নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:১৬ পিএম, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৮
নির্বাচন-পূর্ব রাজনৈতিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে ২০১৩ সালে বাংলাদেশে এসেছিলেন জাতিসংঘের রাজনীতি বিষয়ক সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো। তিনি দফায় দফায় বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেন এবং নির্বাচনে সমঝোতার চেষ্টা করেন। বরাবরই জাতিসংঘ বিভিন্ন দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিষয়গুলো নিয়ে কোনো সংকট সমাধানের চেষ্টা করে। তবে ২০১৪ সালে বাংলাদেশের নির্বাচনে সমঝোতায় ব্যর্থ হয় জাতিসংঘ। ওই ব্যর্থতা সত্ত্বেও জাতিসংঘ এবার বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকটে ভূমিকা রাখতে পারবে এই আশায় সেখানে অভিযোগ উত্থাপন করেছে বিএনপি। ওই অভিযোগের শুনানিতে অংশ নিতেই গতকাল রাতে নিউইয়র্কে রওয়ানা হয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সঙ্গী হয়েছেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল। আবার লন্ডন থেকে নিউইয়র্ক পৌঁছে তাঁদের সঙ্গে যোগ দেবেন বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সচিব হুমায়ুন কবির। জাতিসংঘের বাংলাদেশ বিষয়ে শুনানি নিয়ে অনেক কথাই শোনা যাচ্ছে, আসলে কী হবে সেখানে? নিউইয়র্ক থেকে কতটা প্রত্যাশা পূরণ হবে বিএনপির?
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে নির্বাচন নিয়ে জাতিসংঘে আগেই যে আলোচনা ছিল তারই দ্বিতীয় অধ্যায় হবে এবার। জাতিসংঘের কমিটির কাছে মির্জা ফখরুল তাদের বক্তব্য তুলে ধরবেন। জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগ দিতে আগামী ২১ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্ক যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সফরসঙ্গীরা। ওই সময় জাতিসংঘের কমিটি বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলবে। সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে জাতিসংঘের কমিটির সঙ্গে আলোচনায় থাকতে পারেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী, রাজনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা এইচ. টি. ইমাম, অর্থনৈতিক উপদেষ্টা মসিউর রহমান ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, গতবার বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে সমঝোতার বিষয়টি জাতিসংঘের প্রতিনিধিরা বাংলাদেশে এসে করলেও এবার তা হচ্ছে নিউইয়র্কেই। সেখানে সরকার ও বিএনপির প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে সমঝোতার মাধ্যমে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের প্রচেষ্টা চালাবে।
জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, কোনো দেশের রাজনৈতিক সমঝোতার প্রচেষ্টায় প্রথমেই বিভিন্ন পক্ষের বক্তব্য জানতে চাওয়া হয়। বাংলাদেশের নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করতে তাই বিএনপির কাছে জানতে চাওয়া হতে পারে তারা সর্বনিম্ন কি শর্তে নির্বাচনে যাবে। অপরদিকে সরকারের কাছে জানতে চাইবে সর্বোচ্চ কতটুকু ছাড় তারা দিত পারে। এরপর চলবে বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে সমঝোতার।
তবে জাতিসংঘের এমন সমঝোতার প্রচেষ্টায় বাংলাদেশের অন্য সংকটগুলোর বিষয়েও তুলে ধরা হতে পারে। নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ অযাচিত হয়ে দেখা দিলে দেশের রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়টিও তুলে ধরা হতে পারে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী নিয়ে বাংলাদেশ জর্জরিত। এই সংকট নিরসনে নূন্যতম কোনো সাফল্য দেখাতে পারেনি জাতিসংঘ। মিয়ানমারকে সংকট নিরসনে কোনোভাবেই চাপ প্রয়োগ করতে পারছে না তারা। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিষয়ে অযাচিত হস্তক্ষেপের চেয়ে রোহিঙ্গা ইস্যুর সমাধানে জাতিসংঘকে তৎপর হওয়ার কথা বলতে পারে সরকার।
