নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮
নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে ঢাকা অচলের পরিকল্পনা করছে বিএনপি। বিএনপির নেতারা বেশ খোলামেলা ভাবেই বলছেন, আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে ঢাকা দখলের সংকল্প তাদের। বিএনপির এমন পরিকল্পনার মুখে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও নড়েচড়ে বসেছে।
ঢাকায় আওয়ামী লীগের কিছু সাংগঠনিক দুর্বলতা রয়েছে। ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পরপরই সংগঠনকে গতিশীল করতে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগকে দুই ভাগে বিভক্ত করা হয়। এই মুহূর্তে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগে সভাপতি হিসেবে এ কে এম রহমত উল্লাহ এমপি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সাদেক খান দায়িত্ব পালন করছেন। দক্ষিণের কমিটিতে সভাপতি পদে আছেন হাজী আবুল হাসনাত, আর সাধারণ সম্পাদক পদে আছেন শাহে আলম মুরাদ। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে এই দুই কমিটি রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রাম করার জন্য নির্ভরযোগ্য নয়। কর্মীদের সঙ্গে এদের যোগাযোগ খুবই সামান্য। কর্মীদেরকে উদ্বেলিত করা তাই এই নেতাদের পক্ষে খুব কঠিন একটি কাজ।
অথচ আওয়ামী লীগের কাছে খবর আছে, এবার বিএনপির নির্বাচনকেন্দ্রিক আন্দোলন পরিচালিত হবে ঢাকাকে টার্গেট করে। ঢাকা অচল করে দেওয়ার কথা কোনো রাখঢাক না করেই বলছেন বিএনপির নেতারা। বিএনপি মনে করে, ২০১৪’র নির্বাচনের সময় তারা সারা দেশকেই অচল করতে পেরেছিল। কিন্তু ঢাকাকে কব্জা করা সম্ভব হয়নি বলেই সফলতা পায়নি সেবারের নির্বাচনী আন্দোলন। এই ব্যর্থতার জন্য ঢাকার নেতাদের দায়ী করেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। তাই এবার প্রকাশ্যেই ঢাকা অচল করে দেওয়ার জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করছে দলটি। ঢাকা দখলের লড়াইয়ে বিএনপির বাইরে বিরোধী দলগুলোর অন্যান্য নেতারাও সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যায় মোস্তফা মহসিন মন্টুর কথা। এক সময়কার এই যুবলীগ চেয়ারম্যান এখন ড. কামালের নেতৃত্বাধীন গণফোরামের নেতা। অনেকদিন ধরেই ঢাকায় একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক ছিল সাবেক এমপি মন্টুর। নির্বাচনের আগে এখন তিনি আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছেন।
এমন পরিস্থিতিতে ঢাকার নিয়ন্ত্রণ হাতে রাখতে রাজপথের পরীক্ষিত সৈনিকদের হাতেই নির্বাচনের আগের সময়টাতে ঢাকার সাংগঠনিক কার্যক্রম গোছানোর দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগের হাই কমান্ড। এ কাজের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে, ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, এমপি জাহাঙ্গীর কবির নানক ও বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজমকে।
১৯৯২, ১৯৯৭ ও ২০০৩ সালে তিন মেয়াদে অবিভক্ত ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পান প্রয়াত মেয়র মোহাম্মদ হানিফ এবং সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব লাভ করেন মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। এই দুজনের নেতৃত্বে কমিটি ছিল অত্যন্ত গতিশীল। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি থাকাকালীনই ১৯৯৪ সালে ঢাকার প্রথম মেয়র নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করেন মোহাম্মদ হানিফ, যেখানে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি শক্তিশালী ভূমিকা রেখেছিল। যদিও সেই শক্তিশালী কমিটির সাধারণ সম্পাদক মায়া বর্তমানে বিভিন্ন কারণে ঢাকার কমিটিতে নেই। চাঁদপুর থেকে নির্বাচন করেছেন তিনি। তবুও দুর্দিনে দলের জন্য তাঁর অবদানের কথা স্মরণ করে আওয়ামী লীগের হাই কমান্ড থেকে মায়াকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ঢাকার সংগঠন গোছানো ও কর্মীদের উদ্বুদ্ধ করার জন্য।
