নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:০০ পিএম, ৩০ নভেম্বর, ২০১৮
২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারী বিতর্কিত ও ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ নিরুঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ধারা অব্যাহত রাখে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একটি বড় প্রশ্ন হলো যে, এবারও কী আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করবে?
বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের আসন সংখ্যা হলো তিনশো। এই তিনশো আসন সংখ্যার মধ্যে যদি কেউ দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যা সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। তাহলে তাকে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা বলে। দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করলে একটি রাজনৈতিক দল সংবিধানের অনেকগুলো অনুচ্ছেদ পরিবর্তন করতে পারে এবং জাতীয় সংসদের উপর তার নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। এখানে আইন প্রনয়নসহ অনেক নীতি নির্ধারনী বিষয় ইস্যু পরিবর্তনের ক্ষমতা জনগন তাদেরকে দেয় বলে ধরে নেয়া হয়।
বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ধারা পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ১৯৯১ সালে নির্বাচনে কেউই দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারেনি, বরং হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে সামান্য ব্যবধানে বিএনপি ক্ষমতায় আসে।
১৯৯৬ সালের নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ ও বিএনপি কেউই নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারেনি। বরং হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। ২০০১ সালে নির্বাচনে বিএনপি প্রথমবারের মত নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা অর্জন করে। দুই তৃতীয়াংশের বেশি আসন বিএনপি জামাত জোট পায়। ২০০৮ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ একারাই দুই তৃতীয়াংশ আসনে বিজয়ী হয়েছিল। ২০১৪ সালে যেহেতু অর্ধেক আসনেই কোন নির্বাচন হয়নি, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন হয়েছে। কাজেই আওয়ামী লীগের সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রাখতে তেমন কোন অসুবিধা হয়নি।
তবে এবারের নির্বাচনের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। এবারের নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হচ্ছে। এ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যাচ্ছে, নিবন্ধিত ৩৯ দলের প্রত্যেক রাজনৈতিক দলই এবার অংশগ্রহন করছে। বিএনপি ২০ দলের বাইরে ঐক্যফ্রন্ট গঠন করেছে। আওয়ামী লীগও তাদের নির্বাচনে জয়লাভ নিশ্চিত করার জন্য মহাজোট এবং যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি করছে। আওয়ামী লীগ নিজেই এবার ৩৫ টি আসনে কোন প্রার্থী দেয়নি। এই প্রেক্ষিতে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের প্রশ্ন হলো যে, আওয়ামী লীগের এবারের নির্বাচনে প্রত্যাশা কি? আওয়ামী লীগের একাধিক প্রতিনিধির সঙ্গে আলাপ করে দেখা গেছে যে, আওয়ামী লীগ এবারের নির্বাচনে দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা চায় না। বরং তারা একটি অংশগ্রহনমূলক প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ পার্লামেন্ট চায়।
আওয়ামী লেীগের একাধিক নেতা মনে করছেন যে, তারা ১৭০ আসন পেলেই খুশি। তবে একটি রাজনৈদিক দলের ক্ষমতা দখল করার জন্য অন্তত ১৫১ টি আসন প্রয়োজন। আওয়ামী লীগ অবশ্যই ১৫১ টি আসনের বেশি চায়। এছাড়া আওয়ামী লীগের মহাজোটের যে শরীক জাতীয় পার্টি এবং যুক্তফ্রন্ট রয়েছে তাদেরকে জয়ী করাও টার্গেট। আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নির্বাচন তাদের টার্গেট দলীয় ভাবে ১৫১ টি আসনে বিজয়ী হওয়া। কারণ আওয়ামী লীগ মনে করছে যে, যদি তার সরকার গঠনের জন্য ১৫১ টি দরকার। তাহলেই তারা এককভাবে সরকার গঠনের ম্যানডেট পাবে।
