নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ২২ জানুয়ারী, ২০১৯
‘আওয়ামী লীগ এবং সরকারের সবচেয়ে ক্ষমতাধর মানুষ নিঃসন্দেহে শেখ হাসিনা। কিন্তু আওয়ামী লীগ এবং সরকারের দ্বিতীয় ক্ষমতাধর ব্যক্তিটি কে? এ নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে ঠাণ্ডা লড়ায়ের খবর পাওয়া যাচ্ছে। লড়াইটা ক্রমশঃ জমে উঠেছে। আর এই লড়াইটা হচ্ছে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আর প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ. টি. ইমামের মধ্যে। আওয়ামী লীগের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র এই ঠাণ্ডা লড়াইয়ের খবর দিচ্ছে।
আওয়ামী রাজনীতিতে এই মুহূর্তে নিঃসন্দেহে দ্বিতীয় ক্ষমতাধর ব্যক্তি হলেন ওবায়দুল কাদের। তিনি দলের সাধারণ সম্পাদক। নির্বাচনের পর নতুন মন্ত্রিসভায় যখন সিনিয়র নেতাদের সাইড লাইনে বসিয়ে দেয়া হয়েছে তখন দলে তার প্রভাব অনেক বেড়েছে। কাদের প্রধানমন্ত্রীর আস্থাভাজন হিসেবেই পরিচিত। দলের বাইরে তাকে নিয়ে যতো সমালোচনাই হোক না কেন, দলের ভেতর তিনি পরিশ্রমী হিসেবে পরিচিত। সারাক্ষণই নেতা-কর্মীদের সময় দেন। তৃণমূলের সঙ্গে তার যোগাযোগ প্রায় সার্বক্ষণিক। প্রতিপক্ষের সমালোচনার জবাব দিতে তিনি এক মুহূর্ত বিলম্ব করেন না। জাতীয় সংসদের মনোনয়ন এবং মন্ত্রিসভা গঠনে তার কিছুটা হলেও প্রভাব ছিলো বলে আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠরা মনে করেন। নতুন যে মন্ত্রিসভা তাতে প্রধানমন্ত্রীর পরই তার প্রভাব। ইদানিং অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের নতুন মন্ত্রীদের তিনি পরামর্শ, উপদেশও দিচ্ছেন।
অন্যদিকে, টানা তৃতীয় দফা উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন হোসেন তৌসিফ ইমাম। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের বিপুল বিজয়ের পর তিনি হয়ে উঠেছিলেন দ্বিতীয় ক্ষমতাধর ব্যক্তি। কিন্তু ২০১৪ তে নতুন মন্ত্রিসভার পর তার ‘ক্ষমতা’ দৃশ্যত কমে যায়। জনপ্রশাসন উপদেষ্টা থেকে তিনি ‘রাজনৈতিক উপদেষ্টা’ হন। ২০০৮ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত আমলাতন্ত্রের চাবি এইচ. টি. ইমামের কাছেই ছিলো বলে অনেকেই মনে করেন। ২০১৪ তে আমলা নিয়ন্ত্রণ হারান এইচ. টি. ইমাম। যদিও তিনি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য কিন্তু দলে তার উল্লেখ করার মতো প্রভাব ছিলো না কখনোই।
প্রশাসনেও দ্বিতীয় মেয়াদে প্রতিপত্তি হারান এই সাবেক জাদরেল আমলা। একরকম অবসর জীবনযাপনই শুরু করেছিলেন হেভিওয়েট মন্ত্রীদের কাছে কোনঠাসা এই উপদেষ্টা। কিন্তু ২০১৭’র শেষভাগে আবার আওয়ামী লীগ সভাপতির নৈকট্য পান ইমাম। নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ার হয়ে আবার জ্বলে ওঠেন এই সাবেক আমলা। নির্বাচনের পর প্রশাসনের কলকাঠিতে আবার তার হাতে পড়েছে বলে খবর পাওয়া যায়। গুরুত্বপূর্ণ রদবদলে তার প্রভাবের কথাও এখন সচিবালয়ে গোপন নয়। আমলারাও পদোন্নতি, ভালো পোস্টিং এর জন্য তার কাছে নতুন করে ধর্না দিচ্ছেন বলেও খবর পাওয়া গেছে।
জানা যায়, মন্ত্রীদের পিএস নিয়োগের ক্ষেত্রে তালিকা প্রণয়নে এইচ টি ইমাম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। কোন মন্ত্রীর সঙ্গে কোন সচিব থাকবে এ বিষয়েও তিনি প্রধানমন্ত্রীকে গুরুত্বপূর্ণ ‘উপদেশ’ দিচ্ছেন বলেও বিভিন্ন সূত্র জানায়। এইচ টি ইমাম চাইছেন সরকার পরিচালনায় আমলা নির্ভরতা বাড়ুক- এমন গুঞ্জন শোনা যায় আওয়ামী পাড়ায়। আর ওবায়দুল কাদের সরকারের রাজনৈতিক কর্তৃত্ব বাড়ানোর পক্ষে। কিন্তু রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এসব নিয়ে দুই নেতার লড়াই নেই, যেটা আছে তা স্রেফ ভিন্নমত। লড়াইটা আসলে কে প্রধানমন্ত্রীর কতো ঘনিষ্ঠ হবেন। প্রধানমন্ত্রীর গুরুত্ব এবং আস্থা কে বেশি পাবেন তা নিয়ে।
আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো বলছে, ওবায়দুল কাদের এখন রাজনীতির বাইরে প্রশাসনের ব্যাপারেও তার মতামত দিচ্ছেন। কোন আমলা সরকারের জন্য ভালো কাজ করবে সে ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর কাছে খোলামেলা নিজের মতামত তুলে ধরছেন। অন্যদিকে, এইচ টি ইমামও ইদানিং রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে কথাবার্তা বলছেন। মহিলা এমপি কিংবা উপজেলা চেয়ারম্যান মনোনয়ন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা মাথা ঘামাচ্ছেন বলেই শোনা যায়। যেটা একটিভ আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক পছন্দ করছেন না। আবার সাধারণ সম্পাদকের প্রশাসনে হস্তক্ষেপও ঝানু আমলা ইমামের জন্য অস্বস্তি তৈরি করছে বলেই কাছের মানুষরা বলছে। ফলে তাদের মধ্যে শুরু হয়ে গেছে ঠাণ্ডা লড়াই। দিন যতো যাবে এই লড়াই ততোই দৃশ্যমান হবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। যে লড়াইয়ের একটা ছোট্ট ঝলক আমরা দেখলাম ক’দিন আগেই। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বললেন, ‘প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন।’ অন্যদিকে এইচ টি ইমাম জানালেন, ‘প্রধানমন্ত্রী সংলাপ করবেন।’ যদিও সংলাপ বা শুভেচ্ছা কোনটাই চূড়ান্ত হয়নি এখনো।
বাংলা ইনসাইডার/এমআর
মন্তব্য করুন
কাউন্সিল বিএনপি তারেক জিয়া মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বেগম খালেদা জিয়া
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
চার ধাপে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এ পর্যন্ত (তৃতীয় ধাপ) ২০৪ জনকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় তাদের বহিষ্কার করা হয়।
এরমধ্যে তৃতীয় ধাপের নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় তৃণমূলের ৫৫ নেতাকে বহিষ্কার করে বিএনপি। আর প্রথম ধাপে ভোটের জন্য ৮০ জন, দ্বিতীয় ধাপে ৬৯ জনকে বহিষ্কার করে দলটি।
বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে উপজেলাসহ কোনো নির্বাচনে অংশ না নিচ্ছে না বিএনপি। গত ১৬ এপ্রিল দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, শেখ হাসিনার সরকার ও তার আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন, বেসামরিক ও পুলিশ প্রশাসন একটি অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করতে পারে না। অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিবেশ নেই। তাই উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেবে না দল।
দেশে চার ধাপে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তফসিল অনুযায়ী, গত ৮ মে প্রথম ধাপে ১৩৯টি উপজেলায় ভোট গ্রহণ হয়। এই ধাপের নির্বাচনে বিএনপির বহিষ্কৃত ৭ জন চেয়ারম্যান পদে, ৩ জন ভাইস চেয়ারম্যান পদে জয়লাভ করে বলেও জানা যায়।
দ্বিতীয় ধাপের ১৬১টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের ভোট গ্রহণ করা হবে ২১ মে। তৃতীয় ধাপে ১১২টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচন ২৯ মে অনুষ্ঠিত হবে। চতুর্থ ধাপের উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ৫ জুন।
মন্তব্য করুন
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরে যেতে পারেন এমন গুঞ্জন রয়েছে। তিনি জেল থেকে বেরিয়ে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে মহাসচিবের দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। বেগম খালেদা জিয়া এই বিষয়টি নিয়ে তাকে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন। তবে তারেক জিয়া এ বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া দেননি বলে জানা গিয়েছে। বরং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যদেরকে তারেক জিয়া জানিয়েছেন, কাউন্সিলের আগে বিএনপিতে নেতৃত্বের পরিবর্তন নয়। তবে বিএনপির কাউন্সিল কবে, কীভাবে হবে- এ সম্পর্কে কোন বিস্তারিত তথ্য জানা যায়নি।
সরকারের বিরুদ্ধে নতুন করে আন্দোলন শুরু করার লক্ষ্যে প্রস্তুতি গ্রহণ করছে দীর্ঘ দিন ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি। তারা সাম্প্রতিক সময়ে আবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক শুরু করেছে। তবে এসব বৈঠকে যুগপৎ আন্দোলনের কথা বলা হলেও বিএনপি এখন পর্যন্ত সরকার বিরোধী কোন জোট করতে রাজি নয়। ২০ দলীয় জোট আনুষ্ঠানিকভাবে ভেঙে যাওয়ার পর বিএনপি এখন পর্যন্ত জোটগত ভাবে কোন আন্দোলন করেনি। তবে বিভিন্ন সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তারা সম্পর্ক রেখেছে। ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত এই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তারা যুগপৎ আন্দোলন করেছিল। এখন আবার নতুন করে যুগপৎ আন্দোলন শুরু করার জন্য বিএনপির পক্ষ থেকে এই সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে যোগাযোগ করা হচ্ছে। তবে রাজনৈতিক দলগুলো বিএনপির ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব দেখাচ্ছে না।