নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:৫৫ পিএম, ১৫ অক্টোবর, ২০১৮
চীন থেকে সৌদি আরব, বর্তমান বিশ্বের আধিপত্যবাদী শাসকগোষ্ঠী হঠাৎ করেই উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা কিংবা সুপরিচিত ব্যক্তিদের অপহরণ বা হত্যা করতে শুরু করেছে। এটি বিরোধীদের কন্ঠরোধ করার একটি পুরনো ও বর্বরোচিত এক কৌশল। যারা এই ধারাটিকে আবারও ফিরিয়ে এনেছে, তাদের এই কাজের জন্য একসময় আফসোসও করতে হতে পারে।
গত শতাব্দীর ৭০’র দশকে আর্জেন্টিনা ও চিলিতে সামরিক শাসনামলে বিরোধীদের হত্যা ও গুমের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। ৮০’র দশকে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নে জোসেফ স্ট্যালিনের সময়েও ভিন্নমত পোষণকারীদের গুম করা হতো। সাম্প্রতিককালে সেই পুরনো পন্থা বিশ্বব্যাপী আবারও ফিরে এসেছে।
চিলি এবং আর্জেন্টিনায় সামরিক শাসনামলে মানুষকে হেলিকপ্টার থেকে সমুদ্রে ছুড়ে ফেলা হতো, যাদের আর কখনোই খুঁজে পাওয়া যেত না। প্রতিবাদকারীদের হত্যা করে মৃতদেহ পুড়িয়ে ফেলা হতো, তাঁদের সমাধিটাও আর পাওয়া যেত না।
সোভিয়েত ইউনিয়নে স্ট্যালিনের সময়ে সরকারের নীতির বিরুদ্ধে কেউ আওয়াজ তুললে তাঁকে কেজিবি সদর দপ্তরে কিংবা অন্য কোনো গোপন স্থানে নিয়ে যাওয়া হতো। রাতের আঁধারে অপহরণ করা হতো অনেককে। ১৯৩০ এর দশকে এবং তার পরেও লাখ লাখ সোভিয়েত নাগরিক কারাগার বা অন্য কোনো জায়গা থেকে চিরতরে অদৃশ্য হয়ে গেছেন। আধুনিক কর্তৃত্ববাদী শাসকগোষ্ঠী আবারও বিরোধীদের মুখ বন্ধ করার পুরনো কৌশল ফিরিয়ে এনেছেন।
গত মাসে বেইজিং থেকে নিখোঁজ হন ইন্টারপোল প্রেসিডেন্ট মেং হংওয়ে। চীনের নাগরিক মেং প্যারিস থেকে বেইজিং পৌঁছানোর পর থেকে তাঁর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। প্রথম অবস্থায় চীন তাঁর অন্তর্ধানের বিষয়ে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছিল। কিন্তু পরবর্তীতে চাপের মুখে দেশটি মেংকে আটক করার কথা স্বীকার করতে বাধ্য হয়। বেইজিং জানায়, আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁকে আটক করা হয়েছে।
বর্তমান চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিং পিং’কে একজন সিরিয়াল কীডন্যাপার বলা যেতে পারে। ২০১২ সালে তিনি ক্ষমতাগ্রহণের পর থেকে বহু মানুষকে অপহরণ করিয়েছেন। এই তালিকায় সাধারণ বই প্রকাশক থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী নেতাও ছিলেন। হংকং বা অন্য কোনো দেশে বসবাসরত চীনা নাগরিকদেরও তিনি অপহরণ করিয়েছেন। দীর্ঘ সময় পরে তাঁরা যখন জনসমক্ষে এসেছেন তখন তাঁদের পূর্বের অবস্থান থেকে সরে যেতে দেখা গেছে। গত জুলাইয়ে চীনের শোবিজ জগতের বড় তারকা ফ্যান বিংবিংয়ের ক্ষেত্রেও এমনটাই ঘটেছিল। মাসখানেক নিখোঁজ থাকার পর চলতি মাসের শুরুতে জনসমক্ষে আসেন তিনি। জানা যায়, তাঁর বিরুদ্ধে বিপুল অংকের ট্যাক্স ফাঁকির অভিযোগ আনা হয়েছে। এরপর থেকে তাকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আগের মতো সরকারবিরোধী অবস্থানে দেখা যায়নি। উল্টো ক্ষমতাসীন কম্যুনিস্ট পার্টির গুণগান করে বিবৃতি প্রকাশ করেছেন তিনি। নিজের ক্যারিয়ারে কম্যুনিস্ট পার্টির অবদানের কথাও প্রচার করছেন বিংবিং, যা তাঁর আগের অবস্থানের সঙ্গে একেবারেই বেমানান।
