নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০২ পিএম, ২৫ মার্চ, ২০১৯
বাংলাদেশের রাজনীতিতে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি বলতে আমরা জামাতকে বুঝি। জামাত ছাড়া কয়েকটি ইসলামপন্থী ক্ষীণকায় দল ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। কার্যত বিলীন হয়ে যাচ্ছে বলতে আমরা মুসলিম লীগের মতো এমন কিছু দলকেই বুঝি। কিন্তু এখনো বাংলাদেশের মূলধারার রাজনীতিতে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি অত্যন্ত সক্রিয় এবং শক্তিশালী। অনুসন্ধানে দেখা যায়, বাংলাদেশের রাজনীতিতে স্বাধীনতাবিরোধীদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মদদ দেয় বা স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিদের সঙ্গে জড়িত এমন রাজনীতিবিদের সংখ্যাও কম নয়। বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোতেই স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির অপচ্ছায়া রয়েছে বলে অনুসন্ধানে পাওয়া যায়। যে কারণে বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে, স্বাধীনতাবিরোধীরা রাজনীতি থেকে পরিত্যক্ত হচ্ছে, কিন্তু মূলধারার রাজনীতিতে স্বাধীনতাবিরোধীদের শক্ত অবস্থানের কারণে এখনো বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিপক্ষ শক্তি অত্যন্ত শক্তিশালী এবং বেগবান।
বাংলাদেশে যারা স্বাধীনতাবিরোধী রাজনীতির পৃষ্ঠপোষকতা করে বা বিভিন্নভাবে স্বাধীনতাবিরোধীদের নেতৃত্ব দেন—এরকম কিছু রাজনীতিবিদদের কথা আমরা এখানে তুলে ধরছি-
বেগম খালেদা জিয়া: বেগম খালেদা জিয়ার স্বামী সেক্টর কমান্ডার এবং চট্টগ্রামের কালুরঘাট থেকে জাতির পিতার পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। তিনি ভারতে গিয়ে সেখান থেকে জেট ফোর্স সেক্টর কমান্ডার হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। এই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের সময় প্রাপ্ত দলিলপত্রে দেখা যায়, মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের পর তিনি চেয়েছিলেন তার স্ত্রীকে ভারতে নিয়ে যেতে। এজন্য তিনি বার্তা পাঠিয়েছিলেন এবং স্ত্রী খালেদা জিয়াকে যাতে নিরাপদে ভারতে নিয়ে যেতে পারেন সেজন্য একটি মুক্তিযোদ্ধা দলকেও পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়া সেসময় ঐ প্রস্তাব প্রত্যাখান করেন এবং তিনি জিয়াউর রহমানের কাছে ফিরে যেতে অস্বীকৃতি জানান। বিভিন্ন অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, সেসময় পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর সঙ্গে বেগম জিয়ার অত্যন্ত সখ্যতা ছিল এবং তিনি ক্যান্টনমেন্টে বেশ রাজকীয় মর্যাদায় অবস্থান করেছিলেন। এটা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের পর জিয়াউর রহমানের সঙ্গে বেগম খালেদার বিরোধ হয়েছিল বলেও ওয়াজেদ আলী মিয়ার বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে এক স্মৃতিগ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেই বিরোধ মিটিয়েছিলেন বলেও জানা যায়। এজন্যই দেখা যায় যে বেগম জিয়া ৯১-তে যখন ক্ষমতায় আসেন তখন পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য তোড়জোড় করেন। পাকিস্তানের সেনাপ্রধান বাংলাদেশে এলে তিনি সব প্রটোকল ভেঙে সেনাপ্রধানকে রিসিভ করতে বিমানবন্দরে ছুটে যান। দুই মেয়াদেই তিনি স্বাধীনতাবিরোধী বিভিন্ন অপশক্তি, রাজাকার, আলবদরদের প্রশ্রয় দিয়েছেন। দ্বিতীয় মেয়াদে তিনি যুদ্ধাপরাধী দুজনকে মন্ত্রী বানিয়েছিলেন এবং তাদের হাতে বাংলাদেশের রক্তে ভেজা জাতীয় পতাকাও তাদের গাড়িতে তুলে দিয়েছিলেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর: মির্জা ফখরুল ইসলামের বাবাও একজন স্বাধীনতাবিরোধী ছিলেন বলে প্রাপ্ত অনুসন্ধানে জানা যায়। তিনি ঠাকুরগাঁও এলাকায় স্বাধীনতাবিরোধী ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধীদের প্রধান হিসেবে অন্যতম ভূমিকা পালন করেছিলেন। যদিও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন যে তিনি মুক্তিযোদ্ধা কিন্তু কোন দলিলপত্রে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাধীনতাবিরোধী একটি পরিবারের সদস্য হলেও নিজে স্বাধীনতাবিরোধী কোন কর্মকাণ্ডে জড়িত বলে এমন কোন তথ্য বা প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে যেহেতু তিনি স্বাধীনতাবিরোধী একটি পরিবার থেকে উঠে আসা সে জন্য মুক্তিযুদ্ধর চেতনার প্রতি তার কোন দায়বদ্ধতাও নেই।
চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ: চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ ফরিদপুরের একজন কুখ্যাত রাজাকার পরিবারের সদস্য এবং তিনি বিএনপির আমলে মন্ত্রিত্ব গ্রহণ করেছিলেন। যদিও তিনি বিএনপির রাজনীতিতে এখন নিষ্ক্রিয় কিন্তু বেগম খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ঠ ও আস্থাভাজন হিসেবে তিনি সব সময়ই প্রভাবশালী।
ড. ওসমান ফারুক: দ্বিতীয় মেয়াদে বেগম খালেদা জিয়ার শিক্ষামন্ত্রী ড. ওসমান ফারুক একজন স্বাধীনতাবিরোধী ও রাজাকার ছিলেন এবং কিশোরগঞ্জে তার পরিবার স্বাধীনতাবিরোধী হিসেবে পরিচিত। ওসমান ফারুক এর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের তদন্ত শুরু হলে তিনি পালিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চলে যান এবং সেখানেই তিনি অবস্থান করছেন। তার যুদ্ধাপরাধের বিচারও ফিকে হয়ে গেছে। যদিও তিনি বিএনপির রাজনীতির সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত নেই কিন্তু আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিএনপিকে প্রতিষ্ঠিত করতে এবং বাংলাদেশবিরোধী ও সরকারবিরোধী নানা অপপ্রচারে ওসমান ফারুক সংশ্লিষ্ট রয়েছেন এমন খবর পাওয়া যায়।
ফরহাত কাদের চৌধুরী: কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর স্ত্রী ফরহাত কাদের চৌধুরী। যুদ্ধাপরাধের দায়ে সাকা চৌধুরীর ফাঁসির দণ্ড কার্যকর হয়েছে। কিন্তু সাকা চৌধুরীর পরিবারের সদস্যরা এখনও বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেই যাচ্ছে। ফরহাত কাদের চৌধুরী বিএনপির একজন নেতা এবং তিনি ও তার পুত্ররা স্বাধীনতা বিরোধী বিভিন্ন অপশক্তির সাথে হাত মিলিয়ে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করা, বাংলাদেশে নাশকতা সৃষ্টি ও নানারকম অসন্তোষ সৃষ্টির জন্য প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।
মেজর (অব.) আবদুল মান্নান: শুধু বিএনপি নয়, এখন মহাজোটের মধ্যেও স্বাধীনতাবিরোধীদের অবস্থান ছড়িয়ে পড়েছে। এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মহাজোটের ব্যানারে বিকল্পধারার সঙ্গে ঐক্য করে। বিকল্পধারার অন্যতম নেতা মেজর (অব.) আবদুল মান্নান এবার নৌকা প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হয়েছেন। মেজর অব. আবদুল মান্নান একজন প্রত্যক্ষ ও সরাসরি যুদ্ধাপরাধী। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি পাকিস্তানের হয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন বলে একাধিক দলিল ও গ্রন্থে পাওয়া যায়।
এছাড়াও যুদ্ধাপরাধের দায়ে যারা দণ্ডিত হয়েছেন তাদের সন্তানরাও দেশে বিদেশে সক্রিয়। তারা সবসময়ই বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিলীনের জন্য কাজ করছে। মূলধারার রাজনীতির সঙ্গে তাদের তেমন কোন সম্পৃক্ততা নেই।
বাংলা ইনসাইডার/এমআর
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
চীন সফর বাম দল জাসদ ওর্য়ার্কাস পার্টি সাম্যবাদী দল
মন্তব্য করুন
শৃঙ্খলা আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু আগামীকাল মঙ্গলবার ঢাকায় আসছেন। এ সফরে তিনি ব্যবসা-বিনিয়োগ, নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা, জলবায়ু পরিবর্তন, নাগরিক অধিকারসহ দুই দেশের অগ্রাধিকারের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে আলোচনা করবেন বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
অবশেষে আর ছাড় নয়, আওয়ামী লীগ তাঁর দলের শৃঙ্খলা ফেরাতে কঠোর অবস্থানে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্রগুলো বলছে, দলের ভেতর যারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে, দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করছে এবং দলের ভেতরের কোন্দল করছে তাদেরকে আর ছাড় দেওয়া হবে না। তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে এবং এই যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের অংশ হিসেবে কোন্দলরত এলাকাগুলোতে কমিটি বাতিল করে দেওয়া হবে। যারা কোন্দলের সঙ্গে জড়িত তাদেরকে আহ্বায়ক কমিটিতে রাখা হবে না।