নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:২০ পিএম, ১৮ জুলাই, ২০১৯
জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ মারা যাবার পর আস্তে-আস্তে দলটির মধ্যে জমে থাকা উত্তেজনা বাড়তে শুরু করেছে। এরশাদের অসুস্থ্যতাজনিত কারণে বিষয়গুলো এতদিন চাপা থাকলেও তা ক্রমান্বয়ে উদগিরিত হচ্ছে। এরশাদের জাপায় এতোদিন তিনটি ধারা বিরাজমান থাকলেও এখন তা দুটি ধারায় রূপ নিয়েছে। একদিকে এরশাদপত্নী জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় উপনেতা বেগম রওশন এরশাদ এমপি আর অন্যদিকে এরশাদের সহোদর এবং জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জিএম কাদের এমপি। যদিও জাপা চেয়ারম্যান এরশাদের অনুসারীরা বর্তমানে জিএম কাদেরের পক্ষেই আছেন।
জাপা চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ মারা যাবার পরে পার্টির মহাসচিব বদল নিয়েও বেশ কাঁনাঘুষা হচ্ছে। সাবেক মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারকে পুনরায় মহাসচিব পদে বসানোর জন্য পার্টির একটি পক্ষ সক্রিয়। আর ঐ পক্ষটি বর্তমানে জিএম কাদেরকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার জন্যও প্রস্তুত। জাপার ঐ ধারাটির ধারনা জিএম কাদেরের একার পক্ষে জাতীয় পার্টি টেনে নেয়া সম্ভব নয়, তাই শক্ত একজন মহাসচিব প্রয়োজন দলের জন্য। আর সামগ্রিক এসব বিবেচনায় সাবেক মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদারকেই পছন্দ তাদের। তাছাড়া রুহুল আমিন হাওলাদার জিএম কাদেরেরও অনুগত। জানা গেছে, বর্তমানে প্রেসিডিয়ামের একটি শক্তিশালী অংশ জিএম কাদের বিরোধী। ঐ অংশটি বেগম রওশন এরশাদের পক্ষে কাজ করছেন।
জাপার একাধিক সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলা ইনসাইডারকে বলেন, জাপাকে আঞ্চলিক বলয় থেকে বের করে আনতে হবে। রংপুর কেন্দ্রীকতা থেকে এই মুর্হুতে জাতীয় পার্টিকে বের করে আনতে না পারলে ভবিষ্যতে পার্টি হুমকির মুখে পড়বে। তাদের দাবী, জাপা চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদকে রংপুরে সমাহিত করার মধ্য দিয়ে নতুন করে প্রমাণ হলো জাপা আসলেই আঞ্চলিক একটি দল।
এদিকে, জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতার শূণ্য আসনটি পুরণ করতে নতুন করে টাগ অব ওয়্যার শুরু হয়েছে দলটির মধ্যে। যদিও বর্তমান বিরোধী দলীয় উপনেতা বেগম রওশন এরশাদকে পুনরায় বিরোধী দলীয় নেতার আসনে বসাতে চান জাপার সাংসদরা। তবে রওশন এরশাদ বিরোধীরা কোনভাবেই বিষয়টি স্বাভাবিকভাবে নিচ্ছেন না। কারণ তাদের বদ্ধমূল ধারনা, দশম জাতীয় সংসদে এরশাদকে সাইড লাইনে বসিয়ে সরকারের সাথে আতাঁত করে বেগম রওশন এরশাদ বিরোধী দলীয় নেতা হয়েছিলেন, যা এরশাদের জন্য ছিল চরম অবমাননাকর। এসব বিষয় মাথায় রেখে জাপার রওশন বিরোধীরা বিরোধী দলীয় নেতা প্রশ্নে ভিন্ন চিন্তা করছেন বলে জানা গেছে। শেষ পর্যন্ত বেগম রওশন এরশাদ বিরোধী দলীয় নেতা নির্বাচিত হলেও উপনেতা প্রশ্নে জাপায় বড় ধরনের বিরোধ তৈরী হবে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। বর্তমানে বিরোধী দলীয় উপনেতা হতে আগ্রহী বেশ কয়েকজন প্রার্থী রয়েছেন। তাদের মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য বর্তমান বিরোধী দলীয় চীফ হুইপ ও পার্টির মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা, কাজী ফিরোজ রশীদ এমপি, ফখরুল ইমাম ও ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এবং সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা। এদের মধ্যে কাজী ফিরোজ রশিদের পাল্লা আপাতত ভারী বলে জানা গেছে। এসব সমীকরণে শেষ অবধি এরশাদের হাতে গড়া জাতীয় পার্টির ভাগ্য কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় সেটিই এখন দেখার বিষয়।
