নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ২৪ অক্টোবর, ২০১৮
জাতীয় সংসদ নির্বাচন তিনমাস পিছিয়ে দেয়ার প্রস্তাব করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। চারদিনের ঢাকা সফরে এসে উপসহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলিস ওয়েলস বিভিন্ন মহলে এরকম একটি প্রস্তাব নিয়ে কথা বলেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে নির্বাচনে বিএনপিসহ তার শরীকরা অংশগ্রহণ নাও করতে পারে। সেক্ষেত্রে তিনমাস নির্বাচন পিছিয়ে দিয়ে একটি রাজনৈতিক সমঝোতার মাধ্যমে এই নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করা যায় কিনা এ বিষয়টি বিভিন্ন মহলের কাছে জানতে চেয়েছেন এলিস ওয়েলস।
সংবিধানের ১২৩(৩) (ক) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী মেয়াদ অবসানের আগের নব্বই দিনের মধ্যে নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে। আবার (খ)-তে সংসদ ভেঙে যাবার পরের নব্বই দিনের মধ্যে নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে। ২৮ জানুয়ারি বর্তমান সংসদের মেয়াদ শেষ হবে। ওই সময়ের মধ্যে নির্বাচন না হলে, সংসদ ২৯ জানুয়ারি আপনা আপনি ভেঙে যাবে। সংসদ ভেঙে গেলে ৩০ এপ্রিলের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মনে করছে, নির্বাচন ৩০ এপ্রিল পেছালে, বিরোধী দলগুলোর বেশ কিছু দাবী আপনা আপনি পুরণ হয়। সম্প্রতি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট যে ৭ দফা দাবী দিয়েছে তাঁর প্রথম দাবীই হলো বর্তমান সংসদ তফসীল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে ভেঙে দিতে হবে। মার্কিন উপ সহকারী পররাষ্ট্র মন্ত্রী ঢাকা সফরে প্রধানমন্ত্রীর গুরুত্বপূর্ন একজন উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে এই প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেন। ঐ উপদেষ্টা সরাসরি ঐ প্রস্তাব নাকচ করে দেন। ঐ উপদেষ্টা বলেন, ‘নির্বাচন পেছানোর কোনো ভাবনা সরকারের নেই।’ তবে, বিএনপি, ঐক্যফ্রন্ট এবং সুশীল সমাজের একাধিক প্রতিনিধি মার্কিন প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছে। ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন মনে করেন, নির্বাচনের কোনো পরিবেশই এখন দেশে নেই। এতো স্বল্প সময়ের মধ্যেও নির্বাচন করাও সম্ভব নয় বলে তিনি মার্কিন উপ সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানিয়েছেন। ড. কামাল মনে করেন, এখন থেকে আলাপ আলোচনা করে একটি সমঝোতায় এসে মার্চের মধ্যে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করা সম্ভব।
এলিসের সঙ্গে বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খানও এই প্রস্তাবকে সমর্থন জানিয়েছেন। তার মতে. ২৯ জানুয়ারি সংসদ ভেঙ্গে গেলে আলাপ আলোচনার ভিত্তিতে একটি গ্রহনযোগ্য নির্বাচনের পথ উম্মুক্ত হতে পারে। সূত্র মতে, সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপকালে এলিস ওয়েলস বলেছেন, আওয়ামী লীগ এবং জাতীয় পার্টি ছাড়া সব রাজনৈতিক দলই সংসদ ভেঙ্গে নির্বাচন চায়। মার্কিন ঐ কর্মকর্তা মনে করেন, সংসদ ভেঙ্গে নির্বাচন করলেই বিরোধি দলের একটি দাবী মানা হবে, সেক্ষেত্রে তারাও নির্বাচনে যেতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবে। তবে আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক মনে করেন ‘নির্বাচন পেছানো নির্বাচন বানচালের একটি ষড়যন্ত্র। আওয়ামী লীগ সেই ষড়যন্ত্র সফল হতে দেবে না।’
বাংলা ইনসাইডার/এমআরএইচ
মন্তব্য করুন
ডোনাল্ড লু বিএনপি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ চীন সফর ভারত যুক্তরাষ্ট্র
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছিল বিএনপির আশা ভরসার কেন্দ্রস্থল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করবে; মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নির্দলীয়, নিরপেক্ষ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায়ে সরকারকে বাধ্য করবে; মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কারণ সরকার শেষ পর্যন্ত নির্বাচন করতে পারবে না- এমন বক্তব্যগুলো বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচনের আগে বহুল প্রচারিত ছিল। বিএনপির সব নেতারা প্রকাশ্যেই এ কথা বলত।
বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যখন র্যাবের উপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, বাংলাদেশকে গণতন্ত্র সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানায় না তখন বিএনপি নেতারা উল্লাসে ফেটে পড়েছিলেন। তারা দলীয় কার্যালয়ে মিষ্টিমুখের ব্যবস্থাও করেছিলেন।
আবার ডোনাল্ড লু নির্বাচনের আগে যখন বাংলাদেশ সফর করেছিলেন এবং ভিসা নীতি প্রয়োগ করেছিলেন তখন বিএনপি নেতাদের প্রকাশ্যে মার্কিন বন্দনা করতে দেখা গেছে। ২৮ অক্টোবরের আগ পর্যন্ত প্রায় প্রতিদিনই মার্কিন দূতাবাসে বা মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসের বাসভবনে বিএনপির নেতাদের আনাগোনা ছিল। তারা সেখানে চা চক্রে মিলিত হয়েছেন, নৈশভোজে মিলিত হয়েছেন এবং বিভিন্ন রকমের শলাপরামর্শ করেছেন।
