নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:০১ পিএম, ১৭ জুন, ২০১৯
একটা সময় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন জেলায় জেলায় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন হেভিওয়েটদের বিরোধ ছিল হাতে গোনা। দুয়েকটা এলাকাতেই এরকম শীর্ষ নেতাদের বিরোধ ছিল। এই বিরোধের কথা জানতো পুরো দেশ। যেমন নারায়নগঞ্জের শামীম ওসমান ও আইভী রহমানের বিরোধ কিংবা চট্টগ্রামের প্রয়াত আক্তারুজ্জামান চৌধুরী ও প্রয়াত মহিউদ্দীন চৌধুরীর বিরোধ। কিন্তু সময় যত গড়াচ্ছে এবং আওয়ামী লীগের ক্ষমতার মেয়াদ যত দীর্ঘস্থায়ী হয়েছে তত আওয়ামী লীগের হেভিওয়েটদের বিরোধ এলাকায় এলাকায় ছড়িয়ে যাচ্ছে। এখন দেশের প্রায় সব জায়গাতেই মন্ত্রী- এমপি এবং প্রভাবশালীরা দ্বিধা বিভক্ত। শীর্ষ স্থানীয় নেতাকর্মীদের বিরোধে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা প্রায় দিশেহারা। কাউন্সিলের আগে এই বিরোধ নিস্পত্তি করা অত্যন্ত জরুরি হয়ে গেছে বলে আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা মনে করছেন। আওয়ামী লীগের বিরোধ এখন সবগুলো জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে। তবে প্রধান যে বিরোধগুলোর দিকে দৃষ্টি পড়েছে দলের হাইকমান্ডের এবং যে বিরোধগুলো অনতিবিলম্বে মিমাংসা হওয়ার প্রয়োজন বলে মনে করছে সবাই সেগুলো হলো:
মো: নাসিম- ডা. হাবিবে মিল্লাত: মো. নাসিম আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট নেতা এবং একসময়ের সিরাজগঞ্জের আওয়ামী লীগের একচ্ছত্র অধিপতি ছিলেন। এই জায়গায় তাকে চ্যালেঞ্জ করছেন প্রধানমন্ত্রী কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের ছোট ননদ শারিতা মিল্লাত রিতুর স্বামী হাবিবে মিল্লাত। হাবিবে মিল্লাত সিরাজগঞ্জ সদর আসন থেকে ২০১৪ সালে সংসদ নির্বাচন করেছেন। কিন্তু এখনো তাদের মধ্যে প্রভাব নিয়ে লড়াইয়ের খবর পাওয়া যাচ্ছে। সর্বশেষ ঈদের পর যুবলীগের কাউন্সিলে মো. নাসিমপন্থী এবং হাবিবে মিল্লাতপন্থীদের মধ্যে রীতিমতো হৈ হট্টগোল হয়ে কাউন্সিল বন্ধের উপক্রম হয়েছিল। যুবলীগের পক্ষ থেকে সেখানে ভোট দেওয়া হয়, ভোটে যুবলীগের চেয়ারম্যান পদে মোহাম্মদ নাসিমের পছন্দের ব্যক্তি নির্বাচিত হন । অন্যদিকে হাবিবে মিল্লাতের পছন্দের ব্যক্তি সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হয়। দিন যতই যাচ্ছে, সিরাজগঞ্জের আওয়ামী লীগ দুইভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ছে।
আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এবং শাজাহান খান: দ্বন্দ্ব মিইয়ে গিয়েছিল, মাঝখানে ধারণা করা হয়েছিল যে বাহাউদ্দিন নাছিম মনোনয়ন না পাওয়ার কারণে এই দ্বন্দ্বের অবসান ঘটবে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এই দ্বন্দ্ব ব্যাপক বিস্তৃত হয়েছে। সম্প্রতি বাহাউদ্দিন নাছিম মাদারীপুর সফরে গিয়ে শাজাহান সম্বন্ধে বেশকিছু বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন। শাজাহান খান তারেক জিয়ার কাছে বিএনপির পক্ষে মনোনয়ন চেয়েছিলেন বলে তিনি অভিযোগ করেন। যদিও শাজাহান খান এর প্রতিক্রিয়া জানাননি। কিন্তু দলের হাই কমান্ডের কাছে তিনি বাহাউদ্দিন নাছিমের বিরুদ্ধে বিচার চেয়েছেন।
