নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:০০ পিএম, ১৫ নভেম্বর, ২০১৮
আওয়ামী লীগের সভাপতিসহ শীর্ষস্থানীয় সব নেতাই বলছেন, এবারের নির্বাচন দলটির জন্য অত্যন্ত কঠিন হবে। গতকাল বুধবার মনোনয়ন প্রত্যাশীদের উদ্দেশ্যে দেওয়া এক ভাষণে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আগামী নির্বাচন অত্যন্ত কঠিন নির্বাচন হবে। এই নির্বাচনে জয়ী হতে গেলে আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে এবং কঠিন সংগ্রাম করতে হবে।
আওয়ামী লীগের অন্যতম নেতা, উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বাংলা ইনসাইডারকে বলেছেন, ‘যারা মনে করছে বিএনপি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবে তারা বোকার স্বর্গে বসবাস করছে। বিএনপি নির্বাচন করবে এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হবে বলেই আমার ধারণা।’
জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান জি. এম. কাদের বলেছেন, এবারের নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে। ভোটের আগে কেউই নিশ্চিত করে বলতে পারবেন না কারা এই নির্বাচনে জয়ী হবে।
১৪ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির চেয়ারম্যান রাশেদ খান মেননও বলেছেন, এবারের নির্বাচন হবে আনপ্রেডিক্টেবল। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে জিততে গেলে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতৃত্বে বিএনপি নির্বাচনে আসার সঙ্গে সঙ্গে নির্বাচনের উত্তাপ বেড়ে গেছে। নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। কিছু আগেও আওয়ামী লীগ নির্বাচনে হট ফেভারিট ছিল। আর এখন তাদের হাড্ডা-হাড্ডি লড়াইয়ের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। তারপরও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, আওয়ামী লীগ পাঁচটি শর্ত পূরণ করলে তারা এই নির্বাচনে জয়ী হতে পারবে। এই পাঁচটি শর্ত হলো:
১. আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে জয়ের সম্ভাবনা সৃষ্টি করতে হলে দলটিকে তাদের অভ্যন্তরীণ কোন্দল মেটাতে হবে। বিশেষ করে প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় দলটির সদস্যদের মধ্যে যে অভ্যন্তরীণ বিরোধ ও গ্রুপিং আছে সেগুলো তাদের আগামী এক মাসের মধ্যে মীমাংসা করতে হবে। এটা করতে পারলে দলটি নির্বাচনে সুবিধাজনক অবস্থানে যাবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
২. আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিপুল জনপ্রিয়তা রয়েছে। দেশি বিদেশি বিভিন্ন সংস্থার জরিপে দেখা গেছে যে তিনি এককভাবে বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যক্তি। নির্বাচনের প্রচারণায় তাঁকে কীভাবে উপস্থাপন করা হবে এর ওপরে আওয়ামী লীগের জয় অনেকটাই নির্ভর করছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আওয়ামী লীগ যদি সঠিকভাবে তার ইমেজকে ব্যবহার করতে পারে তবে নির্বাচনে দলটির জয়ের ভালো সম্ভাবনা তৈরি হবে।
৩. প্রতিটি নির্বাচনেই দেখা গেছে যে, আওয়ামী লীগ তার শরিক দলগুলোকে অনেকগুলো আসন ছেড়ে দেয়। কিন্তু সেই ছেড়ে দেওয়া আসনগুলোতে আওয়ামী লীগ শরিক দলের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করে না। যার ফলে শরিক দলগুলোকে দেওয়া অর্ধেকেরও বেশি আসনে তারা জয়ী হতে পারে না। এবারের নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। একই সঙ্গে একে অনিশ্চয়তার নির্বাচনও বলা হচ্ছে। এ কারণে এবারের নির্বাচনে শরিক দলের প্রার্থীর পক্ষে আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতা কর্মীদের একাট্টা হয়ে কাজ করতে হবে। একাজটি অনেক কঠিন বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তবে এই কঠিন কাজটি করতে পারলে আওয়ামী লীগের ভালো ফল করার সম্ভাবনা তৈরি হবে।
