নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:০০ পিএম, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯
ভারতের নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চায় বিএনপি। ভারতের নির্বাচনে কোনদল সরকার গঠন করে সেটার উপর নির্ভর করে বিএনপি তার সাংগঠনিক কাঠামো, কৌশল এবং আন্দোলনের কর্মসূচী চুরান্ত করবে। এমন সিদ্ধান্তই নিয়েছে বিএনপির নীতি নির্ধারকরা। সম্প্রতি বিএনপির ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটি পুন:গঠন করা হয়েছে এবং ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির নতুন আহ্বায়ক হয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির একটি বৈঠক করেছেন। এই বৈঠকের পর তিনি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গেও কথা বলেছেন এবং তিনি একটি কৌশল পত্র উপস্থাপন করেছেন বিএনপির নীতি নির্ধারকের কাছে। এবং এই কৌশল পত্রটি লন্ডনে তারেক জিয়ার কাছেও পাঠানো হয়েছে বলে বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে। তিনি সুস্পষ্টভাবে বলেছেন যে, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন ছাড়া বিএনপির পক্ষে কোনভাবেই কোনকিছু অর্জন করার সম্ভব নয়। এজন্য তিনি সবার আগে সবকিছু বাদ দিয়ে প্রথম ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। জানা গেছে যে, বিগত নির্বাচনের আগেও বিএনপির পক্ষ থেকে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরি, আবদুল আউয়াল মিন্টু এবং হুমায়ূন কবিরের নেতৃত্বে একটি দল ভারতে বিজেপির থিংক ট্যাংকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিল। কিন্তু সেই সাক্ষাতে কোন ইতিবাচক ফলাফল হয়নি। ভারত যে তিনটি বিষয়ে বিএনপিকে পরামর্শ দিয়েছিল। সেই তিনটির একটিও বিএনপি শেষ পর্যন্ত শুনেনি। এই তিনটি বিষয় ছিল, ১.জামাতের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ। ২. তারেককে আপাতত নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া। ৩. দলের মধ্যে যারা সন্ত্রাসবাদ বা জঙ্গিবাদের সঙ্গে অভিযুক্ত বা সন্ত্রাসবাদ জঙ্গিবাদে যারা মদদ দেয়, তাদেরকে দল থেকে আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন না দেওয়া। কিন্তু বিএনপির নীতি নির্ধারকরা সংগত কারণেই এই দাবিগুলো মেনে নিতে পারেনি। তাই নির্বাচনের আগে ভারত বিএনপি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। বিএনপির শীর্ষস্থানীয় একাধিক নেতা মনে করেন যে, আওয়ামী লীগের প্রতি ভারতের অকুন্ঠ এবং নিরঙ্কুশ সমর্থনের কারণেই বিএনপি হালে পানি পাচ্ছে না। তাদের কোন কূটনৈতিক তৎপরতা কাজে আসছে না। এরফলে সাংগঠনিকভাবেও তারা শক্তিশালি হতে পারছে না।
তবে নির্বাচনের পর কতগুলো ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে বলে বিএনপির ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির মনে করে।
প্রথমত তারা মনে করছে যে, জামাতের যে আত্মশুদ্ধি চলছে। এটা বিএনপির জন্য ইতিবাচক হবে। এরফলে বিএনপি এবং জামাতের আনুষ্ঠানিক বিচ্ছেদ ঘটবে। এই বিচ্ছেদ ভারতের কাছে নতুন বার্তা দিবে।
দ্বিতীয়ত, তারা মনে করছেন যে, বিএনপি এবং জামাত আলাদা হওয়ার ফলে বিএনপির মধ্যে জামাতপন্থী এবং জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে যুক্ত আছে এমন অভিযুক্তরাও আপনা আপনি নিস্ক্রিয় হয়ে পড়বে। ফলে এটাও ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
তৃতীয়ত, তারা মনে করছে যে ভারতে আগামী নির্বাচনে সরকার কাঠামো যদি পরিবর্তন হয়। নতুন সরকার ও ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করতে পারবে।
এই তিন বিবেচনা থেকেই বিএনপি মনে করছে যে, ভারতের নির্বাচন পর্যন্ত বিভিন্ন প্রস্তুতিমূলক কর্মকান্ডের মধ্যে দলীয় কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখা উচিত।