তাই আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা মনে করছে যে নূন্যতম ১৫১ টি আসন তাদের পেতেই হবে। এবং সেটি শুধু আওয়ামী লীগের হবে। ১৪ দলগত এবং মহজোটগতভাবে যে আসনগুলো পাবে সেটা তাদের সরকার গঠনের জন্য আরও শক্ত অবস্থান নিবে। কিন্তু আওয়ামী লীগ নিজেরাই সরকার গঠনের সামর্থ্য অর্জন করতে চায়। আওয়ামী লীগের একজন নেতা বলেছেন, এই আসন যদি আওয়ামী লীগ এককভাবে না পায়। জোটগতভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। তাহলে অনেক বিষয় জোটের উপর নির্ভর করতে হয়। সেখানে তখন জোটের দাবি -দাওয়া এবং আবদার বেড়ে যায়। এজন্য সর্বনিম্ন ১৫১ টি আসনে জয়লাভ করবে বলে আওয়ামী লীগ নেতারা আশাবাদি। এ পর্যন্ত যে জরিপগুলো হয়েছে, সে জরিপে দেখা গেছে যে, আওয়ামী লীগ ১৬০ থেকে ১৭০ টি আসনে নিজেদের অবস্থান প্রাক্কলন করছে। অর্থাৎ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের লক্ষ্য থাকবে ১৭০ টি আসনে জয়লাভ করা এবং আওয়ামী লীগের নেতারাও বলছে , এবার নির্বাচন প্রতিদ্বন্ধিতা পূর্ণ হবে। যেহেতু টানা ১০ বছর ধরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে। কাজেই তাদের জন্য ২০০৮ বা ২০১৪ এর মত দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন নাও হতে পারে।
বাংলা ইনসাইডার
মন্তব্য করুন
ডোনাল্ড লু বিএনপি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ চীন সফর ভারত যুক্তরাষ্ট্র
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছিল বিএনপির আশা ভরসার কেন্দ্রস্থল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করবে; মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নির্দলীয়, নিরপেক্ষ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায়ে সরকারকে বাধ্য করবে; মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কারণ সরকার শেষ পর্যন্ত নির্বাচন করতে পারবে না- এমন বক্তব্যগুলো বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচনের আগে বহুল প্রচারিত ছিল। বিএনপির সব নেতারা প্রকাশ্যেই এ কথা বলত।
বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যখন র্যাবের উপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, বাংলাদেশকে গণতন্ত্র সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানায় না তখন বিএনপি নেতারা উল্লাসে ফেটে পড়েছিলেন। তারা দলীয় কার্যালয়ে মিষ্টিমুখের ব্যবস্থাও করেছিলেন।
আবার ডোনাল্ড লু নির্বাচনের আগে যখন বাংলাদেশ সফর করেছিলেন এবং ভিসা নীতি প্রয়োগ করেছিলেন তখন বিএনপি নেতাদের প্রকাশ্যে মার্কিন বন্দনা করতে দেখা গেছে। ২৮ অক্টোবরের আগ পর্যন্ত প্রায় প্রতিদিনই মার্কিন দূতাবাসে বা মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসের বাসভবনে বিএনপির নেতাদের আনাগোনা ছিল। তারা সেখানে চা চক্রে মিলিত হয়েছেন, নৈশভোজে মিলিত হয়েছেন এবং বিভিন্ন রকমের শলাপরামর্শ করেছেন।
পিটার ডি হাস গত বছরের ১০ অক্টোবর বিএনপি যখন সমাবেশ করতে পারেনি তখনও একতরফা বিবৃতি দিয়েছিলেন। এছাড়াও তিনি বিতর্কিত সংগঠন মায়ের ডাকের এক নেতার বাসায় গিয়েছিলেন এবং সেখানে তিনি বিএনপির প্রতি এক ধরনের সহানুভূতি জানিয়েছিলেন। এভাবেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির উপর এক ধরনের প্রচ্ছন্ন সমর্থন এবং সহানুভূতি দেখিয়েছিল।
অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই সহানুভূতি এবং পরোক্ষ সমর্থনের কারণেই বিএনপির আন্দোলনের পালে হাওয়া লেগেছিল। নেতাকর্মীদের মধ্যে একটি চাঙ্গা ভাব তৈরি হয়েছিল। কিন্তু ২৮ অক্টোবরের পর থেকে পরিস্থিতি পাল্টে যেতে শুরু করে। যদিও ২৮ অক্টোবরের পর এই ডোনাল্ড লু শর্তহীন সংলাপের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন এবং এই আহ্বানের চিঠি নিয়ে পিটার ডি হাস তিনটি দলের নেতাদের কাছে গিয়েছিলেন এবং একটি সংলাপ আয়োজনের শেষ চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সেই সংলাপ আয়োজনে বিএনপি বা আওয়ামী লীগ কেউই সাড়া দেয়নি।
