নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:৩১ পিএম, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, ‘নৈতিক মূল্যবোধ, বিবেক এবং দেশপ্রেম জাগ্রত রাখতে হবে। অন্যায় ও অসত্যের কাছে কখনো মাথানত করা যাবে না। নিজেদের আত্মপরিচয়ের কথা, রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার কথা, আমাদের প্রিয় দেশের কথা মনে রাখতে হবে। কারণ, শেকড় ভুলে কেউ বড় হয় না।’
আজ শনিবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দশম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে গ্র্যাজুয়েটদের উদ্দেশ্য করে এসব একথা বলেন রাষ্ট্রপতি।
সমাবর্তন অনুষ্ঠানে অনুষ্ঠানে কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন ও হাসান আজিজুল হককে ডক্টরেট ডিগ্রি অব লিটারেচার (ডি. লিট) দেওয়া হয়।
গ্র্যাজুয়েটদের উদ্দেশ্য করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘সমাবর্তনের মানে শিক্ষার সমাপ্তি নয়, বরং উচ্চতর জ্ঞানভাণ্ডারের দ্বার উন্মোচন। তোমরা কেউ কেউ সে বিশাল জ্ঞানভাণ্ডারে প্রবেশ করে বিশ্বকে আরও সমৃদ্ধ করবে।’
এসময় রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, ‘বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উগ্রবাদ, জঙ্গিবাদ ও মৌলবাদের মতো নেতিবাচক কর্মকাণ্ড জাতি গভীর উদ্বেগের সঙ্গে প্রত্যক্ষ করছে। মুক্তচিন্তা ও সংস্কৃতি চর্চার অভাবে এর উত্থান ঘটছে বলে আমি মনে করি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য মো. আবদুল হামিদ বলেন, ‘জাতির অমিত শক্তি যুব সমাজ। যুব সমাজের সম্ভবনা ও শক্তিকে দেশ গঠনের কাজে লাগাতে হবে। যুব সমাজকে অবশ্যই অপসংস্কৃতির প্রভাবমুক্ত হয়ে স্বাধীন চিন্তার অধিকারী হতে হবে। তাহলেই লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জন করতে পারবো আমরা। এ জন্য শিক্ষক-শিক্ষার্থী, গবেষক, ছাত্রসংগঠন, অভিভাবক সবাইকে সম্মিলিতভাবে অবদান রাখতে হবে।’
সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। সমাবর্তন বক্তা ছিলেন ইমেরিটাস অধ্যাপক আলমগীর মো. সিরাজুদ্দীন। ছয় হাজার ১৪ জন শিক্ষার্থীকে সনদ দেওয়া হয় আজকের সমাবর্তনে।
বাংলা ইনসাইডার/আরকে/জেডএ
মন্তব্য করুন
দেশের
৫৯ টি জেলার ১৩৯ টি উপজেলায় প্রথম ধাপের ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া
ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ শান্তিপূর্ণ হয়েছে। বুধবার (৮ মে) বিকেল ৪ টার দিকে ভোটগ্রহণ শেষ
হয়। এখন চলছে গণনার কাজ।
এর আগে আজ বুধবার (৮ মে) সকাল
৮টা থেকে
শুরু হয়
প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ।
এর মধ্যে
২২টিতে ইলেকট্রিক
ভোটিং মেশিন
(ইভিএম) এবং
বাকিগুলোতে ব্যালট
পেপারে ভোট
হয়।
সকাল থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে
গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি উপেক্ষা করেই কেন্দ্রে আসেন ভোটাররা। নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে
বেছে নিতে উৎসব মুখর পরিবেশে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন তারা।
নির্বাচন কমিশনের
তথ্য অনুযায়ী,
১৩৯টি উপজেলা
পরিষদে প্রতিটি
উপজেলায় চেয়ারম্যান,
ভাইস চেয়ারম্যান
ও মহিলা
ভাইস চেয়ারম্যান
পদে প্রায়
১৬৩৫ প্রার্থী
নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এর মধ্যে
চেয়ারম্যান পদে
৫৭০, ভাইস
চেয়ারম্যান পদে
৬২৫ এবং
মহিলা ভাইস
চেয়ারম্যান পদে
৪৪০ জন।
