নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০৪ এএম, ০৯ নভেম্বর, ২০১৮
একটি স্বপ্নের গ্রাম কেমন হতে পারে? কি কি বিশেষ সুবিধা থাকতে পারে সেই গ্রামগুলোতে। বাংলাদেশে আদৌ কি এখন পর্যন্ত সেই রকম একটি মডেল গ্রামের কথা জানতে পারা গেছে যেখান থেকে আমাদের ভবিষ্যৎ গ্রামগুলো বিশেষ কিছু শিখবে! কিংবা বর্তমান কান্নারত গ্রামগুলো আবার উঠে দাঁড়াবার শিক্ষা নেবে। কথাগুলো এ কারণেই বলছি কারণ গ্রাম বলতে আমাদের চোখের সামনে সবুজের যে বিশাল চত্বর ভেসে ওঠে, বিশাল জলরাশির মধ্যে আলোর ঝলকানি চোখে এসে খেলা করে তার তো আর কিছুই বাকি নেই আজ। সবথেকে ভয়ের ব্যাপার হলো, গ্রামগুলোর সবুজের মধ্যে হঠাৎ মাথা গজিয়ে ওঠে দৈত্যসুলভ ইট-লোহার কোন রূপ স্থাপত্য ভূমিকা ছাড়াই অপরিকল্পিত স্থাপনা। যা সত্যই গ্রামের পরিবেশের সাথে একেবারেই বেমানান। এপ্রসঙ্গে গ্রাম নিয়ে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার “শেখ মুজিব আমার পিতা” গ্রন্থের ‘স্মৃতির দক্ষিণ দুয়ার’ অনুচ্ছেদের কিছু উদ্ধৃতি হুবহু তুলে ধরার চেষ্টা করছি। কারণ এই কথাগুলো থেকেই আমরা পেতে পারি আমাদের সেই চিরচেনা গ্রামের প্রতিচ্ছবি। “গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামখানি একসময় মধুমতী নদীর তীরে ছিল। বর্তমানে মধুমতী বেশ দূরে সরে গেছে। তারই শাখা হিসেবে পরিচিত বাইগার নদী এখন টুঙ্গিপাড়া গ্রামের পাশ দিয়ে কুল কুল ছন্দে টেউ তুলে বয়ে চলেছে। রোদ ছড়ালে বা জ্যোৎস্না ঝরলে নদীর পানি রুপোর মতো ঝিকমিক করে।” এভাবেই তিনি বর্ণনা দিয়েছেন গ্রামের বয়ে যাওয়া সেই চিরচেনা নদীটির কথা। আর এই নদীগুলো দিন দিন তাদের সেই বয়ে যাওয়ার ক্ষমতা হারাচ্ছে আমাদের যথেচ্ছা ব্যবহারের কারণে। অপরিকল্পিত ভাবে গ্রামে পড়ে থাকা ফাকা সবুজ মাঠগুলো বেদখল হয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। রীতিমতো রাতের অন্ধকারে গ্রামগুলো উদ্দেশ্যহীন ভাবে বেড়ে উঠছে পরিকল্পনাহীন শহরের আদলে। যার ভবিষ্যৎ অত্যন্ত ভয়াবহ। কারণ শহরের বিষাক্ত পরিবেশ থেমে আজও আমরা গ্রামে ফিরি নির্ভেজাল সবুজের খোজে, আর এই গ্রামগুলোর প্রকৃতি শেষ হয়ে গেলে আমাদের আর কোথাও যাবার জায়গা রইলো না।
সাধারণত গ্রামীণ স্থাপত্যের একটি বিশেষ রূপরেখা থাকা প্রয়োজন। গ্রাম ভেদে সেই রূপরেখার ভিন্নতা থাকতে পারে। আর সেই স্থাপত্যের পরিকল্পনার মধ্যে থাকবে সহজ সাধারণ মানুষদের প্রতিদিনকার হাসি আনন্দ আর কান্না ভালোবাসার গল্প। অথচ আমরা প্রতিনিয়ত সেই সাধারণ গল্পের মধ্যে ঢেলে দিচ্ছি শহুরে বিদেশী গল্প, যা আমাদের কাছে খুবই অচেনা, অকল্পনীয়। হয়তো দিন শেষে গ্রামের খালি সবুজ চত্বরে অনেক সুন্দর কিছু তৈরি করে বাহবা নিচ্ছি সাময়িক প্রাপ্তির আশায় কিন্তু একবারও ভাবছি না আসলে সোঁদা গন্ধযুক্ত গ্রামের নির্ভেজাল মাটি গুলো সত্যিই কি চায়? তিনি আরও লিখেছেন “আমার শৈশবের স্বপ্ন-রঙিন দিনগুলো কেটেছে গ্রাম বাংলার নরম পলিমাটিতে, বর্ষার