্যান্ডেলাসহ বিশ্বখ্যাত বহু মানুষের সঙ্গে পরিচয় ও ছবি তোলায় সৌভাগ্য হয় শহিদুল আলমের। ড. ইউনূসের কারণে বিশ্বব্যাপী আলোকচিত্রী হিসেবে খ্যাতি পান তিনি। একই ভাবে ড. ইউনূস ও ইউনূস সেন্টারের কারণেই সামাজিক আন্দোলনেও যুক্ত ও মানবাধিকার কর্মী হয়েছেন শহিদুল আলম। বর্তমানে জাতীয় ঐক্যসহ সরকার বিরোধী নানা জোট ও কর্মকাণ্ডে ড. ইউনূসের নাম উচ্চারিত হচ্ছে। সরকারের একটি অংশের ধারণা, নিরাপদ সড়ক আন্দোলনও ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে হয়তো শহিদুল আলমকে ব্যবহার করেছেন ড. ইউনূস।
তিন, শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে অংশগ্রহণ ও বিভিন্ন কর্মকাণ্ড ছিল আবেগের বহিঃপ্রকাশ। একইভাবে কাজী নওশাবাও আবেগের বশবর্তী হয়ে গুজব ছড়িয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন। কিন্তু শহিদুল আলমের বিষয়টি কিন্তু ভিন্ন। শহিদুল আলম সরকারের বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যমূলক ভাবে উসকানিমূলক মিথ্যা ছড়িয়েছেন বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
চার, সরকারের পদত্যাগ দাবিসহ নানা দাবিই করে আসছে সংসদের বাইরে থাকা বিরোধী দল বিএনপি। সম্প্রতি ড. কামাল হোসেনের জাতীয় ও ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীর যুক্তফ্রন্ট জোটের দলগুলোও মাঝে মধ্যে এমন দাবি করছে। কিন্তু শহিদুল আলম সরকারের বৈধতা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আল জাজিরায় দেওয়া সাক্ষাৎকারে শহিদুল আলম সরকারের বৈধতাসহ সরকারের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যমূলক বিভিন্ন কথা বলেন। এমন কথা বিরোধী দলগুলোর মধ্যে থেকেও কখনো শোনা যায়নি। শহিদুল আলমের বক্তব্য রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল বলেই মত বিশ্লেষকদের। তাঁদের মতে, সরকারের সমালোচনা করা একটি বিষয়, আর সরকারকে অবৈধ বলা সম্পূর্ণ বিষয়। সরকার দুর্নীতি করছে, ভুল করছে এমন লাইনে কোনো দেশের সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনা করাই যায়, কিন্তু সমালোচনার সীমা অতিক্রম করে তাকে অবৈধ বলা এবং তার বৈধতা নেই দাবি করা রাষ্ট্রদ্রোহিতা।
পাঁচ, অতিসামান্য কোনো বিষয় নিয়েও ফেসবুক সহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা দেখা যাচ্ছে। যেকোনো একটি বিষয়কেই বড় ইস্যু করার প্রচেষ্টা লক্ষণীয়। আর এমন সমালোচনা ও বিরোধী প্রচারণা মোটেই বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়। গোয়েন্দা সূত্রগুলো বলছে, ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধভাবে ক্যাম্পেইন পরিচালিত হচ্ছে। শহিদুল আলম এই সংঘবদ্ধ ষড়যন্ত্রেরই গুরুত্বপূর্ণ একজন বলে মনে করছে সরকারের সংশ্লিষ্টরা।
এসব কারণেই আলোকচিত্রী শহিদুল আলমের বিষয়টি একই আন্দোলনে আটক-গ্রেপ্তার অন্য দশ জনের মতো নয়। অন্যরা যেভাবে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে এসেছে এবং নানা কর্মকাণ্ড করেছে, তাদের চেয়ে শহিদুল আলমের সংশ্লিষ্টতাটি সম্পূর্ণ ভিন্ন। আর এসব কারণেই অন্যদের মতো জামিন হচ্ছে না শহিদুল আলমের।
বাংলা ইনসাইডার/জেডএ
মন্তব্য করুন
বিএনপি আমির খসরু মির্জা ফখরুল রুহুল কবির রিজভী
