নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:০৭ পিএম, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৮
আবারও সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট অবস্থানের কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের মাটিকে তিনি প্রতিবেশী দেশে জঙ্গি হামলার ঘাঁটি হতে দেবেন না। ভারতীয় সম্প্রচারমাধ্যম টাইমস নাউ-কে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করেন, অন্য দেশে হামলায় মদদ দিলে নিজের দেশও আক্রান্ত হতে পারে।
শনিবার গণভবনে অনুষ্ঠিত সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা বলেন, শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি বজায় রেখে অর্থনৈতিক উন্নয়নে কাজ করাই তার সরকারের অগ্রাধিকার। টাইমস নাউ-এর সাংবাদিক সৃঞ্জয় চৌধুরীকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আঞ্চলিক সহযোগিতা, তিস্তার পানি বণ্টন ও রোহিঙ্গা সংকট নিয়েও নিজের অবস্থান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। আওয়ামী লীগ নির্বাচনে জয়ী হলে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশে কোনও ভারতীয় বিদ্রোহী গোষ্ঠীর ঘাঁটি না থাকার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান সাংবাদিক সঞ্জয়। এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা কোনভাবেই চাই না, আমাদের দেশের মাটিকে ব্যবহার করে অন্য কোনও প্রতিবেশী দেশে সন্ত্রাসী হামলা হোক। সে কারণেই দেশে সন্ত্রাসবাদী কোনও ঘাঁটি আছে কিনা, কিংবা অন্য কোনও তৎপরতা চলছে কিনা; আমরা সবসময় তা খেয়াল করি। তেমন কিছুর খোঁজ পেলে আমরা দ্রুত পদক্ষেপ নিই। এটা আমাদের খুব স্পষ্ট অবস্থান।’
প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন তোলেন, কেন আমরা আমাদের দেশের মাটিকে সন্ত্রাসী তৎপরতায় ব্যবহৃত হতে দেব?’ `আপনি যদি অন্য কোনও দেশে সন্ত্রাসী তৎপরতায় মদদ দেন, তো একদিন আপনার দেশই ভোগান্তির শিকার হবে। মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। এ প্রসঙ্গে অস্ত্র চোরাচালানের দৃষ্টান্ত টেনে বলেন, আমাদের দেশ একসময় অস্ত্র চোরাচালানের নিরাপদ ভূমি হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। এখন প্রশ্ন হলো, কেন সেটা আমরা হতে দেব? যদি দিই, একদিন আমার দেশের মানুষও ভোগান্তির শিকার হবে। কারণ, কোনও না কোনভাবে দেশের কিছু মানুষ ওই তৎপরতায় উৎসাহিত হবে।’ শান্তি আর উন্নয়নকে তার সরকারের অগ্রাধিকার হিসেবে তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শান্তি ছাড়া উন্নয়ন হবে না। আমি তাই দেশে শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি বজায় রাখার চেষ্টা করি। অর্থনৈতিক উন্নয়নই আমাদের কাছে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ।সাক্ষাৎকারে সাংবাদিক সৃঞ্জয় প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, সরকার পরিচালনা করতে গিয়ে যে সংকটগুলো তাকে মোকাবিলা করতে হয়েছে, তার অনেকগুলোই পাকিস্তানের সৃষ্টি করা। সে সময় ২০১৬ সালের পর বাংলাদেশে আর কোনও জঙ্গি হামলা না হওয়ার প্রসঙ্গ তুলে প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকার প্রশংসা করেন তিনি। উত্তরে শেখ হাসিনা বলেন, সন্ত্রাসীদের কোনও দেশ নাই, কোনও সীমানা নাই। নিজের পরিবার সন্ত্রাসী হামলার শিকার উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, তিনি আর তার বোন শেখ রেহানা ছাড়া পরিবারের বাকি সব সদস্য ৭৫’এর ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। ৬ বছর পরে ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে নিজেও বারবার সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছেন বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। এ প্রসঙ্গে তিনি ২০০০ সালে গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়ায় তার সমাবেশস্থলে বোমা পুঁতে রাখা এবং ২১শে আগস্টের গ্রেনেড হামলার প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন।
২০১৬ সালে পাকিস্তানের সার্ক সম্মেলনে বাংলাদেশের অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্তের প্রসঙ্গ ধরে সাংবাদিক সঞ্জয় প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, ভারতের আগে আপনি অনুধাবন করেছেন, সার্ক সম্মেলনে যাওয়া যথাযথ নয়। জবাবে শেখ হাসিনা জানান, বাংলাদেশের সিদ্ধান্তটি একান্তই নিজেদের। বলেন, প্রতিবেশিদের সঙ্গে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক সব সময়ই আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষত আঞ্চলিক সহযোগিতা। তবে প্রত্যেক দেশেরই তাদের নিজ নিজ ভূমিকার পেছনে নিজস্ব কারণ থাকে। হুম, আমি স্বীকার করছি, আমাদেরও কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। আমাদের সরকার ক্ষমতায় থাকাকালেও সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে, মানুষ মারার চেষ্টা হয়েছে। সারা বিশ্বের মতো আমাদের দেশেও সন্ত্রাসবাদী তৎপরতা দেখা গেছে। তবে আমরা যেটা করেছি, তা হলো আমরা একে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছি, কমিয়ে আনতে পেরেছি। তবে পাকিস্তানের চিত্র দেখেন আপনি.।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের অক্টোবরে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সার্ক সম্মেলনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্তের পেছনে বাংলাদেশের অবস্থান জানিয়েছিলেন। সে সময় তিনি বলেছিলেন, `বাংলাদেশ মনে করে সার্ক অঞ্চলের চলমান পরিস্থিতি আপাতত সম্মেলনের জন্য সহায়ক নয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) বাংলাদেশের কাছে সুনির্দিষ্ট সংবেদনশীলতার প্রশ্ন, যেখানে পাকিস্তান আমাদের বিচার প্রক্রিয়ার বিভিন্ন দিক নিয়ে অসন্তোষ জানিয়েছে। বিষয়টি তারা তাদের পার্লামেন্টেও তুলেছে। তারা অবাঞ্ছিত কিছু মন্তব্যের মাধ্যমে আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ শুরু করে। এতে আমরা আহত হয়েছি, যেহেতু বিষয়টি আমাদের অভ্যন্তরীণ। নিজেদের দেশের অভ্যন্তরেই আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছি, এতে তাদের মাথাব্যথার কিছু নেই। পাকিস্তানের এই আচরণের ফলে তাদের সঙ্গে সব ধরণের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার জন্যও আমার ওপর অনেক চাপ রয়েছে। কিন্তু আমি বলেছি, সম্পর্ক থাকবে। তবে সমস্যাগুলোর নিষ্পত্তি করতে হবে আমাদের।
ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের ব্যাপারে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ভারত-পাকিস্তানের সম্পর্ক একান্তই তাদের দ্বিপাক্ষিক ব্যাপার। আমি এর মধ্যে ঢুকতে চাই না, কোনও মন্তব্য করতে চাই না। তবে আমি মনে করি, মানুষের কথা ভাবতে হবে আমাদের। সাধারণ মানুষের কথা। তাদের জীবনযাপন কেমন, তারা কী চিন্তা করছে, তারা কী করে একত্রিত হয়ে কাজ করতে পারে।