উল্লেখ্য যে, আগামী এপ্রিলে ভারতে লোকসভা নির্বাচন হওয়ার কথা। এই নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বিএনপির মধ্যে অন্য একটি অংশ, যারাও ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ এবং তারা মনে করছে ভারতে যে সরকারই আসুক না কেন বাংলাদেশের নীতি কৌশলের বিপক্ষে তদের অবস্থানের কোন পরিবর্তন হবে না। এক্ষেত্রে তারা উদাহরণ দিচ্ছে, নরেন্দ্র মোদি সরকারের আগে যখন কংগ্রেস সরকার ক্ষমতহায় ছিল, তখন বিএনপি আশা করেছিল বিজেপি ক্ষমতায় আসলে ভারতের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক উন্নয়ন হবে। তখন আওয়ামী লীগকে চাপ দেওয়া সহজসাধ্য হবে। কিন্তু দেখা গেছে এর উল্টো ফল হয়েছিল, বিজেপি ক্ষমতায় আসলে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সখ্যতে বেড়ে যায়।
বিষয়টি ভারতের কোন রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় আসছে, সেটি নয়। বিষয়টি হলো বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল ভারতের স্বার্থের ব্যাপারে কতটকু সজাগ এবং কতটুকু দায়িত্বশীল। বিশেষ করে ভারত বাংলাদেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে সবচেয়ে ইস্যু হলো যে, বিচ্ছিন্নতাবাদীদের আশ্রয় প্রশ্রয় দেওয়া।
আওয়ামী লীগ গত দশ বছরে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিয়ে শুন্য সহিষ্ণুতা নিয়েছে। এটাই ভারতের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সম্পর্কের মূল চাবিকাঠি বলে কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন। সেই ক্ষেত্রে বিএনপির এই বিশ্বাস অর্জন করা কঠিন ব্যাপার হবে। তবে বিএনপি মনে করছে যে, যদি শেষ পর্যন্ত বিএনপি জামাত থেকে আলাদা হয়ে যায় এবং বিএনপির মধ্যে শুদ্ধি অভিযান পরিচালনা করে যারা পাকিস্তানপন্থী বা স্বাধীনতা বিরোধী সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গীবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তাদেরকে যদি আলাদা করে তারেক জিয়াকে যদি সাময়িকভাবে রাজনীতি থেকে আলাদা করা যায়। তাহলে হয়তো ভারত বিএনপির সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের একটি উদ্যোগ নিতে পারে। কারণ ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিরোধী দল শূন্য হয়েছে। ভারত কেন, কোন রাষ্ট্রই চাইছে না বাংলাদেশের একক দলের সর্বময় কর্তৃত্ব থাকুক। সেখানে একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক চর্চায় একটি শক্তিশালি বিরোধী দল অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এই স্বীকারোক্তি ভারতও করছে। ভারতের বিভিন্ন মহলের সঙ্গে বিএনপি যোগাযোগ করেছে, ভারতও মনে করে যে, বিএনপি একটি শক্তিশালি বিরোধী দল হিসেবে জায়গা করে নিতে পারে। কিন্তু যদি তারা তাদের এই অবস্থানগুলো পরিবর্তন না করে। তাহলে তাদেরকে একটি বিরোধী দল হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া ভারতের জন্য অসম্ভব হয়ে পরবে।
এই বিবেচনা থেকেই আমির খসরু মাহামুদের নেতৃত্বে ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটি মনে করছে, সবার আগে ভারতের সঙ্গে দেন দরবারটা চুড়ান্ত করতে হবে। ভারতের সঙ্গে ফয়সালা না করে বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিএনপি যেটাই করুক না কেন সেটাতে তেমন কোন ফল হবে না। কারণ বিএনপির এখন ওইরকম শক্তি সামর্থ্য নেই যে বিএনপি একটি আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে কোনঠাসা করবে। তাছাড়া নেতাকর্মীরা এখন খুবই হতাশাগ্রস্থ এবং তারা মনোবল হারিয়ে ফেলেছে। এই প্রেক্ষাপটে তাদের একমাত্র ভরসা হলো, কূটনৈতিকভাবে বিএনপি যদি একটি গ্রহনযোগ্যতা অর্জন করে। তাহলেই তারা আস্তে আস্তে একটি সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি করে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন বা আগামী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিতে পারে। সেটা ছাড়া কোনটাই সম্ভব নয় বলে বিএনপির নীতি নির্ধারকরা মনে করছেন।