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রথম দফায় ১৩৯টি উপজেলা নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। যথারীতি বিরোধী দল বিহীন এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয় জয়কার। আওয়ামী লীগের নেতারাই অধিকাংশ উপজেলায় নিরঙ্কুশভাবে বিজয়ী হয়েছে। কিন্তু তারপরেও উপজেলা নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে সন্তুষ্টি নেই। আওয়ামী লীগের মধ্যে এক ধরনের অস্বস্তি এবং শীর্ষ নেতাদের মধ্যে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিরক্তি কাজ করছে।
নানা কারণে উপজেলা নির্বাচন আওয়ামী লীগের জন্য ইতিবাচক ফলাফল আনতে পারেনি বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। তারা উপজেলা নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করে উদ্বিগ্ন এবং দল ও গণতন্ত্রের জন্য সামনের দিনগুলোতে আরও সংকট অপেক্ষা করছে বলেই মনে করছেন আওয়ামী লীগের একাধিক দায়িত্বশীল নেতা।
প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সামনে পাঁচটি সংকটকে উন্মোচন করেছে। এর মধ্যে রয়েছে-
১. ভোটার উপস্থিতি কম: উপজেলা নির্বাচনে ভোটের হার এবার সর্বনিম্ন হয়েছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর যতগুলো উপজেলা নির্বাচন হয়েছে তার মধ্যে এবার ভোট পড়েছে সবচেয়ে কম। ২০০৮ এর ভূমিধস বিজয়ের পর প্রথম আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচন হয় ২০০৯ সালে। সেই উপজেলা নির্বাচনে ৬৮ ভাগের বেশি ভোট পড়েছিল। দ্বিতীয় দফায় ৬১ ভাগ ভোটার উপজেলা নির্বাচনে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছিলেন। ২০১৯ সালে এই হার ছিল ৪০ শতাংশের বেশি।
কিন্তু এবার নির্বাচন কমিশনের হিসেব অনুযায়ী ৩৬ দশমিক ১০ শতাংশ ভোটার উপজেলা নির্বাচনে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছে। এটি কখনোই স্বস্তি দেওয়ার খবর নয়। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সাধারণত ভোটাররা উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে ভোট দেয়। কিন্তু এবার উপজেলা নির্বাচনে ভোটাররা উৎসাহ নেয়নি। এমনকি আওয়ামী লীগের যে রিজার্ভ সমর্থক বলে যারা পরিচিত সেই ভোটাররাও ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত ছিল না।
আওয়ামী লীগ সভাপতি দলের নেতা কর্মীদেরকে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করা, তারা যেন ভোটকেন্দ্রে যায় সে জন্য উৎসাহিত করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই নির্দেশ মাঠে প্রতিফলিত হয়নি। ভোটার উপস্থিতি কম থাকার ফলে আওয়ামী লীগের জন্য অস্বস্তির কারণ।
২. অভ্যন্তরীণ কোন্দল: আওয়ামী লীগের জন্য এই নির্বাচন ছিল অভ্যন্তরীণ কোন্দল মেটানোর মাধ্যম। এ কারণেই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরপরই আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপজেলা নির্বাচন উন্মুক্ত করে দেন। তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে, দলীয় প্রতীক উপজেলা নির্বাচনে ব্যবহার করা যাবে না। আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা আশা করেছিলেন, এ ধরনের সিদ্ধান্তের ফলে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের যে কোন্দল এবং বিভক্তি প্রকাশ্য রূপ নিয়েছিল তার কিছুটা হলেও অবসান ঘটবে।
কিন্তু বাস্তবে ঘটেছে উল্টো। উপজেলা নির্বাচন আওয়ামী লীগকে আরও বিভক্ত করেছে। বিশেষ করে যে সমস্ত স্থানে স্বতন্ত্রদের সাথে আওয়ামী লীগের বিরোধ ছিল, সেই বিরোধে গুলো আরও সহিংস রূপ নিয়েছে। এটি আওয়ামী লীগের জন্য একটি অশনী সংকেত।