সার্কের সাফল্য প্রশ্নে মন্তব্য করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্তব্য করেন, আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে সাফল্য আসবে তখন, যখন একটি দেশ অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে না। তিনি বলেন, আমাদের এমন একটি পথ খুঁজে বের করতে হবে যে কোনও দেশ অন্য কোনও দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তেক্ষপ করবে না। সেটা নিশ্চিত হলে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হবে। হস্তক্ষেপ ঘটলে বন্ধুত্ব সম্ভব না।সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেছেন, ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারও তিস্তা সমস্যার সমাধানে পদক্ষেপ নেবে। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে বিগত ১০ বছরে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা আশঙ্কা প্রকাশ করেন, তার দলের নেতৃত্বাধীন জোট ক্ষমতায় আসতে না পারলে `উঠতে থাকা` বাংলাদেশ `পড়ে` যেতে পারে। আবার নির্বাচিত হলে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা ধরে রাখার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
বাংলা ইনসাইডার/এমআরএইচ/এমআর
মন্তব্য করুন
মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস বিদায় নিচ্ছেন। নতুন রাষ্ট্রদূত হিসাবে ইতোমধ্যে হোয়াইট হাউস ডেভিড মিলের নাম ঘোষণা করেছে। তাঁর রাষ্ট্রদূত হিসেবে মনোনয়ন সিনেটে অনুমোদন হলেই তিনি তাঁর বাংলাদেশ মিশন শুরু করবেন।
পিটার ডি হাস বাংলাদেশে এসেছিলেন এক অনিশ্চয়তার সময়। ২০২২ সালের ১৫ মার্চ তিনি ঢাকায় আসেন। রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম ভাগে তিনি ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে স্পষ্ট কথাবার্তা বলা, সুশীল সমাজের সঙ্গে দ্রুত সম্পর্ক গড়ে ওঠার কারণে তিনি অল্প সময়ের মধ্যেই ব্যাপক আলোচিত ছিলেন। বিশেষ করে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন ইত্যাদি দাবির পাশাপাশি মানবাধিকার ইস্যুকে সামনে নিয়ে আসার কারণে তিনি বাংলাদেশের একটি অংশের কাছে প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হন। অতীতের রাষ্ট্রদূতদের চেয়ে তাকে প্রভাবশালী হিসেবে মনে করা হচ্ছিল। মনে করা হচ্ছিল পিটার ডি হাস বাংলাদেশে একটি মিশন নিয়ে এসেছেন। তিনি অন্যান্য রাষ্ট্রদূতদের চেয়ে অনেক বেশি সক্রিয়।
পিটার ডি হাস ঢাকায় আসার পর পরই তাঁর সক্রিয়তার প্রমাণ রেখেছিলেন। তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করতেন। সুশীল সমাজের সঙ্গেও নিয়মিত বৈঠক করতেন এবং বিভিন্ন বিষয়ে সরাসরি এবং স্পষ্ট অবস্থানও ব্যক্ত করতেন। কিন্তু তিন বছরের কম সময়ের মধ্যে তিনি যখন বিদায় নিচ্ছেন তখন তাঁর বন্ধু নেই। নানা কারণেই তিনি সমালোচিত, বিতর্কিত।
রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথমেই তাকে মনে হয়েছিল আওয়ামী লীগের ওপর তিনি অসন্তুষ্ট বা আওয়ামী লীগকে চাপে ফেলার কৌশল গ্রহণ করতেই তিনি ঢাকার মিশনে এসেছেন এবং তাঁর কর্মকাণ্ডে তা স্পষ্ট প্রতিফলন লক্ষ্য করা যেত। এই জন্য শুরু থেকেই আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ তাঁর ব্যাপারে নেতিবাচক ছিল। যদিও মার্কিন রাষ্ট্রদূত আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বহুবার বৈঠক করেছেন। আওয়ামী লীগের কার্যালয়েও তিনি গেছেন। ভিসা নীতির পর আওয়ামী লীগ, বিএনপির নেতৃবৃন্দকে তিনি বাসায় দাওয়াত দিয়ে খাইয়েছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ কখনোই তাকে বন্ধু মনে করেনি। আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ সবসময় পিটার হাসের ব্যাপারে একটা প্রচ্ছন্ন নেতিবাচক অবস্থান নিয়েছিলেন।
আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করতেন যে, পিটার হাস আওয়ামী লীগ বিরোধী। বাস্তবে একজন রাষ্ট্রদূত কোন রাজনৈতিক দলের পক্ষে বা বিপক্ষে হয় না। কিন্তু পিটার হাসের কিছু কিছু কর্মকাণ্ডের কারণে আওয়ামী লীগের মধ্যে এ ধরনের ধারণার জন্ম হয়েছিল বলে আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ মনে করেন।
আওয়ামী লীগের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেছেন, রাষ্ট্রদূত হওয়ার পর ঢাকায় এসে তিনি যেভাবে বিএনপির প্রতি পক্ষপাত করেছেন সেটি প্রত্যাশিত নয়। এর ফলে পিটার হাসের কর্মকাণ্ডের জন্য বাংলাদেশ-ওয়াশিংটন সম্পর্কের টানাপোড়েন দেখা যায় হয়। এক সময় তাঁর নিরাপত্তা প্রত্যাহার করা হয়। তিনি বিতর্কিত সংগঠন মায়ের ডাকের একজন নেত্রীর বাসায় গেলে সেখানে বিরূপ পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলেন এবং নিরাপত্তার হুমকির কথা তিনি পররাষ্ট্র দপ্তরে গিয়ে জানিয়েছিলেন। শেষের দিকে এসে পিটার হাস যেন আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ হয়ে উঠেছিলেন। কাজেই আওয়ামী লীগ তাঁর বিদায়ে উল্লসিত এবং পিটার হাসের বদলির আদেশ যেদিন হোয়াইট হাউস থেকে প্রকাশিত হয়েছে তার পরেরদিন আওয়ামী লীগ এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বিবৃতি দিতে কার্পণ্য করেনি।
পিটার হাসের ঘনিষ্ঠতা ছিল বিএনপি এবং সুশীল সমাজের সাথে। বিশেষ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আমীর খসরু মাহমুদ, শামা ওবায়েদ এর সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। মঈন খানকেও তিনি মাঝে মাঝে দাওয়াত দিতেন। কিন্তু বিদায়বেলায় বিএনপিও তাকে বন্ধু ভাবতে পারছে না। বরং বিএনপির সন্দেহ পিটার হাস আসলে কার পক্ষে কাজ করেছেন। পিটার হাস কী বিএনপিকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখার জন্যই কোন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন কিনা এই প্রশ্ন বিএনপির অনেকের মধ্যে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেছেন, ২৮ অক্টোবরের পর পিটার হাসের ভূমিকা রহস্যজনক। তবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্য একজন সদস্য বলেছেন, পিটার হাস একজন রাষ্ট্রদূত মাত্র। তিনি ওয়াশিংটনের আদেশ পালন করেন। ওয়াশিংটন তাকে যেভাবে বলেছে সেভাবে তিনি কাজ করেছেন। এক্ষেত্রে তাঁর করার কোন কিছু ছিল না। কিন্তু ২৮ অক্টোবরের আগ পর্যন্ত পিটার হাসের প্রতি বিএনপির যে আবেগ এবং ভালোবাসা ছিল তা বিদায় বেলায় একেবারে নিভে গেছে।
একই অবস্থা সুশীলদের ক্ষেত্রে। যে সুশীলরা এক সময় পিটার হাসের জন্য অন্ধ ছিল। পিটার হাসকে তারা আদর্শ মনে করত, তারাও এখন পিটার হাসকে নিয়ে খুব একটা উচ্ছ্বসিত নয়। তাহলে কী বিদায়বেলায় বন্ধুহীন হয়ে যাচ্ছেন এই মার্কিন রাষ্ট্রদূত?
মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস নির্বাচন
মন্তব্য করুন
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর যারা ক্ষমতা দখল করেছিল, তাদের সময় দেশে মাথাপিছু আয় বাড়েনি। কারণ গণতন্ত্র বা গণতান্ত্রিক ধারা ছাড়া দেশ এগোতে পারে না। রাজনীতিবিদদের জনগণের কাছে ওয়াদা থাকে। আর ক্ষমতা যারা দখল করে তাদের জনগণের কাছে ওয়াদা থাকে না।
শুক্রবার (১৭ মে) রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির ২২তম দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৭৪-এ দুর্ভিক্ষের চিত্র তুলে ধরে বঙ্গবন্ধুকে দেশে-বিদেশে হেয় করা হয়েছে। দেশে ফেরার পর দেখেছি দিনের পর দিন দুর্ভিক্ষ। মানসিক ভারসাম্যহীন যে বাসন্তির ছবি দেখিয়ে এতো বড় ক্ষতি করা হলো, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সেই বাসন্তির কোনো খবর নেয়নি ক্ষমতা দখলকারীরা। বঙ্গবন্ধুর জীবন নিয়েও বাসন্তিদের কোনো পরিববর্তন আসেনি।
তিনি বলেন, স্বৈরশাসকেরা শুধু ক্ষমতা ভোগ করা বুঝতো। কে কোন ব্র্যান্ডের জিনিস পড়বে, সেসব নিয়েই ব্যস্ত থাকতো। আসলে স্বৈরশাসকেরা যখন ক্ষমতায় আসে তখন দুর্নীতিই নীতি হয়ে যায়। জিয়াউর রহমানের সময়ই খেলাপি ঋণের কালচার শুরু হয়। যা আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে ধীরে ধীরে কমাতে শুরু করে।
শেখ হাসিনা বলেন, বাবা-মা-ভাই হারিয়ে বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে দেশে ফিরেছিলাম। দেশের মানুষের মধ্যেই নিজের হারানো পরিবারকে খুঁজে পেয়েছিলাম। অর্থনীতি বলতে আমি বুঝি শুধু মানুষের কল্যাণ করতে হবে। আমার প্রতিটি কাজের ভিত্তি তৈরি করে দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
ব্যবসায়ীদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয় উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, আমরা সব সময় দেশের মানুষের কল্যাণের কথা ভাবি। আজকের বাংলাদেশ একটি পরিবর্তিত বাংলাদেশ। এই বাংলাদেশকে আরও টেনে নিয়ে যেতে হবে এবং এ দায়িত্ব আপনাদের (ব্যবসায়ীদের) নিতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশকে এগিয়ে নিতে বেসরকারি খাত উন্মুক্ত করা হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছি। গ্রাম-গঞ্জ পর্যন্ত প্রযুক্তিগত যোগাযোগ তৈরি করা হয়েছে। সমুদ্র সম্পদকে কাজে লাগাতে হবে। বাজার তৈরি করতে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়াতে হবে, কর্মসংস্থান বাড়াতে হবে। তরুণদের নিজে উদ্যোক্তা হতে উৎসাহিত করা হচ্ছে।
মন্তব্য করুন
কক্সবাজারের টেকনাফে রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘিরে আরসা ও অন্যান্য সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বিষয়ে গোয়েন্দা তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। তথ্য পেলেই তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার আরাফাত ইসলাম।
শুক্রবার (১৭ মে) রাজধানীর কারওয়ানবাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা জানান।
কমান্ডার আরাফাত ইসলাম বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মুর্তিমান আতঙ্ক সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আরসা। তারা অপহরণ, লুণ্ঠন, হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত। ইতোপূর্বে নানা অভিযানে এ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর ১১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া, বিপুল বিস্ফোরক ও অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। র্যাবের অব্যাহত নজরদারী ও তৎপরতায় আরসা নেতৃত্বশূণ্য হয়ে যায়।