এছাড়াও প্রথম ধাপের চেয়ারম্যান পদে ৮ জন, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১০ জন করে অর্থাৎ মোট ২৮ প্রার্থী এরই মধ্যে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হয়েছেন।
আরও পড়ুন: উপজেলা নির্বাচন: সিল মারা ৯০০টি ব্যালটসহ প্রিজাইডিং অফিসার ও এজেন্ট আটক
আরও পড়ুন: উপজেলা নির্বাচন: নরসিংদীতে ভোটকেন্দ্র দখল নিয়ে সংঘর্ষে আহত ৫
আরও পড়ুন: ভোটারদের মাঝে টাকা বিতরণ, ৯৪ হাজার টাকাসহ ইউপি চেয়ারম্যান আটক
আরও পড়ুন: উপজেলা নির্বাচন: সুনামগঞ্জে টাকা বিতরণকালে সহকারী প্রিজাইডিংসহ আটক ৪
আরও পড়ুন: চাঁদপুরের এক ভোটকেন্দ্রে সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা অসুস্থ, পরে মৃত্যু
মন্তব্য করুন
বরগুনার তালতলী উপজেলা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ রেজবি-উল কবির জোমাদ্দার, নিশানবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ড. কামরুজ্জামান বাচ্চু, পঁচাকোড়ালিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক হাওলাদার ও উপজেলা ছাত্রলীগ সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিনহাজুল আবেদীন মিঠুর বিরুদ্ধে গণধর্ষণ ও পর্নোগ্রাফী আইনে মামলা হয়েছে।
বুধবার (৮ মে) বরগুনা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ধর্ষিতার বাবা বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন।
আদালতের বিচারক মোঃ মশিউর রহমান খাঁন মামলাটি আমলে নিয়ে পটুয়াখালী পিবিআইকে তদন্ত পুর্বক ৭ কার্য দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন। ৩ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ায় উপজেলা ব্যাপী চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। তাদের শাস্তির দাবী করছেন এলাকাবাসী।
মামলার বিবরন সূত্রে জানা গেছে, তালতলী উপজেলার নিশানবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ড. কামরুজ্জামান বাচ্চু মিয়ার সঙ্গে মামলার বাদীর কন্যার মোবাইল ফোনে প্রেম হয়। এক পর্যায় চেয়ারম্যান বাচ্চু মেয়েকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে দৈহিক সম্পর্ক গড়ে তুলে। কিন্তু চেয়ারম্যান তাকে বিয়ে না করে টালবাহানা করতে থাকে। ধর্ষিতা বিয়ের জন্য চাপ প্রয়োগ করলে চেয়ারম্যান তাকে বিয়ে করবে বলে স্ট্যাম্পে লিখিত দেয় এবং বিভিন্ন স্থানে নিয়ে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে ধর্ষণ করে এবং ধর্ষিতার অজান্তে গোপনে মোবাইলে নগ্ন ছবি ধারণ করে। ওই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে মামলার ২ নং আসামী পঁচাকোড়ালিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক হাওলাদার সঙ্গে দৈহিক সম্পর্ক করতে বাধ্য করেন। চেয়ারম্যান রাজ্জাক তাকে একাধিকবার ধর্ষণ করেন এবং তিনিও মোবাইলে নগ্ন ছবি ধারন করে রাখে। পরে পঁচাকোড়ালিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ওই ধর্ষিতাকে ব্ল্যাকমেইল করেন এবং তালতলী উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ রেজবি-উল কবির জোমাদ্দারের সঙ্গে দৈহিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে বাধ্য করে। তার কথা না শুনলে তাকে জীবন নাশের হুমকি দেন। নিরুপায় হয়ে ধর্ষিতা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রেজবি-উল কবির জোমাদ্দারের সঙ্গে দৈনিক সম্পর্কে বাধ্য হয়। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানও ওই কন্যাকে বিভিন্ন হোটেল ও লঞ্চে নিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ করেছে বলে দাবী করেন মামলার বাদী।