এনামুল হক শামীম- নাহিম রাজ্জাক: শরীয়তপুরে এনামুল হক শামীম এবার প্রথমবারের মতো এমপি হয়েছেন। এমপির পাশাপাশি তিনি উপমন্ত্রী হয়েছেন। অন্যদিকে শরীয়তপুরের প্রধান নেতা আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে নাহিম রাজ্জাক গত দুইবছর ধরে এমপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এবার এনামুল হক শামীম এমপি এবং উপমন্ত্রী হওয়ার পরে নাহিম রাজ্জাকের সঙ্গে তার বিরোধ প্রকাশ্য হয়ে উঠছে। বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তার নিয়োগ, বদলি ইত্যাদি নিয়ে বিরোধের খবর পাওয়া গেছে। বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড এবং বরাদ্দ নিয়েও দুই নেতা পরস্পরবিরোধী অবস্থান নিয়েছেন বলেও একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছেন।
শ ম রেজাউল করিম এবং আবদুল আউয়াল: পিরোজপুর থেকে আবদুল আউয়ালকে বাদ দিয়ে শ ম রেজাউল করিমকে মনোনয়ন দিয়ে চমক সৃষ্টি করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। কিন্তু মনোনয়ন পাওয়ার পর যখন তিনি গিয়েছেন তখন তার উপর আক্রমণ করেছিল আবদুল আউয়ালের সমর্থক লোকজন। ধারণা করা হয় এজন্যই শ ম রেজাউল করিমকে পূর্ণমন্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে পিরোজপুরের কর্তৃত্ব দিতে চেয়েছিল আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। কিন্তু এখনও পিরোজপুরের আওয়ামী লীগ দ্বিধাবিভক্ত। এখনও মওলানা আবদুল আউয়াল শ ম রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে নানারকম অপততপরতায় লিপ্ত বলে খবর পাওয়া গেছে। শ ম রেজাউল করিমের ক্ষমতার ব্যাপ্তি ঘটলেও পিরোজপুরে এখনও তিনি বিভক্ত আওয়ামী লীগের নেতা।
ইকবালুর রহিম ও খালিদ মাহমুদ চৌধুরী: ইকবালুর রহিম ও খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ২০০৮ সাল থেকেই এমপি। দুজনই তরুণ নেতা হিসেবে শেখ হাসিনার আস্থাভাজন। কিন্তু সমস্যা হলো দুজন দুজনকে সহ্য করতে পারেন না। দুজনের মধ্যে বিরোধ অনেকদিন ধরেই। এবার খালেদা নৌ-পরিবহন মন্ত্রীর দায়িত্ব পাবার পর ইকবালুর রহিম একটু কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। কিন্তু ইকবালুর রহিমও হুইপ। কাজেই দুজনার দ্বন্দ্ব ক্রমশ প্রকাশ্য হয়ে উঠেছে।
বদরুদ্দিন কামরান ও আবদুল মোমেনঃ সিলেটে আওয়ামী লীগের একটা বড় অংশ মনে করে সিলেটে মেয়র পদে কামরানকে হারানোর পিছনে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের অবদান ছিল। বর্তমানে মুহিতের ছোটভাই ড. মোমেন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেও আরিফের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখছেন বলে স্থানীয় আওয়ামী লীগের অভিযোগ। আর এটা নিয়েই বদরুদ্দিন কামালের সঙ্গে আবদুল মোমেনের বিরোধ। এটা নিয়ে কামরানের সঙ্গে মোমেনের বিরোধ প্রকাশ্য হয়ে উঠতে শুরু করেছে। এই দুই নেতার বিরোধের জন্য সিলেট আওয়ামী লীগের একটি বিভক্ত নাম।
এরকম বিরোধ ক্রমশ দানা বাধছে আওয়ামী লীগে বিভিন্ন জেলাতেই। আওয়ামী লীগের একাধিক দায়িত্বশীল নেতা বলেছেন তৃণমূলের মধ্যে বিরোধ নেই। বরং বড় বড় নেতাদের বিরোধের কারণেই তাঁরা বিভক্ত হয়ে পরছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের আগামী কাউন্সিলের প্রধান লক্ষ্য হলো এই বিরোধগুলোকে আর বাড়তে না দেয়া। বিরোধগুলোকে দ্রুত মিটমাট করে ফেলা। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন যে, আওয়ামী লীগ একটি বড় দল। বড় দলে এ ধরণের বিরোধ থাকবেই। তবে আমরা এধরণের অভ্যন্তরীণ বিরোধকে প্রশ্রয় দিবো না। এ ব্যাপারে আমরা একটি ঐক্য প্রচেষ্টা করব বলে আশা করছি।
বাংলা ইনসাইডার
মন্তব্য করুন
কাউন্সিল বিএনপি তারেক জিয়া মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বেগম খালেদা জিয়া
