নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৮
টানা তৃতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগ জাতীয় সংসদে দুই তৃতীয়াংশের বেশী আসনে জয়ী হলো। দশ বছর ক্ষমতায় থাকার পর আবারো পাঁচ বছর দেশ পরিচালনার ম্যান্ডেট পেয়েছে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া দলটি। সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বে এটি এক বিরল ঘটনা। অস্থির বিশ্বে মানুষ পরিবর্তনের পক্ষেই রায় দেয়। যেখানে বাংলাদেশের মতো একটি স্বল্পোন্নত দেশে একটি দলের তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা একটি বিরাট ঘটনা বটে। আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয় নিয়ে অনেক বিতর্ক হবে। অনেকে বলতেই পারেন নির্বাচনে এই ফল জনরায়ের প্রতিফলন নয়। কারচুপি কিংবা কৌশল করে আওয়ামী লীগ তার পক্ষে রায় নিয়েছে। কিন্তু কৌশলও রাজনীতির একটা অংশ। ভোটে জিততে গেলেও লাগে কৌশল। এ নিয়ে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের এতটুকু দ্বিমত নেই যে, কৌশলের লড়াইয়ে আওয়ামী লীগ তার প্রতিপক্ষকে ধরাশায়ী করেছে। কিভাবে আওয়ামী লীগ এই লড়াইয়ে জয়ী হলো, একটু বিশ্লেষণ করা যাক।
১. আওয়ামী লীগের ৩০ ডিসেম্বরের বিজয়ের পটভূমি রচিত হয়েছিল আসলে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে। ঐ নির্বাচনে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো অংশ নেয়নি। বিএনপি ঐ নির্বাচন প্রতিহতের ডাক দিয়ে ব্যর্থ হয়েছিল। সকলেই ধারণা করেছিল যে, ঐ নির্বাচন স্বল্পমেয়াদের হবে শুধু সাংবিধানিক শর্ত পূরনের জন্য। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ছিল অন্য পরিকল্পনা। তিনি ওই প্রশ্নবিদ্ধ সংসদকে (যে সংসদের ১৫৩ জন এমপি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত) পূর্ণ মেয়াদে বহাল রাখেন। এর মাধ্যমেই আসলে আওয়ামী লীগ বিরোধী দলের মনোবল এবং রাজনীতিকে নিঃস্ব করে দেয়।
২. দ্বিতীয় মেয়াদে আওয়ামী লীগ বিরোধী দলের ব্যাপারে ন্যূনতম ছাড় না দেয়ার নীতি অনুসরণ করে, বেগম জিয়ার দুই মামলায় দণ্ড, তাকে জেলে দশ মাসের বেশী সময় রাখা বিএনপিকে নিঃস্ব এবং হতবিহ্বল করে দেয়। আওয়ামী লীগের এই আগ্রাসী নীতিতে বিএনপি কোণঠাসা হয়ে পড়ে। যেখান থেকে নির্বাচনেও তারা বেরিয়ে আসতে পারেনি।
৩. বিরোধী দলকে কোণঠাসা করেই আওয়ামী লীগ প্রধান জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সংলাপের প্রস্তাবে সাড়া দেয়। বিরোধী পক্ষ ভেবেছিল সংলাপে শেখ হাসিনা রাজী হবেন না। এটাকে তারা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ব্যবহার করবে। কিন্তু শেখ হাসিনা সংলাপে রাজী হয়ে বিরোধী দলের সব পরিকল্পনা লণ্ডভণ্ড করে দেন। এই সংলাপ শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগকে এগিয়ে নেয়।