তাদের হাত থেকে রক্ষা পেতে ধর্ষণের শিকার ওই মেয়ে তাদের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা করবে বলে হুমকি দেয়। এমন খবর পেয়ে তিন চেয়ারম্যান ও ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক মিলে ওই ধর্ষিতার বিরুদ্ধে উল্টো পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা দেয়। ওই মামলায় ডিবি পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। বর্তমানে ওই মামলায় ধর্ষিতা জেল হাজতে রয়েছে।
তালতলী উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ রেজবি উল কবির জোমাদ্দার বলেন, ‘নির্বাচনকে সামনে রেখে আমার বিরুদ্ধে আমার প্রতিপক্ষরা ষড়যন্ত্র মুলক এ মামলা দায়ের করেছে। এ ঘটনার সঙ্গে আমি ও অন্য দুই চেয়ারম্যানের কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। আমি আইনগতভাবে মোকাবেলা করবো।’
মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী মোঃ আনিচুর রহমান মিলন বলেন, আদালতের বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে পটুয়াখালী পিবিআইকে তদন্ত করে ৭ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
গণধর্ষণ পর্ণোগ্রাফি চেয়ারম্যান
মন্তব্য করুন
বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ ব্যারিস্টার সুমন
মন্তব্য করুন
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার ব্রহ্মকপালিয়া গ্রামে সিএনজি-পিকআপ ভ্যান সংঘর্ষে ২ জন নিহত হয়েছেন। এঘটনায় আরও ২ আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
বুধবার সকাল সাড়ে ৬ টায় পাবনা-বগুড়া মহাসড়কে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় নিহতরা হলেন, উল্লাপাড়া উপজেলার চড়িয়া শিকার গ্রামের আব্দুল গফুর (৫৮) ও ধোপাকান্দি গ্রামের নজরুল ইসলাম (৪৭) ।
উল্লাপাড়ার হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ডিউটি অফিসার উপ-পরিদর্শক মোঃ হিরোন জানান, ‘সিএনজি চালিত অটোরিক্সাটি হাটিকুমরুল থেকে উল্লাপাড়ার দিকে যাচ্ছিল। অপর দিকে পিকআপ ভ্যানটি যাচ্ছিল উল্লাপাড়া থেকে হাটিকুমরুলের দিকে। ঘটনাস্থলে এই ২ গাড়ির সংঘর্ষ হয়। আহত দুজনকে সিরাজগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।’
তিনি আরও জানান, ‘ঘটনার সময় পিকআপের চালক পালিয়ে যায়। পুলিশ দুর্ঘটনা কবলিত দুটি গাড়িই আটক করেছে। দুর্ঘটনায় দুটি গাড়িই দুমড়ে মুচড়ে গেছে। নিহতদের মরদেহ তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।'
সড়ক দুর্ঘটনা সিএনপি-পিকআপ সংঘর্ষ
মন্তব্য করুন
দেশেরে অন্যতম সফল ব্যবসায়ী জয়নুল হক
সিকদার। একাধারে তিনি যেমন উদ্যোক্তা ছিলেন তেমনি দেশেরে সম্পদশালীদের মধ্যে ছিলেন
অন্যতম একজন ব্যবসাসফল মানুষ। আর সেকারণেই দেশের প্রভাবশালী অনেক ব্যবসায়ী গুরু মানতেন
তাকে। শুধু তাই নয়, ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি সরকারের ওপরও ছিল তার বিপুল প্রভাব। তার আশীর্বাদের
জন্য তার কাছে ধরনাও দিতেন।
জয়নুল হক সিকদারের হাতে গড়ে ওঠা সিকদার
গ্রুপের ব্যবসা সম্প্রসারিত হয় ব্যাংক, বীমা, বিদ্যুৎ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, আবাসন, নির্মাণ,
হোটেল, পর্যটন, এভিয়েশনসহ নানা খাতে। কিন্তু তার মৃত্যুর তিন বছর না পেরোতেই বিপর্যয়ের
মুখে পড়েছে পুরো সিকদার গ্রুপ।
প্রয়াত ব্যবসায়ী জয়নুল হক সিকদারের
আট সন্তানের মধ্যে দুজন বাংলাদেশে তার ব্যবসার হাল ধরেছিলেন। তারা হলেন রন হক সিকদার