এখন নির্বাচন সমাপ্ত হয়েছে এবং ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর ১১ জানুয়ারি নতুন সরকার গঠিত হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচনকে ত্রুটিপূর্ণ বলার পরও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়া এবং নতুন সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের বার্তা দিয়েছেন। ডোনাল্ড লু’র আগে আফরিন আক্তার নির্বাচনের পরে বাংলাদেশ সফর করেছিলেন এবং সেই সময় তিনি হোটেল ওয়েস্টিনে বিএনপি নেতৃবৃন্দের সাথে সাক্ষাৎ করেছিলেন। তখন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং শামা ওবায়েদ আফরিন আক্তারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। যদিও সেই সাক্ষাতের পর তারা কোনও কিছুই সাংবাদিকদেরকে জানাননি। কিন্তু এবার ডোনাল্ড লু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেননি। আর এটি বিএনপির মধ্যে হতাশা সৃষ্টি করেছে।
বিএনপি মনে করছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন তাদেরকে আর আগের মতো গুরুত্ব দিচ্ছেন না, পাত্তা দিচ্ছে না। বরং সরকারের সঙ্গে সম্পর্কের কারণে বিএনপিকে এড়িয়ে যাচ্ছে। এ নিয়ে বিএনপির মধ্যে হতাশা তৈরি হয়েছে। বিএনপি নেতারা দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ, শামা ওবায়েদ, তাবিথ আউয়ালসহ যারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন এবং মার্কিন দূতাবাসে যাদের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে তাদেরকে দুষছেন। তারা মনে করছেন যে, বিএনপির মধ্যেই সমস্যা রয়েছে। বিএনপির নেতারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে পারেননি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বিএনপির বক্তব্যগুলো তারা সঠিকভাবে ও যথাযথভাবে উপস্থাপন করতে পারেননি। আর একারণেই ডোনাল্ড লু’র সফরের পর বিএনপির মধ্যে চলছে এক ধরনের হতাশা।
ডোনাল্ড লু বাংলাদেশ রাজনীতি বিএনপি
মন্তব্য করুন
আগামী ২৩ জুন আওয়ামী লীগের ৭৫ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পর্যন্ত আওয়ামী লীগ দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গকারী, দলের ভেতর সুবিধাবাদী, লুটেরা এবং দলের নাম ভাঙিয়ে বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করবে না। কিন্তু ২৩ জুনের পর আওয়ামী লীগের ক্র্যাশ প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ক্র্যাকডাউন হবে দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গকারী এবং দলের সুনাম নষ্টকারীদের বিরুদ্ধে। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ব্যাপারে শূন্য সহিষ্ণুতা নীতি অনুসরণ করবে। আওয়ামী লীগের একটি দায়িত্বশীল সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
আওয়ামী লীগ এবং তার আদর্শিক জোট ১৪ দলের নেতাদের চীন সফরে হিড়িক পড়েছে। আওয়ামী লীগ এবং তার সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর এই চীন সফরকে ঘিরে কূটনৈতিক অঙ্গনে চলছে নানামুখী আলাপ আলোচনা। ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উভয় দেশই ১৪ দল এবং আওয়ামী লীগের নেতাদের চীন সফরের ব্যাপারে দৃষ্টি রাখছেন। তবে তারা এই বিষয় নিয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হচ্ছেন না। বিষয়টি তারা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিষয় হিসেবেই মনে করছেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছিল বিএনপির আশা ভরসার কেন্দ্রস্থল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করবে; মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নির্দলীয়, নিরপেক্ষ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায়ে সরকারকে বাধ্য করবে; মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কারণ সরকার শেষ পর্যন্ত নির্বাচন করতে পারবে না- এমন বক্তব্যগুলো বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচনের আগে বহুল প্রচারিত ছিল। বিএনপির সব নেতারা প্রকাশ্যেই এ কথা বলত।