ইনসাইড আর্টিকেল

গুঞ্জন থেকে গুজব, গুজব থেকে গুরুতর কিছু

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮:০২ পিএম, ১২ অগাস্ট, ২০১৯


Thumbnail

ধরা যাক আপনাকে প্রশ্ন করা হলো- ‘আপনি কি জানেন, গুজব বলে কোনো শব্দ আসলে অভিধানে নেই?’ উত্তরে কি বলবেন? আপনার উত্তর যদি হয়, ‘তাই না কি! সত্যি?’ তাহলে দুঃখের সাথে জানাচ্ছি, যারা গুজবে কান দেয় বা গুজব ছড়ায়, আপনি তাদেরই একজন। কেননা আপনি নিশ্চয়ই নিশ্চিত রিউমার (Rumour) বা গুজব শব্দটি অবশ্যই ডিকশনারি বা অভিধানে আছে। হয়ত নিজ চোখে দেখেছেনও। তাহলে কেন বলতে পারলেন না, ‘না এটা হতে পারে না। এসব ফালতু কথা আমাকে বলবেন না।’ ক্ষমা করবেন পাঠক। আপনাকে আঘাত করা এই লেখার উদ্দেশ্য নয়। গুজব বিষয়ক শিরোনাম দেখেই আপনি লেখাটি পড়ছেন। এজন্য আপনি অবশ্যই ধন্যবাদ প্রাপ্য। তবে আমার শঙ্কা ২৮ টি দেশের শতকরা ৬৩ জন মানুষকে নিয়ে যারা গণমাধ্যম এবং সোশ্যাল মিডিয়ার খবরে এবং সত্য-মিথ্যা যাচাই করতে পারেন না। বিশ্বের অন্যতম এবং আমেরিকার শীর্ষতম গণসংযোগ এবং বিপণন ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান এ্যাডেল মেন ইন্টেলিজেন্স (Edel Man Intelligence) ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে ২৮টি দেশে গবেষণা শেষে তাদের প্রচারমাধ্যম এ্যাডেল মেন ট্রাস্ট বেরোমিটার (Edel Man Berometer) এ এই তথ্য প্রকাশ করেছে। সুতরাং আমি আপনি বা আমরা সেই ৬৩% এর দলে থাকাটা অস্বাভাবিক নয়।

গুজবে কান দেবেন না বলাটা যত সহজ, গুজব থেকে কানটা দূরে রাখা তত সহজ নয়। ‘কাউকে বলবেন না’ শর্তে যে মনগড়া কথা বা ধারণা কাউকে বলা হয়, ডালপালাসহ তা ছড়িয়ে পড়ে দাবানলের মতো। সোশ্যাল মিডিয়ার আবিস্কার গুজবকে দিয়েছে নতুন মাত্রা। কোনো কোনো গুজব আবার সহিংসতা বাড়িয়ে ডেকে আনে বড় বিপদ। গুজবসৃষ্ট কিছু করুণ কাহিনী লিখেছেন মেজর নাসির উদ্দিন আহাম্মেদ (অব.) পিএইচডি।

গুজব আসলে কি?

গুজবের সঠিক সংজ্ঞা নির্ধারণ করা বেশ কঠিন। কারণ গুজবের বিস্তৃতি ব্যাপক ও বৈচিত্রময়। প্রাচীনকাল থেকেই যুদ্ধক্ষেত্রে শত্রুর মনোবল ভেঙে দেওয়া এবং নিজস্ব বাহিনীর মনোবল, উৎসাহ এবং তেজ বাড়ানোর জন্য সুকৌশলে গুজব রটানো হতো। রাজনীতি বা অপরাজনীতির অন্যতম হাতিয়ার গুজব যা নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার জন্য অহরহ ব্যবহৃত হয়। বাণিজ্যিক ভূবনে নিজস্ব পণ্যের পসার এবং প্রতিদ্বন্দ্বির পণ্যের কাটতি কমাতে গুজবের ওপর নির্ভর করে অনেকেই। শেয়ার বাজারে গুজব ছড়িয়ে লঙ্কাকাণ্ড বাধানো যায়। বিনোদন দুনিয়ায় গুজব ছড়িয়ে দর্শকশ্রোতার মনোযোগ আকর্ষণ করা যায়। তাই ইচ্ছে করে গুজব ছড়ানো বিনোদন তারকারা, যাদের অনেকেই পরবর্তীতে ব্যাপক সফলতা লাভ করে সুপারস্টার হয়েছেন। তবে হালের আলোচিত বিষয় সামাজিক গুজব এবং সোশ্যাল মিডিয়া র্নিভর রাজনৈতিক গুজব। পদ্মাসেতুর জন্য রক্ত এবং মানুষের মাথা প্রয়োজন কিংবা প্রধানমন্ত্রীর ক্যানসার যার অন্যতম উদাহরণ। ব্যাপক গবেষণার পর বৃটেনের গবেষণা প্রতিষ্ঠান প্লস ওয়ান (PLOS ONE) ২০১৬ সালের ৪ মার্চ সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজব ছড়ানোর ওপর একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করে এবং সবকিছু বিবেচনা করে একটি গ্রহণযোগ্য সংজ্ঞা উপস্থাপন করে। প্লস ওয়ানের গবেষণা মতে, ‘আপাতদৃষ্টিতে সত্য বা গ্রহণযোগ্য কিন্তু যার সত্যতা ও সঠিকতা সহজে নিরূপণ করা যায় না এবং যা অনেকরকম উত্তেজনা, দুশ্চিন্তা, কল্পনা, ধারণা ইত্যাদি তৈরি করে তা প্রকাশ বা প্রচারণাকে গুজব বলা যায়।

আমাদের অনেকের মাঝেই গুলিলিটি (Gulility) অর্থাৎ দ্রুত ও সহজে বিশ্বাস করার প্রবণতা কাজ করে। আমাদের চরিত্রের এই দূর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন উদ্দেশ্যে গুজব সৃষ্টি ও প্রচার করা হয়। আবার কোনো উদ্দেশ্য নয়, কেবল মজা করার জন্যেও অনেকে গুজব তৈরি ও প্রচার করে। এর নেপথ্যে রয়েছে এক নতুন ভোক্তাশ্রেণী যাদের পশ্চিমা বিশ্বে বলা হয় ‘তথ্যভোক্তা’ বা কনজিউমার অব ইনফরমেশন। বাংলাদেশের মিডিয়া জগতে একটা কথা চালু আছে যে ‘পাঠক খাবে না’ বা ‘দর্শক খাবে না’। বিষয়টি অনেকটা এরকমই। আরও সহজ করে বলতে গেলে বলা যায় যে, বর্তমান সমাজের একটা অংশ তথাকথিত ‘লাইক’, ‘শেয়ার’, ‘কমেন্টস’ ইত্যাদি দিতে এবং পেতে দারুণ পছন্দ করে। তাদের চাহিদা মেটাতে বা তাদের প্রতিক্রিয়া দেখতেও সমাজে গুজব ছড়ানো হয়, যার পিছনে হয়তবা রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক কোনো কারণ থাকে না।

গুজব সৃষ্টির কারণ ও পরিবেশ

প্রকৃত ঘটনা বা প্রকৃত সত্য না জানা ও আংশিক তথ্য জানা।

কোনোকিছু নিয়ে দুশ্চিন্তা, অস্থিরতা, উত্তেজনা

কোনো তথ্য, সংবাদ, ঘটনা যখন গুরুত্বপূর্ণ ও মুখরোচক

কোনো গুজব যখন সত্য বলে বিশ্বাসযোগ্যতা পায়

নিজের গুরুত্ব ও ইমেজ বৃদ্ধি করার আকাঙ্ক্ষা

সামাজিকভাবে নিজের অবস্থান শক্তিশালী করার আকাঙ্ক্ষা

 

