নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ০৭ জানুয়ারী, ২০১৯
চতুর্থ বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন শেখ হাসিনা। এবার শপথ গ্রহণের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কেন যেন একাকী, নি:সঙ্গ মনে হয়েছে। হয়তো তিনি সবাইকে ছাড়িয়ে অনন্য এক উচ্চতায় চলে গেছেন। তাঁর সমকক্ষ কেউ নেই। ৯৬ এ প্রথমবার যখন তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন, তখন তিনি ছিলেন আবেগ প্রবণ। বঙ্গভবনের দরবার হলে ছিলেন তাঁর প্রয়াত স্বামী পরমাণু বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়া। ছিলেন তাঁর বোন এবং দুই সন্তান। ছিলেন তাঁর রাজনৈতিক সহযোদ্ধারা। ২০০৮ এর নির্বাচনে বিপুল বিজয়ের পর তিনি যখন দ্বিতীয় বার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন, তখনও তাঁর পাশে ছিলেন তাঁর বোন, দুই সন্তান। রাজনৈতিক সংকটে যারা তাঁর অস্তীত্ব রক্ষার আদর্শিক লড়াইয়ে সহযোদ্ধা ছিলেন প্রয়াত জিল্লুর রহমান, বেগম মতিয়া চৌধুরী, প্রয়াত সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। সে সময়ে শেখ হাসিনাকে মনে হচ্ছিল বিজয়ী বীর। যিনি সব প্রতিকূলতা জয় করে, বিজয়ের নোঙ্গরে নৌকা ভিড়িয়েছিলেন। সেদিন তাঁর দৃঢ় সংকল্প মুখায়ব এখনও চোখের সামনে ভেসে ওঠে। তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন, দীর্ঘ অমানিশা কাটিয়ে এক স্নিগ্ধ সকালের মতো পরিবেশে। সেদিন তিনি যেন বুকে চেপে থাকা এক কঠিন পাথর সরিয়ে দাঁড়ানো ক্লান্ত যোদ্ধা। কিন্তু তাকে যেতে হবে দীর্ঘপথ। সেসময় যখন তাঁর নাম উচ্চারন করা হলো তখন তিনি পাশে বসে থাকা ছোট বোন শেখ রেহানার হাত স্পর্শ করেছিলেন। এক শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি থেকে মুক্ত হওয়ার আবেগ তাঁর চেহারায় দৃশ্যমান ছিল। কিন্তু এবার শপথ অনুষ্ঠান দেখলাম এক আবেগহীন প্রধানমন্ত্রী। যেন কোনো অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হয়ে উপস্থিত হয়েছেন। একটু পরেই হয়তো বক্তব্য রাখবেন। চারবার শপথ গ্রহণের অভ্যস্ততার জন্যই কি এরকম? নাকি কঠিন দায়িত্বের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর সব আবেগ অনুভূতিকে সেলফে তুলে রেখেছেন। প্রধানমন্ত্রীত্ব তাঁর কাছে এখন কোনো প্রাপ্তি বা অর্জন নয় হয়তো, এটা হয়তো তাঁর কাছে স্রেফ দায়িত্ব। কিন্তু এবার প্রধানমন্ত্রীর চারপাশের কাছের মানুষগুলো নেই। একমাত্র বোন শেখ রেহানা ছিলেন পাশে। তার দুই সন্তান ছিলো না। ছিলো না দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অনেক সহযোদ্ধারাও। শেখ হাসিনা কি ইচ্ছে করেই নিকটজন, রাজনৈতিক ঘনিষ্ঠদের থেকে দূরে চলে গেলেন। এবার কি তিনি একজন ‘রাষ্ট্রনায়ক’ হিসেবেই দেশ পরিচালনা করবেন? যেখানে তার কাছে নিকটজন তুচ্ছ, দল তুচ্ছ, রাজনৈতিক অনুগতরা তুচ্ছ। তার কাছে বড় শুধু ‘জনগন’। জনগনের জন্য সব কিছু ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত তিনি। এমনকি নিজেকেও। তেমন এক মানসিকতা নিয়েই যেন শপথের জন্য হেটে গেলেন তিনি। তবে কি আমরা এক আবেগহীন, নির্মোহ, কঠিন হৃদয়ের শেখ হাসিনাকে পাবো আগামী পাঁচ বছর? যিনি শুধু ন্যায়-অন্যায় বিচার করবেন তুলা দণ্ডে। যিনি নীতির প্রশ্নে থাকবেন ক্ষমাহীন। লক্ষ্য অর্জনের পথে কোন বাঁধাই যিনি মানবেন না। রাজনীতিবিদদের কাছে সব সময় মানুষ প্রত্যাশা করেন তারা যেন দল থেকে বেরিয়ে সাধারণ মানুষের নেতা হন। দলের প্রধানমন্ত্রী আমরা চাই না কখনও, চাই দেশের প্রধানমন্ত্রী। যেমনটা শপথ বাক্যে উচ্চারন করা হয়। অনুরাগ, বিরাগের বশবর্তী না হয়ে---কিন্তু তেমনটা হওয়া খুবই কঠিন এবং দুরহ কাজ। এমন কাজ করতে গেলে নি:সঙ্গ হতে হয়; কাছের মানুষ ভুল বোঝে, দলের কর্মীরা দু:খ পায়। দলের প্রবীনরা ব্যাথা নিয়ে আড়াল হন। না পাওয়ার আর্তনাদ গুমরে বেড়ায় চারপাশে। তিনি এখন সমুদ্র কিংবা আকাশের মতো বিশাল অথচ একা হয়ে যান। চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রীত্ব গ্রহণ করে, তিনি কি সেই স্বেচ্ছা একাকীত্বকেই আলিঙ্গন করলেন? জনগন এবং দেশের জন্য সবকিছু উৎসর্গ করলেন?