মন্তব্য করুন
ডোনাল্ড লু বিএনপি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ চীন সফর ভারত যুক্তরাষ্ট্র
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছিল বিএনপির আশা ভরসার কেন্দ্রস্থল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করবে; মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নির্দলীয়, নিরপেক্ষ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায়ে সরকারকে বাধ্য করবে; মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কারণ সরকার শেষ পর্যন্ত নির্বাচন করতে পারবে না- এমন বক্তব্যগুলো বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচনের আগে বহুল প্রচারিত ছিল। বিএনপির সব নেতারা প্রকাশ্যেই এ কথা বলত।
বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যখন র্যাবের উপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, বাংলাদেশকে গণতন্ত্র সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানায় না তখন বিএনপি নেতারা উল্লাসে ফেটে পড়েছিলেন। তারা দলীয় কার্যালয়ে মিষ্টিমুখের ব্যবস্থাও করেছিলেন।
আবার ডোনাল্ড লু নির্বাচনের আগে যখন বাংলাদেশ সফর করেছিলেন এবং ভিসা নীতি প্রয়োগ করেছিলেন তখন বিএনপি নেতাদের প্রকাশ্যে মার্কিন বন্দনা করতে দেখা গেছে। ২৮ অক্টোবরের আগ পর্যন্ত প্রায় প্রতিদিনই মার্কিন দূতাবাসে বা মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসের বাসভবনে বিএনপির নেতাদের আনাগোনা ছিল। তারা সেখানে চা চক্রে মিলিত হয়েছেন, নৈশভোজে মিলিত হয়েছেন এবং বিভিন্ন রকমের শলাপরামর্শ করেছেন।
পিটার ডি হাস গত বছরের ১০ অক্টোবর বিএনপি যখন সমাবেশ করতে পারেনি তখনও একতরফা বিবৃতি দিয়েছিলেন। এছাড়াও তিনি বিতর্কিত সংগঠন মায়ের ডাকের এক নেতার বাসায় গিয়েছিলেন এবং সেখানে তিনি বিএনপির প্রতি এক ধরনের সহানুভূতি জানিয়েছিলেন। এভাবেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির উপর এক ধরনের প্রচ্ছন্ন সমর্থন এবং সহানুভূতি দেখিয়েছিল।
অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই সহানুভূতি এবং পরোক্ষ সমর্থনের কারণেই বিএনপির আন্দোলনের পালে হাওয়া লেগেছিল। নেতাকর্মীদের মধ্যে একটি চাঙ্গা ভাব তৈরি হয়েছিল। কিন্তু ২৮ অক্টোবরের পর থেকে পরিস্থিতি পাল্টে যেতে শুরু করে। যদিও ২৮ অক্টোবরের পর এই ডোনাল্ড লু শর্তহীন সংলাপের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন এবং এই আহ্বানের চিঠি নিয়ে পিটার ডি হাস তিনটি দলের নেতাদের কাছে গিয়েছিলেন এবং একটি সংলাপ আয়োজনের শেষ চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সেই সংলাপ আয়োজনে বিএনপি বা আওয়ামী লীগ কেউই সাড়া দেয়নি।
এখন নির্বাচন সমাপ্ত হয়েছে এবং ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর ১১ জানুয়ারি নতুন সরকার গঠিত হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচনকে ত্রুটিপূর্ণ বলার পরও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়া এবং নতুন সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের বার্তা দিয়েছেন। ডোনাল্ড লু’র আগে আফরিন আক্তার নির্বাচনের পরে বাংলাদেশ সফর করেছিলেন এবং সেই সময় তিনি হোটেল ওয়েস্টিনে বিএনপি নেতৃবৃন্দের সাথে সাক্ষাৎ করেছিলেন। তখন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং শামা ওবায়েদ আফরিন আক্তারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। যদিও সেই সাক্ষাতের পর তারা কোনও কিছুই সাংবাদিকদেরকে জানাননি। কিন্তু এবার ডোনাল্ড লু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেননি। আর এটি বিএনপির মধ্যে হতাশা সৃষ্টি করেছে।