তথ্যসূত্র: সোশ্যাল সাইকো অনলাইন।

হোয়াইট হাউজকে হোয়াইট ওয়াশ

এপ্রিল মাসের এক তারিখে সাধারণত মুখরোচক মিথ্যা সংবাদ প্রচার করে মজা করার একটা প্রচলন রয়েছে প্রচ্যের দেশগুলোতে কিন্তু ২০১৩ সালের ২৩ এপ্রিল দুপুর একটা সাত মিনিটে পৃথিবীর অন্যত্তম বৃহৎ ও আমেরিকার প্রভাবশালী বার্তা সংস্থা এসোসিয়েটেড প্রেস (এ পি) কোন মিথ্যা সংবাদ প্রচার করে মজা করতে পারে- তা ছিল সবার ধারনার বাইরে। ফলে এক টুইট বার্তায় এ পি যখন প্রচার করলো যে পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাধর প্রেসিডেন্ট হিসাবে বিবেচ্য খোদ আমেরিকান প্রেসিডেন্টের সুরক্ষিত অফিস ভবন হোয়াইট হাউজে বিস্ফোরন ঘটেছে এবং এতে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা আহত হয়েছেন, তখন বিশ্ববাসীর কপালে ক্ষণিকের জন্য হলেও ভাঁজ পড়ে ছিল। মূহর্তেই এই সংবাদ ভাইরাল হয় এবং এর সরাসরি প্রভাব পড়ে পুজিবাজারে। ব্রিটিশ সংবাদপত্র দি টেলিগ্রাফের ২৩ এপ্রিল ২০১৩ এর তথ্য মতে এই টুইট বার্তা প্রকাশের সাথে সাথে আমেরিকার পুঁজি বাজার শেয়ারের দাম নামতে থাকে এবং  তিন মিনিটের মধ্যে বাজার থেকে ১৩৬ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার অর্থাৎ বর্মান বাজার মূল্যে প্রায় ১২০০ কোটি টাকা উধাও হয়ে যায়। বিশ্বের নির্ভরশীল অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ: শেয়ার মার্কেট গবেষনা সংস্থা স্ট্যান্ডর্ড এন্ড পুত্তরস্ (এস এন্ড পি)  এর এস এন্ড পি ৫০০ নামের শেয়ার বাজার সূচক ও নাটকীয়ভাবে নেমে যায়। এই ঘটনার ঠিক আট দিন আগে আর্থাৎ ২০১৩ সালের ১৫ এপ্রিল বোস্টন শহরে বাৎসরিক মেরাথন দৌড়ে চলাকলে দৌড়ের শেষ সীমায় ১২ সেকেন্ড এবং ১৯০ মিটার ব্যবধানে রান্নাঘরে ব্যবহৃত প্রেসার কুকারে রাখা দুইটি শক্তিশালী বোমা বিস্ফোরিত হয়। এতে ঘটনাস্থলে ৬ জন প্রাণ হারান, ১২ জনের অঙ্গহানী হয় এবং কয়েকজন সাধারণ দর্শক আহত হয়। এই ঘটনার ৮দিনের ব্যবধানে হোয়াইট হাউজ উড়িয়ে দেওয়ার টুইট বার্তাটি তাই বিশ্বাসযোগ্যতা পায় এবং দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে হোয়াইট হাউজের মূখপাত্র জে কারনী (Jey Carney) সংবাদমাধ্যমে উপস্থিত হন এবং এই টুইট বার্তা অসত্য এবং প্রেসিডেন্ট ওবামা সুস্থ আছে মর্মে নিশ্চিত করেন। এদিকে অ্যাসোসিয়েট প্রেস দ্রুততার সাথে তাদের টুইট আইডি হ্যাক করে হোয়াইট হাউজও প্রেসিডেন্টকে উড়িয়ে দেওয়ার গুজব ছড়ানোর বিষয়টি বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী তুলে ধরে। পরবর্তীতে অ্যাসোসিয়েট প্রেস আমেরিকার ন্যাশনাল পাবলিক রেডিও, বিবিসি এবং সিক্সটি মিনিটস এর মতো বহু প্রচার মাধ্যমের দুটি হ্যাক করার দাবী করে ‘সিরিয়াল ইলেকট্রনিক আর্মি’ নামক এক জঙ্গি সংগঠন, যা সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের সমর্থক বলে স্বীকৃত।

চাঁদ নিয়ে চাপাবাজি

বর্তমান যুগে এসে আমরা চাঁদে মাওলানা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর মূখ দেখার গুজব শুনেছি এবং এ নিয়ে উত্তেজনা এবং ভাংচুর প্রত্যক্ষ করেছি। অথচ অষ্টদশ শতকে আয়ারল্যান্ডের রাজধানী এডিনবার্গ থেকে প্রকাশিত পত্রিকা ‘দি এডিনবার্গ কোয়ারান্ট’ এ রীতিমত দাবি করা হয় চাঁদে ভীন গ্রহের প্রাণী বা এ্যালিয়েন (Aline) এবং  এ্যালিয়েনদের বাসস্থান ও সভ্যতা রয়েছে এই সূত্র ধরে ১৮৩৫ সালের ২১ আগস্ট আমেরিকার শীর্ষস্থানীয় পত্রিকা ‘দি সান’(The Sun) অচিরেই চাঁদে জীবের উদ্ভিত্ব ও সভ্যতা খুঁজে পাওয়া সংক্রান্ত খবর প্রকশের ঘোষণা দেয়ে। এরপর ইংল্যান্ডের জন্ম নেওয়া লেখক, বিজ্ঞনী, গনিতবিদ, রসায়নবিদ এবং ব্লু প্রিন্টের জনক স্যার জন ফ্রেডিক ইউলিয়াম হার্সেল (Sir John Fedrick Herschel) এর ছয় পর্বের লেখা প্রকাশ করে। এই লেখা প্রকাশের আগে বৃটিশ জ্যোতিষী এবং খৃষ্টানদের চার্চ বিষয়ক কর্নধার থমাস ডিক (Thomas Dick) সৌর জগতে প্রায় বাইশ ট্রিলিয়ন বা বাইশ হাজার কোটি বাসিন্দা রয়েছে বলে দাবী করেন, যার মধ্যে শুধু চাঁদেই চারশত বিশ কোটিবাসিন্দা আছে বলে প্রকাশ করেন। তাঁর লেখা সে সময় বেশ জনপ্রিয় পায় ইউরোপ জুড়ে, অন্যদিকে জার্মানীর মিউনিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিদ্যার অধ্যাপক ফ্রাঞ্জ ভন পাউলা গ্রুইথুসেনা (Frang Von Paula Gruithuisen) ১৮২৪ সালে  এক লেখায় চাঁদের জীবের অস্তিত্ব এমনকি এসব জীব থাকার জন্য বিল্ডিং এবং সবুজ চত্ত্বরও আছে বলে দাবি করেন। এই লেখা’ও প্রবল জনপ্রিয়তা লাভ করে। এর দশবছর পর দি সান পত্রিকার সাংবাদিক রিচার্ড এ্যাডামস্ লকী (Richard Adams Locke) চাঁদে এ্যালিয়েন থাকার এই ছয় পর্বের ধারাবাহিক প্রকাশ করেন ২৪ আগস্ট ১৮৩৫ সাল থেকে। পরবর্তীতে জানা যায়, এই ধারাবাহিকের জনক স্যার জন হার্সেল অপর বিজ্ঞানী ও ভ্রমণসঙ্গী ড. এনড্রিও গ্রান্ট (Andrew Grant) কে ব্যাখ্যা করেন এবং পিকটেশন দেন। পরে তা দি সান রিপোর্টার রিচার্ড এ্যাডাম লকী’র বরাতে পত্রিকায় লেখা হয়। এই লেখাটিকে চাঁদে জীবের বা প্রাণের অস্তিত্ব সংক্রান্ত সকল ধারণাকে বাতিল এবং পত্রিকার বিক্রি বাড়ানো তথা মুনাফা বৃদ্ধির কৌশল হিসেবে গণ্য করা হয়। এই ধারাবাহিক রিপোর্টে চাঁদে ছাগল, বন্য গরু, শিংযুক্ত ঘোড়া, উটপাখির মতো পাখি, বাঁদুড়, লেজবিহীন বড় ইঁদুর ইত্যাদির অস্তিত্ব থাকার তথ্যও প্রকাশ করা হয়। বিভিন্ন ধরনের দূরবীক্ষণ যন্ত্রে স্যার জন হার্সেল এসব পশুপাখির পাশাপাশি চাঁদে গাছ, সমুদ্র ও বেলাভূমি দেখেছেন বলে দাবি করা হয়। এই ধারাবাহিক রিপোর্ট প্রকাশের পর ‘দি সান’ পত্রিকার চাহিদা নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পায় এবং এই বিক্রি বেশ কিছুদিন চলতে থাকে। অন্যদিকে প্রশ্নবানে জর্জরিত হতে থাকেন স্যার জন। প্রশ্নকারীদের অধিকাংশের ধারণা ছিল সত্যিই চাঁদে জীবের অস্তিত্ব রয়েছে।

