নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:০১ পিএম, ১৫ মে, ২০১৯
আর মাত্র দুদিন পর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্নের ৩৮ বছর পূর্ণ হবে। ১৯৮১ সালের ১৭ মে তিনি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেছিলেন এক প্রতিকুল ঝঞ্ঝা বিক্ষুব্ধ পরিবেশে। এই ৩৮ বছরে তাঁকে রাজনৈতিক জীবনে অনেক ঘাত প্রতিঘাত চড়াই উৎরাই পার করতে হয়েছে। নানারকম বিপদসংকুল পরিবেশ অতিক্রম করেই আজকে তিনি বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতায় পরিণত হয়েছেন। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে আর যাই হোক শেখ হাসিনার নাম কেউ মুছে ফেলতে পারবে না। শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে ‘বাংলা ইনসাইডার’ এর ধারাবাহিক প্রতিবেদনের প্রথম পর্ব আজ। আজকের পর্বে আমরা আলোচনা করবো রাজনীতিবিদ হিসেবে শেখ হাসিনার সেরা দশটি সিদ্ধান্ত। দেশবরেণ্য রাজনৈতিক বিশ্লেষক, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সহযোগিতা নিয়েই আমরা এই সেরা দশ সিদ্ধান্ত নির্বাচন করেছি। এই দশ সিদ্ধান্ত শুধু শেখ হাসিনার জীবনের রাজনৈতিক গতিপথ পরিবর্তন করেনি বাংলাদেশের রাজনীতিতেও এক নতুন মেরুকরণ ও বিন্যাস তৈরি করেছে। আসুন দেখা যাক ‘বাংলা ইনসাইডার’ বিবেচনায় শেখ হাসিনার সেরা দশ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত-
১. আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব গ্রহণ করাঃ ৭৫ এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে স্বপরিবারে হত্যার পর আওয়ামী লীগ হয়ে পরেছিল বিদ্ধস্ত ও হতবিহ্বল। কোন্দলে আবদ্ধ দলের মনোবল হয়ে গিয়েছিল চূর্ণ। এরকম একটি পরিস্থিতিতে নেতৃত্বশূন্য আওয়ামী লীগের হাল ধরার জন্য আহ্বান জানানো হয় শেখ হাসিনাকে। তখন তিনি বিদেশে অবস্থান করছিলেন। কিন্তু যখন তাঁকে নেতৃত্ব দেওয়া হয় তখন তিনি নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। শুধু শেখ হাসিনার রাজনৈতিক জীবনে নয় বলা হয় বাংলাদেশের রাজনৈতিক জীবনে এটি সবচেয়ে বড় এবং সাহসী সিদ্ধান্ত। যেখানে পুরো পরিবারকে হত্যা করা হয়েছে সেখানে বাংলাদেশে ফিরে আসা শুধু মৃত্যুর ঝুকিই নয় বরং আত্মহত্যারও সামিল। এছাড়া তিনি নিশ্চয়ই অনুধাবন করতে পেরেছিলেন কতটা প্রতিকূল পরিবেশে তাঁকে এই দায়িত্ব নিতে হবে। আজ ৩৮ বছর পরও ফিরে তাকালে সেটা কল্পনা করাও দুঃসাধ্য ব্যাপার। তাই আমাদের বিবেচনায় এটি তাঁর সবচেয়ে সেরা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত।
২. সংসদীয় গণতন্ত্র প্রবর্তনঃ শেখ হাসিনা স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের কিছুদিন পরই মারা যান জিয়াউর রহমান। রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হয়ে ক্ষমতায় বসেন উর্দি পরা আরেক একনায়ক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। তারপরই শুরু হয় স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন। সেই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। আন্দোলনে এক পর্যায়ে যুক্ত হন বেগম খালেদা জিয়া। দীর্ঘ ৯ বছর আন্দোলনের পর স্বৈরাচারী এরশাদের পতন ঘটলে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু ৯১এর নির্বাচনে অভাবনীয়ভাবে আওয়ামী লীগ পরাজিত হয় যা ছিল অনেকের কাছে অবিশ্বাস্য। পরাজিত হলেও তিনি তাঁর নীতি ও আদর্শ অনুযায়ী কাজ করতে থাকেন এবং সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দাবী করেন। সংসদীয় গণতন্ত্র আমাদের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম অঙ্গীকার এবং ৭২ এর সংবিধানে সংসদীয় গণতন্ত্র ব্যবস্থা প্রবর্তিত ছিল। পরবর্তীতে এই ব্যবস্থা থেকে আমরা সরে আসি এবং জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে রাষ্ট্রপতি শাসিত ব্যবস্থাকে পাকাপোক্ত করেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি জানতেন সংসদীয় গণতন্ত্রের কোনো বিকল্প নেই এবং বিরোধী দলে থেকেই সংসদীয় গণতন্ত্র ব্যবস্থা পুনপ্রবর্তনের ক্ষেত্রে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন। কাজেই এটা তাঁর রাজনৈতিক জীবনের একটি বড় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত।