৪. সংসদ বহাল রেখে, মন্ত্রিসভা বহাল রেখে নির্বাচন ছিলো শেখ হাসিনার আরেকটি কৌশল। এ কারণেই তিনি প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে দশম জাতীয় সংসদের এমপিদেরকেই প্রাধান্য দেন। কারণ তিনি জানতেন, এমপি এবং মন্ত্রীরা স্বপদে থাকলে প্রশাসনের এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার আনুকূল্য পাবেন।
৫. সেনা মোতায়েনের বিরোধী দলের দাবী মেনে নেয় আওয়ামী লীগ। বিরোধী দল মনে করেছিল, সেনা মোতায়েন হলেই পরিস্থিতি পালটে যাবে। কিন্তু বিরোধী পক্ষ জানতো না পরিবর্তিত সেনাবাহিনী তাদের কোন কাজে আসবে না।
৬. আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটে অস্থির এরশাদকে কৌশলে নিয়ন্ত্রণ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি আরেকটি কৌশলগত সুবিধা নেন।
৭. জামাত ছাড়া ইসলাম পছন্দ দলগুলোর সঙ্গে মিত্রতা করে আওয়ামী লীগ প্রমাণ করে যে তারা ইসলাম বিরোধী নয়। বি্শেষ করে কওমী মাদ্রাসার স্বীকৃতি দিয়ে আওয়ামী সভাপতি বিএনপির ধর্মভিত্তিক শক্তিকে আলগা করে দেন।
৮. বিএনপি এবং ঐক্যফ্রন্ট আশা করেছিল যে, মনোনয়নপত্র দাখিলের পর মাঠ তারা আস্তে আস্তে দখল করবে। কিন্তু এসময় ২০১৩ এবং ২০১৪’র সন্ত্রাস ও নাশকতার মামলাগুলো নতুন করে সচল হলে বিএনপি দিশেহারা হয়ে পড়ে।
৯. আন্তর্জাতিক মহলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এটা সফলভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয় যে, বিএনপি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট জামাতকে প্রতিষ্ঠিত করছে। জামাতকে ২২টি আসনে ধানের শীষ প্রতীক দেয়ায় আওয়ামী লীগের বক্তব্য শক্ত ভিত্তি পায়।
১০. নির্বাচন প্রচারণায় বিএনপির বিভক্তির আর্তনাদের বিপরীতে আওয়ামী লীগ তারুণ্য এবং বাঙালীর ঐক্যের আহ্বান জানায়। উন্নয়ন এবং আগামীর স্বপ্নচারিতায় আওয়ামী লীগ এক জাতীয় আবহ তৈরি করে। খেলোয়াড়, শিল্পী, সংস্কৃতিকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে আওয়ামী লীগ। সাধারণ ভোটারদের মধ্যে এরকম একটি ধারণা সৃষ্টি হয় যে আওয়ামী লীগই আসছে।
এই দশ কৌশলে আওয়ামী লীগ তার প্রধান প্রতিপক্ষকে লজ্জায় ফেলে দিলো।
বাংলা ইনসাইডার/এমআর
মন্তব্য করুন
সরকারবিরোধী আগামীর আন্দোলন শুরুর আগে কর্মসূচি প্রণয়ন ও আন্দোলন পরিচালনায় শক্তিশালী লিয়াজোঁ কমিটি চায় বিএনপির মিত্ররা। তারা মনে করে, লিয়াজোঁ কমিটি না থাকায় বিগত আন্দোলন পরিচালনায় এক ধরনের সমন্বয়হীনতা ছিল।
কারণ, যুগপতের সব দল ও জোটের সঙ্গে বিএনপির পৃথক বৈঠক শেষে তাদের স্থায়ী কমিটিতে কর্মসূচি চূড়ান্ত হওয়াকে যথাযথ প্রক্রিয়া এবং আন্দোলনের সঠিক প্ল্যাটফর্ম বলে মনে করে না শরিকরা, বিশেষ করে গণতন্ত্র মঞ্চ। তাই এবার এ প্রশ্নে একটা সিরিয়াস মীমাংসা চান মঞ্চের নেতারা।