 

কুষ্ঠরোগ নিয়ে কুকথা

১৩৪৭ থেকে ১৩৫১- এই পাঁচ বছরে ইউরোপ এবং এশিয়ার সাড়ে ৭ থেকে ২০০ কোটি মানুষের মৃত্যু ঘটে এক ধরণের প্লাগ বা কুষ্ঠশ্রেণির রোগে। এই মহামারি ইতিহাসে ‘কালোমৃত্যু’ বা (Black Death), মহাপ্লাগ (Great Plague) এবং কালো প্লাগ (Black Plague) হিসাবে ঠাঁই পেয়েছে। এই রোগের কারণ ও প্রতিকার নিয়ে তখন অনেক গুজব, কুসংস্কার ও কল্পকাহিনী প্রচারিত হয়। এছাড়াও মধ্যযুগে রোগমুক্তি ও সুস্থ থাকার আশায় ইহুদিরা খ্রিস্টান শিশুদের রক্তে গোসল করে বলে এক ধরণের গুজব ছড়িয়ে পড়ে। যা বহু হৃদয়বিদারক রক্তপাত, দাঙ্গা ও ধর্মযুদ্ধ উসকে দেয়। তবে এক্ষেত্রে সবচেয়ে করুণ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় ১৩২১ সালে ফ্রান্সে। এ সময় গুজব রটে যে শরীরের মাংস পচে যাওয়া বা বা এক ধরনের কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত ইহুদি রোগীরা ইচ্ছাকৃতভাবে পানিতে বিশেষত পানির কুয়ায় এই মাংস পচন বা কুষ্ঠরোগের জীবাণু মিশিয়ে দিচ্ছে। এতে আরও বলা হয় যে, মুসলমানদের পৃষ্ঠপোষকতায় এবং ইহুদিদের অর্থায়নে কুষ্ঠরোগীরা পানিতে রোগের জীবাণু ও বিষ মিশিয়ে দিচ্ছে। এর ফলে একাধারে মুসলমান, ইহুদি, কুষ্ঠরোগী, অপরিচিত কোনো ব্যক্তি নির্বিশেষে অসংখ্য মানুষকে নানা কায়দায় বিশেষত আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। বিভিন্ন বর্ণনামতে, ১৩২১ সালের জুন মাসে ফ্রান্সের তৎকালীন সম্রাট পঞ্চম ফিলিপ সংবাদ পান যে কুষ্ঠরোগীরা ফ্রান্স ও জার্মানীর খ্রিষ্টানদের হত্যা কিংবা কুষ্ঠরোগের বিস্তার ঘটানোর জন্য কুয়া, নদীনালা ইত্যাদির পানিতে বিষ প্রয়োগ করছে বা কুষ্ঠ জীবাণুযুক্ত কাপড়, তৈজসপত্র, তোয়ালে, বিছানার চাদর ইত্যাদি ধুচ্ছে। এই অপরাধে অনেককে আটক, হত্যা বা পুড়িয়ে মারার তথ্য পান সম্রাট পঞ্চম ফিলিপ। তিনি ২১ জুন ১৩২১ তারিখে সকল কুষ্ঠরোগীকে বন্দী ও তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার আদেশ দেন। এতে পরিস্থিতি আরও উতপ্ত হয়ে উঠে। এসময় ফ্রান্সের এ্যাকুইটেন অঞ্চলে কুষ্ঠ রোগী এবং ইহুদীদের বেশ কিছু বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়া হয়। পরে তাদের ধন-সম্পদ বা বাড়িঘর দখল করে নেয় অন্যরা। আরও গুজব রটানো হয় যে কুষ্ঠ রোগীরা তাদের প্রসাব, শরীরের পুঁজ ও রক্ত মিশিয়ে বিষ তৈরি করে পানির মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছে যেন খৃষ্টান সম্প্রদায় ধ্বংস হয়ে যায়। একাজে স্বয়ং শয়তান জড়িত বলেও অপপ্রচার চালান হয়। এ গুজবের শাখা-প্রশাখার বিস্তার ঘটিয়ে আরও প্রচার করা হয় যে, কুষ্ঠ রোগীদের জন্য নির্ধারিত কলোনিতে ড্রামভর্তি রুটি পাওয়া গেছে যা ছিল বিষ ও জীবানু মিশানো এবং কুয়ার পানিতে ফেলার উদ্দেশ্যে প্রস্তুতকৃত। এই গুজব দাবানলের মত ছড়িয়ে পড়লে বিভিন্ন স্থানে দাঙ্গা শুরু হয়। এই গুজবের পর ঠিক কতজন কুষ্ঠ রোগী বা ইহুদী প্রাণ হারায়, তার সঠিক কোন সংখ্যা জানা যায় নি। তবে বিভিন্ন এলাকায় বিচ্ছিন্নভাবে তাদেরকে বেঁধে গায়ে আগুন দেয়ার তথ্য পাওয়া যায়। এর মধ্যে একটি ঘটনায় সর্বোচ্চ ১৬০ জন হত্যার তথ্য পাওয়া যায়। এই গুজবের রেশ কাটতে অনেক বছর লেগেছিল।

গুজবের শিকার শিশুরা

পৃথিবীর বহুদেশে প্রাচীনকাল থেকেই শিশুদের গুম এবং হত্যা করার নানারকম ঘটনা এবং গুজবের তথ্য পাওয়া যায় বিভিন্ন সূত্রে। বিভিন্ন কারণে শিশুদের গুম এবং হত্যা করা হলেও মূলত নির্মাণ কাজ বিশেষত বড় কোনো স্থাপনা এবং সুনির্দিষ্টভাবে বড় কোনো সেতু নির্মানের সঙ্গে শিশুদের গুম এবং হত্যার যোগসূত্র পাওয়া যায় বিভিন্ন দেশে। প্রাচীনকালে ধারণা করা হত যে মাটি দেবতার সৃষ্টি। তাই এই মাটি খুঁড়তে হলে দেবতাকে তুষ্ট করতে হবে। মাটিই একটি ভারী বা সুউচ্চ স্থাপনার ভার বহন করে বিধায় বিভিন্ন ধর্মের মানুষ মাটির দেবতাকে তুষ্ট করতে গিয়ে বিভিন্ন আচার ও আরাধনা করতো। ল্যাটিন আমেরিকার বহুদেশে মাটির নিচে খনিতে কাজ করা শ্রমিকরা আজও মাটির দেবতার প্রতি সম্মান জানায় প্রতিনিয়ত। ডিসকভারি, ন্যাশনাল জিওগ্রাফি ও ইউটিউব চ্যানেলে খনির ভিতরে শ্রমিকদের মাটির দেবতার পূজা করার দৃশ্য দেখা যায়। প্রাচীনকালে পূজারীদের ধারণা ছিল যে, দেবতাকে তুষ্ট করার সবচেয়ে বড় উপকরণ হল তার প্রতি মানুষের বিশুদ্ধ রক্ত নিবেদন করা। যেহেতু শিশুদের পাপ ও পংকিলতার উর্ধ্বে বিবেচনা করা হয়, সেহেতু তাদের রক্ত বিশুদ্ধ এবং এই বিশুদ্ধ রক্তে দেবতা বেশি খুশী হবেন বিবেচনা করা হত। এ থেকেই শিশুদের গুম ও হত্যা করার কাহিনী, কল্পকাহিনী ও গুজবের সৃষ্টি ও প্রচার।