৩. প্রচলিত আইনে জাতির পিতা হত্যাকান্ডের বিচারঃ ৯৬ সালে নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ অঙ্গীকার অনুযায়ী জাতির পিতার হত্যাকান্ডের বিচার শুরু করে। শেখ হাসিনা চাইলেই বিশেষ ট্রাইবুনাল করে বা দ্রুত বিচার ট্রাইবুনাল করে জাতির পিতার হত্যার বিচার করতে পারতেন কিন্তু তিনি সেসব না করে দেশের প্রচলিত আইনে বিচার করেন। যা দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার এক অনবদ্য নজির এবং যা দেশে বিদেশে প্রশংসিত হয়েছে। বলা হয় যে, শেখ হাসিনা যে গনতন্ত্রে বিশ্বাস করেন, গণতন্ত্রের প্রতি আস্থাশীল তাঁর প্রমাণ এটি।
৪. একাত্তরের গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারঃ ৯৬ সালে ক্ষমতা গ্রহণ করে যেটা তিনি পারেননি এবং যা ছিল এদেশের মানুষের অনেক আকাংখিত বিষয় তা হলো একাত্তরের গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার। ২০০৮ সালে ক্ষমতা গ্রহণ করে তিনি ৭১ এ যারা গনহত্যা , লুট, হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগের সংগে জড়িত ছিল তাঁদের বিচার করা। ক্ষমতায় এসে আন্তার্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল অনুযায়ী তাঁদের বিচার শুরু করে দেশে পুনরায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুন:প্রতিষ্ঠায় তিনি সবচেয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন।
৫. কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠাঃ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন ছিল তৃণমূল পর্যন্ত দেশের সকল নাগরিকের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা। কিন্তু বঙ্গবন্ধু সাড়ে তিন বছরের শাসনামলে তা করে যেতে পারেননি। শেখ হাসিনা প্রথমবার ক্ষমতা গ্রহণ করে কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়ে অনেকদুর কাজ এগিয়ে নিলেও বিএনপি জামাত জোট সরকার ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে ক্লিনিকগুলো বন্ধ করে দেয়। কিন্তু ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার আবার ক্ষমতায় এসে কমিউনিটি ক্লিনিক ব্যবস্থা চালু করেন জনগণের অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে। কমিউনিটি ক্লিনিক শুধু বাংলাদেশে নয় তৃণমূলের স্বাস্থ্যব্যবস্থায় একটি রোল মডেল হিসেবে কাজ করছে এবং সারাবিশ্বে একটি অনন্য স্বাস্থ্য মডেল হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হচ্ছে। কাজেই কমিউনিটি ক্লিনিক শেখ হাসিনার আরেকটি বিচক্ষণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন।
৬. ডিজিটাল বাংলাদেশঃ ২০০৮ সালে নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তাঁদের নির্বাচনী ইশতেহারে ডিজিটাল বাংলাদেশের ঘোষণা দেয়। তখন ডিজিটাল বাংলাদেশ বিষয়টি ছিল অস্পষ্ট, এর রুপ কি হবে তা সম্পর্কে কারো কোনো ধারণা ছিল না। অনেকে এটিকে কৌতুকে পরিণত করে। কিন্তু আজকে বাংলাদেশ সত্যি সত্যি ডিজিটাল বাংলাদেশে পরিণত হয়েছে। গ্রামে গঞ্জে প্রত্যন্ত অঞ্চলেও মানুষ ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধা ভোগ করছে। শুধু তাই নয় ইন্টারনেটে দ্রুত বর্ধনশীল দেশের একটি হলো বাংলাদেশ। কাজেই শেখ হাসিনার সেরা ১০ টি রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের একটি হলো বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রক্রিয়া গ্রহণ।
