নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ০১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯
যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয় পাওয়া তারেক জিয়াকে দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ব্রিটিশ সরকারের কাছে বাংলাদেশ সরকার তারেককে ফিরিয়ে আনার যে আবেদন করেছিল, তাঁর প্রেক্ষিতে যুক্তরাজ্য সরকার কিছু প্রশ্নের উত্তর জানতে চেয়েছে। কিছু বিষয়ে ব্যাখ্যাও চেয়েছে। এরমধ্যে প্রধান বিষয় হলো, বাংলাদেশে ফেরত গেলে তারেক জিয়ার জীবনহানির কোন আশঙ্কা আছে কিনা।
ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে বাংলাদেশ মিশনকে লেখা এক চিঠিতে এই বিষয়ে বাংলাদেশের ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, তারেক জিয়া বাংলাদেশে ফেরত গেলে কোনো মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ হওয়ার সম্ভাবনা আছে কিনা? একটি মামলায় নিম্ন আদালতে তারেক জিয়াকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। উচ্চ আদালতে কি তা মৃত্যুদণ্ড হতে পারে কিনা? একই চিঠিতে বলা হয়েছে তারেক জিয়ার বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হবার সম্ভাবনা রয়েছে কিনা? চিঠিতে বলা হয়েছে, দেশে ফিরলে তারেক জিয়াকে ন্যায়বিচার এবং আত্মপক্ষ সমর্থনের পূর্ণ সুযোগ দেয়া হবে কিনা?
কূটনীতিক সূত্রে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, যুক্তরাজ্য নীতিগতভাবে তারেক জিয়াকে দেশে ফিরিয়ে দিতে রাজি। এখানে একমাত্র বাধা হলো ‘মানবাধিকার সংক্রান্ত’। ব্রিটেন ‘মৃত্যুদন্ড’কে মানবাধিকার লঙ্ঘন মনে করে। রাজনৈতিক আশ্রয় প্রাপ্ত হোক না হোক এমনকি কোন প্রমানীত অপরাধীরও যদি মৃত্যুদন্ডের শঙ্কা থাকে তখন তাঁর জীবনের নিরাপত্তা প্রদান, ব্রিটিশ মানবাধিকার নীতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য। তাই তারেক জিয়াকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে দেওয়ার আগে ব্রিটিশ সরকার তার জীবনের গ্যারান্টি চায়। কারণ তারেক জিয়া দেশে ফেরত দেয়ার বিপক্ষে তাঁর লিখিত বক্তব্যে জীবন হানির আশংকাকে সবথেকে বড় সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তারেক জিয়া ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় নিম্ন আদালত থেকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা পেয়েছেন। তারেক জিয়া বাংলাদেশে ফেরত না যাওয়ার পক্ষে যুক্তিতে বলেছে, উচ্চ আদালতে তাঁর এই সাজা বাড়িয়ে তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হবে। এরপক্ষে তারেক দুটি মামলাকে উদাহরণ হিসেবে দিয়েছেন। একটি তাঁর বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং মামলা। যেখানে নিম্ন আদালত তাঁকে নির্দোষ ঘোষণা করেছিল। উচ্চ আদালত তাঁকে সাত বছরের দণ্ড দেয়। তারেক আত্মপক্ষ সমর্থনে দ্বিতীয় উদাহরণ দিয়েছে তাঁর মা বেগম খালেদা জিয়ার দণ্ড প্রসঙ্গ। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বেগম জিয়াকে যে দণ্ড দিয়েছিল উচ্চ আদালত তা বাড়িয়ে দেয়। তারেক জিয়া তাঁর আত্মপক্ষ সমর্থনে অভিযোগ করেছে যে, উচ্চ আদালত সরকার নিয়ন্ত্রিত। দেশে বিচার বিভাগের ন্যূনতম স্বাধীনতা নেই। এ প্রসঙ্গে তারেক সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার উদাহরণ দিয়েছেন। ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জীবনহানির ন্যূনতম সম্ভাবণা থাকলেও ব্রিটিশ সরকার তারেক জিয়াকে দেশে ফেরত পাঠাবে না।
বাংলাদেশের পররাষ্ট দপ্তর বলছে, ব্রিটিশ সরকারের কাছ থেকে এ ব্যাপারে কোনো আনুষ্ঠানিক চিঠি তারা পায়নি। পাওয়ার পর তাঁদের প্রশ্নগুলো বিবেচনা করা হবে।
বাংলা ইনসাইডার
মন্তব্য করুন
ডোনাল্ড লু বিএনপি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ চীন সফর ভারত যুক্তরাষ্ট্র
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছিল বিএনপির আশা ভরসার কেন্দ্রস্থল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করবে; মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নির্দলীয়, নিরপেক্ষ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায়ে সরকারকে বাধ্য করবে; মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কারণ সরকার শেষ পর্যন্ত নির্বাচন করতে পারবে না- এমন বক্তব্যগুলো বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচনের আগে বহুল প্রচারিত ছিল। বিএনপির সব নেতারা প্রকাশ্যেই এ কথা বলত।
বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যখন র্যাবের উপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, বাংলাদেশকে গণতন্ত্র সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানায় না তখন বিএনপি নেতারা উল্লাসে ফেটে পড়েছিলেন। তারা দলীয় কার্যালয়ে মিষ্টিমুখের ব্যবস্থাও করেছিলেন।
আবার ডোনাল্ড লু নির্বাচনের আগে যখন বাংলাদেশ সফর করেছিলেন এবং ভিসা নীতি প্রয়োগ করেছিলেন তখন বিএনপি নেতাদের প্রকাশ্যে মার্কিন বন্দনা করতে দেখা গেছে। ২৮ অক্টোবরের আগ পর্যন্ত প্রায় প্রতিদিনই মার্কিন দূতাবাসে বা মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসের বাসভবনে বিএনপির নেতাদের আনাগোনা ছিল। তারা সেখানে চা চক্রে মিলিত হয়েছেন, নৈশভোজে মিলিত হয়েছেন এবং বিভিন্ন রকমের শলাপরামর্শ করেছেন।
