নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩:০৯ পিএম, ২৭ নভেম্বর, ২০১৮
২০০৫ সাল, ৮ মে। বিএনপি-জামাত জোট ক্ষমতায়। জ্বালানি উপদেষ্টা মাহমুদুর রহমান প্রচণ্ড ব্যস্ত। মিডিয়ার সব ক্যামেরা তাঁর দিকে। মাহমুদুর রহমান ঘোষণা দিলেন, টাটা বাংলাদেশে ৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে। এটা হবে, বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় বিদেশি বিনিয়োগ। টাটা এখানে সার কারখানা করবে, ইস্পাত কারখানা করবে। বাংলাদেশ নির্ধারিত মূল্যে ২৫ বছরের জন্য নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ করবে। টাটা প্রতিনিধি দলের সঙ্গে উচ্ছ্বসিত জ্বালানি উপদেষ্টা। টাটার প্রতিনিধিরাও উচ্ছ্বসিত। প্রাথমিক এই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা চলল। গ্যাসের মূল্য নিয়ে চলল দরকষাকষি। টাটা বিকল্প প্রস্তাব দিল। ৩ দশমিক ১০ মার্কিন ডলার প্রতি ঘনফুট গ্যাসের দাম নির্ধারিত হলো সার কারখানা প্রকল্পের জন্য। আর ২ দশমিক ৬০ ডলার স্টিল কারখানার জন্য। সংশোধিত প্রস্তাবে টাটা বাংলাদেশ সরকারকে ১০ শতাংশ মালিকানা দেবারও প্রস্তাব করল। আলোচনা চূড়ান্ত ধাপে পৌঁছাল। জ্বালানি উপদেষ্টা ঘোষণা করলেন অক্টোবরের মধ্যে তারা সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করবেন।
এর মধ্যে খবর এলো, তারেক রহমান টাটার উচ্চপদস্থ প্রতিনিধিদের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করতে চান। টাটা খুশিই হলো। তারেকের ইচ্ছা বৈঠক করবেন ভারতে। টাটার তখন সর্বোচ্চ কর্তা রতন টাটা। রতন টাটা আনুষ্ঠানিক ভাবে আমন্ত্রণ জানালেন তারেক রহমানকে। তারেক রহমান আমন্ত্রণ পত্র ছুড়ে দিলেন। তিনি জানালেন তিনি একা যাবেন না, তাঁর সঙ্গে যাবেন গিয়াসউদ্দিন আল মামুন এবং সিলভার সেলিম। টাটার মধ্যস্থতাকারীদের চোখ চড়কগাছ। এরা কারা? ঢাকায় ভারতীয় দুতাবাসের দ্বারস্থ হলেন টাটা। ভারতীয় দূতাবাস জানাল, এরা তারেকের ব্যবসায়িক পার্টনার।
টাটা তিনজনকে নিমন্ত্রণ পাঠালেন। তিনজন গেলেন। টাটার সদর দপ্তরে। রতন টাটা তাঁদের অভ্যর্থনা জানালেন। টাটার সর্বশেষ প্রস্তাবের ওপর পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন হলো। কথাবার্তা চলল কিছুক্ষণ। তারেক একপর্যায়ে জানালেন, তিনি একান্তে রতন টাটার সঙ্গে কথা বলতে চান। একান্তে কথা বলার সময় তারেকের পাশ থেকে গিয়াসউদ্দিন আল মামুন সরাসরি প্রশ্ন করলেন আমাদের কমিশন কত? রতন টাটা প্রথমে বুঝতে পারলেন না। তাঁকে এবার আরও স্পষ্ট করা হলো। রতন টাটা মনে করলেন তরুণরা বোধহয় তাঁর সঙ্গে রসিকতা করছে। কিন্তু কিছুক্ষণ পর তাঁর ভুল ভাঙল।
রতন টাটা বললেন, এ ধরনের কমিশন দেওয়ার কোনো সিস্টেম টাটার নেই। তিনি বললেন, টাটার বিস্তৃতি বিশ্বব্যাপী। সর্বত্রই টাটা তার সুনাম নিয়ে কাজ করে। ঘুষ বা কমিশন টাটার রীতিবিরুদ্ধ।
