নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ১১ জানুয়ারী, ২০১৯
উপজেলা নির্বাচনকে সামনে রেখে ব্যাপক সংখ্যক স্থানীয় পর্যায়ের বিএনপির নেতা অন্যদলে যোগ দিবেন বলে বিভিন্ন সূত্রে খবর পাওয়া গেছে। বিএনপির সিনিয়র নেতারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, বিএনপি উপজেলা নির্বাচনে যাবে না। কিন্তু বিএনপির মাঠ পর্যায়ের অনেক নেতাই উপজেলা নির্বাচনে যেতে আগ্রহী। বিশেষ করে, যারা এখন উপজেলা চেয়ারম্যান বা ভাইস চেয়ারম্যান রয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় কাজ করছেন। তারা উপজেলা নির্বাচনে যেতে আগ্রহী। যেহেতু বিএনপি উপজেলা নির্বাচনে যাবে না বলে সিদ্ধান্ত মোটামুটি স্পষ্ট হয়েছে। সেহেতু এই সমস্ত নেতারা এখন দুটি দলের সঙ্গে যোগাযোগ তৈরী করেছে বলে জানা গেছে।
এই দুটি দল হলো বিকল্প ধারা এবং জাতীয় পার্টি। বিকল্প ধারার অন্যতম নেতা মাহি বি চৌধুরী বাংলা ইনসাইডারকে বলেছেন, ‘আমরা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবো। আমরা উপজেলা নির্বাচনে ভালো ফলাফল করবো বলে আশাবাদি’। বিএনপির অনেকেই এবার উপজেলা নির্বাচনে বিকল্প ধারায় যোগ দিতে পারবে বলে শোনা যাচ্ছে। এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে অনেকের যোগাযোগ হচ্ছে। কারণ আপনারা দেখেছেন নির্বাচনের আগেও অনেক প্রবীন এবং ভালো নেতা বিএনপি ছেড়ে বিকল্প ধারায় যোগ দিয়েছেন। আমরা উপজেলা নির্বাচন যেহেতু খুব ভালোভাবে করবো। আমরা তৃনমূলে একটি শক্তিশালি অবস্থান গড়তে চাই। বিএনপির যে সমস্ত প্রার্থী জনপ্রিয় যোগ্য এবং ভালো প্রার্থী, তাদের দরজা বিকল্প ধারার জন্য উম্মুক্ত রয়েছে।’
একাধিক সূত্রে জানা গেছে যে, বিভিন্ন এলাকায় উপজেলা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত সম্ভব্য প্রার্থীরা অধ্যাপক বি চৌধুরি এবং মাহি বি চৌধুরির সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন। বিএনপি যদি নির্বাচন না করে তাহলে তারা উপজেলা নির্বাচনের আগে আগে বিকল্প ধারায় যোগ দিতে আগ্রহী।
একইভাবে কিছু নেতাকর্মী জাতীয় পার্টির সঙ্গেও যোগাযোগ করছেন বলে জানা গেছে। যোগাযোগ করা হলে জাতীয় পার্টির কো চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেন,‘জাতীয় পার্টি উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে এবং বরাবরই জাতীয় পার্টি স্থানীয় নির্বাচনে ভালো ফলাফল করে। এবার নির্বাচনের জন্য আমরা প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছি। ’ তার কাছেও জানতে চাওয়া হয়েছিল বিএনপি থেকে কেউ যোগ দিবেন কিনা। তিনি বলেন যে, ‘এটা এখনো আমরা বলতে পারি না। বিএনপি যদি নির্বাচনে না যায়, তাহলে অনেকেই বিভিন্ন দলে যোগ দিতে পারেন। সেখানে আমাদের সঙ্গে যাদের সামঞ্জস্য হয়। আমাদের সঙ্গে যাদের বনিবনা হবে। তারা নিশ্চয়ই জাতীয় পার্টিতে যোগ দিতে পারেন। জাতীয় পার্টির নির্বাচনে একটি শক্তিশালি প্রার্থীতার ক্ষেত্রে বিএনপি বা অন্যকোন দল থেকে যারা আসতে চাইবে, নিশ্চয়ই তাদের বিবেচনা করবে।’
বিএনপির একাধিক সূত্রে জানা গেছে যে, ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপির পক্ষে একটি বড় যুক্তি দেখানো হয়েছিল। যদি তারা নির্বাচনে না যায়। তাহলে বিএনপির অনেক প্রার্থী বিকল্প ধারা বা অন্যকোন দলে যোগ দিতে পারে। সেই যুক্তিতেই তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিল। এবার উপজেলা নির্বাচনের আগে তারা বলেছে যে, এই সরকারের অধীনে কোন নির্বাচন নয়। তখন যারা উপজেলা মনোনয়ন প্রত্যাশি বিভিন্ন এলাকায় জনপ্রিয় এবং দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন এবং যারা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন পাননি। তারা অন্যদল খুঁজছে। ইতিমধ্যে তারা যোগাযোগ শুরু করেছে।’ বিএনপির ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র বলছে, ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যাপক মনোনয়ন বাণিজ্য হয়েছে। তখন থেকেই বিভিন্ন এলাকায় সম্ভাব্য প্রার্থীরা হতাশ এবং যারা নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন তারা দলে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। এরাই এখন উপজেলা নির্বাচনে বিকল্প ধারা কিংবা জাতীয় পার্টির মতো অন্যান্য দলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে নির্বাচন করার ব্যাপারে জোর তৎপরতা শুরু করেছে। উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করুক না করুক, এই নির্বাচন ঘিরে যে বিএনপিতে একটা ভাঙ্গন হচ্ছে। তা নিশ্চিত।’
যোগাযোগ করা হলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন , ‘আমরা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছি না এটা নিশ্চিত।’ তবে তিনি বলেন যে, ‘কেউ যদি দল ত্যাগ করে বা দলের কথা অমান্য করে। শুধু নির্বাচনের লোভে চলে যায়। সেরকম লোককে বিএনপিতে দরকার নেই।’
মন্তব্য করুন
ডোনাল্ড লু বিএনপি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ চীন সফর ভারত যুক্তরাষ্ট্র
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছিল বিএনপির আশা ভরসার কেন্দ্রস্থল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করবে; মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নির্দলীয়, নিরপেক্ষ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায়ে সরকারকে বাধ্য করবে; মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কারণ সরকার শেষ পর্যন্ত নির্বাচন করতে পারবে না- এমন বক্তব্যগুলো বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচনের আগে বহুল প্রচারিত ছিল। বিএনপির সব নেতারা প্রকাশ্যেই এ কথা বলত।
বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যখন র্যাবের উপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, বাংলাদেশকে গণতন্ত্র সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানায় না তখন বিএনপি নেতারা উল্লাসে ফেটে পড়েছিলেন। তারা দলীয় কার্যালয়ে মিষ্টিমুখের ব্যবস্থাও করেছিলেন।
আবার ডোনাল্ড লু নির্বাচনের আগে যখন বাংলাদেশ সফর করেছিলেন এবং ভিসা নীতি প্রয়োগ করেছিলেন তখন বিএনপি নেতাদের প্রকাশ্যে মার্কিন বন্দনা করতে দেখা গেছে। ২৮ অক্টোবরের আগ পর্যন্ত প্রায় প্রতিদিনই মার্কিন দূতাবাসে বা মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসের বাসভবনে বিএনপির নেতাদের আনাগোনা ছিল। তারা সেখানে চা চক্রে মিলিত হয়েছেন, নৈশভোজে মিলিত হয়েছেন এবং বিভিন্ন রকমের শলাপরামর্শ করেছেন।
পিটার ডি হাস গত বছরের ১০ অক্টোবর বিএনপি যখন সমাবেশ করতে পারেনি তখনও একতরফা বিবৃতি দিয়েছিলেন। এছাড়াও তিনি বিতর্কিত সংগঠন মায়ের ডাকের এক নেতার বাসায় গিয়েছিলেন এবং সেখানে তিনি বিএনপির প্রতি এক ধরনের সহানুভূতি জানিয়েছিলেন। এভাবেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির উপর এক ধরনের প্রচ্ছন্ন সমর্থন এবং সহানুভূতি দেখিয়েছিল।
অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই সহানুভূতি এবং পরোক্ষ সমর্থনের কারণেই বিএনপির আন্দোলনের পালে হাওয়া লেগেছিল। নেতাকর্মীদের মধ্যে একটি চাঙ্গা ভাব তৈরি হয়েছিল। কিন্তু ২৮ অক্টোবরের পর থেকে পরিস্থিতি পাল্টে যেতে শুরু করে। যদিও ২৮ অক্টোবরের পর এই ডোনাল্ড লু শর্তহীন সংলাপের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন এবং এই আহ্বানের চিঠি নিয়ে পিটার ডি হাস তিনটি দলের নেতাদের কাছে গিয়েছিলেন এবং একটি সংলাপ আয়োজনের শেষ চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সেই সংলাপ আয়োজনে বিএনপি বা আওয়ামী লীগ কেউই সাড়া দেয়নি।