এবছর ৬ মার্চ মার্কিন সংবাদপত্র ওয়াশিংটন পোষ্টের তথ্যে জানা যায় যে, একদল গবেষক ৬ বছরের খনন কাজ শেষে ল্যাটিন আমেরিকান দেশ পেরু তে চীমু (Chimu) নামক একটি প্রত্নতাত্বিক স্থানের সন্ধান পেয়েছে যেখানে একসাথে ১৪০ জন শিশু এবং ২০০ পশুর কঙ্কাল রয়েছে। গবেষকদের ধারণামতে আনুমানিক ১৪৫০ সালের দিকে ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ অথবা উগ্র আবহাওয়া থেকে পরিত্রাণ পেতে এভাবে শিশুদের হত্যা করা হয়। ২০১৮ সালের ২জুলাই ভারতের মহারাষ্ট্রের একটি গ্রামে বেদে বা যাযাবর ধরনের ৫ ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। গ্রামবাসীর মতে তাদের একজন একটি ছোট মেয়ের সঙ্গে কতাহ বলছিল। এতে গ্রামবাসীর মনে সন্দেহ হলে তাঁরা এই দলটিকে আটক করে ও জিজ্ঞাসাবাদ করে। কিন্তু সন্তোষোজনক জবাব না পাওয়ায় তাদের একজনকে একটি ঘরে আটক করে লাঠি ও পাথর দিয়ে পিটানো হয়। এই দৃশ্য হোয়াটস অ্যাপে ছড়িয়ে পড়লে গ্রামবাসী বাকীদের ওপর চড়াও হন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে হাজির হ্লে গ্রামবাসী পুলিশকেও আক্রমণ করে। একই বছর ভারতে এপ্রিল মাসে ১জন, মে মাসে ৬ জন এবং জুন মাসে ৫জন গণপিটুনিতে মারা যায় (সূত্র বিবিসি)। উইকিপিডিয়ামতে ২০১৭ সালের মে মাসে ভারতের জাহড়খণ্ডে হোয়াটস আপে ছড়ানো শিশু অপহরণ ভিত্তিক গুজবের কারণে গণপিটুনিতে ৭জন প্রাণ হারায়। ২০১৮ সালের ১৮জুলাই দিল্লি-পাটনা রুটের একটি ট্রেনের বগিতে শিশু পাচারকারী দল সন্দেহে যাত্রীদের আক্রমণ করে বিহারের জনতা। মৃতপ্রায় অবস্থায় তাদের ২৯জনকে পুলিশ উদ্ধার করে। বাংলাদেশে গুজব ছড়িয়ে মানুষ হত্যা, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ধ্বংস, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ কোনো নতুন বিষয় নয়। তবে সাম্প্রতিক সময়ের এ সংক্রান্ত কিছু ঘটনা বিশ্ব মিডিয়ায় সমালোচিত হচ্ছে। বিবিসি ২৪ জুলাই ২০১৮ তারিখে শিশু অপহরনের অভিযোগ তুলে ৩৮ জনকে পিটিয়ে হত্যার সংবাদ প্রকাশ করে। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সাথে যোগাযোগের সুবিধার্থে নির্মানাধীন পদ্মা ব্রীজের মানুষের বিশেষত শিশুদের মাথা প্রয়োজন বলে সোশ্যাল মিডিয়া ও লোকমুখে গুজব ছড়িয়ে পড়ে। এতে বিভিন্ন স্থানে ভিন্ন ভিন্ন ঘটনায় ৮ জনকে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করে উত্তেজিত জনতা। বর্তমানে অপরাধী সনাক্তকরণ এবং বিচার প্রক্রিয়া চলছে। বন্ধ করা হয়েছে বেশকিছু সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট।

শেষ কথা

লেবাননে জন্ম নেয়া আমেরিকার অর্থনীতি বিষয়ক গবেষক এবং শেয়ার বাজার বিশেষজ্ঞ জিয়াদ কে আব্দেল নূরের মতে মানুষকে যারা ঘৃণা করে, তারা গুজবের বহন করে, বোকারা তা প্রচার করে আর মূর্খরা তা বিশ্বাস করে। আসুন আমরা ঘৃণা ছড়ানো মানুষ, বোকা বা মূর্খের দলে না ভীড়ে সত্যের আলোয় উদ্ভাসীত হই।

বাংলা ইনসাইডার



মন্তব্য করুন


ইনসাইড আর্টিকেল

পরীক্ষার ফলাফলে কেন ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা এগিয়ে?

প্রকাশ: ০৮:০৩ এএম, ১৪ মে, ২০২৪


Thumbnail

একটি জাতির মেরুদণ্ড হল শিক্ষা। যা কিনা জাতি গঠনের প্রধান উপাদান। স্বমহিমায় নিজেদের উদ্ভাসিত করতে কেবল শিক্ষত জাতিই পারে। বিবেকবান মানুষ, সুনাগরিক, কর্তব্যপরায়ণ, দায়িত্ববান ও দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে শিক্ষার বিকল্প নেই। সে জন্য প্রয়োজন শিশুকাল থেকেই শিক্ষা অর্জন। স্কুল-কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ে উচ্চ শিক্ষার জন্য অনেকেই পারি দেন বিদেশে।

শিক্ষার সূচনা পরিবারের থেকে হলেও জ্ঞান অর্জনের বাল্যকালের বিশেষ ধাপ মনে করা হয় প্রাইমারি থেকে এসএসসি পর্যন্ত। আর এই এসএসসি পরিক্ষার ফলাফলে চলতি বছরে দেশের ১১টি শিক্ষা বোর্ডে পাসের গড় হার ৮৩ দশমিক শূন্য ৪। যা গতবারের (২০২৩ সালে) চেয়ে বেড়েছে। গেল বছর পাসের হার ছিল ৮০ দশমিক ৩৯ শতাংশ। কিন্তু এবারের এসএসসি তে মোট পাসের হারের মধ্যে ছাত্রীদের পাসের হার ৮৪.৪৭ আর অন্যদিকে ছাত্রদের পাসের হার ৮১.৫৭ শতাংশ। এর নেপথ্যের কারণ কি? কেনইবা ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের পাসের হার এগিয়ে?

রোববার (১২ মে) এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর এক সংবাদে সম্মেলনে পরিক্ষায় অংশ নেওয়া পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ছেলেদের সংখ্যা কম দেখে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কেন ছেলেরা পিছিয়ে তা জানতে শিক্ষা বোর্ড প্রধানদের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশ অনুযায়ী এসএসসি ফলাফলে ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা কেন এগিয়ে তার কিছু সুনির্দিষ্ট দিক থেকে শিক্ষার্থীদের বেড়ে উঠা, তাদের প্রতি পরিবারে দায়িত্ব ইত্যাদি নিয়ে আমরা পর্যালোচনা করে দেখেছি যে..

সাধারণত পড়াশোনার ক্ষেত্রে ছেলেদের পিছিয়ে পড়ার পেছনে মোবাইল ফোন, ইলেকট্রনিক ডিভাইস ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মাত্রাতিরিক্ত সময় ব্যয় করা প্রধানত দায়ী হতে পারে। ছেলেরা বাইরে ঘোরাঘুরির পাশাপাশি বাসায় ফিরে মোবাইল ফোনে ডুবে যাচ্ছে। স্কুলপড়ুয়ারা অতি মাত্রায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করায় পড়ালেখায় মনোযোগী হতে পারছে না। এমনকি  ছাত্রীদের চেয়ে ছাত্ররা মোবাইল ফোন ব্যবহারের বেশি সুযোগ পাচ্ছে। পাশাপাশি কিশোর অপরাধে জড়িয়ে পড়াও ছেলেদের পিছিয়ে পড়ার অন্যতম কারণ। ছাত্রীদের মধ্যে তারা পড়াশোনায় বেশি আগ্রহ দেখছেন। আর ছেলে সন্তানদের চেয়ে মেয়েরা পড়াশোনায় আগ্রহী হয়ে ওঠায় তাদের পড়াশোনায় বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন বাবা-মাও। এমনকি মেয়েদের লেখাপড়ায় অভিভাবকরা বেশি ব্যয় করতেও দ্বিধা করছেন না।

