নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:০৪ পিএম, ১৩ অগাস্ট, ২০১৯
বছরে প্রায় ২২ থেকে ২৪ কোটি বর্গফুট চামড়ার যোগান আসে কোরবানির ঈদে জবাই করা পশুর চামড়া থেকে। যা গড় হিসাবের প্রায় ৬০ শতাংশ। এসব চামড়ার ২০ শতাংশ ব্যবহার হয় জুতাসহ চামড়াজাত পণ্য তৈরীতে। চাহিদা বেশি থাকা সত্ত্বেও গত সাত বছরে ধাপে ধাপে কমেছে চামড়ার দাম। ২০১৩ সালে প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছিলো ৮৫ থেকে ৯০ টাকা আর ছাগলের চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছিলো ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। সেই চামড়ার দাম চলতি বছর ২০১৯ সালে এসে রাজধানী শহর ঢাকার জন্যে নির্ধারণ করা হয়েছে গরুর চামড়া প্রতি বর্গফুট ৪৫-৫০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৩৫-৪০ টাকা। ছাগলের চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮ থেকে ২০ টাকা। তবে সরকার নির্ধারিত এসব মূল্য উপেক্ষা করে একেবারে প্রান্তিক পর্যায়ে চামড়া আরও কমমূল্যে কেনারও সত্যতা পাওয়া গেছে।
এক হিসেবে দেখা গেছে রাস্তা থেকে টোকানো প্লাস্টিকের বোতল পথ শিশুরা বিভিন্ন ভাঙ্গারির দোকানে বিক্রি করে প্রতি কেজি ১০ থেকে ১২ টাকা। এসব বোতল আবার কখনো ১৫ টাকা কেজি দরেও বিক্রি হয়। সেক্ষেত্রে তিন কেজি প্লাস্টিকের বোতল বিক্রি করে কেনা যাবে এক বর্গফুট গরুর চামড়া আর ছাগলের চামড়া কেনা যাবে দুই বর্গফুট।
গত ২০১৩ সাল থেকে চলতি বছর ২০১৯ সাল, এই সাত বছরে ধাপে ধাপে কমেছে চামড়ার দাম। ২০১৩ সালে প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম ছিলো ৮৫ থেকে ৯০ টাকা আর ছাগলের চামড়ার দাম ছিলো ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। ২০১৪ সালে প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম ছিলো ৭০ থেকে ৭৫ টাকা আর ছাগলের চামড়ার দাম ছিলো ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। ২০১৫ সালে এসে প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম হয়েছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা আর ছাগলের চামড়ার দাম ছিলো ২০ থেকে ২৫ টাকা। ২০১৬ সালে প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম ছিলো ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, ছাগলের চামড়ার দাম ছিলো ১৮ থেকে ২০ টাকা। এরপর ২০১৭-১৮ সালে গরুর চামড়ার দাম ছিলো প্রতি বর্গফুট ৪০ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে শুধু ২০১৮ তে এসে ছাগলের চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুটে ২ টাকা বেড়ে হয়েছিলো ২২ টাকা। তবে, ২০১৯ সালে এসে চামড়ার দরপতনে রেকর্ড গড়েছে। এবার প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা আর ছাগলের চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮ থেকে ২০ টাকা। অভিযোগ আছে সরকার নির্ধারিত এইসব চামড়ার দাম উপেক্ষা করে প্রান্তিক পর্যায়ে আরো কমদামে পশুর কাঁচা চামড়া কিনেছে ফড়িয়ারা।
কেন এই দরপতন?