পিটার ডি হাস গত বছরের ১০ অক্টোবর বিএনপি যখন সমাবেশ করতে পারেনি তখনও একতরফা বিবৃতি দিয়েছিলেন। এছাড়াও তিনি বিতর্কিত সংগঠন মায়ের ডাকের এক নেতার বাসায় গিয়েছিলেন এবং সেখানে তিনি বিএনপির প্রতি এক ধরনের সহানুভূতি জানিয়েছিলেন। এভাবেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির উপর এক ধরনের প্রচ্ছন্ন সমর্থন এবং সহানুভূতি দেখিয়েছিল।
অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই সহানুভূতি এবং পরোক্ষ সমর্থনের কারণেই বিএনপির আন্দোলনের পালে হাওয়া লেগেছিল। নেতাকর্মীদের মধ্যে একটি চাঙ্গা ভাব তৈরি হয়েছিল। কিন্তু ২৮ অক্টোবরের পর থেকে পরিস্থিতি পাল্টে যেতে শুরু করে। যদিও ২৮ অক্টোবরের পর এই ডোনাল্ড লু শর্তহীন সংলাপের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন এবং এই আহ্বানের চিঠি নিয়ে পিটার ডি হাস তিনটি দলের নেতাদের কাছে গিয়েছিলেন এবং একটি সংলাপ আয়োজনের শেষ চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সেই সংলাপ আয়োজনে বিএনপি বা আওয়ামী লীগ কেউই সাড়া দেয়নি।
এখন নির্বাচন সমাপ্ত হয়েছে এবং ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর ১১ জানুয়ারি নতুন সরকার গঠিত হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচনকে ত্রুটিপূর্ণ বলার পরও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়া এবং নতুন সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের বার্তা দিয়েছেন। ডোনাল্ড লু’র আগে আফরিন আক্তার নির্বাচনের পরে বাংলাদেশ সফর করেছিলেন এবং সেই সময় তিনি হোটেল ওয়েস্টিনে বিএনপি নেতৃবৃন্দের সাথে সাক্ষাৎ করেছিলেন। তখন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং শামা ওবায়েদ আফরিন আক্তারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। যদিও সেই সাক্ষাতের পর তারা কোনও কিছুই সাংবাদিকদেরকে জানাননি। কিন্তু এবার ডোনাল্ড লু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেননি। আর এটি বিএনপির মধ্যে হতাশা সৃষ্টি করেছে।
বিএনপি মনে করছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন তাদেরকে আর আগের মতো গুরুত্ব দিচ্ছেন না, পাত্তা দিচ্ছে না। বরং সরকারের সঙ্গে সম্পর্কের কারণে বিএনপিকে এড়িয়ে যাচ্ছে। এ নিয়ে বিএনপির মধ্যে হতাশা তৈরি হয়েছে। বিএনপি নেতারা দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ, শামা ওবায়েদ, তাবিথ আউয়ালসহ যারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন এবং মার্কিন দূতাবাসে যাদের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে তাদেরকে দুষছেন। তারা মনে করছেন যে, বিএনপির মধ্যেই সমস্যা রয়েছে। বিএনপির নেতারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে পারেননি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বিএনপির বক্তব্যগুলো তারা সঠিকভাবে ও যথাযথভাবে উপস্থাপন করতে পারেননি। আর একারণেই ডোনাল্ড লু’র সফরের পর বিএনপির মধ্যে চলছে এক ধরনের হতাশা।
ডোনাল্ড লু বাংলাদেশ রাজনীতি বিএনপি
মন্তব্য করুন
আগামী ২৩ জুন আওয়ামী লীগের ৭৫ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পর্যন্ত আওয়ামী লীগ দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গকারী, দলের ভেতর সুবিধাবাদী, লুটেরা এবং দলের নাম ভাঙিয়ে বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করবে না। কিন্তু ২৩ জুনের পর আওয়ামী লীগের ক্র্যাশ প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ক্র্যাকডাউন হবে দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গকারী এবং দলের সুনাম নষ্টকারীদের বিরুদ্ধে। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ব্যাপারে শূন্য সহিষ্ণুতা নীতি অনুসরণ করবে। আওয়ামী লীগের একটি দায়িত্বশীল সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
আওয়ামী লীগ এবং তার আদর্শিক জোট ১৪ দলের নেতাদের চীন সফরে হিড়িক পড়েছে। আওয়ামী লীগ এবং তার সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর এই চীন সফরকে ঘিরে কূটনৈতিক অঙ্গনে চলছে নানামুখী আলাপ আলোচনা। ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উভয় দেশই ১৪ দল এবং আওয়ামী লীগের নেতাদের চীন সফরের ব্যাপারে দৃষ্টি রাখছেন। তবে তারা এই বিষয় নিয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হচ্ছেন না। বিষয়টি তারা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিষয় হিসেবেই মনে করছেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছিল বিএনপির আশা ভরসার কেন্দ্রস্থল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করবে; মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নির্দলীয়, নিরপেক্ষ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায়ে সরকারকে বাধ্য করবে; মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কারণ সরকার শেষ পর্যন্ত নির্বাচন করতে পারবে না- এমন বক্তব্যগুলো বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচনের আগে বহুল প্রচারিত ছিল। বিএনপির সব নেতারা প্রকাশ্যেই এ কথা বলত।