৩. কেন্দ্রের নির্দেশ অমান্য করার প্রবণতা: আওয়ামী লীগের জন্য উপজেলা নির্বাচনে একটি বড় অস্বস্তির বিষয় ছিল কেন্দ্রের নির্দেশ অমান্য করা। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনদেরকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই নির্দেশ মাঠে প্রতিফলিত হয়নি। দু একজন মন্ত্রী-এমপি ছাড়া অধিকাংশই তাদের আত্মীয় স্বজনদেরকে নির্বাচনে প্রার্থী করেছেন এবং প্রভাব বিস্তার করে জিতিয়ে এনেছেন। এটি আওয়ামী লীগের জন্য একটি সতর্কবার্তা। কেন্দ্রীয় নির্দেশ অমান্য করার এই প্রবণতা যদি বাড়তে থাকে সেটি ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগের জন্য একটি খারাপ পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে বলেও অনেকে মনে করছেন।
৪. এলাকায় এলাকায় জমিদারতন্ত্র-পরিবারতন্ত্র কায়েম: এবার উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত মন্ত্রী-এমপিরা তাদের আত্মীয় স্বজনদেরকে মনোনয়ন দিয়েছেন, তারা এলাকায় এলাকায় একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করার চেষ্টা করছেন। এর ফলে বিভিন্ন এলাকায় একটি গোষ্ঠীতন্ত্র, পরিবারতন্ত্র বা জমিদারতন্ত্র কায়েম হচ্ছে। এটিও আওয়ামী লীগের জন্য একটি খারাপ সংবাদ বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
৫. অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনে অনীহা: আওয়ামী লিগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারবার নেতাকর্মীদেরকে বলেছিলেন যে- অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে হবে। কিন্তু দেখা গেছে, নির্বাচনে যারা শক্তিশালী প্রার্থী হয়েছেন তারা প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেছেন। পেশিশক্তির প্রয়োগ ঘটিয়েছেন, কালো টাকা ছড়িয়েছেন। আর এগুলো আওয়ামী লীগের ইমেজ নষ্ট করেছে এবং জনগণের কাছে ভুল বার্তা দিয়েছে। এই সমস্ত অস্বস্তিগুলো উপজেলা নির্বাচনের মাধ্যমে স্পষ্ট হয়েছে। এখন ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগ কীভাবে এই সংকটগুলো কাটিয়ে উঠবে, সেটাই দেখার বিষয়।
উপজেলা নির্বাচন আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি ওবায়দুল কাদের
মন্তব্য করুন
বিএনপিতে নতুন মহাসচিব নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া বিভিন্ন জেলার স্থানীয় পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে নৈশ বৈঠকের আয়োজন করছেন। এ পর্যন্ত নোয়াখালী, কুমিল্লা, সিলেট, বরিশালসহ অন্তত দশটি জেলায় এই ধরনের জুম বৈঠক আয়োজন করা হয়েছে। যে বৈঠকগুলোতে লন্ডনে পলাতক তারেক জিয়া সরাসরি তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলছেন। তৃণমূলের নেতাকর্মী ছাড়াও ছাত্রদল, যুবদল, কৃষক দলের মতো বিভিন্ন অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের স্থানীয় পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ তারেক জিয়ার সঙ্গে কথা বলছেন।
প্রথম দফায় ১৩৯টি উপজেলা নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। যথারীতি বিরোধী দল বিহীন এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয় জয়কার। আওয়ামী লীগের নেতারাই অধিকাংশ উপজেলায় নিরঙ্কুশভাবে বিজয়ী হয়েছে। কিন্তু তারপরেও উপজেলা নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে সন্তুষ্টি নেই। আওয়ামী লীগের মধ্যে এক ধরনের অস্বস্তি এবং শীর্ষ নেতাদের মধ্যে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিরক্তি কাজ করছে।