জাতিসংঘ বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তর রাজনৈতিক ইস্যু নিয়েই যেহেতু কার্যকর নিতে পারছে না, সেখানে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়ে কতটা সফল হবে তা প্রশ্ন সাপেক্ষ। তাই নিউইয়র্ক থেকে শূন্য হাতেই ফিরতে হতে পারে বিএনপি নেতাদের। এক্ষেত্রে জাতিসংঘে বিএনপির অভিযোগে শুনানিকে সান্ত্বনা পুরস্কার বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
বাংলা ইনসাইডার/জেডএ
মন্তব্য করুন
কাউন্সিল বিএনপি তারেক জিয়া মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বেগম খালেদা জিয়া
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
চার ধাপে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এ পর্যন্ত (তৃতীয় ধাপ) ২০৪ জনকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় তাদের বহিষ্কার করা হয়।
এরমধ্যে তৃতীয় ধাপের নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় তৃণমূলের ৫৫ নেতাকে বহিষ্কার করে বিএনপি। আর প্রথম ধাপে ভোটের জন্য ৮০ জন, দ্বিতীয় ধাপে ৬৯ জনকে বহিষ্কার করে দলটি।
বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে উপজেলাসহ কোনো নির্বাচনে অংশ না নিচ্ছে না বিএনপি। গত ১৬ এপ্রিল দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, শেখ হাসিনার সরকার ও তার আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন, বেসামরিক ও পুলিশ প্রশাসন একটি অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করতে পারে না। অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিবেশ নেই। তাই উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেবে না দল।
দেশে চার ধাপে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তফসিল অনুযায়ী, গত ৮ মে প্রথম ধাপে ১৩৯টি উপজেলায় ভোট গ্রহণ হয়। এই ধাপের নির্বাচনে বিএনপির বহিষ্কৃত ৭ জন চেয়ারম্যান পদে, ৩ জন ভাইস চেয়ারম্যান পদে জয়লাভ করে বলেও জানা যায়।
দ্বিতীয় ধাপের ১৬১টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের ভোট গ্রহণ করা হবে ২১ মে। তৃতীয় ধাপে ১১২টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচন ২৯ মে অনুষ্ঠিত হবে। চতুর্থ ধাপের উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ৫ জুন।
মন্তব্য করুন
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরে যেতে পারেন এমন গুঞ্জন রয়েছে। তিনি জেল থেকে বেরিয়ে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে মহাসচিবের দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। বেগম খালেদা জিয়া এই বিষয়টি নিয়ে তাকে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন। তবে তারেক জিয়া এ বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া দেননি বলে জানা গিয়েছে। বরং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যদেরকে তারেক জিয়া জানিয়েছেন, কাউন্সিলের আগে বিএনপিতে নেতৃত্বের পরিবর্তন নয়। তবে বিএনপির কাউন্সিল কবে, কীভাবে হবে- এ সম্পর্কে কোন বিস্তারিত তথ্য জানা যায়নি।
সরকারের বিরুদ্ধে নতুন করে আন্দোলন শুরু করার লক্ষ্যে প্রস্তুতি গ্রহণ করছে দীর্ঘ দিন ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি। তারা সাম্প্রতিক সময়ে আবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক শুরু করেছে। তবে এসব বৈঠকে যুগপৎ আন্দোলনের কথা বলা হলেও বিএনপি এখন পর্যন্ত সরকার বিরোধী কোন জোট করতে রাজি নয়। ২০ দলীয় জোট আনুষ্ঠানিকভাবে ভেঙে যাওয়ার পর বিএনপি এখন পর্যন্ত জোটগত ভাবে কোন আন্দোলন করেনি। তবে বিভিন্ন সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তারা সম্পর্ক রেখেছে। ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত এই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তারা যুগপৎ আন্দোলন করেছিল। এখন আবার নতুন করে যুগপৎ আন্দোলন শুরু করার জন্য বিএনপির পক্ষ থেকে এই সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে যোগাযোগ করা হচ্ছে। তবে রাজনৈতিক দলগুলো বিএনপির ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব দেখাচ্ছে না।