বাংলা ইনসাইডার/এমআরএইচ
মন্তব্য করুন
সরকারবিরোধী আগামীর আন্দোলন শুরুর আগে কর্মসূচি প্রণয়ন ও আন্দোলন পরিচালনায় শক্তিশালী লিয়াজোঁ কমিটি চায় বিএনপির মিত্ররা। তারা মনে করে, লিয়াজোঁ কমিটি না থাকায় বিগত আন্দোলন পরিচালনায় এক ধরনের সমন্বয়হীনতা ছিল।
কারণ, যুগপতের সব দল ও জোটের সঙ্গে বিএনপির পৃথক বৈঠক শেষে তাদের স্থায়ী কমিটিতে কর্মসূচি চূড়ান্ত হওয়াকে যথাযথ প্রক্রিয়া এবং আন্দোলনের সঠিক প্ল্যাটফর্ম বলে মনে করে না শরিকরা, বিশেষ করে গণতন্ত্র মঞ্চ। তাই এবার এ প্রশ্নে একটা সিরিয়াস মীমাংসা চান মঞ্চের নেতারা।
বিএনপির সঙ্গে বুধবার (১৫ মে) রাতে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে লিয়াজোঁ কমিটি গঠনের পরামর্শ দিয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা বলেন, প্রতিটি জোট ও দল থেকে একজন করে নিয়ে ১০-১২ সদস্যবিশিষ্ট একটি লিয়াজোঁ কমিটি গঠন করতে হবে। সেই লিয়াজোঁ কমিটিতে আলোচনার ভিত্তিতে আন্দোলনের কর্মসূচি প্রণীত হবে। তার আগে নিজ নিজ দল ও জোটের সিদ্ধান্ত নিয়ে সংশ্লিষ্ট নেতারা বৈঠকে উপস্থিত হবেন।
নব্বইয়ে এরশাদবিরোধী আন্দোলনসহ অতীতের আন্দোলনগুলোতে লিয়াজোঁ কমিটি এভাবে কাজ করেছে। কিন্তু বিগত আন্দোলনে এ প্রক্রিয়ায় কর্মসূচি প্রণীত হয়নি। পাঁচ-দশ মিনিট আগে মিত্রদের কর্মসূচির বিষয়ে জানানো হতো এবং কর্মসূচির সঙ্গে সহমত না হলেও সেটাই তারা ঘোষণা করতেন। বৈঠক সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।
যুগপৎ আন্দোলন পুনরুজ্জীবিত করে সরকারের পদত্যাগ ও নতুন নির্বাচনের দাবিতে ঈদুল আজহার পর মাঠে নামার পরিকল্পনা করছে বিএনপি। সেই আন্দোলনের কর্মকৌশল নির্ধারণে পরামর্শ নিতে গত রোববার থেকে মিত্রদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করছে দলটি। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর এ ধরনের বৈঠক এবারই প্রথম। এর অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার (১৬ মে) এনডিএম, বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ এবং মিয়া মসিউজ্জামান ও ফারুক হাসানের নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গণতন্ত্র মঞ্চ ছাড়াও এর আগে গত সোমবার বিএনপির সঙ্গে বৈঠকে আন্দোলনের কর্মসূচি প্রণয়নে সমন্বয়হীনতা দূরীকরণে যুগপতের সব দল ও জোট থেকে দু-একজন করে নিয়ে শক্তিশালী লিয়াজোঁ কমিটি গঠনের ওপর জোর দেন সমমনা জোটের নেতারা।
মন্তব্য করুন
শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন বিএনপি
মন্তব্য করুন
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জাতীয় প্রেস ক্লাব
মন্তব্য করুন
বিএনপি ভারত বিরোধী মার্কিন বিরোধী মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
মন্তব্য করুন
শেখ হাসিনা বাহাউদ্দিন নাছিম আওয়ামী লীগ ঢাকা-৮
মন্তব্য করুন
১৯৮১ সালের ১৭ মে। স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ সভাপতি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেছিলেন এক বৃষ্টিমুখর দিনে। সেই দিনে লাখো মানুষ মানিক মিয়া এভিনিউতে জড়ো হয়েছিল জাতির পিতার কন্যাকে দেখার জন্য। তাদের শোক এবং আবেগ ছিল হৃদয়স্পর্শী। সারা বাংলাদেশ উত্তাল হয়েছিল। জাগরণের এক গান গেয়ে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বাংলাদেশের জন্ম হওয়ার পর থেকেই প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছে। এই সরকার পুরোপুরিভাবে নতজানু সরকারে পরিণত হয়েছে। শুধু ফারাক্কা নয়, গঙ্গার পানি নয়, বাংলাদেশের ১৫৪টি নদীতে পানি দিতে তারা গড়িমসি করে যাচ্ছে। তিস্তা নদীর পানি বণ্টন, এ করছি, এ হচ্ছে এমন করে সময় শেষ করছে সরকার। এ যে ব্যর্থতা এর মূল কারণ হচ্ছে, সরকারে যারা আছে তারা পুরোপুরিভাবে একটা নতজানু সরকার।