ও রিক হক সিকদার। বেপরোয়া জীবনযাপনের মধ্য দিয়ে বারবার আলোচনায় এসেছেন এ দুই সহোদর।
পিতার জীবদ্দশায় যখন যা পেতে চেয়েছেন, সেটিই পেয়েছেন। এমনকি অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডেও
জড়িয়েছেন বহুবার।
ন্যাশনাল ব্যাংক কর্মকর্তাদের ওপর তাদের কর্তৃত্ব ছিল প্রভুসুলভ। পিতার প্রভাব কাজে লাগিয়ে দেশের অন্যান্য ব্যাংক থেকেও ঋণ নিয়েছেন খেয়াল খুশিমতো। কিন্তু পিতার অবর্তমানে সে সাম্রাজ্যও এখন ভেঙে পড়েছে। ন্যাশনাল ব্যাংক পর্ষদ থেকে ছিটকে পড়ার পর অন্য ব্যবসাগুলোও হাতছাড়া হচ্ছে তাদের।
চলতি বছরের ডিসেম্বরের শেষ দিকে বাংলাদেশ
ব্যাংক ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেয়। ওই সময় ব্যাংকটির পর্ষদ থেকে রন-রিকের
পাশাপাশি তাদের মা মনোয়ারা সিকদারও ছিটকে পড়েন। পর্ষদ থেকে বাদ পড়লেও ব্যাংকটির শেয়ারের
মালিকানায় ছিলেন তারা। কিন্তু গত দুই দিনে সে মালিকানাও হাতছাড়া হয়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের
(ডিএসই) ব্লক মার্কেটে গত দুই দিনে ন্যাশনাল ব্যাংকের ১৮ কোটি ৭০ লাখ ২০ হাজার ৪০০টি
শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে গত ৬ মে ১২ কোটি ২৫ লাখ ২০ হাজার ৪০০টি শেয়ার ৮৩ কোটি
৭ লাখ টাকায় লেনদেন হয়। আর গতকাল ৪২ কোটি ৫১ লাখ টাকায় লেনদেন হয় আরো ৬ কোটি ৪৫ লাখ
শেয়ার। ব্লক মার্কেটে শেয়ারের ক্রেতা-বিক্রেতা আগে থেকেই নির্ধারিত থাকে।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রের তথ্যমতে,
এ দুই দিনে সিকদার পরিবারের সদস্যরা তাদের মালিকানাধীন শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছেন। এর
মধ্যে রন-রিকের শেয়ারের পাশাপাশি তাদের মায়ের শেয়ারও রয়েছে। এসব শেয়ার কিনে নিয়েছে
দেশের প্রভাবশালী একটি শিল্প গ্রুপ। সে গ্রুপটির প্রতিনিধিরা ব্যাংকটির পুনর্গঠিত পরিচালনা
পর্ষদে স্থান পেয়েছেন।
আগামী কয়েক দিনে সিকদার পরিবারের আরো
কয়েক কোটি শেয়ার হস্তান্তর হবে। শুধু ন্যাশনাল ব্যাংকের শেয়ার নয়, রন-রিকের মালিকানায়
থাকা বিভিন্ন কোম্পানির সম্পদও হাতছাড়া হতে চলেছে বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের
তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের জুন পর্যন্ত দেশের ব্যাংকগুলোয় রন-রিকের মালিকানাধীন কোম্পানিগুলোর
ঋণের পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ৬৩৫ কোটি টাকা। এসব ঋণের সিংহভাগই ছিল মেয়াদোত্তীর্ণ। খেলাপি
হওয়া থেকে বাঁচতে তারা ঋণের ওপর উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ নিয়ে রেখেছেন। তবে একাধিক
ব্যাংকে তাদের ঋণ এরই মধ্যে খেলাপি করে দেয়া হয়েছে।
তবে গুঞ্জন উঠেছে, সম্পদের তুলনায় দায়দেনা
বেশি হওয়ায় রন-রিক তাদের সব সম্পদ দেশের একটি প্রভাবশালী শিল্প গ্রুপের কাছে হস্তান্তর
করে দিচ্ছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, এরই মধ্যে তাদের
সব কোম্পানি হস্তান্তরের প্রাথমিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে গেছে। এর মধ্যে জেডএইচ সিকদার
উইমেন্স মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটালও রয়েছে।
তবে বিষয়টিকে গুজব বলে দাবি করেছেন
প্রয়াত জয়নুল হক সিকদারের কন্যা পারভীন হক সিকদার। তিনি বলেন, ‘জেডএইচ সিকদার উইমেন্স
মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটাল আমার পিতার নামে। তিনি প্রয়াত হওয়ার পর উত্তরাধিকারী
