নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:১১ এএম, ০২ নভেম্বর, ২০১৮
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের চার ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন সংবিধানসম্মত ভাবে যেকোনো সমাধানের জন্য তিনি প্রস্তুত রয়েছেন। সংলাপে ড. কামাল হোসেনকে প্রধানমন্ত্রী জিজ্ঞেস করেন, সংবিধানে যদি থাকে নির্বাচনের সময় প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হবে এবং পৃথিবীর কোনো সংসদীয় গণতন্ত্রে এমনটি যদি থাকে, তাহলে তিনি তা করতে প্রস্তুত।
সংলাপে প্রধানমন্ত্রী তাৎক্ষণিক ভাবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাত দফার তিনটি দাবি মেনে নেন। এই দাবিগুলো হলো,
প্রথমত, নির্বাচনে বিদেশি কূটনীতিকদের আসা। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বিদেশি কূটনীতিকদের নিয়ে তাঁর কোনো আপত্তি নেই।
দ্বিতীয়ত, ইভিএম ব্যবহার বন্ধ করা। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ইভিএম সীমিত আকারে ব্যবহার হবে। বিরোধী দল চাইলে ইভিএম এটি বন্ধও রাখা যেতে পারে।
তৃতীয়ত, বিরোধী দলের সভা সমাবেশ করার স্বাধীনতা। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বিরোধী দলের সভা সমাবেশ করার অধিকার আছে। বিরোধী দল সভা সমাবেশ করছে। আরও কিছু দরকার হলে, সেটিও তিনি করতে রাজি আছেন।
ঐক্যফ্রন্টের দাবি করা রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ড. কামাল হোসেনকে অনুরোধ করেছেন, কাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক মামলা রয়েছে, সেই তালিকা যদি তিনি দেন, তাহলে প্রধানমন্ত্রী ব্যক্তিগত ভাবে সেটি দেখবেন এবং এটি নিয়ে বিবেচনা করবেন।
সংলাপে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে, আসুন আমরা সবাই মিলে একটি নির্বাচন করি, যখন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে, তখন পুরো ক্ষমতাই নির্বাচন কমিশনের হাতে চলে যাবে, তখন সরকারের ভূমিকা হবে খুবই নগন্য। নির্বাচন কমিশনকে আরও শক্তিশালী করার জন্য সকল দলের অংশগ্রহণ অত্যন্ত জরুরি বলেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর সকল রাজনৈতিক দলের প্রতি অনুরোধ জানান, আসুন আমরা নির্বাচন করি।
ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন সংলাপেই প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে ড. কামাল বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রধানমন্ত্রী আন্তরিক বলেই তিনি মনে করেন। তিনি বলেছেন, এমন অনেক বিষয়গুলো প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যা আসলে তিনি জানতেন না। বা বিষয়গুলো সম্পর্কে তাঁর কিছু তথ্যের স্বল্পতা ছিল। তিনি মনে করেন, সরকার যদি আন্তরিক হয়, নির্বাচন কমিশন যদি সত্যিকার ভাবে কাজ করে তাহলে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব।
তবে ড. কামাল হোসেনের বক্তব্যে সন্তুষ্ট হতে পারেননি সংলাপে অংশগ্রহণকারী ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম শরিক বিএনপির নেতৃবৃন্দরা। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ওই বৈঠকেই বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়াকে আটক তো আমরা করিনি। মামলা হয়েছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে। আপনাদের কোনো না কোনো আইনি প্রক্রিয়ায় মধ্যে তো যেতেই হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটি সম্পূর্ণই আইনি ব্যাপার।
ড. কামাল হোসেন প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য গ্রহণ করে বলেন, এই বিষয়টি যেহেতু আদালতে বিচারাধীন বিষয়, তাই এ বিষয়ে আমাদের নাক না গলানই ভালো।