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
চার ধাপে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এ পর্যন্ত (তৃতীয় ধাপ) ২০৪ জনকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় তাদের বহিষ্কার করা হয়।
এরমধ্যে তৃতীয় ধাপের নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় তৃণমূলের ৫৫ নেতাকে বহিষ্কার করে বিএনপি। আর প্রথম ধাপে ভোটের জন্য ৮০ জন, দ্বিতীয় ধাপে ৬৯ জনকে বহিষ্কার করে দলটি।
বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে উপজেলাসহ কোনো নির্বাচনে অংশ না নিচ্ছে না বিএনপি। গত ১৬ এপ্রিল দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, শেখ হাসিনার সরকার ও তার আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন, বেসামরিক ও পুলিশ প্রশাসন একটি অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করতে পারে না। অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিবেশ নেই। তাই উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেবে না দল।
দেশে চার ধাপে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তফসিল অনুযায়ী, গত ৮ মে প্রথম ধাপে ১৩৯টি উপজেলায় ভোট গ্রহণ হয়। এই ধাপের নির্বাচনে বিএনপির বহিষ্কৃত ৭ জন চেয়ারম্যান পদে, ৩ জন ভাইস চেয়ারম্যান পদে জয়লাভ করে বলেও জানা যায়।
দ্বিতীয় ধাপের ১৬১টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের ভোট গ্রহণ করা হবে ২১ মে। তৃতীয় ধাপে ১১২টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচন ২৯ মে অনুষ্ঠিত হবে। চতুর্থ ধাপের উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ৫ জুন।
মন্তব্য করুন
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরে যেতে পারেন এমন গুঞ্জন রয়েছে। তিনি জেল থেকে বেরিয়ে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে মহাসচিবের দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। বেগম খালেদা জিয়া এই বিষয়টি নিয়ে তাকে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন। তবে তারেক জিয়া এ বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া দেননি বলে জানা গিয়েছে। বরং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যদেরকে তারেক জিয়া জানিয়েছেন, কাউন্সিলের আগে বিএনপিতে নেতৃত্বের পরিবর্তন নয়। তবে বিএনপির কাউন্সিল কবে, কীভাবে হবে- এ সম্পর্কে কোন বিস্তারিত তথ্য জানা যায়নি।
সরকারের বিরুদ্ধে নতুন করে আন্দোলন শুরু করার লক্ষ্যে প্রস্তুতি গ্রহণ করছে দীর্ঘ দিন ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি। তারা সাম্প্রতিক সময়ে আবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক শুরু করেছে। তবে এসব বৈঠকে যুগপৎ আন্দোলনের কথা বলা হলেও বিএনপি এখন পর্যন্ত সরকার বিরোধী কোন জোট করতে রাজি নয়। ২০ দলীয় জোট আনুষ্ঠানিকভাবে ভেঙে যাওয়ার পর বিএনপি এখন পর্যন্ত জোটগত ভাবে কোন আন্দোলন করেনি। তবে বিভিন্ন সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তারা সম্পর্ক রেখেছে। ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত এই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তারা যুগপৎ আন্দোলন করেছিল। এখন আবার নতুন করে যুগপৎ আন্দোলন শুরু করার জন্য বিএনপির পক্ষ থেকে এই সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে যোগাযোগ করা হচ্ছে। তবে রাজনৈতিক দলগুলো বিএনপির ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব দেখাচ্ছে না।