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৮:১৫ এএম, ১৬ মে, ২০২৪
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৮:১২ এএম, ১৬ মে, ২০২৪
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৮:০৭ এএম, ১৬ মে, ২০২৪
মন্তব্য করুন
সবার জন্য স্বাস্থ্য নিশ্চিতে বিশেষ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর দোরগোড়ায় স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দেয়ার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিক অভাবনীয়, অনন্য এবং যুগান্তকারী একটি মডেল। শিশু স্বাস্থ্য, মাতৃ স্বাস্থ্য এবং কিশোরীদের স্বাস্থ্য পরিসেবা প্রদানের ক্ষেত্রে এটি একটি অসাধারণ উদ্যোগ। নবজাতকের মৃত্যু, মাতৃ মৃত্যু কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিক মডেল আজ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ অনুসরণ শুরু করেছে। গত বছর ১৭ মে কমিউনিটি ক্লিনিক ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিসিয়েটিভ’ হিসেবে জাতিসংঘের স্বীকৃতি পায়। ‘কমিউনিটি ক্লিনিক’ সারা বিশ্বের প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা প্রত্যাশী জনগণের জন্য ‘আলোক বর্তিকা’।
আজকে আমরা ১৭ মে নিয়ে কথা বলছি। যেদিন বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেছিলেন। আবার গত বছর এই দিনে তাঁর চিন্তা প্রসূত কমিউনিটি ক্লিনিককে জাতিসংঘ ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। আজকে আমরা যে ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বলছি, উন্নয়নশীল বাংলাদেশের কথা বলছি, যে স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন আমরা দেখছি, একদিন উন্নত বাংলাদেশ হব বলে স্বপ্ন দেখছি এই সবকিছু শেখ হাসিনার স্বপ্ন, শেখ হাসিনার ইনিশিয়েটিভ। বঙ্গবন্ধু স্বপ্নের বাংলাদেশকে এগিয়ে নিচ্ছেন তাঁরই সুযোগ্য কন্যা আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
১৭৮১ সালে পলাশি যুদ্ধে ইতিহাসের ঘৃণিত সেনাপতি মির্জাফরের বিশ্বাসঘাতকতায় নবাব সিরাজ উদ্দৌলার বিদায়ের মধ্য দিয়ে ২০০ বছরের গোলামী আমাদের ললাটে এসেছিল। ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ স্বাধীন হলেও বাঙালী এবং বাংলাদেশ স্বাধীনতা পায়নি। যার পটভূমিতে বীরদর্পে আবির্ভূত হন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭১ থেকে ৭৫’ বাঙালি জাতির ভাগ্যাকাশে স্বাধীনতার লাল পতাকা উড়েছিল বাঙালী আশায় বুক বেধেছিল।
পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বিয়োগান্তের ঘটনায় জাতি ছিল দিক নির্দেশনাহীন। নারকীয় এই ঘটনায় জনগণ হয়ে পড়েন দিশেহারা। প্রতিবাদ, প্রতিরোধ করার কোন শক্তি সাহস ছিল না। দলের অনেক বড় বড় নেতাও ছিলেন কিংকর্তব্যবিমূঢ়। ধানমন্ডির ৩২ বাড়ি ছিল কবরের নীরবতা। সমগ্র জাতি তখন অন্ধকারে। সামরিক বুটে পিষ্ঠ গণতন্ত্র। নির্বাসনে সংবিধান আর মানুষের মৌলিক অধিকার। বাক স্বাধীনতা বলতে কিছুই ছিল না। এমনকি বঙ্গবন্ধু নাম উচ্চারণ ছিল নিষিদ্ধ।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে দেশের মৌলিক চরিত্রকেই বদলে ফেলা হয়। বিশেষ করে পাকিস্তানি ধারায় সামরিক শাসনের সংস্কৃতির প্রবর্তন ঘটে দেশে। সাম্প্রদায়িকতা ফিরে আসে রাজনীতি, প্রশাসন, শিক্ষা, সংস্কৃতিসহ সমাজের বিভিন্ন স্তরে। একের পর এক স্বপ্নভঙ্গের ঘটনা ঘটতে থাকে দেশে। বাঙালি জাতির জীবনে জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসে ঘোর অমানিশার অন্ধকার। ঠিক এমন প্রতিকূল সময় ১৯৮১ সালের ১৭ মে সামরিক শাসকের রক্তচক্ষু ও নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে বঙ্গবন্ধুর রক্তস্নাত মাতৃভূমিতে ফিরে আসেন বাঙালির মুক্তির মহানায়কের যোগ্য উত্তরসূরি জননেত্রী শেখ হাসিনা।