সংসদ ভেঙে দেওয়ার বিষয়টি সংলাপে উত্থাপন করা হলে প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন করেন, পৃথিবীর কোথায় সংসদ ভেঙে দেয় সেই উদাহরণটি দিলে তিনি উপকৃত হবেন। প্রধানমন্ত্রী সর্বশেষ বলেন, আমরা অঙ্গীকার করছি সরকার নির্বাচনে কোনো রকম হস্তক্ষেপ করবে না। কোনো রকম প্রভাব বিস্তার করবে না। সরকারের প্রভাবমুক্ত ভাবেই নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পরিচালনা করবে। নির্বাচনে আপনারা অংশগ্রহণ করেন, যদি কোনো কারচুপি করা হয়, তাহলে তো তাৎক্ষণিক ভাবেই ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। কিন্তু নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে, আপনারা কীভাবে এ নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারেন।
এ সময় ড. কামাল হোসেন বলেছেন, এই বক্তব্যে যুক্তি আছে। তাৎক্ষণিক ভাবেই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এটি কোনো বিশ্বাসযোগ্য বক্তব্য নয়। তিনি বলেছেন, ১৯৯১ সাল থেকে যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা আছে, সেই ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়া যায় কিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে, আমরা একটি সংসদীয় গণতন্ত্রের দেশ এবং আমরা সংগ্রাম করে বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে একটি জায়গায় নিয়ে এসেছি। আমরা কেন একটি অনির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা তুলে দেব।
সেনাবাহিনী মোতায়েন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বাংলাদেশে এ পর্যন্ত যত নির্বাচন হয়েছে এর মধ্যে শুধু ২০০১ সাল ছাড়া কোনো নির্বাচনেই সেনা মোতায়েন করা হয়নি। এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করেন ড. কামাল হোসেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আগামী ৮ নভেম্বর পর্যন্ত আপনাদের হাতে সময় আছে। আমরা বিভিন্ন দলের সঙ্গে বৈঠক করবো। এর মধ্যে যদি আপনারা মনে করেন, ছোট পরিসরে আবার বৈঠক করবেন, আমার দরজা সবসময় খোলা আছে। তিনি বলেন, আপনারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুন। নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করুন। আপনারা দেখুন যে, একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হয় কিনা?
ড. কামাল হোসেন এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করলেও বিএনপির অধিকাংশ নেতারা এর সঙ্গে একমত হননি।
বৈঠকের শেষ পর্যায়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নির্বাচনের স্বার্থে বেগম জিয়াকে মুক্তির প্রসঙ্গটি তুললে ড. কামাল হোসেন বৈঠকের মধ্যেই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে থামিয়ে দেন। এর ফলে, স্পষ্ট হয়ে গেল যে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে ড. কামাল হোসেন ও আ. স. ম. আব্দুর রব এবং অন্যদিকে বিএনপি ও মাহমুদুর রহমান মান্নার মধ্যে মতপার্থক্য স্পষ্ট হয়ে গেল। ভবিষ্যতে সংলাপে বিএনপি আর কতটুকু উৎসাহী হবে সেটা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই গেল। তবে এর ফলে একটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে গেছে, ড. কামাল হোসেন এই সংলাপে সন্তুষ্ট হয়ে ঐক্যফ্রন্টকে নির্বাচনমুখী করতে আগ্রহী হবেন। সেখানে বিএনপির কজন বা বিএনপির কোন অংশ নির্বাচনে যাবে বা যাবে না সেটা বোঝা যাবে আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই।
বাংলা ইনসাইডার/জেডএ
মন্তব্য করুন
শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন বিএনপি
মন্তব্য করুন
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জাতীয় প্রেস ক্লাব
মন্তব্য করুন
বিএনপি ভারত বিরোধী মার্কিন বিরোধী মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
মন্তব্য করুন
শেখ হাসিনা বাহাউদ্দিন নাছিম আওয়ামী লীগ ঢাকা-৮
মন্তব্য করুন
নির্বাচন কমিশনার মো. আহসান হাবিব খান
বলেছেন, নির্বাচন কমিশনের প্রতি ভোটার ও প্রার্থীদের ধারণা পাল্টিয়েছে, বিশ্বাস জন্মেছে।
তার কারণেই প্রার্থীরা আবারও ভোটাদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছে। প্রার্থীরা ভোটাদের দ্বারে
যাওয়ার যে সংস্কৃতি সেটা আবারও ফিরে এসেছে।
বৃহস্পতিবার (১৬ মে) যশোর শিল্পকলা
একাডেমির মিলনায়তনে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে
অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে যশোর, নড়াইল ও মাগুরার জেলার প্রার্থী নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে
মতবিনিময় শেষে গণমাধ্যমকর্মীদের তিনি এ কথা বলেন।
একদিন বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন বিশ্বের
রোল মডেল হবে মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, উপজেলা নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ৩৬ শতাংশ
এ সময়ে অনেক। দেশের কয়েকটা রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ না নেয়াতে ভোটার উপস্থিতি কম।
আগামীতে দেশের যত ভোট আসছে, ততই আমাদের ভোটের পরিবেশ, ভোট গ্রহণ পরিবর্তন ঘটছে। বিগত
সময়ে নির্বাচন নিয়ে কি ঘটেছে সেটা ফিরে তাকানোর আর কোন সুযোগ নেই। বাংলাদেশের নির্বাচন
কমিশন সকল বির্তক, সমালোচনা পিছনে ফেলে ঘুরে দাঁড়িয়ে দিন দিন উন্নতির দিকে যাচ্ছে।
ইসি আহসান হাবিব বলেন, নির্বাচনে ভোটারের
উপস্থিতি বাড়ানোর জন্য নির্বাচন কমিশন ও প্রার্থীরা কাজ করবে। উপজেলা নির্বাচনের প্রথম
ধাপে মোট ভোট গ্রহণের শতাংশ প্রকাশ করা হয়েছে। আমরা এবার থেকে ভোট গ্রহণে উপজেলা ভিত্তিক
তালিকা প্রকাশ করা হবে। ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোর জন্য নির্বাচন কমিশন ও প্রার্থীরা আলাদাভাবে
প্রচারণা করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। যারা ভোটাদের বাঁধা দিবে তাদের প্রতিহত করবে প্রশাসন।
আমরা প্রশাসনকে নির্দেশনা দিয়েছি আইনের হাত ও ক্ষমতা অনেক বেশি। নির্বাচন বানচাল করতে
সেই ক্ষমতা কঠোরভাবে প্রয়োগ করবে প্রশাসন।
ইসি আরও বলেন, বিগত সময়ের চেয়ে বর্তমান
কমিশন সততার সঙ্গে কাজ করছে। শুধু কমিশন নয়, নির্বাচনে দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্টরা সততার
সঙ্গে কাজ করছে। নির্বাচনে সাংবাদিকদের সুরক্ষার জন্য আইন পাস করেছে এ কমিশন। কেউ সাংবাদিকদের
কাজে বাধাগ্রস্ত করলে জেল জরিমানার বিধান করা হয়েছে। মিডিয়াকে এ অবস্থানে নেয়ার ক্ষেত্রে
এ কমিশন ও সরকার ভূমিকা রাখছে।
যশোর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল
হাছান মজুমদারের সভাপতিত্বে সভায় যশোর, নড়াইল ও মাগুরা জেলার জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপাররা
বক্তব্য রাখে। সভায় যশোর, মাগুরা ও নড়াইল জেলার সকল প্রার্থী, নির্বাচন সংশ্লিষ্ট উপজেলাসমূহের
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাবৃন্দ, আচরণবিধি ও আইনশৃঙ্খলা
রক্ষায় দায়িত্বপ্রাপ্ত এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটবৃন্দ, জেলা ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাবৃন্দ
এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত বিভিন্ন বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ অংশ
নেয়।
অনুষ্ঠান শেষে বিকেলে শার্শা উপজেলা
পরিষদ মিলনায়তনে উপজেলার ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রশিক্ষণে অংশ নেন ইসি আহসান
হাবিব খান।
মন্তব্য করুন
১৯৮১ সালের ১৭ মে। স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ সভাপতি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেছিলেন এক বৃষ্টিমুখর দিনে। সেই দিনে লাখো মানুষ মানিক মিয়া এভিনিউতে জড়ো হয়েছিল জাতির পিতার কন্যাকে দেখার জন্য। তাদের শোক এবং আবেগ ছিল হৃদয়স্পর্শী। সারা বাংলাদেশ উত্তাল হয়েছিল। জাগরণের এক গান গেয়ে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বাংলাদেশের জন্ম হওয়ার পর থেকেই প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছে। এই সরকার পুরোপুরিভাবে নতজানু সরকারে পরিণত হয়েছে। শুধু ফারাক্কা নয়, গঙ্গার পানি নয়, বাংলাদেশের ১৫৪টি নদীতে পানি দিতে তারা গড়িমসি করে যাচ্ছে। তিস্তা নদীর পানি বণ্টন, এ করছি, এ হচ্ছে এমন করে সময় শেষ করছে সরকার। এ যে ব্যর্থতা এর মূল কারণ হচ্ছে, সরকারে যারা আছে তারা পুরোপুরিভাবে একটা নতজানু সরকার।