৪. প্রতিবার নির্বাচনে দেখা যায় যে, ভোট হয় মূলত দুইভাবে। একটা হলো, আওয়ামী ভোট অন্যটি আওয়ামী বিরোধী ভোট। ১৯৯১ সাল থেকে নির্বাচনগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে যখনই আওয়ামী বিরোধী ভোট বিভক্ত হয়েছে তখনই আওয়ামী লীগের জন্য ইতিবাচক ফলাফল এসেছে। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে জামাত আলাদাভাবে নির্বাচন করেছিল। ফলে আওয়ামী বিরোধী ভোট বিভক্ত হয়ে গিয়েছিল। ওই নির্বাচনে আওয়ামীলীগ জয়ী হয়েছিল। একইভাবে ২০০৮ সালের নির্বাচনে অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও কর্নেল অব. অলি আহমেদ বিএনপি থেকে পৃথক হয়ে নির্বাচন করেছিলেন। ফলে আওয়ামী বিরোধী ভোট বিএনপি’র একার পক্ষে না গিয়ে বিভক্ত হয়ে গেছে। এতে করে ইতিবাচক ফল পেয়েছে আওয়ামী লীগ।
বাংলাদেশে ভোটের হিসেবে দেখা যায় যে, আওয়ামী লীগের ভোট আছে ৩৮ থেকে ৪০ ভাগ। অন্যদিকে আওয়ামী বিরোধী ভোট আছে ৩০ থেকে ৩২ ভাগ। এই ৩২ ভাগ ভোট বিভক্ত হলেই আওয়ামী লীগের জয়ের সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়।
একাধিক রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, খালেদা জিয়া গ্রেপ্তারের পর যেমনটি মনে করা হচ্ছিলো যে বিএনপি বিভক্ত হয়ে পড়বে এবং নির্বাচন প্রশ্নে দলটির মধ্যে দু’টি ভাগ হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তেমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। তবে আওয়ামী লীগের জন্য একটি ইতিবাচক বিষয় হলো, বিকল্প ধারা ও যুক্তফ্রন্টের মতো দলগুলো আলাদা অবস্থান নিয়েছে। কিন্তু তারা যদি মহাজোটে আসে তবে তারা আর আওয়ামী বিরোধী শক্তি হিসেবে চিহ্নিত থাকবে না। অন্যদিকে জামাতের সঙ্গে বিএনপি’র একটি মনোমালিন্য দৃশ্যমান হচ্ছে। জামাত আনুষ্ঠানিকভাবে বলেছে যে, তারা স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করবে এবং ৬২টি আসনে তারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। ২০ দলের অন্যতম শরিক জামাতের এই আবদার বিএনপি কোনভাবেই মানবে না। সেক্ষেত্রে জামাত যদি আলাদাভাবে অবস্থান গ্রহণ করে সেটা আওয়ামী লীগের জন্য ইতিবাচক হবে। পাশাপাশি ইসলামী দলগুলো যদি বিএনপি বা আওয়ামী লীগ কোনো দলের সঙ্গে না গিয়ে আলাদাভাবে নির্বাচন করে সেটাও আওয়ামী লীগের জন্যও ইতিবাচক হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
৫. আওয়ামী লীগ নির্বাচনী প্রচারণায় তাদের এক দশকের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে প্রাধান্য দিচ্ছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, শুধুমাত্র উন্নয়নের স্লোগান দিয়ে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া যাবে না। সেজন্য আওয়ামী লীগ একটি নতুন উদ্যোগ নিয়েছে। সেটা হলো, তরুণ ভোটারদের আকৃষ্ট করা। এবারের নির্বাচনে ৩ কোটি ২০ লক্ষ তরুণ ভোটার রয়েছে। তাঁরাই এবারের নির্বাচনের ভাগ্য নির্ধারণ করবে বলে পর্যবেক্ষক মহল মনে করছে। এই তরুণ ভোটাররা উন্নয়ন কিংবা রাজনৈতিক দল দেখে নয়, বরং তাদের জন্য কি করা হয়েছে সেটা দেখে তারা ভোটকেন্দ্রে যাবে। দেখা যায় যে, তরুণ ভোটারদের সংখ্যা বেশি হলেও তারা ভোটদানে বিমুখ হয়ে যায়। তাদেরকে যদি আওয়ামী লীগের পক্ষে ভোট দিতে উৎসাহী করা যায় তবে তা ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে। এজন্য তাদের সুনির্দিষ্ট কিছু দাবি দাওয়া আছে, যেমন: চাকরির বয়সসীমা ৩২ বছর থেকে ৩৫ বছরে উন্নীত করা, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, কোটা সংস্কার ইত্যাদি। এই বিষয়গুলো তরুণদের কাছে তুলে ধরা যায় তবে তরুণরা আওয়ামী লীগকে ভোট দিতে উৎসাহী হবে।