সচেতন মহল মনে করছেন, স্কুলপড়ুয়া ছেলেটার হাতে বাবা-মা মোবাইল তুলে দিচ্ছে। কিন্তু মেয়েটার হাতে দিচ্ছে না। হয়তো অন্য কোনো চিন্তা থেকে দিচ্ছে না। তাতে মেয়েটা পড়াশোনায় মনোযোগ দিচ্ছে। আর ছেলেটা ফেসবুক, গেমিংয়ে সেটা ব্যবহার করছে। এভাবে ছেলেরা পড়ালেখায় ক্রমে চরম অমনোযোগী হয়ে পড়ছে।’ অতি মাত্রায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থীরা পড়ালেখায় অমনোযোগী হয়ে পড়ছে।

মেয়েরা কেন এগিয়ে 

মেয়েরা পড়ালেখায় মনোযোগি হতে পারে কারণ তারা আগ্রহশীল, সাহায্যকারী, মনোযোগী, এবং সমর্থনশীল হতে পারেন। তাদের প্রকৃতি বিশেষভাবে পড়াশোনার ক্ষেত্রে উত্সাহী এবং অনুশাসিত হয়। মেয়েদের পড়ালেখায় মনোযোগের আরও  কিছু কারণ হতে পারে, যেমন..

সামাজিক প্রতিফলন: সাধারণ সমাজে শিক্ষার প্রতিফলন মেয়েদের হাতেই। তাই তারা নিজেকে সমাজের মধ্যে সাবাস করার জন্য শিক্ষালোভী হতে চায়।

প্রতিযোগিতামূলক: মেয়েদের মধ্যে প্রতিযোগিতামূলক শিক্ষার আগ্রহ অনেক। আর তাই তারা শিক্ষা অর্জন ও পড়াশোনার মাধ্যমে নিজেদের ক্ষমতা প্রদর্শন করতে পারে।

সামর্থ্য ও উদারতা: মেয়েদের অনেকে সামর্থ্য ও উদারতা দেখানোর চাপে থাকে, যা তাদের পড়ালেখায় মনোযোগিতা বৃদ্ধি করে।

পরিবারের সমর্থন: পরিবারের সদস্যরা মেয়েদের উত্সাহ দিয়ে পড়ালেখায় মনোযোগিতা বৃদ্ধি করে। এতে করে মেয়েদের ফলাফল আসে সাফল্যের।

এছাড়াও সম্পূর্ণ সমাজে মেয়েদের উপলব্ধি ও প্রতিযোগিতামূলক স্বাধীনতা দেওয়া উচিত, যা তাদের পড়ালেখায় আরও মনোযোগিতা বৃদ্ধি করে। এই সমস্ত কিছু কারণে মেয়েদের পড়ালেখায় মনোযোগিতা বৃদ্ধি হয় তার তাই তারা পরিক্ষার ফলাফলে অর্জন করে সাফল্য।

সাধারণত আদর্শ ছাত্রের বৈশিষ্ট্য হিসেবে আমরা জানি: শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত উপস্থিত থাকা, নিয়মিত পড়াশোনা করা, সহপাঠদের (জাতি, ধর্ম, বর্ণ ও শ্রেণী নির্বেশেষে) সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করা, নিয়ম শৃঙ্খলা মেনে চলা, মাদক থেকে দূরে থাকা, প্রলোভন থেকে বিরত থাকা, এমনকি সমাজ ও রাষ্ট্র বিরোধী কাজ থেকে বিরত থাকা।

যা করা উচিৎ

সম্প্রসারণ ও সমর্থন: পরিবারের সদস্যরা ছাত্রদের শিক্ষামূলক প্রক্রিয়ার সমর্থক করতে হবে এবং তাদের পক্ষ থেকে প্রশংসা ও সমর্থন প্রদান করতে হবে।

প্রোত্সাহন ও সমর্থন: পারিবারিক সদস্যরা ছাত্রদের এমন কার্যকলাপে উৎসাহিত করতে হবে যা ছাত্রদের শিক্ষামূলক ও ব্যক্তিগত উন্নতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

ছাত্রদের প্রেরণা ও মনোনিবেশ: ছাত্র প্রোত্সাহন ও প্রেরণা প্রদানের মাধ্যমে তারা উচ্চ লক্ষ্য স্থাপন করতে পারে এবং নিজেদের উন্নতিতে মনোনিবেশ করতে পারে।

বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ:

এছাড়া ছাত্র-ছাত্রী উভয়কেই বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেমন ক্যারিয়ার প্লানিং, দারিদ্র্য সহায়তা, নৈতিক শিক্ষা, ব্যক্তিগত উন্নতি ইত্যাদির জন্য প্রশিক্ষণের প্রয়োজন। কেননা পারিবারিক শিক্ষাব্যবস্থা সামাজিক, মানসিক ও ব্যাক্তিগত উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এটি ছাত্র-ছাত্রীদের সুস্থ ও সমৃদ্ধ রেখে তাদের পড়ালেখা করতে উৎসাহিত করে। ফলে ছাত্র-ছাত্রীরে মেধা বৃদ্ধি হতে পড়াশোনায় মনোযোগি হবে। এবংকি পরিক্ষার ফলাফল অগ্রগতি হবে। জাতি হবে শিক্ষিত। প্রজন্ম গড়বে শিক্ষিত মেধাযুক্ত।


পরীক্ষা   ছেলে   মেয়ে  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড আর্টিকেল

বাড়ছে ‘ভার্চুয়াল অ্যাডিকশন’, তরুণীদের সচেতনতা কোথায়?

প্রকাশ: ১০:৪২ এএম, ১৩ মে, ২০২৪


Thumbnail

বর্তামানে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার মানুষের জীবনকে করেছে সহজ থেকে সহজতর। তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করেই জ্ঞাননির্ভর অর্থনীতি বা ‘শিল্প বিপ্লব’ গড়ে উঠেছে। জ্ঞানের সমৃদ্ধি, সংরক্ষণ ও ব্যবহার তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে অবাধ ও নিরপেক্ষ হয়েছে। কিন্তু তথ্য-প্রযুক্তির সুবিধাটি যখন একদল অসৎ ও অপরাধপ্রবণ ব্যক্তির দ্বারা নেতিবাচকভাবে ব্যবহৃত হয় তখনই এর অপব্যবহারে বিপন্ন হয় সমাজ তথা প্রজন্ম।

প্রজন্মের ধারাবাহিকতায় ক্রমেই তথ্য-প্রযুক্তি নির্ভর হচ্ছে তরুণীরা। যুগের বিবর্তন এবং সরকারের সুক্ষ পরিকল্পনায় একদিকে তরুণীরা যেমন তাদের স্বাধীনা অর্জন করেছে অন্যদিকে সেই স্বাধীনতা রক্ষা করার নামে এই তরুণীদের অনেকেই বিষর্জন দিচ্ছে তাদের অস্তিত্ব ব্যক্তিত্ব কিংবা স্বতিত্ব।

জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২’-এর প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, দেশে ৮ কোটি ১৭ লাখ ১২ হাজার ৮২৪ জন পুরুষ, ৮ কোটি ৩৩ লাখ ৪৭ হাজার ২০৬ জন তরুণী। যেখানে পুরুষের চেয়ে তরুণীদের সংখ্যা বেশি সেখানে তরুণীদের সমাজের সচেতনতা অবলম্বন করে তাদের স্বাধীনতা রক্ষা করা জরুরী।

