নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০০ পিএম, ০৩ মে, ২০১৯
৩ মে ১৯৮১। দিল্লীতে নির্বাসিত আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। ৩ মে রোববার তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন আওয়ামী লীগের কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা। এদের মধ্যে ছিলেন প্রয়াত আবদুল মালেক উকিল, বেগম সাহেদা চৌধুরীসহ নেতৃবৃন্দ। দিল্লীতে শেখ হাসিনার বাসভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় ১৭ মে রোববার তিনি স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করবেন। আনুষ্ঠানিকভাবে শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়। এই সংবাদ প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নড়েচড়ে বসেন। ৩ মে ছিলো রোববার সাপ্তাহিক ছুটির দিন। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতির দেশে ফেরার খবরে ছুটির দিনেও মন্ত্রিসভার বৈঠক করেন জিয়া। বৈঠক শেষে এক বিবৃতিতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শাহ আজিজুর রহমান বলেন,‘ শেখ হাসিনার ফেরা নিয়ে আমরা দেশে বিশৃংখলার আশংকা করছি। এনিয়ে কোন অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি না করার জন্য সরকার আহ্বান জানাচ্ছে।’ পরদিন ৪ মে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ. এস. এম মোস্তাফিজুর রহমান আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেন ‘জননিরাপত্তার স্বার্থে শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরতে দেওয়া হবে না।’ তিনি বলেন,‘ শেখ হাসিনা যে দেশে আছেন, সেখানেই তার থাকা উচিত।’ তিনি আরো বলেন,‘ আইন অমান্য করে যদি শেখ হাসিনা দেশে ফিরতে চান তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
জিয়া সরকারের এই ঘোষণা দিল্লি পৌছতে সময় লাগেনি। খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আওয়ামী লীগ সভাপতি জরুরী সংবাদ সম্মেলন করে দিল্লীতে। বাংলাদেশে কোন দৈনিকে এই সংবাদ সম্মেলনের সংবাদ প্রকাশ করতে দেয়া হয়নি। কিন্তু কলকাতা থেকে প্রকাশিত আনন্দবাজার সহ ভারতের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক শেখ হাসিনার প্রেস কনফারেন্সের সংবাদটি ফলাও করে প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয় যে, ‘গত ১৫ ফেব্রুয়ারি দলের সভাপতি নির্বাচিত বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশে ফিরতে অনড়। আজ দিল্লীতে তিনি বলেছেন, ‘আমাকে হত্যা করা হলেও আমি মাতৃভূমিতে ফিরবো।‘ শেখ হাসিনা আবেগরুদ্ধ কণ্ঠে বলেন, ‘মাতৃভূমিতে ফেরা আমার জন্মগত অধিকার।` এই অধিকার কেউ কেড়ে নিতা পারবে না। শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘আজ যারা আমাকে দেশে ফিরতে বাধা দিচ্ছে একদিন জনরোষে তাঁরাই হয়তো দেশ ছেড়ে পালাবে।‘
শেখ হাসিনার এই দৃঢ় অবস্থানের পর জিয়া শেখ হাসিনার দেশে ফেরার অনুমতি দেয়া যায় কিনা তা খতিয়ে দেখতে একটি কমিটি করে দেন। চার সদস্যের এই কমিটির সদস্য ছিলেন তৎকালীন সিনিয়র ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, তৎকালীন ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, তৎকালীন ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী জামাল উদ্দিন আহমেদ এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কর্নেল (অব.) মোস্তাফিজুর রহমান। এই কমিটি ৭ মে জিয়াউর রহমানকে লিখিত প্রতিবেদন দিয়ে বলেন যে, ‘শেখ হাসিনাকে স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে বাধা দেওয়া সমীচীন হবে না।’ জিয়া আসলে এই রিপোর্টও গ্রহণ করেননি। কিন্তু গোয়েন্দা সংস্থা যখন তাকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে বলে তখন ৮ মে ১৯৮১, সরকারের পক্ষ থেকে আনু্ষ্ঠানিকভাবে শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে আপত্তি প্রত্যাহার করা হয়। ৯ মে ১৯৮১ তে আনন্দবাজার পত্রিকায় চতুর্থ পাতায় এক খবরে বলা হয়, ‘সামরিক জান্তার প্রথম পরাজয়।’ (আজ ৩৮ বছর পর আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনীতির কাছে লণ্ডভণ্ড জিয়ার বিএনপি। এখন জিয়ার ছেলে লন্ডনে ফেরারী। তাকে দেশে ফেরাতে সরকার মরিয়া। অথচ তারেক দেশে ফিরতে চায় না। এটাই ইতিহাসের পরিহাস, আজ সত্যি জিয়ার পুত্র দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। ৩৮ বছর আগে শেখ হাসিনার উক্তিই আজ সত্য হয়েছে।