কাদা-পানিতে, শীতের মিষ্টি রোদ্দুরে, ঘাসফুল আর পাতায় পাতায় শিশিরের ঘ্রাণ নিয়ে, জোনাক জ্বলা অন্ধকারে ঝিঝির ডাক শুনে, তাল-তমালের ঝোপে বৈচি, দিঘির শাপলা আর শিউলি বকুল কুড়িয়ে মালা গেঁথে, ধুলো-মাটি মেখে, বর্ষায় ভিজে খেলা করে।” আমি হলফ করে বলতে পারি আজকের দিনে শহরে বেড়ে ওঠা শিশুরা এর কিছুই দেখেনি। শীতের সকালে মাটিতে পড়ে থাকা শিউলি ফুল কুড়ানোর যে আবহ, ধুলো মাটিতে লুটোপুটি খেলার যে মজা, ভোর বেলা ঘুম থেকে উঠে নদীর ধারে সমবয়সীদের সাথে খেলতে যাওয়ার যে বাধাহীন আনন্দ, তার কোন কিছুই যে আর আজকাল দেখা হয় না, খোজা হয় না। যান্ত্রিক জীবনে সকাল থেকেই তো দৌড়ানো। শুধু পাবার নেশায়। মনে পড়ে, যখন ছোট ছিলাম চার কি পাঁচ বছর বয়স, আমাদের ছিল মাত্র একটি ঘর। সবাই মিলে থাকতাম। টিনের চালের উপর বৃষ্টি পড়ার শব্দে মা-বাবার পাশে শুয়ে পরম নিশ্চিন্তে ঘুমাতাম। পাখির ডাকে সকালে ঘুম ভাঙতো। বারান্দায় যেখানে প্রথম সূর্যের আলো এসে পড়ে ভাইরের সাথে পড়তে বসতাম। মা সামনে এনে দিত গুড়-মুড়ি। আজ কেন জানি ইটের পাকা দেয়ালের শক্ত ছাদের ঘরের নিচে শুয়েও আগের মতো সেই ঘুম আসে না। হাজারো বিল্ডিং এর ভিড়ে সকালের সেই সূর্য আমার বারান্দায় আসে না। বাবার লাগানো সামনের উঠোনে স্থলপদ্ম গাছটিতে ছেলেবেলার দিনগুলোতে রোজ রাতে ছোট্ট একটি টুনটুনি চুপচাপ ঘুমাতো, কখনও কখনও ওদের গায়ে হাত বুলিয়ে দিলেও ওরা পালিয়ে যেত না। অথচ আজ আর সেই টুনটুনির দেখা নেই, স্থলপদ্মরাও হারিয়ে গেছে। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে সেখানে বেড়ে উঠছে নতুন কোন শক্ত অভেদ্য দেয়াল, যে দেয়ালের ওপর পাশ আর দেখা যায় না। আর এভাবেই আমরা আমাদের প্রয়োজনেই সহজ গ্রামগুলোকে দিন দিন করে তুলছি অচেনা আরও দুর্ভেদ্য। গ্রাম্য স্থাপত্যের রূপরেখা তাইতো এখন সময়ের দাবি, নতুন প্রজন্মের ছেলেবেলার জন্য।
লেখক: শিক্ষক ও পরিবেশ বিষয়ক স্থাপত্য গবেষক
স্থাপত্য বিভাগ, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম।
বাংলা ইনসাইডার/জেডএ
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৮:১৫ এএম, ১৬ মে, ২০২৪
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৮:১২ এএম, ১৬ মে, ২০২৪
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৮:০৭ এএম, ১৬ মে, ২০২৪
মন্তব্য করুন
সবার জন্য স্বাস্থ্য নিশ্চিতে বিশেষ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর দোরগোড়ায় স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দেয়ার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিক অভাবনীয়, অনন্য এবং যুগান্তকারী একটি মডেল। শিশু স্বাস্থ্য, মাতৃ স্বাস্থ্য এবং কিশোরীদের স্বাস্থ্য পরিসেবা প্রদানের ক্ষেত্রে এটি একটি অসাধারণ উদ্যোগ। নবজাতকের মৃত্যু, মাতৃ মৃত্যু কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিক মডেল আজ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ অনুসরণ শুরু করেছে। গত বছর ১৭ মে কমিউনিটি ক্লিনিক ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিসিয়েটিভ’ হিসেবে জাতিসংঘের স্বীকৃতি পায়। ‘কমিউনিটি ক্লিনিক’ সারা বিশ্বের প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা প্রত্যাশী জনগণের জন্য ‘আলোক বর্তিকা’।