তরুণীরা ভার্চুয়াল ব্যবহারে সচেতন না হলে পড়তে পারে বিপদজনক পরিস্থিতিতে। অনলাইনে যদি কোন সম্পর্কে ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করতে হলে প্রাইভেসি নিশ্চিততা হানির ঝুঁকি থাকে। এটি তরুণীকে নিজের গোপনীয়তা সংরক্ষণ না করে বিপদে ফেলতে পারে। অনলাইনে যে সম্পর্ক এবং বার্তা পাঠানো হয়, তা যদি নিয়মিত হয় তাহলে মনের অপরিচিত মানুষের সাথে সমস্যা হতে পারে। যেমন, অবাঞ্ছিত মেসেজ বা ব্লক করা প্রবলেম হতে পারে। এছাড়াও অনলাইনে অসময়ে নেগেটিভ বা হানিকর কোনও সম্পর্কে পড়তে পারে, যা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এমনকি ঝুঁকি থাকতে পারে অপরাধী হানির। অপরাধী হানির শিকার হতে পারে কিছু তরুনী, যেমন সাইবার বুলিং, অনলাইন নির্যাতন, কাইবার সাথে পার্সনাল তথ্যের অপসারণ ইত্যাদি।

এদিকে বিবিএস জানায়, এক দশকে দেশে জনসংখ্যা বেড়েছে ২ কোটি ১১ লাখ ১৪ হাজার ৯১৯ জন। সর্বশেষ ২০১১ সালের জনশুমারি অনুযায়ী, দেশের মোট জনসংখ্যা ছিল ১৪ কোটি ৪০ লাখ ৪৩ হাজার ৬৯৭। ক্রমাগত ভাবে বৃদ্ধি হচ্ছে দেশের জনসংখ্যা। সরাকারের নানান উদ্যেগ বাল্যবিবাহ থেকে পরিবার পরিকল্পনার নির্দেশনায় কিছুটা নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হলেও বেশিভাগই হচ্ছে না তরুণীসচেতনতা অবলম্বন না করাতে।

অন্যদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যবহার কিংবা ‘ভার্চুয়াল অ্যাডিক্টেড’ এর অসচেতনার ফলে সময় অপচয় হয় পর্যাপ্ত পরিমাণ। অনলাইনে সময় অপচয় একটি বিশেষ ধরণের সমস্যা কেননা দৈনন্দিন জীবনের কাজে অসুবিধা তৈরি করতে পারে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অহেতুক পদ্ধতিতে সময় ব্যায় করা। প্রত্যেক তরুণীকেই নিজের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা সংরক্ষণস্বার্থে সচেতন হওয়া গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, বর্তমান প্রজন্মের তরুণী কিংবা তরুণীরাই পরিবর্তন করতে পারে দেশ কিংবা জাতীকে।

যুগের বিবর্তনে প্রযুক্তির কল্যাণে মানুষের পরিবর্তন হওয়াটা যেমন স্বাভাবিক, তেমনি সেই পরিবর্তনের ফলে যুগের মহিমায় পৃথিবীতে প্রযুক্তিগত দিক থেকে পুরুষদের মতে তরুণীদেরও ভূমিকা চোখে পড়ার মতো। তাই বর্তমান প্রেক্ষাপটে পুরুষরা তরুণীদেরকে কর্মস্থলে তাদের সমান অবস্থানে রাখা জরুরী। এতে তৈরি হবে কর্মবন্ধন, সম্পূর্ণ হবে প্রযুক্তির উদ্দেশ্যের সফলতা আর পরিপূর্ণতা পাবে সমাজ, সংস্কৃতি, রাষ্ট্র, এবং তরুণীদের সঠিক অধিকার।


ভার্চুয়াল অ্যাডিকশন   তরুণী   সচেতনতা   প্রজন্ম  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড আর্টিকেল

প্রেম মানে না বয়সের গণ্ডি

প্রকাশ: ০৭:৫৬ এএম, ১১ মে, ২০২৪


Thumbnail

প্রেমের কোনো বয়স হয় না। গল্প, উপন্যাস ও বাস্তব জীবনে এর আগে বহুবার তা প্রমাণ হয়েছে। আরও একবার সে কথা মনে করিয়ে দিল নিউইয়র্কের বাসিন্দা হ্যারল্ড টেরেন্স (১০০) ও জেনি শার্লিনের (৯৬) প্রেমকাহিনি। তাদের এই প্রেম পরিণতিও পেতে চলেছে। কিছু দিন পরেই দুজনে সংসার পাতবেন। তারই প্রস্তুতি চলছে।

হ্যারল্ড বিমানবাহিনীতে কাজ করতেন। এখন অবসরপ্রাপ্ত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধেও অংশ নিয়েছিলেন তিনি। পড়াশোনা চলাকালীন বিমানবাহিনীতে যোগ দেন হ্যারল্ড। তখন হ্যারল্ডের বয়স ২০। চাকরি সূত্রে ইংল্যান্ড পাড়ি দেন। কয়েক বছর সেখানেই ছিলেন। হঠাৎই ইংল্যান্ড ছেড়ে যাযাবর হয়ে যান।

ইউক্রেন, বাগদাদ, তেহরানসহ বিভিন্ন দেশে ঘুরে কাজ করতে থাকেন। বেশ কয়েক বছর এভাবে চলার পর জীবনে থিতু হতে চান তিনি। তাই আবার আমেরিকায় ফিরে আসেন। নিজের মাটিতে ফিরে নতুন জীবনও শুরু করেন। সংসার পাতেন দীর্ঘ দিনের বন্ধু থেলমার সঙ্গে।

বছর দুয়েকের মধ্যে দুই সন্তান আসে। স্ত্রী, সন্তানকে ছেড়ে কাজে ফেরার ইচ্ছা ছিল না হ্যারল্ডের। কিন্তু স্ত্রীর জোরাজুরিতেই আবার কাজে যোগ দিয়েছিলেন। হ্যারল্ড চলে যাওয়ার পর সংসার ও সন্তানের সমস্ত দায়িত্ব গিয়ে পড়ে থেলমার ওপর। দায়িত্ব পালনে অবশ্য কোনো ত্রুটি রাখেননি তিনি। সন্তানরাও বড় হয়ে নিজেদের মতো জীবন গুছিয়ে নেয়।

জীবনের অধিকাংশ সময় পরিজনদের সঙ্গ পাননি। জীবনের শেষটা এমন হোক, তা চাননি হ্যারল্ড। তাই ২০২১ সালে চাকরি থেকে পুরোপুরি অবসর নিয়ে বাড়ি ফিরে আসেন।  কিন্তু নিয়তিতে যা লেখা থাকে, তার অন্যথা হওয়ার জো নেই। হ্যারল্ড বাড়ি ফেরার মাসখানেকের মধ্যে মারা যান থেলমা। দুই ছেলে কাজের সূত্রে ভিন দেশে।

স্ত্রীর মৃত্যুর পর আবার একা হয়ে যান বৃদ্ধ হ্যারল্ড। তার এই নিঃসঙ্গ জীবনে হঠাৎই আলাপ জেনির সঙ্গে। জেনি অবিবাহিত ছিলেন। মনের মতো কাউকে পাননি, তাই সংসারও পাতা হয়নি। ৯৬ বছর বয়সে হ্যারল্ডের সঙ্গে আলাপ হওয়ার পর জেনির মনে হয়েছিল, এই মানুষটির জন্যই অপেক্ষা করছিলেন।

তাই সময় নষ্ট না করে নিজেই মনের কথা খুলে বলেন হ্যারল্ডকে। একা থাকতে আর কে চায়! তাই আর দেড়ি করেননি, জেনির সঙ্গে জীবনের বাকি দিনগুলো হেসেখেলে কাটিয়ে দিতে চেয়ে আবার নতুন করে শুরু করেন।


প্রেম   বয়স   গণ্ডি  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড আর্টিকেল

পৃথিবীর সবচেয়ে উত্তপ্ত জায়গায় যেভাবে থাকে মানুষ

প্রকাশ: ০৮:০০ এএম, ১১ মে, ২০২৪


Thumbnail

এইতো কয়েকদিন পূর্বেও ৪৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রার ফলে নাভিশ্বাস উঠেছিল সারা দেশের মানুষের। সারা দেশব্যাপী হিট অ্যালার্ট জারি করা থেকে শুরু করে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা- কত কিছুই না হয়েছে এই তীব্র তাপদাহের কারণে। তবে পৃথিবীতে এমন স্থানও রয়েছে যেখানে তাপমাত্রা থাকে ১২৭ ডিগ্রী ফরেনহাইট।

