নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০০ পিএম, ১৭ মার্চ, ২০১৯
বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মা ডেকে রাতে তারেক জিয়াকে ভাইয়া ডাকলেন ডাকসুর নবনির্বাচিত ভিপি নুরুল হক নূর। ডাকসু নির্বাচনে অভাবনীয় ও নাটকীয়ভাবে ভিপি নির্বাচিত হওয়ার পর ক্ষণে ক্ষণে রং বদলাচ্ছেন কোটা সংস্কারের এই নেতা। যখন তিনি ছাত্রলীগ দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকেন তখন তিনি বলেন, নির্বাচন সুন্দর হয়েছে। তিনি শপথ গ্রহণ করবেন এবং শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করবেন। আবার যখন তিনি কোটা সংস্কার আন্দোলনপন্থীসহ ছাত্রলীগের বিরুদ্ধপক্ষের সঙ্গে থাকছেন তখন তিনি বলছেন, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়নি এবং তিনি পুনর্নির্বাচন দাবি করছেন।
নির্বাচনের কয়েকদিনের মধ্যেই ডাকসুর নবনির্বাচিত ভিপির নাম হয়েছে ‘মি. আনপ্রেডিক্টেবল’। তার ক্ষণে ক্ষণে রং বদলানোর কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, একদিকে অভাবনীয় বিজয়ে তিনি ডাকসুর ভিপি হওয়ার আগ্রহ দেখাচ্ছেন। আবার তাকে ভিপি করার ব্যাপারে যে ছাত্রসংগঠনগুলো ভূমিকা রেখেছে ও কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্লাটফর্মকেও তিনি অস্বীকার করতে পারছেন না।
অবশ্য অন্য একটি সূত্র বলছে, এই নির্বাচন ও কোটা সংস্কার আন্দোলনের জন্য যে বিপুল সংখ্যক অর্থ তিনি খরচ করেছেন সে অর্থায়নের পিছনে তারেক জিয়া ও ছাত্রশিবিরের হাত রয়েছে। এজন্যই তাদের কাছে তিনি দায়বদ্ধ। একইসঙ্গে তিনি ভিপি পদও ছাড়তে পারছেন না। এজন্য তার সঙ্গে ক্রমশঃ কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতাকর্মীদের দূরত্ব তৈরি হচ্ছে এবং অবিশ্বাস বাড়ছে। তবে কোটা সংস্কারের আরেক নেতা রাশেদ, যিনি জিএস পদে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি বলেছেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন কোন রাজনৈতিক প্লাটফর্ম নয়। সেজন্য আমরা সবার কথা শুনবো এবং সবার সঙ্গে কথা বলবো।
ডাকসু ও হল সংসদের নবনির্বাচিত নেতৃবৃন্দকে প্রধানমন্ত্রী গতকাল বিকেলে গণভবনে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। সেখানে নূর অত্যন্ত আবেগঘন বক্তব্য রাখেন এবং শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরেন। এসময় তিনি প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে তার মায়ের প্রতিচ্ছবি পান বলে প্রধানমন্ত্রীকে মা বলে ডাকেন এবং তাকে সালাম করেন। প্রধানমন্ত্রী এতে অনেক খুশি হন এবং নূরকে সন্তানের মতোই স্নেহ করেন। কিন্তু সেখানে নৈশভোজ শেষে তিনি বের হয়ে কোটা সংস্কার প্লাটফর্ম, প্রগতিশীল ছাত্রজোট এবং ছাত্রদলের সঙ্গে একটি বৈঠকে যান। সেখানে তাকে তীব্র ভর্ৎসনার শিকার হতে হয়। অনেকেই তাকে বলে, কেন তিনি এ ধরনের বক্তব্য দিলেন?
এরপর তিনি ছাত্রদলের সঙ্গে একান্ত বৈঠকে মিলিত হন। সেখানে ছাত্রদলের ভিপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী মোস্তাফিজুর রহমান তাকে লন্ডনে পলাতক তারেক জিয়ার সঙ্গে তার কথা বলিয়ে দেন। তারেক জিয়া তখন তাকে বলেন, তিনি যদি ডাকসু নেতৃত্ব গ্রহণ করেন তাহলে তার রাজনৈতিক জীবন শেষ হয়ে যাবে। শিক্ষার্থীরা তাকে বেঈমান বলবে। এসময় তিনি বলেন, ভাইয়া, আমি যেটাই করি না কেন আপনাদের মত এবং পরামর্শ নিয়ে করবো। আপনারা না চাইলে আমি কখনই শপথ নেবো না।
কোটা সংস্কার আন্দোলন, প্রগতিশীল ছাত্রজোটসহ নির্বাচন বর্জনকারী সকল পক্ষই চাইছে, নূর ও সমাজসেবা সম্পাদক আখতার যেন শেষ পর্যন্ত শপথ গ্রহণ না করে। অথচ গতকালই তিনি গণভবনে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি শপথ গ্রহণ করছেন। এছাড়া আজ সকালে তিনি উপাচার্যের সঙ্গে যখন কথা বলেন, তখন তিনি উপাচার্যকে আশ্বস্ত করেন যে, শপথের দিন তারিখ অনুযায়ী তিনি শপথ গ্রহণ করবেন। ডাকসুকে শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়ার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে পরিণত করা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ উন্নয়নে কাজ করবেন।
আবার বিকেলে যখন লিটন নন্দীর নেতৃত্বে বাম সংগঠনগুলো বৈঠক করে তখন সেখানে নূর উপস্থিত হয়ে তাদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেন। এরপর তিনি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ডাকসু নির্বাচনে ভোট কারচুপি হয়েছে। নির্বাচন পক্ষপাতপূর্ণ হয়েছে। নির্বাচন বাতিল করে তিনি নতুন নির্বাচন দাবি করেন।
এমন ঘন ঘন রং বদলানো নিয়ে ডাকসুর নবনির্বাচিত জিএস গোলাম রাব্বানী বলেছেন, এই অপ্রত্যাশিত বিজয়ে উনি বোধয় খেই হারিয়ে ফেলেছেন। তবে শিক্ষার্থীদের প্রতি যদি তিনি ন্যূনতম শ্রদ্ধাশীল থাকেন তাহলে তিনি অবশ্যই শপথ নেবেন।
তবে তার ক্ষণে ক্ষণে রং বদলানোর কারণে তার প্রতি সাধারণ শিক্ষার্থীদের যে আস্থা ছিলো সে আস্থা নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। তিনি একটা হাস্যরসের বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়েছেন। কিন্তু এরকম অবস্থা অব্যাহত থাকলে যে জনপ্রিয়তা নিয়ে নূর বিজয়ী হয়েছিলেন সেই জনপ্রিয়তা শিগগিরই উল্টো ধারায় প্রবাহিত হতে পারে।
বাংলা ইনসাইডার/এমআর
মন্তব্য করুন
নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিতেই বিএনপি লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি পালন করছে বলে জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন।
শনিবার (১৮ মে) রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির উপজেলা নির্বাচনবিরোধী লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।
বিএনপিকে উপহাস করে ওবায়দুল কাদের বলেন, গণঅভ্যুত্থান থেকে তারা লিটলেট বিতরণ কর্মসূচিতে নেমে এসেছে। এবার বুঝুন তাদের অবস্থা।
তিনি বলেন, সরকারের ধারাবাহিকতার কারণেই আজ দেশের এত উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি হয়েছে। জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর কাছে আবেদন করে বাকশালের সদস্য হয়েছিলেন, কিন্তু বিএনপি এবং মির্জা ফখরুল বাকশালকে গালিতে পরিণত করতে চায়।
তিনি আরও বলেন, গণমাধ্যমও লিখছে ভারত বিরোধিতার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করে দেখবে বিএনপি। ভারত প্রশ্নে এখন মধ্যপন্থা নিতে চায় বিএনপি।
সেতুমন্ত্রী বলেন, দেশে গণতন্ত্রের কোনো ঘাটতি নেই, সংসদ এবং সংসদের বাইরেও সরকারের বিরোধিতা জারি আছে। সরকার কোনো দল বা গোষ্ঠীর ওপর দমনপীড়ন চালাচ্ছে না। গণতন্ত্রের বিচারে বিশ্বের অনেক দেশের চেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ।
মন্তব্য করুন
কাউন্সিল বিএনপি তারেক জিয়া মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বেগম খালেদা জিয়া
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিতেই বিএনপি লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি পালন করছে বলে জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন। শনিবার (১৮ মে) রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির উপজেলা নির্বাচনবিরোধী লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরে যেতে পারেন এমন গুঞ্জন রয়েছে। তিনি জেল থেকে বেরিয়ে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে মহাসচিবের দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। বেগম খালেদা জিয়া এই বিষয়টি নিয়ে তাকে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন। তবে তারেক জিয়া এ বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া দেননি বলে জানা গিয়েছে। বরং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যদেরকে তারেক জিয়া জানিয়েছেন, কাউন্সিলের আগে বিএনপিতে নেতৃত্বের পরিবর্তন নয়। তবে বিএনপির কাউন্সিল কবে, কীভাবে হবে- এ সম্পর্কে কোন বিস্তারিত তথ্য জানা যায়নি।
সরকারের বিরুদ্ধে নতুন করে আন্দোলন শুরু করার লক্ষ্যে প্রস্তুতি গ্রহণ করছে দীর্ঘ দিন ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি। তারা সাম্প্রতিক সময়ে আবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক শুরু করেছে। তবে এসব বৈঠকে যুগপৎ আন্দোলনের কথা বলা হলেও বিএনপি এখন পর্যন্ত সরকার বিরোধী কোন জোট করতে রাজি নয়। ২০ দলীয় জোট আনুষ্ঠানিকভাবে ভেঙে যাওয়ার পর বিএনপি এখন পর্যন্ত জোটগত ভাবে কোন আন্দোলন করেনি। তবে বিভিন্ন সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তারা সম্পর্ক রেখেছে। ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত এই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তারা যুগপৎ আন্দোলন করেছিল। এখন আবার নতুন করে যুগপৎ আন্দোলন শুরু করার জন্য বিএনপির পক্ষ থেকে এই সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে যোগাযোগ করা হচ্ছে। তবে রাজনৈতিক দলগুলো বিএনপির ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব দেখাচ্ছে না।