৭. জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে শূন্য সহিষ্ণুতাঃ ৯৬ সাল থেকে আওয়ামী লীগ ঘোষনা ক্রেছিল যে জঙ্গিবাদ সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের শূন্য সহিষ্ণুতা রয়েছে। কিন্তু প্রথম মেয়াদে সেটি আওয়ামী লীগ সঠিকভাবে পালন করতে পারেনি। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে সেটি করে এবং তা হলো জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদের বিরদ্ধে শূন্য সহিষ্ণুতা নীতি। এই নীতি গ্রহণ করে বাংলাদেশে যে ভারতের বিভিন্ন বিচ্ছিন্নিতাবাদী সংগঠনের আশ্রয়স্থল ছিল, যে পকেটুগুলো ছিল সেগুলো সমূলে উৎপাটন করেন শেখ হাসিনা। ফলে বাংলাদেশ যে জঙ্গিবাদ সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে শূন্য সহিষ্ণু সে বার্তাটি সারা বিশ্বে পৌঁছে যায়। যাতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি সাররাবিশ্বে উজ্জ্বল হয়। এটি আওয়ামী লীগ সভাপতির অন্যতম একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।
৯. ভারতের সংগে সুসম্পর্কঃ ভারত বাংলাদেশের অন্যতম প্রতিবেশী। শুধু মায়ানমারের কিছু অংশ ছাড়া পুরোটাই ভারত বেষ্টিত। ভারতের সংগে বাংলাদেশের সম্পর্ক ঐতিহাসিকভাবে গাঁথা। কিন্তু রাজনৈতিক টানাপোড়েনে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে একটি ভারত বিদ্বেষী মনোভাব জাগিয়ে তোলা হয়েছিল। কিন্তু শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে ভারতের সংগে রাজনোটিক আর্থিক বিভিন্ন খাতে সুসম্পর্ক গড়ে তোলেন। ফলে ভারতের সংগে পার্বত্যচুক্তি, ট্রানজিট, ছিটমহল বিনিময়সহ বিভিন্ন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ফলে ভারত বাংলাদেশ সম্পর্ক একটি নতুন মাত্রা পায়। যার ফলে দুইদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলিতা এবং সামাজিক সুসম্পর্ক তৈরি হয়েছে যা আমাদের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
৯. উন্নয়নের গনতন্ত্রঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দায়িত্ব গ্রহণ করেই বুঝেছিলেন গণতন্ত্র টেকসই হতে পারে না যদি মানুষের পেটে ভাত না থাকে। এজন্য উন্নয়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি রাষ্ট্র যদি নিজের পায়ে দাঁড়াতে না পারে তাহলে কখনো গণতন্ত্র টেকসই হতে পারে না। সেজন্যই তিনি দেশকে টেকসই উন্নয়নের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মডেল গ্রহণ করেন। গত দশ বছরে বাংলাদেশ সারাবিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল হয়েছে। গণতন্ত্রকে টেকসই করতে গেলে উন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই। এজন্যই তিনি স্বল্পমেয়াদী, মধ্যমেয়াদী এবং দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়নের বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করেছিলেন। তাই বাংলাদেশ আজ সারা বিশ্বের বিস্ময়। উন্নয়নের রোল মডেল। বিশ্বের দ্রুত বর্ধিষ্ণু আটটি দেশের একটি হলো বাংলাদেশ। বাংলাদেশ আজ স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। উন্নয়নের গণতন্ত্রের মডেলের কারণেই বাংলাদেশে আজ স্থিতিশীল এবং উন্নয়ন যুগপতভাবে চলছে বলে মনে করা হয়।