স্থানটি হচ্ছে ডেথ ভ্যালি। নাম শুনেই নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন, স্থানটি কতটা ভয়ংকর। বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক স্থানের মধ্যে অন্যতম স্থান এটি। ২০১৮ সালের জুলাইয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে উষ্ণতম স্থানের তকমা অর্জন করে ডেথ ভ্যালি। সবচেয়ে উষ্ণতম মাসের রেকর্ড হিসেবে, ওই বছরের একটানা চার দিন ১২৭ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রা ধরা পড়ে। যা তাপমাত্রার সর্বোচ্চ রেকর্ড।

ডেথ ভ্যালি ক্যালিফোর্নিয়া এবং নেভাদা সীমান্তে অবস্থিত। বিশ্বের সবচেয়ে তাপমাত্রা বিরাজ করে ডেথ ভ্যালির মরুভূমিতে। এটি বিশ্বের অন্যতম উষ্ণ স্থান হিসেবে পরিচিত। মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকাতে কেবল কয়েকটি মরুভূমি আছে। যেখানে গ্রীষ্মে তাপমাত্রায় শীর্ষে পৌঁছায়।

ডেথ ভ্যালি ন্যাশনাল পার্কে কাজ করেন ব্রান্ডি স্টুয়ার্ট। পার্কের কমিউনিকেশন বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে তিনি। তিনি বলেন, ‘এখানে এখন যেরকম গরম পড়েছে, আমরা সবাই আমাদের ধৈর্য হারিয়ে ফেলছি। আপনি যখন বাইরে যাবেন, মনে হবে যেন আপনার মুখে অনেকগুলো হেয়ার ড্রায়ারের গরম বাতাস এসে পড়ছে।’

তিনি আর বলেন, ‘এখানে এত গরম যে, আপনার গায়ে যে ঘাম হচ্ছে তা আপনি টেরই পাবেন না। কারণ খুব দ্রুত এটি বাষ্প হয়ে উবে যাচ্ছে। ঘামে যখন কাপড় ভিজে যায়, সেটা টের পাওয়া যায়, কিন্তু গায়ের চামড়ায় ঘাম শুকিয়ে যায় খুব দ্রুত। এই বিষয়টিতে অভ্যস্ত হয়ে উঠতে আমার সময় লেগেছে।’

ডেথ ভ্যালি এক বিস্তীর্ণ মরুভূমি। মাঝে মাঝে বালিয়াড়ি আর গভীর খাদ রয়েছে। পার্শ্ববর্তী রাজ্য নেভাডা পর্যন্ত বিস্তৃত। বিশ্বের উষ্ণতম জায়গা হওয়ার পরও এই জায়গাতে থাকে কয়েকশ’ মানুষ। মিজ স্টুয়ার্ট তাদের একজন।

মিজ স্টুয়ার্ট বলেন, গ্রীস্মের সময় তাদের বেশিরভাগ সময় ঘরের ভেতরেই কাটে। তবে অনেকে পাহাড়ের দিকে চলে যায়, যেখানে তাপমাত্রা একটু কম। যখন লোকে এতে অভ্যস্ত হয়ে যায়, তখন এটা স্বাভাবিক বলেই মনে হয়। তখন তাপমাত্রা ৮০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের (২৬ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস) নীচে নামলে সেটাকেই মনে হয় খুব ঠান্ডা।

ডেথ ভ্যালির লোকজনের বাড়িতে এয়ার কন্ডিশনিংয়ের ব্যবস্থা আছে। এটি তাদের ঘর ঠান্ডা রাখে। কাজেই ঘুমাতে অসুবিধা হয় না। তবে বিদ্যুৎ যদি চলে না যায়। যখন প্রচণ্ড গরম পড়ে, তখন সবাই সারাক্ষণ এয়ারকন্ডিশনিং চালিয়ে ঘর ঠান্ডা রাখার চেষ্টা করে। তখন বিদ্যুৎ সরবরাহে সমস্যা তৈরি হয়।

ডেথ ভ্যালির বেশিরভাগ মানুষ থাকেন এবং কাজ করেন ফার্নেস ক্রীকে। এখানেই সাম্প্রতিক সময়ে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল। এই জায়গাটা সমুদ্র সমতল থেকে প্রায় ২৮০ ফুট নীচু একটা বেসিনের মতো। চারিদিকে উঁচু এবং খাড়া পাহাড় দিয়ে ঘেরা।

জেসন হেসার এই ফার্নেস ক্রীকেই থাকেন। তার আসল বাড়ি মিনেসোটাতে। কাজ করেন এখানকার একটি গলফ কোর্সে। এটি বিশ্বে সমুদ্র সমতল থেকে সবচেয়ে নীচু কোনো গলফ কোর্স। সামরিক বাহিনীর এই সাবেক সদস্য বলেন, ‘আমি দুবার ইরাকে ছিলাম। যদি ইরাকে থাকতে পারি, তাহলে ডেথ ভ্যালিতেও থাকা যায়।’

জেসন গলফ কোর্সে কাজ শুরু করেন ভোর পাঁচটার একটু আগে এবং দুপুর একটা পর্যন্ত কাজ করে যান। তিনি বলেন, ‘ওরা আমাদের জানিয়েছে, যখন গরম আরও বেশি পড়বে, তখন আমাদের আরও ভোরে কাজ শুরু করতে হবে। একেবারে ভোর চারটায়। আর সেই ভোরেও কিন্তু তাপমাত্রা প্রায় ১০০-১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৩৭ দশমিক ৭ হতে ৪০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস)।’

হেসার এখানে এসেছিলেন ২০১৯ সালে। তিনি তার কাজটা বেশ পছন্দ করে ফেলেছেন। আরও কয়েক বছর তিনি এখানে থাকার পরিকল্পনা করছেন। অবসরে তিনি গলফ কোর্সে গলফ খেলতে পছন্দ করেন। তবে সেজন্য উঠতে হয় বেশ সকালে এবং খেলা শুরু করতে হয় সকাল সাতটায়। কারণ এরপর গরম খুবই অসহনীয় হয়ে উঠে।

তিনি বলেন, ‘আমি যখন এখানে এসেছি, তখন তাপমাত্রা বেশ ভালোই ছিল। শর্টস আর পোলো শার্ট পরে একটা কোল্ড বিয়ার বা কোল্ড সোডা। আপনার সাথে যদি ঠান্ডা পানীয় থাকে, আপনাকে আগে সেটা পান করে নিতে হবে। নইলে গলফের মাঠ থেকে ফিরে কিন্তু দেখবেন সেটা আর ঠান্ডা নেই। আর আগে পান করে নিলে গলফ খেলাটাও জমে ভালো।’

ক্রিসটোফার বার্ট আবহাওয়া বিষয়ক ইতিহাস নিয়ে কাজ করেন। ১৯১৩ সালে ডেথ ভ্যালিতে রেকর্ড করা তাপমাত্রা নিয়ে কেন এই সংশয়, সে সম্পর্কে তিনি বলেন, ঐ এলাকার আশেপাশের অন্যান্য এলাকার রেকর্ডের সঙ্গে এটি মিলছিল না। ফার্নেস ক্রীকের তাপমাত্রা আশে-পাশের এলাকার চেয়ে প্রায় দু্ই বা তিন ডিগ্রি বেশি ছিল।

কেউ কেউ যুক্তি দেন যে, ডেথ ভ্যালির চেয়েও হয়তো বেশি গরম পড়ছে বিশ্বের আরো অন্য কোনো জায়গায়। কিন্তু আবহাওয়ার ওপর যারা নজর রাখেন, তারা এই দাবিকে গুরুত্ব দেন না। কারণ এসব জায়গায় তাপমাত্রা রেকর্ড করার জন্য নির্ভরযোগ্য কোনো আবহাওয়া কেন্দ্র নেই।


তীব্র তাপদাহ   গরম   ডেথ ভ্যালি  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড আর্টিকেল

'এপ্রিল ফুল' এর ট্র্যাজেডিতে কি জড়িয়ে আছে?