এখন নির্বাচন সমাপ্ত হয়েছে এবং ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর ১১ জানুয়ারি নতুন সরকার গঠিত হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচনকে ত্রুটিপূর্ণ বলার পরও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়া এবং নতুন সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের বার্তা দিয়েছেন। ডোনাল্ড লু’র আগে আফরিন আক্তার নির্বাচনের পরে বাংলাদেশ সফর করেছিলেন এবং সেই সময় তিনি হোটেল ওয়েস্টিনে বিএনপি নেতৃবৃন্দের সাথে সাক্ষাৎ করেছিলেন। তখন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং শামা ওবায়েদ আফরিন আক্তারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। যদিও সেই সাক্ষাতের পর তারা কোনও কিছুই সাংবাদিকদেরকে জানাননি। কিন্তু এবার ডোনাল্ড লু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেননি। আর এটি বিএনপির মধ্যে হতাশা সৃষ্টি করেছে।
বিএনপি মনে করছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন তাদেরকে আর আগের মতো গুরুত্ব দিচ্ছেন না, পাত্তা দিচ্ছে না। বরং সরকারের সঙ্গে সম্পর্কের কারণে বিএনপিকে এড়িয়ে যাচ্ছে। এ নিয়ে বিএনপির মধ্যে হতাশা তৈরি হয়েছে। বিএনপি নেতারা দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ, শামা ওবায়েদ, তাবিথ আউয়ালসহ যারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন এবং মার্কিন দূতাবাসে যাদের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে তাদেরকে দুষছেন। তারা মনে করছেন যে, বিএনপির মধ্যেই সমস্যা রয়েছে। বিএনপির নেতারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে পারেননি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বিএনপির বক্তব্যগুলো তারা সঠিকভাবে ও যথাযথভাবে উপস্থাপন করতে পারেননি। আর একারণেই ডোনাল্ড লু’র সফরের পর বিএনপির মধ্যে চলছে এক ধরনের হতাশা।
ডোনাল্ড লু বাংলাদেশ রাজনীতি বিএনপি
মন্তব্য করুন
আগামী ২৩ জুন আওয়ামী লীগের ৭৫ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পর্যন্ত আওয়ামী লীগ দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গকারী, দলের ভেতর সুবিধাবাদী, লুটেরা এবং দলের নাম ভাঙিয়ে বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করবে না। কিন্তু ২৩ জুনের পর আওয়ামী লীগের ক্র্যাশ প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ক্র্যাকডাউন হবে দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গকারী এবং দলের সুনাম নষ্টকারীদের বিরুদ্ধে। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ব্যাপারে শূন্য সহিষ্ণুতা নীতি অনুসরণ করবে। আওয়ামী লীগের একটি দায়িত্বশীল সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
আওয়ামী লীগ এবং তার আদর্শিক জোট ১৪ দলের নেতাদের চীন সফরে হিড়িক পড়েছে। আওয়ামী লীগ এবং তার সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর এই চীন সফরকে ঘিরে কূটনৈতিক অঙ্গনে চলছে নানামুখী আলাপ আলোচনা। ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উভয় দেশই ১৪ দল এবং আওয়ামী লীগের নেতাদের চীন সফরের ব্যাপারে দৃষ্টি রাখছেন। তবে তারা এই বিষয় নিয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হচ্ছেন না। বিষয়টি তারা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিষয় হিসেবেই মনে করছেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছিল বিএনপির আশা ভরসার কেন্দ্রস্থল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করবে; মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নির্দলীয়, নিরপেক্ষ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায়ে সরকারকে বাধ্য করবে; মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কারণ সরকার শেষ পর্যন্ত নির্বাচন করতে পারবে না- এমন বক্তব্যগুলো বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচনের আগে বহুল প্রচারিত ছিল। বিএনপির সব নেতারা প্রকাশ্যেই এ কথা বলত।