১০. অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পথ চিরতরে রুদ্ধ করাঃ দ্বিতীয় মেয়াদে ২০০৯ সালে দায়িত্বগ্রহণ করেই আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংবিধান সংশোধনের উদ্যোগ নেন। ৭২ সংবিধানের আলোকে সংবিধানকে ঢেলে সাজানোর প্রক্রিয়া শুরু করেন। সেখানে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকে রাষ্ট্রদ্রোহী অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয় এবং অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে সাংবিধানিকভাবে বৈধতা দেওয়ার সব প্রচেষ্টাই রোহিত করা হয়েছে। এটা একটা তৃতীয় বিশ্বের দেশের জন্য এক অনন্য সাংবিধানিক রক্ষাকবচ। ফলে বাংলাদেশে হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্রের রাজনীতির চির অবসান ঘটেছে। এটা শেখ হাসিনার সেরা দশ সিদ্ধান্তের একটি।
বাংলা ইনসাইডার/এসআর
মন্তব্য করুন
সাংগঠনিক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি সত্ত্বেও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে
মন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্যের স্বজনের প্রার্থিতা ঠেকাতে পারেনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী
লীগ। হাতেগোনা দু-একজন বাদে ভোটের মাঠে রয়ে গেছেন এ ধরনের বেশিরভাগ প্রার্থী। দলীয়
নির্দেশনা অমান্য করে যেসব মন্ত্রী-এমপির স্বজন উপজেলায় ভোট করছেন, তৃণমূল পর্যন্ত
অনেক নেতাকর্মীই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে সোচ্চার। তা সত্ত্বেও এ ইস্যুতে
এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যবস্থা নেয়নি আওয়ামী লীগ। গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের মৌখিক
বক্তৃতায় হুমকি-ধমকির মধ্যেই বিষয়টি সীমাবদ্ধ রয়েছে। এমনকি দলের কার্যনির্বাহী কমিটিতেও
এ নিয়ে আলোচনা হয়নি।
শুধু তাই নয়, দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী হওয়া প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে আগামী দিনেও কঠোর কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ার সম্ভাবনা বেশি। মূলত মন্ত্রী-এমপিসহ স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী নেতাদের নিয়ন্ত্রণে রেখে উপজেলা নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক করতেই আওয়ামী লীগ এমন কৌশল নিয়েছে বলে জানিয়েছেন একাধিক নেতা।
আরও পড়ুন: প্রচণ্ড তাপদাহে ১৪ দলে স্বস্তির বৃষ্টি
জানা গেছে, এবারের উপজেলা নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করতে শুরু থেকেই
সচেষ্ট ছিল আওয়ামী লীগ। এ কারণেই দলীয়ভাবে মনোনয়ন না দিয়ে সবার জন্য প্রার্থিতা উন্মুক্ত
করা হয়। তা সত্ত্বেও বিএনপি-জামায়াতসহ অনেক দল নির্বাচনের বাইরে থাকায় শেষ পর্যন্ত
এই নির্বাচন কতটা অংশগ্রহণমূলক হবে—তা নিয়ে সংশয় ছিল। বিশেষ করে সরকারের মন্ত্রী, সংসদ
সদস্য কিংবা স্থানীয়ভাব প্রভাবশালী নেতাদের হস্তক্ষেপে অনেক উপজেলায় তাদের পছন্দের
প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে যাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছিল।
বিশেষ করে মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যের পরিবারের সদস্য বা স্বজনরা অবাধে ভোটে দাঁড়াতে পারলে তাদের বিরুদ্ধে আর কেউ প্রার্থী হতে চাইতেন না। এমন বিবেচনা থেকেই ভোটের মাঠ সবার জন্য উন্মুক্ত রাখতে মন্ত্রী-এমপিদের স্বজন ও নিকটাত্মীয়দের নির্বাচনে অংশ নেওয়া থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা দেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা। তা সত্ত্বেও অনেক উপজেলায় ভোটের মাঠে রয়ে গেছেন প্রভাবশালী প্রার্থীরা। তা সত্ত্বেও দলীয় কৌশল সফল হয়েছে বলে মনে করেন আওয়ামী লীগ নেতারা।
আরও পড়ুন: নির্দেশ অমান্যকারী মন্ত্রী-এমপিদের সাধারণ ক্ষমা?
তাদের মতে, মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের ভোট করার নির্দেশনা দিয়ে দল
সবার জন্য একটি বার্তা দিতে চেয়েছে। তা হলো, আওয়ামী লীগ অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক উপজেলা
নির্বাচন চায়। হাতেগোনা দু-চারটি বাদে মন্ত্রী-এমপি পরিবারের সদস্যরা নির্বাচনে অংশ
নিচ্ছেন না। তাদের যেসব আত্মীয়স্বজন প্রার্থী হয়েছেন, তাদের প্রায় সবাই দীর্ঘদিন ধরে
দলীয় রাজনীতিতে অবদান রেখে আসছেন। তা ছাড়া দু-চারটি ব্যতিক্রম বাদে এবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়
নির্বাচিত হওয়ার সংখ্যা কম। সব মিলিয়ে উপজেলা নির্বাচনে নিয়ে দলীয় কৌশল সফল হয়েছে বলেই
অনেক কেন্দ্রীয় নেতার ধারণা।
এ বিষয়ে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন কালবেলাকে বলেন, ‘দলের বার্তা খুব পরিষ্কার, উপজেলা নির্বাচন যেন প্রভাবমুক্ত হয়। দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এমন বার্তাই স্পষ্ট করেছেন। নির্বাচনকে প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপমুক্ত রাখতেই এই কৌশল। এখন পর্যবেক্ষণ করতে হবে নির্বাচন কতটা প্রভাবমুক্ত হয়।’
আরও পড়ুন: মন্ত্রী-এমপিরা কেন দলের সিদ্ধান্ত মানছেন না
গত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের ৩০০ আসনের মধ্যে ৬২ টিতেই
স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচন করে জয়ী হন। স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের মধ্যে সিংহভাগই
আওয়ামী লীগ নেতা। ফলে জাতীয় নির্বাচন ঘিরে তৃণমূলে যে দ্বৈরথ তৈরি হয়েছে, উপজেলা নির্বাচনেও
তার প্রভাব পড়তে পারে বলে আওয়ামী লীগের আশঙ্কা। এ কারণেই দলীয় প্রতীকে প্রার্থী না
দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। নির্বাচনকে আরও গ্রহণযোগ্য ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে
মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাবমুক্ত রাখতে আত্মীয়-স্বজনদের নির্বাচন থেকে বিরত থাকতেও নির্দেশ
দেয় ক্ষমতাসীন দল। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নির্বাচনী লড়াইয়ে রয়ে গেছেন এ ধরনের প্রার্থীরা।
নির্বাচন কমিশনের তপশিল অনুযায়ী প্রথম ধাপে ১৫২ উপজেলায়, দ্বিতীয়
ধাপে ১৬১, তৃতীয় ধাপে ১১২ ও শেষ ধাপে ৫৫ উপজেলায় ভোট অনুষ্ঠিত হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার
তৃতীয় ধাপের মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিনের হিসাব অনুযায়ী অন্তত অর্ধশতাধিক মন্ত্রী ও এমপির
স্বজন নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। তবে ৪৮০টি উপজেলার মধ্যে এই সংখ্যাকে খুব বেশি বলে মনে
করছে না আওয়ামী লীগ। এ কারণেই ঢালাওভাবে ব্যবস্থা নেওয়া থেকে আপাতত বিরত থাকছে তারা।
গতকাল গণভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সভাপতি
শেখ হাসিনাও উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি
বলেন, ‘পারিবারিক ফর্মুলা কী? নিজের ছেলে-মেয়ে-স্ত্রী, এই তো। তারপর হিসাব করে দেখেন,
কয়জন ছেলেমেয়ে, কয়জন স্ত্রী দাঁড়িয়েছে। এর বাইরে তো পরিবার ধরা হয় না। আমাদের
কথা হচ্ছে নির্বাচন যেন প্রভাবমুক্ত হয়। মানুষ যেন স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারে।’
জানা গেছে, প্রতিটি সংসদীয় আসনে এক বা একাধিক উপজেলা রয়েছে। এলাকার
রাজনীতিতে এমপির পাশাপাশি উপজেলা চেয়ারম্যানের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। দ্বাদশ জাতীয়
সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েও অনেকে উপজেলা চেয়ারম্যানদের কাছে হেরেছেন।
এ কারণে উপজেলায় নিয়ন্ত্রণ রাখতে মরিয়া হয়ে ওঠেন সংসদ সদস্যরা। নিজ পরিবার কিংবা বলয়ের
লোককে উপজেলা চেয়ারম্যান করতে সচেষ্ট তারা।
এ পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরেই মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনদের নির্বাচনে
অংশ নেওয়া থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে
কেউ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার না করলে তাদের তালিকা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও দলের
সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের হুঁশিয়ার করে দেন।
সূত্র জানায়, এরপরই মন্ত্রী এমপিদের স্বজনদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ
জমা পড়ে দলের দপ্তরে। অনেকে সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে
লিখিত ও মৌখিকভাবে অভিযোগ করেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে দলের কার্যনির্বাহী সংসদের সভার আলোচ্যসূচিতেও
উপজেলা নির্বাচন ইস্যুটি অন্তর্ভুক্ত হয়। সাংগঠনিক সম্পাদকরা প্রতিবেদনও চূড়ান্ত করেন।
তবে গত মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত নির্বাহী সংসদের সভায় এ বিষয়ে কোনো আলোচনাই হয়নি।
বৃহস্পতিবার (০২ মে) সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাও উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের প্রার্থী হওয়ার প্রশ্নে অনেকটা নমনীয় মনোভাব ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, আমি বলেছিলাম (মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের নির্বাচন থেকে বিরত থাকতে)। কারণ হচ্ছে, আমরা চাইছি, নির্বাচনটা প্রভাবমুক্ত যেন হয়, মানুষ যেন স্বাভাবিকভাবে ভোটটা দিতে পারে। সেটাই হচ্ছে আমাদের লক্ষ্য।’
আরও পড়ুন: ভোটের মাঠেই রয়েছেন মন্ত্রী-এমপির স্বজন ও বিএনপির প্রার্থীরা
এসব কারণে অনেকের ধারণা, মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা
নেওয়ার হুমকি ও হুঁশিয়ারি রাজনৈতিক কৌশল।
আওয়ামী লীগের এক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘মূলত বিএনপি নির্বাচনে
আসবে না জেনেই নির্বাচনকে জমজমাট ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে দলীয় প্রতীক তুলে দেওয়ার
সিদ্ধান্ত দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। নির্বাচনে যদি মন্ত্রী-এমপিদের স্বজন
ঢালাওভাবে অংশ নেয়, তবে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতার পরিবর্তে একপেশে হয়ে যাবে—এমন আশঙ্কায়
তিনি ওই কৌশল নিয়েছিলেন।’
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন কালবেলাকে বলেন,
‘আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তো বার্তা দিয়েই দিয়েছেন। তার বার্তা
অনুযায়ী নির্বাচন যে-ই করুক, কেউ প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না। নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসন
কঠোর ভূমিকা পালন করবে। উপজেলা নির্বাচনে কেউ প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না, যেহেতু
দল কঠোর অবস্থানে রয়েছে।’
প্রভাবশালী নেতা আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
১৪ দল আওয়ামী লীগ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
মন্তব্য করুন
ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক
মন্তব্য করুন
বিএনপি ধর্মঘট রাজনীতির খবর তারেক জিয়া
মন্তব্য করুন
সাংগঠনিক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি সত্ত্বেও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্যের স্বজনের প্রার্থিতা ঠেকাতে পারেনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। হাতেগোনা দু-একজন বাদে ভোটের মাঠে রয়ে গেছেন এ ধরনের বেশিরভাগ প্রার্থী। দলীয় নির্দেশনা অমান্য করে যেসব মন্ত্রী-এমপির স্বজন উপজেলায় ভোট করছেন, তৃণমূল পর্যন্ত অনেক নেতাকর্মীই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে সোচ্চার। তা সত্ত্বেও এ ইস্যুতে এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যবস্থা নেয়নি আওয়ামী লীগ। গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের মৌখিক বক্তৃতায় হুমকি-ধমকির মধ্যেই বিষয়টি সীমাবদ্ধ রয়েছে। এমনকি দলের কার্যনির্বাহী কমিটিতেও এ নিয়ে আলোচনা হয়নি।
ওবায়দুল কাদের বেশ কদিন ধরে দাপটে ছিলেন। তিনি প্রতিদিন সংবাদ সম্মেলন করতেন এবং উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কঠোর সতর্কবার্তা জারি করতেন। বিশেষ করে উপজেলা নির্বাচনে আত্মীয় স্বজনরা যেন প্রার্থী না হয় সে ব্যাপারে তিনি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছিলেন এবং যারা দলের সিদ্ধান্ত মানবেন না তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন।
বিএনপি এখন দিশেহারা দিগ্বিদিকহীন একটি রাজনৈতিক দল। দলটি কী করছে, কী বলছে সে সম্পর্কে তাদের নিজেদেরই যেন কোন হিসেব নেই। গত ২ দিন ধরে বিএনপির নেতারা এক নৈব্যক্তিক অবস্থায় আছেন। তারা কেউই কোন কথা বলছেন না। দলের রুটিন কার্যক্রম অর্থাৎ সভা সমাবেশ ছাড়া দলের নেতাদেরকে আগ্রহ নিয়ে কোনো তৎপরতা চালাতে দেখা যাচ্ছে না।