বাংলা ইনসাইডার
মন্তব্য করুন
কাউন্সিল বিএনপি তারেক জিয়া মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বেগম খালেদা জিয়া
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
চার ধাপে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এ পর্যন্ত (তৃতীয় ধাপ) ২০৪ জনকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় তাদের বহিষ্কার করা হয়।
এরমধ্যে তৃতীয় ধাপের নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় তৃণমূলের ৫৫ নেতাকে বহিষ্কার করে বিএনপি। আর প্রথম ধাপে ভোটের জন্য ৮০ জন, দ্বিতীয় ধাপে ৬৯ জনকে বহিষ্কার করে দলটি।
বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে উপজেলাসহ কোনো নির্বাচনে অংশ না নিচ্ছে না বিএনপি। গত ১৬ এপ্রিল দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, শেখ হাসিনার সরকার ও তার আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন, বেসামরিক ও পুলিশ প্রশাসন একটি অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করতে পারে না। অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিবেশ নেই। তাই উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেবে না দল।
দেশে চার ধাপে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তফসিল অনুযায়ী, গত ৮ মে প্রথম ধাপে ১৩৯টি উপজেলায় ভোট গ্রহণ হয়। এই ধাপের নির্বাচনে বিএনপির বহিষ্কৃত ৭ জন চেয়ারম্যান পদে, ৩ জন ভাইস চেয়ারম্যান পদে জয়লাভ করে বলেও জানা যায়।
দ্বিতীয় ধাপের ১৬১টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের ভোট গ্রহণ করা হবে ২১ মে। তৃতীয় ধাপে ১১২টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচন ২৯ মে অনুষ্ঠিত হবে। চতুর্থ ধাপের উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ৫ জুন।
মন্তব্য করুন
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরে যেতে পারেন এমন গুঞ্জন রয়েছে। তিনি জেল থেকে বেরিয়ে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে মহাসচিবের দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। বেগম খালেদা জিয়া এই বিষয়টি নিয়ে তাকে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন। তবে তারেক জিয়া এ বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া দেননি বলে জানা গিয়েছে। বরং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যদেরকে তারেক জিয়া জানিয়েছেন, কাউন্সিলের আগে বিএনপিতে নেতৃত্বের পরিবর্তন নয়। তবে বিএনপির কাউন্সিল কবে, কীভাবে হবে- এ সম্পর্কে কোন বিস্তারিত তথ্য জানা যায়নি।
সরকারের বিরুদ্ধে নতুন করে আন্দোলন শুরু করার লক্ষ্যে প্রস্তুতি গ্রহণ করছে দীর্ঘ দিন ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি। তারা সাম্প্রতিক সময়ে আবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক শুরু করেছে। তবে এসব বৈঠকে যুগপৎ আন্দোলনের কথা বলা হলেও বিএনপি এখন পর্যন্ত সরকার বিরোধী কোন জোট করতে রাজি নয়। ২০ দলীয় জোট আনুষ্ঠানিকভাবে ভেঙে যাওয়ার পর বিএনপি এখন পর্যন্ত জোটগত ভাবে কোন আন্দোলন করেনি। তবে বিভিন্ন সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তারা সম্পর্ক রেখেছে। ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত এই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তারা যুগপৎ আন্দোলন করেছিল। এখন আবার নতুন করে যুগপৎ আন্দোলন শুরু করার জন্য বিএনপির পক্ষ থেকে এই সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে যোগাযোগ করা হচ্ছে। তবে রাজনৈতিক দলগুলো বিএনপির ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব দেখাচ্ছে না।