বিএনপি মনে করছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন তাদেরকে আর আগের মতো গুরুত্ব দিচ্ছেন না, পাত্তা দিচ্ছে না। বরং সরকারের সঙ্গে সম্পর্কের কারণে বিএনপিকে এড়িয়ে যাচ্ছে। এ নিয়ে বিএনপির মধ্যে হতাশা তৈরি হয়েছে। বিএনপি নেতারা দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ, শামা ওবায়েদ, তাবিথ আউয়ালসহ যারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন এবং মার্কিন দূতাবাসে যাদের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে তাদেরকে দুষছেন। তারা মনে করছেন যে, বিএনপির মধ্যেই সমস্যা রয়েছে। বিএনপির নেতারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে পারেননি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বিএনপির বক্তব্যগুলো তারা সঠিকভাবে ও যথাযথভাবে উপস্থাপন করতে পারেননি। আর একারণেই ডোনাল্ড লু’র সফরের পর বিএনপির মধ্যে চলছে এক ধরনের হতাশা।
ডোনাল্ড লু বাংলাদেশ রাজনীতি বিএনপি
মন্তব্য করুন
আগামী ২৩ জুন আওয়ামী লীগের ৭৫ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পর্যন্ত আওয়ামী লীগ দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গকারী, দলের ভেতর সুবিধাবাদী, লুটেরা এবং দলের নাম ভাঙিয়ে বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করবে না। কিন্তু ২৩ জুনের পর আওয়ামী লীগের ক্র্যাশ প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ক্র্যাকডাউন হবে দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গকারী এবং দলের সুনাম নষ্টকারীদের বিরুদ্ধে। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ব্যাপারে শূন্য সহিষ্ণুতা নীতি অনুসরণ করবে। আওয়ামী লীগের একটি দায়িত্বশীল সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
আওয়ামী লীগ এবং তার আদর্শিক জোট ১৪ দলের নেতাদের চীন সফরে হিড়িক পড়েছে। আওয়ামী লীগ এবং তার সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর এই চীন সফরকে ঘিরে কূটনৈতিক অঙ্গনে চলছে নানামুখী আলাপ আলোচনা। ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উভয় দেশই ১৪ দল এবং আওয়ামী লীগের নেতাদের চীন সফরের ব্যাপারে দৃষ্টি রাখছেন। তবে তারা এই বিষয় নিয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হচ্ছেন না। বিষয়টি তারা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিষয় হিসেবেই মনে করছেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছিল বিএনপির আশা ভরসার কেন্দ্রস্থল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করবে; মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নির্দলীয়, নিরপেক্ষ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায়ে সরকারকে বাধ্য করবে; মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কারণ সরকার শেষ পর্যন্ত নির্বাচন করতে পারবে না- এমন বক্তব্যগুলো বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচনের আগে বহুল প্রচারিত ছিল। বিএনপির সব নেতারা প্রকাশ্যেই এ কথা বলত।