হিসেবে আমাদের মধ্যে এ সম্পদ বণ্টন হয়নি। সে হিসেবে আমার ভাইরা চাইলেও এটি বিক্রি করতে
পারার কথা নয়। তাছাড়া আমি ন্যাশনাল ব্যাংকের কোনো শেয়ার এখনো বিক্রি করিনি।’
পারভীন হক সিকদার বলেন, ‘একটি পক্ষ
গুজব ও আতঙ্ক ছড়িয়ে আমাদের সম্পদ দখলে নেয়ার চেষ্টা করছে। তারা সিকদার পরিবারকে ধ্বংস
করে দিতে চায়। আমি সব সময় সত্যের পথে চলেছি, অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলেছি। এ কারণেই
ভাইদের সঙ্গে আমার বিরোধ। কন্যা হিসেবে জয়নুল হক সিকদারের রক্ত আমার শরীরে প্রবহমান।
আমি এখনো ব্যর্থ হয়ে যাইনি। আশা করছি, ব্যর্থ হবও না। দ্রুতই আমরা ঘুরে দাঁড়াব।’ তবে
এ বিষয়ে চেষ্টা করেও রন হক সিকদার ও রিক হক সিকদারের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিত ন্যাশনাল ব্যাংক
লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি বেশ সুনামের সঙ্গেই
প্রায় তিন দশক পার করেছিল। কিন্তু ২০১০ সালের পর ব্যাংকটি পথ হারায়। এক যুগের বেশি
সময় ধরে সিকদার পরিবারের একচ্ছত্র কর্তৃত্বে পরিচালিত হয়েছে ব্যাংকটি। প্রয়াত জয়নুল
হক সিকদারের হাত ধরে সৃষ্টি হওয়া সে কর্তৃত্বের অবসান হয় গত বছরের শেষের দিকে। বাংলাদেশ
ব্যাংক থেকে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়ে সাত সদস্যের পর্ষদ গঠন করে দেয়া হয়।
ব্যাংকটির পর্ষদ ভেঙে দেয়ায় প্রয়াত
জয়নুল হক সিকদারের স্ত্রী মনোয়ারা সিকদার ন্যাশনাল ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদ থেকে ছিটকে
যান। একই সঙ্গে পরিচালক পদ হারান জয়নুল হক সিকদারের ছেলে রিক হক সিকদার ও রন হক সিকদার।
ওই পরিবারের প্রতিনিধি হিসেবে নতুন পর্ষদে স্থান পান কেবল পারভীন হক সিকদার। কিন্তু
গত রোববার ব্যাংকটির পর্ষদ আরেক দফায় পুনর্গঠন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। নতুন পর্ষদ থেকে
পারভীন হক সিকদারও ছিটকে পড়েছেন।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের তথ্য অনুযায়ী,
ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ৩ হাজার ২১৯ কোটি টাকা। ব্যাংকটির মোট শেয়ার
সংখ্যা ৩২১ কোটি ৯৭ লাখ ৩৯ হাজার ৫৭০। এর মধ্যে প্রায় ১০ শতাংশ শেয়ার সিকদার পরিবারের
সদস্যদের নামে রয়েছে। পরিবারটির মালিকানাধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে রয়েছে আরো ৬-৭
শতাংশ শেয়ার।
প্রয়াত জয়নুল হক সিকদারের আট সন্তানের
মধ্যে কেবল রন-রিকই বাংলাদেশে ব্যবসা বিস্তৃত করেছেন। এ দুই সহোদরের মালিকানাধীন কোম্পানিগুলোর
মধ্যে পাওয়ার প্যাক মতিয়ারা কেরানীগঞ্জ পাওয়ার প্লান্ট লিমিটেডের নামে ১ হাজার ৩৮৩
কোটি টাকা, পাওয়ার প্যাক মতিয়ারা জামালপুর পাওয়ার প্লান্ট লিমিটেডের নামে ১ হাজার ১১৯
কোটি, সিকদার রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের নামে ৬৭২ কোটি, বিইএল কনস্ট্রাকশন এসডিএন বিএইচডি
লিমিটেডের নামে ৬২২ কোটি, মাল্টিপ্লেক্স হোল্ডিংস লিমিটেডের নামে ২১৪ কোটি, আর অ্যান্ড
আর এভিয়েশন লিমিটেডের নামে ২৯ কোটি, পাওয়ার প্যাক মতিয়ারা খুলনা পাওয়ার প্লান্ট লিমিটেডের
নামে ২৭ কোটি, পাওয়ার প্যাকের নামে ১২ কোটি এবং পাওয়ার প্যাক হোল্ডিংস লিমিটেডের নামে
৭ কোটি টাকার ঋণ রয়েছে। এছাড়া রন হক সিকদারের নামে ৩৫৩ কোটি ও রিক হক সিকদারের নামে
১৯৫ কোটি টাকার ব্যক্তিগত ঋণও রয়েছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ব্যাংকটি থেকেও
নামে-বেনামে কয়েক হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন রন ও রিক। এসব ঋণ অনেক আগেই অনিয়মিত ও
মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে। শুধু ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করেই এ দুই ভাই বিদেশে খরচ করেছেন
৭১ কোটি টাকার বেশি। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী দেশের ব্যাংকগুলোর কোনো
ক্রেডিট কার্ডের অনুকূলে জামানতবিহীন সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা ও জামানতসহ সর্বোচ্চ ২৫
লাখ টাকার ঋণসীমার সুযোগ রয়েছে। এ নিয়ে গত মাসের শুরুতে এ দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে মামলা
করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মামলায় তাদের বিরুদ্ধে ন্যাশনাল ব্যাংকের ক্রেডিট
কার্ড ব্যবহার করে বিদেশে ৭১ কোটি ৫৩ লাখ টাকা ব্যয় ও পাচারের অভিযোগ আনা হয়। এতে রন-রিক
ছাড়াও বেসরকারি ব্যাংকটির সাবেক তিন ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ (এমডি) পাঁচ কর্মকর্তাকে
আসামি করা হয়। দুদকের পরিচালক মো. বেনজীর আহম্মদ বাদী হয়ে মামলা দুটি করেন। ক্রেডিট
কার্ড ছাড়াও ন্যাশনাল ব্যাংকের হিসাব থেকে থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে অর্থ পাচার হয়েছে
বলে দুদকের মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়।
এতে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) অনুসন্ধান প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, থাইল্যান্ডে রন হক সিকদার ও রিক হক সিকদারের নিজ নামে এবং তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে অন্তত ২০টি ব্যাংক হিসাব পরিচালিত হচ্ছে। এসব ব্যাংক হিসাবে বিভিন্ন সময়ে ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে অর্থ স্থানান্তর হয়েছে। আমেরিকা, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, সুইজারল্যান্ড, চীন, ভিয়েনা, অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটেন ও রাশিয়া থেকে হিসাবগুলোয় অর্থ স্থানান্তরের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
জয়নুল হক সিকদার বাংলাদেশ ব্যাংক ন্যাশনাল ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদ
মন্তব্য করুন
বরগুনার তালতলী উপজেলা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ রেজবি-উল কবির জোমাদ্দার, নিশানবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ড. কামরুজ্জামান বাচ্চু, পঁচাকোড়ালিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক হাওলাদার ও উপজেলা ছাত্রলীগ সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিনহাজুল আবেদীন মিঠুর বিরুদ্ধে গণধর্ষণ ও পর্নোগ্রাফী আইনে মামলা হয়েছে।
দেশেরে অন্যতম সফল ব্যবসায়ী জয়নুল হক সিকদার। একাধারে তিনি যেমন উদ্যোক্তা ছিলেন তেমনি দেশেরে সম্পদশালীদের মধ্যে ছিলেন অন্যতম একজন ব্যবসাসফল মানুষ। আর সেকারণেই দেশের প্রভাবশালী অনেক ব্যবসায়ী গুরু মানতেন তাকে। শুধু তাই নয়, ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি সরকারের ওপরও ছিল তার বিপুল প্রভাব। তার আশীর্বাদের জন্য তার কাছে ধরনাও দিতেন। জয়নুল হক সিকদারের হাতে গড়ে ওঠা সিকদার গ্রুপের ব্যবসা সম্প্রসারিত হয় ব্যাংক, বীমা, বিদ্যুৎ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, আবাসন, নির্মাণ, হোটেল, পর্যটন, এভিয়েশনসহ নানা খাতে। কিন্তু তার মৃত্যুর তিন বছর না পেরোতেই বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে পুরো সিকদার গ্রুপ।