তারেক নাছোড়বান্দা। বললেন, বাংলাদেশ সরকারকে ১০ শতাংশ মালিকানা দেওয়া হচ্ছে কিসের ভিত্তিতে? রতন টাটা জানালেন এটি ইকুইটি পারটিসিপেশন। বিদেশি বিনিয়োগের জন্য এটা অপরিহার্য শর্ত। তারেক দাবি করলেন ওই ১০ শতাংশ গিয়াসউদ্দিন মামুনের ওয়ান লিমিটেডের নামে দিতে হবে।
রতন টাটা ঝানু ব্যবসায়ী, বুঝলেন এরা বাংলাদেশের ক্যানসার। বুঝতে চাইলেন এদের দুর্নীতির গভীরতা কতটুকু। চেয়ার থেকে উঠে কফি নিলেন। কফিতে চুমুক দিয়েই অন্য খেলায় মেতে উঠলেন রতন টাটা। জানতে চাইলেন, তোমাদের ডিমান্ড কী, অ্যাট এ গো তোমরা কত চাও? মামুন বললেন ২০০ কোটি ডলার এখন আর নির্বাচনের সময় ১০০ কোটি ডলার। রতন টাটা জানতে চাইলেন কীভাবে নেবে? মামুন জানাল, আমাদের বিদেশে অ্যাকাউন্ট আছে, সেখানে। রতন টাটার মাথায় তখন খুন চেপেছে, তিনি জানতে চাইলেন কোন দেশে? মামুন বললেন ‘ দুবাই, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া’। রতন টাটা সবগুলো ব্যাংক ডিটেইলস চাইলেন। মামুন, তার ব্রিফকেস থেকে কাগজ বের করলেন। রতন টাটা কাগজটা নিয়ে জানালেন, সি ইউ সুন’। বৈঠক থেকে বেরিয়ে যাবার সময় তারেক বলল প্রথম টুকু ক্লিয়ার হবার পরই এমওইউ সাইন হবে। রতন টাটা করমর্দনের হাত বাড়িয়ে বললেন ‘অফ কোর্স’।
তিনজনকে বিদায় দিয়ে, বৈঠকের কনফিডেনসিয়াল রিপোর্ট তৈরি করলেন রতন টাটা। ভারত সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে পাঠানো হলো গোপন নোট। আর এই নোট যেদিন দিল্লিতে পাঠানো হলো, সেদিনই টাটা আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে বাংলাদেশ প্রকল্প বাতিল ঘোষণা করল। রতন টাটার এই নোট শেষ পর্যন্ত ড. মনমোহন সিং পর্যন্ত গিয়েছিল।
বাংলা ইনসাইডার/জেডএ
মন্তব্য করুন
সরকারবিরোধী আগামীর আন্দোলন শুরুর আগে কর্মসূচি প্রণয়ন ও আন্দোলন পরিচালনায় শক্তিশালী লিয়াজোঁ কমিটি চায় বিএনপির মিত্ররা। তারা মনে করে, লিয়াজোঁ কমিটি না থাকায় বিগত আন্দোলন পরিচালনায় এক ধরনের সমন্বয়হীনতা ছিল।
কারণ, যুগপতের সব দল ও জোটের সঙ্গে বিএনপির পৃথক বৈঠক শেষে তাদের স্থায়ী কমিটিতে কর্মসূচি চূড়ান্ত হওয়াকে যথাযথ প্রক্রিয়া এবং আন্দোলনের সঠিক প্ল্যাটফর্ম বলে মনে করে না শরিকরা, বিশেষ করে গণতন্ত্র মঞ্চ। তাই এবার এ প্রশ্নে একটা সিরিয়াস মীমাংসা চান মঞ্চের নেতারা।
বিএনপির সঙ্গে বুধবার (১৫ মে) রাতে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে লিয়াজোঁ কমিটি গঠনের পরামর্শ দিয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা বলেন, প্রতিটি জোট ও দল থেকে একজন করে নিয়ে ১০-১২ সদস্যবিশিষ্ট একটি লিয়াজোঁ কমিটি গঠন করতে হবে। সেই লিয়াজোঁ কমিটিতে আলোচনার ভিত্তিতে আন্দোলনের কর্মসূচি প্রণীত হবে। তার আগে নিজ নিজ দল ও জোটের সিদ্ধান্ত নিয়ে সংশ্লিষ্ট নেতারা বৈঠকে উপস্থিত হবেন।