কিন্তু বর্তমানে পাশের দেশের অন্তর্ঘাতমূলক ঘটনায়, আমাদের দেশে অস্ত্র ও বিস্ফোরক প্রবেশ করছে বলে তথ্য পাওয়া যায়। এমন তথ্যের ভিত্তিতেই বৃহস্পতিবার (১৬ মে) লাল পাহাড়ে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমান অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর এ তৎপরতা নিষ্ক্রিয় করার জন্য স্থানীয় থানাসহ অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে আমাদের নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে। আমাদের গোয়েন্দা তৎপরতা অব্যাহত আছে, যখনই তথ্য পাচ্ছি অভিযান পরিচালিত হচ্ছে।
মন্তব্য করুন
ভারতে লোকসভা নির্বাচন উপলক্ষে আগামী
৩ দিন বেনাপোল ও পেট্রাপোল চেকপোস্ট বন্ধ থাকবে। এ সময়ে কোন পাসপোর্টধারী যাত্রী দু'দেশের
মধ্যে যাতায়াত করতে পারবেন না। এছাড়া বাংলাদেশে সরকারি ছুটির কারণে দু'দেশের মধ্যে
আজ ১৭ মে থেকে আগামী ২১ মে পর্যন্ত ৫ দিন আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমও বন্ধ থাকবে।
ভারতে নির্বাচনের কারণে এই প্রথমবার
ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে পাসপোর্ট যাত্রীদের যাতায়াত বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে গুরুতর অসুস্থ
মেডিকেল ভিসাধারী যাত্রী সাধারণ নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকবেন।
ভারতের পেট্রাপোল ইমিগ্রেশনের সহকারী
পরিচালক গৌতম বাবু জানান, আগামী ২০ মে বনগাঁ লোকসভা আসনের নির্বাচনের কারণে বেনাপোল-পেট্রাপোল
ইমিগ্রেশন দিয়ে সীমিত আকারে যাত্রী চলাচল করতে পারবেন। শুক্রবার (১৭ মে) সন্ধ্যা ৬টার
পর থেকে ইমিগ্রেশনের কার্যক্রম সীমিত আকারে চলবে। সেক্ষেত্রে গুরুতর অসুস্থ যাত্রী
এবং বাংলাদেশে আটকে পড়া ভারতীয় নাগরিকদের জন্য শুধুমাত্র ইমিগ্রেশন খোলা থাকবে।
এদিকে, পেট্রাপোল সিএন্ডএফ এজেন্ট ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কার্তিক
চক্রবর্তী টেলিফোনে জানান, পশ্চিম বাংলার উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ আসনের লোকসভার নির্বাচন
অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২০ মে। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার মধ্যে নির্বাচন করার জন্য জেলা প্রশাসন
থেকে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এ কারণে প্রথমবারের মত আগামী ১৮ মে থেকে ২০
মে পর্য্যন্ত বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে পাসপোর্ট যাত্রীদের যাতায়াত বন্ধসহ সব ধরনের পণ্যের
আমদানি ও রপ্তানি বন্ধ থাকবে। উল্লেখিত সময়ে ভারতীয় কোন পণ্যবাহী ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশ
করবেনা, এমনকি বাংলাদেশি কোন পণ্যবাহী ট্রাক ভারতেও প্রবেশ করতে পারবে না।
বেনাপোল কাস্টমসের যুগ্ম কমিশনার শাফায়াত
হোসেন বলেন, ভারতে লোকসভা নির্বাচনের কারণে পেট্রাপোল বন্দর আগামী ৩ দিন বন্ধ থাকবে
বলে পেট্রাপোল কাস্টমস থেকে একটি নির্দেশনা পেয়েছি।
বেনাপোল বন্দর আমদানি-রপ্তানি লোকসভা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
ফরিদপুর শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস
মন্তব্য করুন
মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস বিদায় নিচ্ছেন। নতুন রাষ্ট্রদূত হিসাবে ইতোমধ্যে হোয়াইট হাউস ডেভিড মিলের নাম ঘোষণা করেছে। তাঁর রাষ্ট্রদূত হিসেবে মনোনয়ন সিনেটে অনুমোদন হলেই তিনি তাঁর বাংলাদেশ মিশন শুরু করবেন। পিটার ডি হাস বাংলাদেশে এসেছিলেন এক অনিশ্চয়তার সময়। ২০২২ সালের ১৫ মার্চ তিনি ঢাকায় আসেন। রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম ভাগে তিনি ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে স্পষ্ট কথাবার্তা বলা, সুশীল সমাজের সঙ্গে দ্রুত সম্পর্ক গড়ে ওঠার কারণে তিনি অল্প সময়ের মধ্যেই ব্যাপক আলোচিত ছিলেন। বিশেষ করে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন ইত্যাদি দাবির পাশাপাশি মানবাধিকার ইস্যুকে সামনে নিয়ে আসার কারণে তিনি বাংলাদেশের একটি অংশের কাছে প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হন।