বিএনপির সঙ্গে বুধবার (১৫ মে) রাতে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে লিয়াজোঁ কমিটি গঠনের পরামর্শ দিয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা বলেন, প্রতিটি জোট ও দল থেকে একজন করে নিয়ে ১০-১২ সদস্যবিশিষ্ট একটি লিয়াজোঁ কমিটি গঠন করতে হবে। সেই লিয়াজোঁ কমিটিতে আলোচনার ভিত্তিতে আন্দোলনের কর্মসূচি প্রণীত হবে। তার আগে নিজ নিজ দল ও জোটের সিদ্ধান্ত নিয়ে সংশ্লিষ্ট নেতারা বৈঠকে উপস্থিত হবেন।
নব্বইয়ে এরশাদবিরোধী আন্দোলনসহ অতীতের আন্দোলনগুলোতে লিয়াজোঁ কমিটি এভাবে কাজ করেছে। কিন্তু বিগত আন্দোলনে এ প্রক্রিয়ায় কর্মসূচি প্রণীত হয়নি। পাঁচ-দশ মিনিট আগে মিত্রদের কর্মসূচির বিষয়ে জানানো হতো এবং কর্মসূচির সঙ্গে সহমত না হলেও সেটাই তারা ঘোষণা করতেন। বৈঠক সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।
যুগপৎ আন্দোলন পুনরুজ্জীবিত করে সরকারের পদত্যাগ ও নতুন নির্বাচনের দাবিতে ঈদুল আজহার পর মাঠে নামার পরিকল্পনা করছে বিএনপি। সেই আন্দোলনের কর্মকৌশল নির্ধারণে পরামর্শ নিতে গত রোববার থেকে মিত্রদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করছে দলটি। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর এ ধরনের বৈঠক এবারই প্রথম। এর অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার (১৬ মে) এনডিএম, বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ এবং মিয়া মসিউজ্জামান ও ফারুক হাসানের নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গণতন্ত্র মঞ্চ ছাড়াও এর আগে গত সোমবার বিএনপির সঙ্গে বৈঠকে আন্দোলনের কর্মসূচি প্রণয়নে সমন্বয়হীনতা দূরীকরণে যুগপতের সব দল ও জোট থেকে দু-একজন করে নিয়ে শক্তিশালী লিয়াজোঁ কমিটি গঠনের ওপর জোর দেন সমমনা জোটের নেতারা।
মন্তব্য করুন
শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন বিএনপি
মন্তব্য করুন
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জাতীয় প্রেস ক্লাব
মন্তব্য করুন
বিএনপি ভারত বিরোধী মার্কিন বিরোধী মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
মন্তব্য করুন
শেখ হাসিনা বাহাউদ্দিন নাছিম আওয়ামী লীগ ঢাকা-৮
মন্তব্য করুন
১৯৮১ সালের ১৭ মে। স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ সভাপতি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেছিলেন এক বৃষ্টিমুখর দিনে। সেই দিনে লাখো মানুষ মানিক মিয়া এভিনিউতে জড়ো হয়েছিল জাতির পিতার কন্যাকে দেখার জন্য। তাদের শোক এবং আবেগ ছিল হৃদয়স্পর্শী। সারা বাংলাদেশ উত্তাল হয়েছিল। জাগরণের এক গান গেয়ে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বাংলাদেশের জন্ম হওয়ার পর থেকেই প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছে। এই সরকার পুরোপুরিভাবে নতজানু সরকারে পরিণত হয়েছে। শুধু ফারাক্কা নয়, গঙ্গার পানি নয়, বাংলাদেশের ১৫৪টি নদীতে পানি দিতে তারা গড়িমসি করে যাচ্ছে। তিস্তা নদীর পানি বণ্টন, এ করছি, এ হচ্ছে এমন করে সময় শেষ করছে সরকার। এ যে ব্যর্থতা এর মূল কারণ হচ্ছে, সরকারে যারা আছে তারা পুরোপুরিভাবে একটা নতজানু সরকার।