এছাড়া হাই কমান্ড থেকে ঢাকার দায়িত্ব পেয়েছেন জাহাঙ্গীর কবির নানক ও মির্জা আজম। ২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ যখন বিরোধী দলে ছিল, সেই নির্যাতন-নিপীড়নের দিনগুলোতে ঢাকায় প্রতিরোধ গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল যুবলীগ। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর বিএনপি-জামাত জোট সরকার যেদিন ক্ষমতা ছাড়ে সেদিন আওয়ামী লীগ অফিসে আক্রমণ করা হয়। সেই হামলার হাত থেকে পার্টি অফিসকে রক্ষা করেছেন তৎকালীন যুবলীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর কবির নানক ও সাধারণ সম্পাদক মির্জা আজম। আওয়ামী লীগের দুঃসময়ের কাণ্ডারি এই দুই নেতার ঢাকার কর্মীদের সঙ্গেও যোগাযোগ অনেক শক্তিশালী। এই কারণে নানক ও মির্জা আজমকে ঢাকা গোছানো, আন্দোলন-সংগ্রাম মোকাবেলা করা এবং কর্মীদের সংঘবদ্ধ করা অর্থ্যাৎ জনসংযোগ বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে আওয়ামী লীগের হাই কমান্ড।
এছাড়া যুবলীগ উত্তরের বর্তমান সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট, দক্ষিণের সভাপতি মাইনুল হোসেন খান নিখিল ও সাধারণ সম্পাদক মো. ইসমাইল হোসেনের শক্তিশালী লোকবল রয়েছে। তাঁরাও নানক-আজমের কর্মী হিসেবেই পরিচিত। যুবলীগের এই নেতাদেরও তৎপর হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগের হাই কমান্ড বুঝতে পেরেছে ঢাকায় আওয়ামী লীগের কিছু দুর্বলতা আছে। তাই ঢাকাকে রক্ষা করার জন্য এবং সকল আন্দোলন রাজনৈতিক ভাবে মোকাবেলা করার জন্য মায়া-নানক-আজমের মতো দলের জন্য নিবেদিত প্রাণ কর্মীদের দায়িত্ব দিয়েছে দলটি। এই নেতারা ইতিমধ্যেই কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করাও শুরু করেছেন।
মেয়র হানিফ এবং মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ারা ছিলেন ঢাকা সিটির অবিসংবাদিত নেতা। কর্মীদের মধ্যে ওই নেতাদের যে জনপ্রিয়তা ছিল সেটি এখনকার অনেক নেতারই নেই। এমন সময়ে বিএনপি যদি রাজপথ দখল করে আন্দোলন শুরু করে তাহলে তাকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করতে হবে। আর বিএনপির পক্ষ থেকে যেহেতু বারবার ঢাকা দখলের ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে তাই বোঝা যাচ্ছে নির্বাচনের আগে ঢাকা দখলই হবে রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য মূল পরীক্ষা। এই পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার রাজনীতিতে আবার রাজপথের পরীক্ষিত সৈনিকদের সক্রিয় করছে আওয়ামী লীগ।
বাংলা ইনসাইডার/এসএইচটি/জেডএ
মন্তব্য করুন
চার ধাপে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এ পর্যন্ত (তৃতীয় ধাপ) ২০৪ জনকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় তাদের বহিষ্কার করা হয়।
এরমধ্যে তৃতীয় ধাপের নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় তৃণমূলের ৫৫ নেতাকে বহিষ্কার করে বিএনপি। আর প্রথম ধাপে ভোটের জন্য ৮০ জন, দ্বিতীয় ধাপে ৬৯ জনকে বহিষ্কার করে দলটি।
বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে উপজেলাসহ কোনো নির্বাচনে অংশ না নিচ্ছে না বিএনপি। গত ১৬ এপ্রিল দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, শেখ হাসিনার সরকার ও তার আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন, বেসামরিক ও পুলিশ প্রশাসন একটি অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করতে পারে না। অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিবেশ নেই। তাই উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেবে না দল।
দেশে চার ধাপে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তফসিল অনুযায়ী, গত ৮ মে প্রথম ধাপে ১৩৯টি উপজেলায় ভোট গ্রহণ হয়। এই ধাপের নির্বাচনে বিএনপির বহিষ্কৃত ৭ জন চেয়ারম্যান পদে, ৩ জন ভাইস চেয়ারম্যান পদে জয়লাভ করে বলেও জানা যায়।