পিটার ডি হাস গত বছরের ১০ অক্টোবর বিএনপি যখন সমাবেশ করতে পারেনি তখনও একতরফা বিবৃতি দিয়েছিলেন। এছাড়াও তিনি বিতর্কিত সংগঠন মায়ের ডাকের এক নেতার বাসায় গিয়েছিলেন এবং সেখানে তিনি বিএনপির প্রতি এক ধরনের সহানুভূতি জানিয়েছিলেন। এভাবেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির উপর এক ধরনের প্রচ্ছন্ন সমর্থন এবং সহানুভূতি দেখিয়েছিল।
অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই সহানুভূতি এবং পরোক্ষ সমর্থনের কারণেই বিএনপির আন্দোলনের পালে হাওয়া লেগেছিল। নেতাকর্মীদের মধ্যে একটি চাঙ্গা ভাব তৈরি হয়েছিল। কিন্তু ২৮ অক্টোবরের পর থেকে পরিস্থিতি পাল্টে যেতে শুরু করে। যদিও ২৮ অক্টোবরের পর এই ডোনাল্ড লু শর্তহীন সংলাপের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন এবং এই আহ্বানের চিঠি নিয়ে পিটার ডি হাস তিনটি দলের নেতাদের কাছে গিয়েছিলেন এবং একটি সংলাপ আয়োজনের শেষ চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সেই সংলাপ আয়োজনে বিএনপি বা আওয়ামী লীগ কেউই সাড়া দেয়নি।
এখন নির্বাচন সমাপ্ত হয়েছে এবং ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর ১১ জানুয়ারি নতুন সরকার গঠিত হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচনকে ত্রুটিপূর্ণ বলার পরও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়া এবং নতুন সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের বার্তা দিয়েছেন। ডোনাল্ড লু’র আগে আফরিন আক্তার নির্বাচনের পরে বাংলাদেশ সফর করেছিলেন এবং সেই সময় তিনি হোটেল ওয়েস্টিনে বিএনপি নেতৃবৃন্দের সাথে সাক্ষাৎ করেছিলেন। তখন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং শামা ওবায়েদ আফরিন আক্তারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। যদিও সেই সাক্ষাতের পর তারা কোনও কিছুই সাংবাদিকদেরকে জানাননি। কিন্তু এবার ডোনাল্ড লু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেননি। আর এটি বিএনপির মধ্যে হতাশা সৃষ্টি করেছে।
বিএনপি মনে করছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন তাদেরকে আর আগের মতো গুরুত্ব দিচ্ছেন না, পাত্তা দিচ্ছে না। বরং সরকারের সঙ্গে সম্পর্কের কারণে বিএনপিকে এড়িয়ে যাচ্ছে। এ নিয়ে বিএনপির মধ্যে হতাশা তৈরি হয়েছে। বিএনপি নেতারা দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ, শামা ওবায়েদ, তাবিথ আউয়ালসহ যারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন এবং মার্কিন দূতাবাসে যাদের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে তাদেরকে দুষছেন। তারা মনে করছেন যে, বিএনপির মধ্যেই সমস্যা রয়েছে। বিএনপির নেতারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে পারেননি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বিএনপির বক্তব্যগুলো তারা সঠিকভাবে ও যথাযথভাবে উপস্থাপন করতে পারেননি। আর একারণেই ডোনাল্ড লু’র সফরের পর বিএনপির মধ্যে চলছে এক ধরনের হতাশা।
ডোনাল্ড লু বাংলাদেশ রাজনীতি বিএনপি
মন্তব্য করুন
আগামী ২৩ জুন আওয়ামী লীগের ৭৫ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পর্যন্ত আওয়ামী লীগ দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গকারী, দলের ভেতর সুবিধাবাদী, লুটেরা এবং দলের নাম ভাঙিয়ে বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করবে না। কিন্তু ২৩ জুনের পর আওয়ামী লীগের ক্র্যাশ প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ক্র্যাকডাউন হবে দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গকারী এবং দলের সুনাম নষ্টকারীদের বিরুদ্ধে। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ব্যাপারে শূন্য সহিষ্ণুতা নীতি অনুসরণ করবে। আওয়ামী লীগের একটি দায়িত্বশীল সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
আওয়ামী লীগ এবং তার আদর্শিক জোট ১৪ দলের নেতাদের চীন সফরে হিড়িক পড়েছে। আওয়ামী লীগ এবং তার সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর এই চীন সফরকে ঘিরে কূটনৈতিক অঙ্গনে চলছে নানামুখী আলাপ আলোচনা। ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উভয় দেশই ১৪ দল এবং আওয়ামী লীগের নেতাদের চীন সফরের ব্যাপারে দৃষ্টি রাখছেন। তবে তারা এই বিষয় নিয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হচ্ছেন না। বিষয়টি তারা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিষয় হিসেবেই মনে করছেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছিল বিএনপির আশা ভরসার কেন্দ্রস্থল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করবে; মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নির্দলীয়, নিরপেক্ষ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায়ে সরকারকে বাধ্য করবে; মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কারণ সরকার শেষ পর্যন্ত নির্বাচন করতে পারবে না- এমন বক্তব্যগুলো বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচনের আগে বহুল প্রচারিত ছিল। বিএনপির সব নেতারা প্রকাশ্যেই এ কথা বলত।