সৌদি আরবেও অনেকটা একই রকম চিত্র দেখা গেছে। তবে দেশটির অপকর্মের মাত্রাটা আরও ভয়াবহ। লেবাননের প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরি রিয়াদে রাষ্ট্রীয় সফরে থাকা অবস্থায় গুম হন। সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের নির্দেশেই তাঁকে গুম করা হয় বলে জানা যায়। সপ্তাহখানেক নিখোঁজ থাকার পর জানা যায়, হারিরি পদত্যাগ করেছেন।
সৌদির গুম কৌশলের সর্বশেষ নজির সাংবাদিক জামাল খাসোগি। দেশটির রাজ পরিবারের কঠোর সমালোচক এই সাংবাদিক তুরস্কের সৌদি কনস্যুলেট থেকে নিখোঁজ হন। ওয়াশিংটন পোস্টের নিয়মিত এই কলামিস্ট তাঁর তুর্কি বাগদত্তা হাতিস চেঙ্গিসকে বাইরে দাঁড় করিয়ে রেখে কনস্যুলেটে প্রবেশ করেন। সেখানে আগের বিয়ের তালাকের কাগজপত্র সংগ্রহ করতে গিয়েছিলেন খাসোগি। এরপর তিনি আর বের হননি বলে জানিয়েছেন তাঁর বাগদত্তা হাতিস চেঙ্গিস। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান সৌদি যুবরাজ সালমানকেই খাসোগির অন্তর্ধানের জন্য দায়ী করছেন। বলা হচ্ছে, তাঁকে কনস্যুলেটের ভেতরেই হত্যা করা হয়েছে।
শুধু চীন কিংবা সৌদি আরব নয়, রাশিয়া, মেক্সিকোসহ বিশ্বের আরও অনেক দেশই প্রতিপক্ষকে নিশ্চুপ করিয়ে দিতে গুম, খুন ও নির্যাতনের আশ্রয় নিয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এসব অপকর্মের ফল কী তাঁরা ভোগ করবে না? অতীত কিন্তু এ বিষয়ে সতর্কবার্তাই দিচ্ছে। নেপোলিয়ানের শাসনামলের পুলিশ প্রধান জোসেফ ফোচ আফসোস করেছিলেন। বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘এটা অপরাধের চেয়েও ভয়ানক কিছু ছিল। আমি ভুল করেছিলাম।’ চীনের শি জিং পিং কিংবা সৌদি যুবরাজ সালমানের ক্ষেত্রেও যে এমন কিছু ঘটবে না তার কিন্তু কোনো নিশ্চয়তা নেই।
লেখকঃ ওয়ার্ল্ড পলিসি ইনস্টিটিউটের সিনিয়র ফেলো। ইমাজিনিং নাবোকভঃ রাশিয়া বিটুইন আর্ট অ্যান্ড পলিটিক্স বইয়ের লেখক।
বাংলা ইনসাইডার/এএইচসি/জেডএ
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৮:১৫ এএম, ১৬ মে, ২০২৪
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৮:১২ এএম, ১৬ মে, ২০২৪
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৮:০৭ এএম, ১৬ মে, ২০২৪
মন্তব্য করুন
সবার জন্য স্বাস্থ্য নিশ্চিতে বিশেষ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর দোরগোড়ায় স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দেয়ার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিক অভাবনীয়, অনন্য এবং যুগান্তকারী একটি মডেল। শিশু স্বাস্থ্য, মাতৃ স্বাস্থ্য এবং কিশোরীদের স্বাস্থ্য পরিসেবা প্রদানের ক্ষেত্রে এটি একটি অসাধারণ উদ্যোগ। নবজাতকের মৃত্যু, মাতৃ মৃত্যু কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিক মডেল আজ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ অনুসরণ শুরু করেছে। গত বছর ১৭ মে কমিউনিটি ক্লিনিক ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিসিয়েটিভ’ হিসেবে জাতিসংঘের স্বীকৃতি পায়। ‘কমিউনিটি ক্লিনিক’ সারা বিশ্বের প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা প্রত্যাশী জনগণের জন্য ‘আলোক বর্তিকা’।
আজকে আমরা ১৭ মে নিয়ে কথা বলছি। যেদিন বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেছিলেন। আবার গত বছর এই দিনে তাঁর চিন্তা প্রসূত কমিউনিটি ক্লিনিককে জাতিসংঘ ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। আজকে আমরা যে ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বলছি, উন্নয়নশীল বাংলাদেশের কথা বলছি, যে স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন আমরা দেখছি, একদিন উন্নত বাংলাদেশ হব বলে স্বপ্ন দেখছি এই সবকিছু শেখ হাসিনার স্বপ্ন, শেখ হাসিনার ইনিশিয়েটিভ। বঙ্গবন্ধু স্বপ্নের বাংলাদেশকে এগিয়ে নিচ্ছেন তাঁরই সুযোগ্য কন্যা আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
১৭৮১ সালে পলাশি যুদ্ধে ইতিহাসের ঘৃণিত সেনাপতি মির্জাফরের বিশ্বাসঘাতকতায় নবাব সিরাজ উদ্দৌলার বিদায়ের মধ্য দিয়ে ২০০ বছরের গোলামী আমাদের ললাটে এসেছিল। ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ স্বাধীন হলেও বাঙালী এবং বাংলাদেশ স্বাধীনতা পায়নি। যার পটভূমিতে বীরদর্পে আবির্ভূত হন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭১ থেকে ৭৫’ বাঙালি জাতির ভাগ্যাকাশে স্বাধীনতার লাল পতাকা উড়েছিল বাঙালী আশায় বুক বেধেছিল।
পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বিয়োগান্তের ঘটনায় জাতি ছিল দিক নির্দেশনাহীন। নারকীয় এই ঘটনায় জনগণ হয়ে পড়েন দিশেহারা। প্রতিবাদ, প্রতিরোধ করার কোন শক্তি সাহস ছিল না। দলের অনেক বড় বড় নেতাও ছিলেন কিংকর্তব্যবিমূঢ়। ধানমন্ডির ৩২ বাড়ি ছিল কবরের নীরবতা। সমগ্র জাতি তখন অন্ধকারে। সামরিক বুটে পিষ্ঠ গণতন্ত্র। নির্বাসনে সংবিধান আর মানুষের মৌলিক অধিকার। বাক স্বাধীনতা বলতে কিছুই ছিল না। এমনকি বঙ্গবন্ধু নাম উচ্চারণ ছিল নিষিদ্ধ।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে দেশের মৌলিক চরিত্রকেই বদলে ফেলা হয়। বিশেষ করে পাকিস্তানি ধারায় সামরিক শাসনের সংস্কৃতির প্রবর্তন ঘটে দেশে। সাম্প্রদায়িকতা ফিরে আসে রাজনীতি, প্রশাসন, শিক্ষা, সংস্কৃতিসহ সমাজের বিভিন্ন স্তরে। একের পর এক স্বপ্নভঙ্গের ঘটনা ঘটতে থাকে দেশে। বাঙালি জাতির জীবনে জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসে ঘোর অমানিশার অন্ধকার। ঠিক এমন প্রতিকূল সময় ১৯৮১ সালের ১৭ মে সামরিক শাসকের রক্তচক্ষু ও নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে বঙ্গবন্ধুর রক্তস্নাত মাতৃভূমিতে ফিরে আসেন বাঙালির মুক্তির মহানায়কের যোগ্য উত্তরসূরি জননেত্রী শেখ হাসিনা।