প্রকাশ: ০৮:০০ এএম, ০১ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

এপ্রিল মাসের প্রথম দিনটি পশ্চিমা দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে বেশ ঘটা করে পালন করা হয়। এদিনে একে অপরকে চমকে দিয়ে 'বোকা বানাতে' চায়। যদিও বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে এই প্রচলন খুব একটা দেখা যায় না।

পহেলা এপ্রিল পশ্চিমা দেশগুলোতে অনেকে কিছুটা বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করে। অন্যথায় কারো না কারো কাছে তাকে বোকা হিসেবে পরিচিত হতে হবে এবং এটি নিয়ে হাস্যরস তৈরি হতে পারে।

এ দিনটিকে তাই বলা হয় অল ফুলস ডে, বাংলায় বোকা বানানোর দিনও বলতে পারেন। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ফলাও করে ভুয়া ও ভুল সংবাদ ছাপায়। পরদিন অবশ্য সেটার সংশোধনী দিয়ে জানিয়ে দেয় খবরটা আসলে এপ্রিল ফুল ছিল।

একই সাথে এদিন পরিবারের ছোটরা সাধারণত বড়দের সাথে নানাভাবে মজা করে বোকা বানানোর চেষ্টা করে। আবার বন্ধু বা কলিগরাও একে অন্যের সাথে মজা করে। তবে যাকে বোকা বানানো হয়, তাকে শেষে সবাই মিলে চিৎকার করে জানিয়ে দেয় 'এপ্রিল ফুল'।

ধারণা করা হয়, ইউরোপে এপ্রিল ফুলের প্রসার ফ্রেঞ্চ জাতির মধ্যে। ফ্রেঞ্চরা ১৫০৮ সাল, ডাচরা ১৫৩৯ সাল থেকে এপ্রিল মাসের প্রথম দিনকে কৌতুকের দিন হিসেবে পালন শুরু করে। ফ্রান্সই প্রথম দেশ হিসেবে সরকারিভাবে নবম চার্লস ১৫৬৪ সালে এক ফরমানের মাধ্যমে ১ জানুয়ারিকে নববর্ষ হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন । অর্থাৎ তিনি এটি করেন ১৫৮২ সালে ইতালীয়ান পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরী প্রবর্তিত গ্রেগরীয়ান ক্যালেন্ডার হিসেবে প্রচলন হওয়ারও আগে। পাশাপাশি ১ এপ্রিল বন্ধুদের উপহার আদানপ্রদানের প্রথা বদলে যায় ১ জানুয়ারি। কারণ তখন বিভিন্ন দেশে জুলিয়ীও ক্যালেন্ডার অনুযায়ী নিউইয়ার পালিত হত ১ এপ্রিলে। অনেকেই এই পরিবর্তনকে মেনে নিতে না পেরে এদিনই তাদের পুরনো প্রথাসমূহ চালিয়ে যেতে থাকে। কিন্তু ১ জানুয়ারির পক্ষের লোকজন এদেরকে ফাঁকি দিতে ১ এপ্রিলে ভুয়া উপহার পাঠানোর প্রথা চালু করে।

ফ্রান্সে কাউকে বোকা বানালে বলা হত এপ্রিল মাছ (April fish), ফ্রেঞ্চ ভাষায় poisson d’avril. এই্ নামকরণের কারণ, রাশিচক্র অনুযায়ী স্বর্গের কাল্পিক রেখা অতিক্রম করলে এপ্রিলে সূর্যকে মাছের মত দেখায়। এইদিনে তারা ছুটি কাটাত এবং মরা মাছ এনে তাদের বন্ধুদের পেছনে সেটে দিয়ে মজা করত।

ডাচদের আরও কারণ রয়েছে। স্পেনের রাজা দ্বিতীয় ফিলিপ ১৫৭২ সালে নেদারল্যান্ড শাসন করতেন। যারা তার শাসন অমান্য করেছিল তারা নিজেদেরকে গুইযেন বা ভিখারী বলে পরিচয় দিত । ১৫৭২ সালের এপ্রিলের ১ তারিখে গুইযেন বা বিদ্রোহীরা উপকূলীয় ছোট শহর ডেন ব্রিয়েল করায়ত্ব করে ফেলে। তাদের এই সফলতায় বিদ্রোহের দাবানল দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। শেষমেষ স্প্যানিশ সেনাপ্রধান বা দ্যা ডিউক অব অ্যালবা প্রতিরোধ করতে ব্যর্থ হন। সেই থেকে দিনের প্রচলন।

মুসলমানদের জন্য ট্র্যাজেডির?

বাংলাদেশে একটা প্রচলিত ধারণা এপ্রিল ফুলের সঙ্গে আসলে মুসলমানদের বোকা বানানোর ইতিহাস জড়িয়ে আছে।

অনেকেই মনে করেন ১৫শতকের শেষ দিকে স্পেনে মুসলিম শাসনের অবসান ঘটান রাজা ফার্দিনান্দ ও রানি ইসাবেলা। তারা স্পেনের মুসলিম অধ্যুষিত গ্রানাডায় হামলা করেন এবং পরাজিত অসংখ্য মুসলিম নারী, পুরুষ ও শিশুকে মসজিদে আটকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারেন। আর সেদিনটি ছিল পহেলা এপ্রিল।

কিন্তু এর কোন ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই বলছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান।

"এটি আমরাও শুনেছি এবং এটি একরকম আমাদের বিশ্বাসের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু আমি ইতিহাসের ছাত্র হিসেবে যখন স্পেনের ইতিহাস পড়েছি, দেখেছি যে সেসময় গ্রানাডার শাসক ছিলেন দ্বাদশ মোহাম্মদ। তার কাছ থেকেই ফার্দিনান্ড ও ইসাবেলা গ্রানাডা দখল করে নেন। আর এ ঘটনাটি ঘটেছিল জানুয়ারি মাসের ২ তারিখে। কোন কোন সূত্র বলে জানুয়ারি মাসের ১ তারিখ। এবং এটি দুই পক্ষের মধ্যে আনুষ্ঠনিক চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে হয়েছিল।"

তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক বলছেন, সেসময় ফার্দিনান্ড ও ইসাবেলা মুসলমানদের উপর নির্যাতন করেছে, ইহুদিদের উপরও করেছে, কিন্তু এপ্রিল ফুলের যে ট্র্যাজেডির কথা বলা হয় সেটার সাথে তার কোন সত্যতা পাওয়া যায় না।

"ইতিহাসে আমরা যে বইগুলো পড়েছি সেখানে কোথাও ঐ বর্ণনা পাইনি। আমাদের কাছে মনে হয় এই ঘটনা নিয়ে একটা মিথ তৈরী করা হয়েছে, যার সাথে কোন ঐতিহাসিক সংযোগ নেই।"

মি. ছিদ্দিক বলেন অন্যদিকে গূরুত্ব দিয়ে অবশ্য মুসলমানরা এটি উদযাপন নাও করতে পারে। কারণ ইসলাম ধর্ম মিথ্যা বলা, প্রতারিত করা বা কাউকে বোকা বানানো সমর্থন করে না।

মজা আনন্দের জন্য তো কোনো বিশেষ দিন আমাদের না হলেও চলে। সেখানে কোনো ছক কষে কাউকে ঘাবড়ে, কোনো কঠিন পরিস্থিতির মুখে ফেলে দিয়ে আনন্দ নেওয়াটা সুস্থ মানসিকতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে দিতেই পারে।

মজা করে কাউকে বোকা বানাতে চাইলে সেটা বিশেষ কোনোদিনেই করতে হবে এমনটা তো নয়। মজা করুন, তবে সেটা বোকা বানিয়ে নিজের বিমলানন্দ নেওয়ার মাধ্যমে নয়। কারণ আপনি যাকে বোকা বানাতে চান, সে যে আপনাকে কখনো বোকা বানানোর চেষ্টা করতে না, এটা ভাববেন না। আর এই বোকা বানাতে গিয়ে আপনার স্বভাব, সম্পর্কগুলো যে নষ্টের দিকে যেতে পারে, সেটাও তো আপনাকে ভাবতে হবে। 


এপ্রিল ফুল   পহেলা এপ্রিল  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন