নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:০১ পিএম, ০৩ জুন, ২০১৯
একসময় তারা আওয়ামী লীগের অনেক ঘনিষ্ঠ ছিলেন। আওয়ামী লীগ সভাপতিরও আস্থাভাজন এবং ঘনিষ্ঠ হিসেবেই তাদের পরিচিতি ছিল। কিন্তু একসময় আস্তে আস্তে তাদের সঙ্গে দলের দূরত্ব তৈরি হয়, কক্ষ থেকে তারা যেন ছিটকে পড়েন। কেন তাদের এই কক্ষচ্যুতি তা কেউ জানে না। রাজনীতিতে তারা একসময় সক্রিয় ছিলেন, রাজনীতি থেকেও তারা আস্তে আস্তে দূরে সরে যাচ্ছেন। এর কারণ কেউ জানে না। এরকম কয়েকজন রাজনীতিবিদকে নিয়েই আমাদের আজকের এই প্রতিবেদন-
সারাহ বেগম কবরী
সারাহ বেগম কবরী ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ যে অভূতপূর্ব বিজয় অর্জন করেছিল সেই নির্বাচনে থেকে তিনি নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন থেকৈ মনোনয়ন পেয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছিলেন। ঐ আসনে শামীম ওসমানকে বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি সারাহ বেগম কবরীকে পছন্দ করেছিলেন। চলচ্চিত্রে মিষ্টি মেয়ে হিসেবে পরিচিত কবরী বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। যে সময়ে আওয়ামী লীগের জন্য সাংস্কৃতিক কর্মী খুঁজে পাওয়া দুস্কর ছিল, সেসময় কবরী এবং চিত্রপরিচালক আলমগীর কুমকুমের মতো কয়েকজন সাংস্কৃতিক জোট থেকে আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক চেতনাকে উর্ধ্বে তুলে ধরেছিলেন। কিন্তু ২০০৮ এর নির্বাচনের পর থেকে কবরীর সঙ্গে আওয়ামী লীগ সভাপতির দূরত্ব তৈরি হতে থাকে। ২০১৪ এর নির্বাচনে তিনি মনোনয়ন পাননি। এসময় ধারণা করা হয় যে কবরী নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের বদলে বাম এবং প্রগতিশীল গ্রুপগুলোর সঙ্গে বেশি মাখামাখি করেছিলেন। সেসময় তিনি আওয়ামী লীগের কঠোর সমালোচকদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখেছেন। এগুলোর কারণেই আওয়ামী লীগ সভাপতির সঙ্গে তার সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে। এখন তিনি রাজনীতিতে থেকেও নেই।
ডা. এইচ বি এম ইকবাল
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ যখন ২১ বছর পর নির্বাচিত হয় সেসময় ডা. এইচ বি এম ইকবাল তেজগাঁও রমনার মতো গুরুত্বপূর্ণ আসন থেকে মনোনয়ন পেয়েছিলেন, নির্বাচিত হয়েছিলেন। সেসময় তিনি ঢাকা মহানগরীতে আওয়ামী লীগের অন্যতম আলোচিত এমপিদের মধ্যে তিনি ছিলেন একজন। কিন্তু ২০০১ এ আওয়ামী লীগের পতনের পর থেকেই ইকবালের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সম্পর্কের টানাপোড়েন শুরু হতে থাকে। অভিযোগ আছে যে, ডা. এইচ বি এম ইকবাল সেসময় তার ব্যবসা রক্ষার জন্য হাওয়া ভবনের সঙ্গে যোগসাজশ করেছিলেন। ওয়ান ইলেভেনের সময়ে ইকবাল পালিয়ে দুবাই চলে যান এবং সেখানে তিনি আত্মগোপনে ছিলেন। এসময় তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ উত্থাপন হলেও তিনি ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিলেন। ২০০৮ এ আবার ফিরে এসে আওয়ামী লীগে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করলেও তাতে ব্যর্থ হন। এখন তিনি রাজনীতিতে নেই, ব্যবসা বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত। দল এবং সভাপতির সঙ্গে তার আগের সেই ঘনিষ্ঠতা নেই।
নুরুল ফজল বুলবুল
নুরুল ফজল বুলবুল জাতীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পিছনে যেসব নেতারা সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিল তার মধ্যে বুলবুল ছিলেন অন্যতম। ১৯৯৬ এর নির্বাচনের পর তিনি তৎকালীন অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলেন এবং এখান থেকেই তার ব্যবসায়িক স্ফীতি ঘটে। তিনি সেসময় ব্যাংকের পরিচালক এবং বিভিন্ন ব্যবসায় অংশীদারিত্ব গ্রহণ করেন। ২০০১ এ নির্বাচনের পর তার সঙ্গে আওয়ামী লীগের দূরত্ব তৈরি হয়। একসময় তিনি রাজনীতি থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেন। অনেকের ধারণা যে ২০০১ সালে ব্যবসাকে অটুট রাখার জন্যে হাওয়া ভবনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়েই নিজেকে রাজনীতি থেকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন। এখন তিনি নিজেকে পেশাজীবী হিসেবেই পরিচিত করান। সরাসরি রাজনৈতিক তৎপরতার মধ্যে তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায় না।
ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ
২০০১ এ আওয়ামী লীগের বিপর্যয় ঘটে, বিপর্যয়ের পরে যারা দলে এসে শক্তিশালী অবস্থান গ্রহণ করেছিলেন তাদের মধ্যে ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ ছিলেন একজন। আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং শেখ হাসিনার সঙ্গে তার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। তিনি শেখ হাসিনার এবং দলের বিভিন্ন মামলার দেখভাল করতেন। কিন্তু ওয়ান ইলেভেনের ঝড়ে সবকিছু ওলট পালট হয়ে যায়। সেসময় তিনি দুদকের টোপে পা দেন এবং শেখ হাসিনার মামলার সমস্ত ফাইল ফিরিয়ে দেন। শুধু আওয়ামী লীগ সভাপতিকে নয়, এই ঘটনা পুরো আওয়ামী লীগকে স্তম্ভিত করে দেয়। এরপর থেকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদের কোনো সম্পর্ক নেই বললেই চলে। মজার ব্যাপার হলো, বিএনপি যে ড. ইয়াজউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে ২২ জানুয়ারি নির্বাচনের আয়োজন করেছিল, সেই নির্বাচনে ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদকে ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর থেকে মনোনয়ন দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। সেই ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদই ওয়ান ইলেভেনের সময়ে শেখ হাসিনার দুর্নীতি, সেসময়ের রাজনীতিবিদদের দুর্নীতি নিয়ে দুদকের সঙ্গে হাত মেলান। ফলে রাজনীতিতে তার দূরত্ব তৈরি হয়। আওয়ামী লীগের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্কের খবর জানা যায় না। যদিও তিনি বহুবারই চেষ্টা করেছেন সম্পর্ককে স্বাভাবিক করার জন্য।
এমন অনেকেই আছেন যারা নিজেদের রাজনৈতিক ভুল সিদ্ধান্তের কারণে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছেন এবং মূলধারার রাজনীতি থেকে সরে যেতে বাধ্য হয়েছেন।
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ মোহাম্মদ সাঈদ খোকন ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের রুহুল কবির রিজভী
মন্তব্য করুন
নাশকতার অভিযোগে রাজধানীর পল্টন থানায় দায়ের করা মামলায় বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ও ঢাকা মহানগর বিএনপির সিনিয়র সদস্য ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।
রোববার (১৯ মে) ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ আস-সামছ জগলুল হোসেন এ আদেশ দেন।
এ মামলায় উচ্চ আদালত থেকে জামিনে ছিলেন ইশরাক। আজ আদালতে হাজির হয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে জামিন বর্ধিত করার আবেদন করেন তিনি। শুনানি শেষে আদালত তার জামিন বাড়ানোর আবেদন বাতিল করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
সংশ্লিষ্ট আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর তাপস কুমার পাল বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।
নাশকতা মামলা বিএনপি ইশরাক হোসেন
মন্তব্য করুন
‘ব্যাংকে সাংবাদিক ঢুকবে কেন’-আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের সমালোচনা করেছেন রুহুল কবির রিজভী। বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেছেন, ব্যাংকে সাংবাদিক ঢুকবে না, তাহলে কী মাফিয়া, মাস্তান, ঋণ খেলাপিরা ঢুকবে?
রোববার (১৯ মে) রাজধানীর নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আর্থিক সহায়তা প্রদান অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের কাছে তিনি এ প্রশ্ন রাখেন। এসময় গত ১৮ এপ্রিল সন্ধ্যায় মধুখালী উপজেলার ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লী গ্রামের কালী মন্দিরে আগুনের ঘটনায় হামলায় নিহত ২ নির্মাণশ্রমিকের পরিবারকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান পক্ষ থেকে সহায়তা প্রদান করা হয়।
রিজভী আরও বলেন, যারা ব্যাংকের টাকা লুটপাট করে সম্পদের মালিক হয়েছেন, দেশের বাইরে বাড়ি করেছেন তাদের কথা সাংবাদিকরা যেন না জানতে পারেন তার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।
‘ব্যাংক মাফিয়া মাস্তান ঋণখেলাপি
মন্তব্য করুন
সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেছেন, দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ভয়াবহ। সামনের সংকট আরো প্রকট আকার ধারণ করতে পারে। সে জন্যই সাংবাদিকদের বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এটা সরকারের একটা গণবিরোধী সিদ্ধান্ত এবং যা অবিলম্বে প্রত্যাহার করা উচিত।
রোববার (১৯ মে) দুপুরে রংপুর সার্কিট হাউজে এসে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় কালে তিনি এসব কথা বলেন।
এর আগে দুপুরে জিএম কাদের ঢাকা থেকে বিমানযোগে সৈয়দপুর বিমান বন্দরে যান। সেখান থেকে সরাসরি রংপুর সার্কিট হাউজে পৌঁছান। সেখানে জেলা প্রশাসক মোবাস্বের হাসান, পুলিশ সুপার ফেরদৌস আলম চৌধুরী, মহানগর জাপার সাধারণ সম্পাদক এস এম ইয়াসির, জেলা সভাপতি আলাউদ্দিন মিয়াসহ প্রশাসনের ও পার্টির নেতাকর্মীরা তাকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান।
পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে জিএম কাদের বলেন, সামনে অর্থনৈতিক সংকটের কারণে ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। দেশের রিজার্ভ এখন ১৩ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এসেছে, যা এ যাবৎ কালের সর্বনিম্ন।
তিনি আরও বলেন, সরকার যতই রির্জাভের কথা বলুক আসলে ১০ বিলিয়ন ডলারই আছে বলে আমার মনে হয় না। এসব আমাদের জন্য অশুভ সংকেত। দেশে টাকা নেই প্রতিদিন রিজার্ভ কমে যাচ্ছে। দেশে বিনিয়োগ আসছে না। যে অর্থ আসে তা বিদেশে চলে যাচ্ছে। ফলে ডলারের এবং দেশীয় টাকার চরম অবমূল্যায়ন হচ্ছে। দিন দিন টাকার ভ্যালু কমে যাচ্ছে।
জিএম কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ অনেক বড় বড় কথা বলে। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে আমি রেসপেক্ট করি। কিন্তু তিনি যেসব কথা বলছেন এটা জনগণ আর বিশ্বাস করে না। আওয়ামী লীগ আগে জনগণকে ধারণ করলেও এখন তারা জনগণের ঘাড়ে চেপে বসেছে। আগে আওয়ামী লীগ একটা গাছের মতো ছিল। জনগণ যেখানে বিশ্রাম নিতো। এখন সেটা পরগাছা হয়ে গেছে। তারা দেশের জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
মন্তব্য করুন
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল এবং একে অন্যের বিরুদ্ধে কাদা ছোড়াছুড়ি যেন কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না। নির্বাচন পরবর্তী কোন্দল বন্ধে বিভিন্ন রকম উদ্যোগও ব্যবস্থা গ্রহণ করছে আওয়ামী লীগ। দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই একাধিক বার দলীয় কোন্দল বন্ধের জন্য তাগাদা দিয়েছেন। কিন্তু কোন কিছুতেই কাজ হচ্ছে না। বরং আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। সাংগঠনিক অবস্থা রীতিমতো ভেঙে পড়েছে। এই কোন্দল এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন বা অর্জন প্রশ্নবিদ্ধ করছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাই। দলের এই কোন্দল এতদিন তৃণমূল পর্যায় থাকলেও সেটি এখন কেন্দ্রীয় নেতৃত্বেও শুরু হয়েছে।