আজকে আমরা ১৭ মে নিয়ে কথা বলছি। যেদিন বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেছিলেন। আবার গত বছর এই দিনে তাঁর চিন্তা প্রসূত কমিউনিটি ক্লিনিককে জাতিসংঘ ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। আজকে আমরা যে ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বলছি, উন্নয়নশীল বাংলাদেশের কথা বলছি, যে স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন আমরা দেখছি, একদিন উন্নত বাংলাদেশ হব বলে স্বপ্ন দেখছি এই সবকিছু শেখ হাসিনার স্বপ্ন, শেখ হাসিনার ইনিশিয়েটিভ। বঙ্গবন্ধু স্বপ্নের বাংলাদেশকে এগিয়ে নিচ্ছেন তাঁরই সুযোগ্য কন্যা আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
১৭৮১ সালে পলাশি যুদ্ধে ইতিহাসের ঘৃণিত সেনাপতি মির্জাফরের বিশ্বাসঘাতকতায় নবাব সিরাজ উদ্দৌলার বিদায়ের মধ্য দিয়ে ২০০ বছরের গোলামী আমাদের ললাটে এসেছিল। ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ স্বাধীন হলেও বাঙালী এবং বাংলাদেশ স্বাধীনতা পায়নি। যার পটভূমিতে বীরদর্পে আবির্ভূত হন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭১ থেকে ৭৫’ বাঙালি জাতির ভাগ্যাকাশে স্বাধীনতার লাল পতাকা উড়েছিল বাঙালী আশায় বুক বেধেছিল।
পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বিয়োগান্তের ঘটনায় জাতি ছিল দিক নির্দেশনাহীন। নারকীয় এই ঘটনায় জনগণ হয়ে পড়েন দিশেহারা। প্রতিবাদ, প্রতিরোধ করার কোন শক্তি সাহস ছিল না। দলের অনেক বড় বড় নেতাও ছিলেন কিংকর্তব্যবিমূঢ়। ধানমন্ডির ৩২ বাড়ি ছিল কবরের নীরবতা। সমগ্র জাতি তখন অন্ধকারে। সামরিক বুটে পিষ্ঠ গণতন্ত্র। নির্বাসনে সংবিধান আর মানুষের মৌলিক অধিকার। বাক স্বাধীনতা বলতে কিছুই ছিল না। এমনকি বঙ্গবন্ধু নাম উচ্চারণ ছিল নিষিদ্ধ।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে দেশের মৌলিক চরিত্রকেই বদলে ফেলা হয়। বিশেষ করে পাকিস্তানি ধারায় সামরিক শাসনের সংস্কৃতির প্রবর্তন ঘটে দেশে। সাম্প্রদায়িকতা ফিরে আসে রাজনীতি, প্রশাসন, শিক্ষা, সংস্কৃতিসহ সমাজের বিভিন্ন স্তরে। একের পর এক স্বপ্নভঙ্গের ঘটনা ঘটতে থাকে দেশে। বাঙালি জাতির জীবনে জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসে ঘোর অমানিশার অন্ধকার। ঠিক এমন প্রতিকূল সময় ১৯৮১ সালের ১৭ মে সামরিক শাসকের রক্তচক্ষু ও নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে বঙ্গবন্ধুর রক্তস্নাত মাতৃভূমিতে ফিরে আসেন বাঙালির মুক্তির মহানায়কের যোগ্য উত্তরসূরি জননেত্রী শেখ হাসিনা।