দ্বিতীয় ধাপের ১৬১টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের ভোট গ্রহণ করা হবে ২১ মে। তৃতীয় ধাপে ১১২টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচন ২৯ মে অনুষ্ঠিত হবে। চতুর্থ ধাপের উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ৫ জুন।
মন্তব্য করুন
সরকারবিরোধী আগামীর আন্দোলন শুরুর আগে কর্মসূচি প্রণয়ন ও আন্দোলন পরিচালনায় শক্তিশালী লিয়াজোঁ কমিটি চায় বিএনপির মিত্ররা। তারা মনে করে, লিয়াজোঁ কমিটি না থাকায় বিগত আন্দোলন পরিচালনায় এক ধরনের সমন্বয়হীনতা ছিল।
কারণ, যুগপতের সব দল ও জোটের সঙ্গে বিএনপির পৃথক বৈঠক শেষে তাদের স্থায়ী কমিটিতে কর্মসূচি চূড়ান্ত হওয়াকে যথাযথ প্রক্রিয়া এবং আন্দোলনের সঠিক প্ল্যাটফর্ম বলে মনে করে না শরিকরা, বিশেষ করে গণতন্ত্র মঞ্চ। তাই এবার এ প্রশ্নে একটা সিরিয়াস মীমাংসা চান মঞ্চের নেতারা।
বিএনপির সঙ্গে বুধবার (১৫ মে) রাতে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে লিয়াজোঁ কমিটি গঠনের পরামর্শ দিয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা বলেন, প্রতিটি জোট ও দল থেকে একজন করে নিয়ে ১০-১২ সদস্যবিশিষ্ট একটি লিয়াজোঁ কমিটি গঠন করতে হবে। সেই লিয়াজোঁ কমিটিতে আলোচনার ভিত্তিতে আন্দোলনের কর্মসূচি প্রণীত হবে। তার আগে নিজ নিজ দল ও জোটের সিদ্ধান্ত নিয়ে সংশ্লিষ্ট নেতারা বৈঠকে উপস্থিত হবেন।
নব্বইয়ে এরশাদবিরোধী আন্দোলনসহ অতীতের আন্দোলনগুলোতে লিয়াজোঁ কমিটি এভাবে কাজ করেছে। কিন্তু বিগত আন্দোলনে এ প্রক্রিয়ায় কর্মসূচি প্রণীত হয়নি। পাঁচ-দশ মিনিট আগে মিত্রদের কর্মসূচির বিষয়ে জানানো হতো এবং কর্মসূচির সঙ্গে সহমত না হলেও সেটাই তারা ঘোষণা করতেন। বৈঠক সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।
যুগপৎ আন্দোলন পুনরুজ্জীবিত করে সরকারের পদত্যাগ ও নতুন নির্বাচনের দাবিতে ঈদুল আজহার পর মাঠে নামার পরিকল্পনা করছে বিএনপি। সেই আন্দোলনের কর্মকৌশল নির্ধারণে পরামর্শ নিতে গত রোববার থেকে মিত্রদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করছে দলটি। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর এ ধরনের বৈঠক এবারই প্রথম। এর অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার (১৬ মে) এনডিএম, বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ এবং মিয়া মসিউজ্জামান ও ফারুক হাসানের নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গণতন্ত্র মঞ্চ ছাড়াও এর আগে গত সোমবার বিএনপির সঙ্গে বৈঠকে আন্দোলনের কর্মসূচি প্রণয়নে সমন্বয়হীনতা দূরীকরণে যুগপতের সব দল ও জোট থেকে দু-একজন করে নিয়ে শক্তিশালী লিয়াজোঁ কমিটি গঠনের ওপর জোর দেন সমমনা জোটের নেতারা।
মন্তব্য করুন
শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন বিএনপি
মন্তব্য করুন
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জাতীয় প্রেস ক্লাব
মন্তব্য করুন
বিএনপি ভারত বিরোধী মার্কিন বিরোধী মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
মন্তব্য করুন
১৯৮১ সালের ১৭ মে। স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ সভাপতি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেছিলেন এক বৃষ্টিমুখর দিনে। সেই দিনে লাখো মানুষ মানিক মিয়া এভিনিউতে জড়ো হয়েছিল জাতির পিতার কন্যাকে দেখার জন্য। তাদের শোক এবং আবেগ ছিল হৃদয়স্পর্শী। সারা বাংলাদেশ উত্তাল হয়েছিল। জাগরণের এক গান গেয়ে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বাংলাদেশের জন্ম হওয়ার পর থেকেই প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছে। এই সরকার পুরোপুরিভাবে নতজানু সরকারে পরিণত হয়েছে। শুধু ফারাক্কা নয়, গঙ্গার পানি নয়, বাংলাদেশের ১৫৪টি নদীতে পানি দিতে তারা গড়িমসি করে যাচ্ছে। তিস্তা নদীর পানি বণ্টন, এ করছি, এ হচ্ছে এমন করে সময় শেষ করছে সরকার। এ যে ব্যর্থতা এর মূল কারণ হচ্ছে, সরকারে যারা আছে তারা পুরোপুরিভাবে একটা নতজানু সরকার।