বাংলা ইনসাইডার/এএইচসি/জেডএ
মন্তব্য করুন
নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিতেই বিএনপি লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি পালন করছে বলে জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন।
শনিবার (১৮ মে) রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির উপজেলা নির্বাচনবিরোধী লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।
বিএনপিকে উপহাস করে ওবায়দুল কাদের বলেন, গণঅভ্যুত্থান থেকে তারা লিটলেট বিতরণ কর্মসূচিতে নেমে এসেছে। এবার বুঝুন তাদের অবস্থা।
তিনি বলেন, সরকারের ধারাবাহিকতার কারণেই আজ দেশের এত উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি হয়েছে। জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর কাছে আবেদন করে বাকশালের সদস্য হয়েছিলেন, কিন্তু বিএনপি এবং মির্জা ফখরুল বাকশালকে গালিতে পরিণত করতে চায়।
তিনি আরও বলেন, গণমাধ্যমও লিখছে ভারত বিরোধিতার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করে দেখবে বিএনপি। ভারত প্রশ্নে এখন মধ্যপন্থা নিতে চায় বিএনপি।
সেতুমন্ত্রী বলেন, দেশে গণতন্ত্রের কোনো ঘাটতি নেই, সংসদ এবং সংসদের বাইরেও সরকারের বিরোধিতা জারি আছে। সরকার কোনো দল বা গোষ্ঠীর ওপর দমনপীড়ন চালাচ্ছে না। গণতন্ত্রের বিচারে বিশ্বের অনেক দেশের চেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ।
মন্তব্য করুন
কাউন্সিল বিএনপি তারেক জিয়া মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বেগম খালেদা জিয়া
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিতেই বিএনপি লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি পালন করছে বলে জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন। শনিবার (১৮ মে) রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির উপজেলা নির্বাচনবিরোধী লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরে যেতে পারেন এমন গুঞ্জন রয়েছে। তিনি জেল থেকে বেরিয়ে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে মহাসচিবের দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। বেগম খালেদা জিয়া এই বিষয়টি নিয়ে তাকে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন। তবে তারেক জিয়া এ বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া দেননি বলে জানা গিয়েছে। বরং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যদেরকে তারেক জিয়া জানিয়েছেন, কাউন্সিলের আগে বিএনপিতে নেতৃত্বের পরিবর্তন নয়। তবে বিএনপির কাউন্সিল কবে, কীভাবে হবে- এ সম্পর্কে কোন বিস্তারিত তথ্য জানা যায়নি।
সরকারের বিরুদ্ধে নতুন করে আন্দোলন শুরু করার লক্ষ্যে প্রস্তুতি গ্রহণ করছে দীর্ঘ দিন ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি। তারা সাম্প্রতিক সময়ে আবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক শুরু করেছে। তবে এসব বৈঠকে যুগপৎ আন্দোলনের কথা বলা হলেও বিএনপি এখন পর্যন্ত সরকার বিরোধী কোন জোট করতে রাজি নয়। ২০ দলীয় জোট আনুষ্ঠানিকভাবে ভেঙে যাওয়ার পর বিএনপি এখন পর্যন্ত জোটগত ভাবে কোন আন্দোলন করেনি। তবে বিভিন্ন সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তারা সম্পর্ক রেখেছে। ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত এই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তারা যুগপৎ আন্দোলন করেছিল। এখন আবার নতুন করে যুগপৎ আন্দোলন শুরু করার জন্য বিএনপির পক্ষ থেকে এই সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে যোগাযোগ করা হচ্ছে। তবে রাজনৈতিক দলগুলো বিএনপির ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব দেখাচ্ছে না।