নব্বইয়ে এরশাদবিরোধী আন্দোলনসহ অতীতের আন্দোলনগুলোতে লিয়াজোঁ কমিটি এভাবে কাজ করেছে। কিন্তু বিগত আন্দোলনে এ প্রক্রিয়ায় কর্মসূচি প্রণীত হয়নি। পাঁচ-দশ মিনিট আগে মিত্রদের কর্মসূচির বিষয়ে জানানো হতো এবং কর্মসূচির সঙ্গে সহমত না হলেও সেটাই তারা ঘোষণা করতেন। বৈঠক সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।
যুগপৎ আন্দোলন পুনরুজ্জীবিত করে সরকারের পদত্যাগ ও নতুন নির্বাচনের দাবিতে ঈদুল আজহার পর মাঠে নামার পরিকল্পনা করছে বিএনপি। সেই আন্দোলনের কর্মকৌশল নির্ধারণে পরামর্শ নিতে গত রোববার থেকে মিত্রদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করছে দলটি। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর এ ধরনের বৈঠক এবারই প্রথম। এর অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার (১৬ মে) এনডিএম, বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ এবং মিয়া মসিউজ্জামান ও ফারুক হাসানের নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গণতন্ত্র মঞ্চ ছাড়াও এর আগে গত সোমবার বিএনপির সঙ্গে বৈঠকে আন্দোলনের কর্মসূচি প্রণয়নে সমন্বয়হীনতা দূরীকরণে যুগপতের সব দল ও জোট থেকে দু-একজন করে নিয়ে শক্তিশালী লিয়াজোঁ কমিটি গঠনের ওপর জোর দেন সমমনা জোটের নেতারা।
মন্তব্য করুন
শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন বিএনপি
মন্তব্য করুন
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জাতীয় প্রেস ক্লাব
মন্তব্য করুন
বিএনপি ভারত বিরোধী মার্কিন বিরোধী মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
মন্তব্য করুন
শেখ হাসিনা বাহাউদ্দিন নাছিম আওয়ামী লীগ ঢাকা-৮
মন্তব্য করুন
১৯৮১ সালের ১৭ মে। স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ সভাপতি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেছিলেন এক বৃষ্টিমুখর দিনে। সেই দিনে লাখো মানুষ মানিক মিয়া এভিনিউতে জড়ো হয়েছিল জাতির পিতার কন্যাকে দেখার জন্য। তাদের শোক এবং আবেগ ছিল হৃদয়স্পর্শী। সারা বাংলাদেশ উত্তাল হয়েছিল। জাগরণের এক গান গেয়ে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বাংলাদেশের জন্ম হওয়ার পর থেকেই প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছে। এই সরকার পুরোপুরিভাবে নতজানু সরকারে পরিণত হয়েছে। শুধু ফারাক্কা নয়, গঙ্গার পানি নয়, বাংলাদেশের ১৫৪টি নদীতে পানি দিতে তারা গড়িমসি করে যাচ্ছে। তিস্তা নদীর পানি বণ্টন, এ করছি, এ হচ্ছে এমন করে সময় শেষ করছে সরকার। এ যে ব্যর্থতা এর মূল কারণ হচ্ছে, সরকারে যারা আছে তারা পুরোপুরিভাবে একটা নতজানু সরকার।