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, প্রান্তিক পর্যায়ে লাভের আশায় যারা মৌসুমি চামড়া ব্যবসা করেন তাদের অনভিজ্ঞতার কারণে বিক্রেতারা চামড়ার সঠিকমূল্য পাচ্ছেন না। আবার যারা মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী তাদের সাথে আড়ৎদারদের সমন্বয় না থাকার কারণে এই প্রান্তিক ব্যবসায়ীরাও লাভে চামড়া বিক্রি করতে না পাড়ায় সব থেকে কম দাম পাচ্ছেন বিক্রেতারা। আরো বিশদভাবে বলতে গেলে, যেদিন মাঠ পর্যায় থেকে চামড়া কেনেন প্রান্তিক ব্যবসায়ীরা সেদিনই বিক্রি করতে না পারলে হতাশ হয়ে পড়েন এবং পুঁজি হারানোর শঙ্কায় পড়ে যান। অথচ এই চামড়া যদি তারা লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করে সর্বচ্চ ১৫ দিন রাখতে পারেন তাহলেই লোকসানের মুখে পড়তে হবে না তাদের। এই পদ্ধতি অবলম্বন করলেই বাজারের পুঁজি নেই এমন অজুহাতে মধ্যসত্ত্বভোগীরা তাদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে কম দামে চামড়া কিনতে পারবেন না।
আবার কিছু সুত্র বলছে, কেন চামড়ার দাম এত কম সেটা অনেক জটিল সমীকরণ। মৌসুমি ব্যবসা হওয়ার কারণে এই চামড়ার ব্যবসাটা নিয়ন্ত্রণ হয় গুটিকয়েক মানুষের ইচ্ছের উপর। সরকারিভাবে জোরালো কোন তদারকির ব্যবস্থা না থাকায় চামড়া ব্যবসায় গড়ে উঠেছে শক্তিশালী সিণ্ডিকেট আর এই সিন্ডিকেটের ইচ্ছার উপরেই নির্ভর করে চামড়ার দাম বাড়বে না কমবে।
এদিকে চামড়ার দাম এত কম হওয়ার কারণ হিসাবে আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়ার দাম কম বলে উল্লেখ করেছে বাংলাদেশ ট্যানারী ওনার্স এ্যাসোসিয়েশন।
বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যম ও লোক মুখে আলোচনা হচ্ছে চামড়াজাত পণ্যের দাম এত বেশি হলেও চামড়ার দাম এত কম কেন? এ বিষয়ে গত বছর একটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এক সাক্ষাতকারে বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার ও লেদার সামগ্রী প্রস্তুতকারক সমিতির তৎকালীন সভাপতি "কাঁচামালের সঙ্গে তৈরি হওয়া পণ্যের দাম মেলানো যাবে না। বিশেষ করে চামড়ার মতো কাঁচামাল অনেক হাত ঘুরে আমাদের কাছে আসে। এখন যে চামড়াটা আপনি তিনশো টাকায় বিক্রি হয়েছে বলছেন, সেটা কিন্তু আমাদের কাছে তখন সেটা দর অনেক বেড়ে যায়। আমরা সরকারি রেট অনুযায়ীই কিনছি।"
এর সঙ্গে সেটাকে প্রসেস করার, কারখানার, শ্রমিক খরচ যোগ হবে বলে তিনি বলছেন।
``এরপর সেই প্রসেসড চামড়াটা আরেকজন কিনে নিয়ে দেশী বিদেশি ক্রেতাদের অর্ডারমতো সেটা দিয়ে জুতা, স্যান্ডেল বা ব্যাগ তৈরি করবে। তার কাছ থেকে সেসব ব্রান্ড এসব পণ্য কিনে নিয়ে কয়েকগুণ বেশি দামে বিক্রি করে। কারণ আন্তর্জাতিকভাবেই মনে করা হয়, কয়েকগুণ বেশি দাম না ধরা হলে তারা প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারবেন না।`` তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ``একজোড়া জুতা বিদেশে রপ্তানি করা হয় হয়তো ১৪ বা ১৬ ডলারে, কিন্তু সেটাই হয়তো বায়ার তার দোকানে বিক্রি করছে ৮০ বা একশো ডলারে।``
সেখানেও তাদের অনেক খরচ রয়েছে বলে তিনি বলছেন। বিজ্ঞাপন, দোকানের খরচ, কর্মী ব্যয় এবং অনেক সময় জুতা বা পণ্য অবিক্রীত থেকে যায়, এসব খরচও সেখানে যোগ হয়।
তৈরি পোশাকসহ এ ধরনের সব ব্যবসাতেই এ ধরনের নিয়ম অনুসরণ করা হয় বলে তিনি বলছেন।
বাংলা ইনসাইডার
মন্তব্য করুন
গত সপ্তাহে লেনদেন হওয়া সূচকের বড় পতনের মধ্যদিয়ে লেনদেন হয়েছে শেয়ারবাজারে। এতে সপ্তাহজুড়ে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) দাম কমার তালিকায় নাম লিখিয়েছে বেশি সংখ্যক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। এক সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধনও পাঁচ হাজার কোটি টাকার ওপরে কমেছে।
গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমার পাশাপাশি সবকটি মূল্যসূচক এবং লেনদেনের গতিও কমেছে। গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ৮৫টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ২৯০টির। আর ১৭টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের দাম কমায় সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ১ হাজার ৮২৪ কোটি টাকা। যা আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৭ লাখ ৭ হাজার ২৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ৫ হাজার ২০২ কোটি টাকা বা দশমিক ৭৪ শতাংশ।
এদিকে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স কমেছে ১৪৩ দশমিক ৬৩ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৫৪ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে ৪৫ দশমিক ৪০ পয়েন্ট বা দশমিক ৮১ শতাংশ। প্রধান মূল্যসূচকের পাশাপাশি কমেছে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক। গত সপ্তাহজুড়ে এ সূচকটি কমেছে ৪১ দশমিক ২৫ পয়েন্ট বা ২ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে ৭ দশমিক ৩৮ পয়েন্ট বা দশমিক ৩৭ শতাংশ।
আর ইসলামী শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ্ সূচকেরও গত সপ্তাহে বড় পতন হয়েছে। গত সপ্তাহে এ সূচকটি কমেছে ৩০ দশমিক ৪১ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৪৫ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে ১০ দশমিক ১৪ পয়েন্ট বা দশমিক ৮২ শতাংশ।
সবকটি মূল্যসূচক কমার পাশাপাশি লেনদেনের গতিও কমেছে। সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৭৬৪ কোটি ২৮ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ৯৬০ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন কমেছে ১৯৬ কোটি ২৬ লাখ টাকা বা ২০ দশমিক ৪৩ শতাংশ।
আর সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ৩ হাজার ৮২১ কোটি ৪১ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে মোট লেনদেন হয় ৪ হাজার ৮০২ কোটি ৭২ লাখ টাকা। সে হিসাবে মোট লেনদেন কমেছে ৯৮১ কোটি ৩১ লাখ টাকা।
সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে ই-জেনারেশনের শেয়ার। কোম্পানিটির শেয়ার প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ৩০ কোটি ৬ লাখ টাকা, যা মোট লেনদেনের ৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজের শেয়ার প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ২৭ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। প্রতিদিন গড়ে ২৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকা লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে লাভেলো আইসক্রিম।
এছাড়া লেনদেনে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- নাভানা ফার্মাসিউটিক্যালস, বেস্ট হোল্ডিং, ওরিয়ন ইনফিউশন, গোল্ডেন সন, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ, ফারইস্ট নিটিং এবং অ্যাডভেন্ট ফার্মা।
মন্তব্য করুন
দেশের সরকারি-বেসরকারি প্রায় ৩০টি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন। তাদের সঙ্গে যাচ্ছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমান। অফশোর ব্যাংকিং হিসাবের আওতায় প্রবাসীরা যাতে দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে ডলার জমা রাখতে উদ্বুদ্ধ হন, সেজন্য আয়োজিত নানা প্রচারণায় অংশ নেবেন তারা। পাশাপাশি অর্থ পাচার প্রতিরোধ- সংক্রান্ত একটি অনুষ্ঠানেও তাদের যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২৪ মে নিউইয়র্কের একটি হোটেলে প্রবাসীদের জন্য অফশোর ব্যাংকিং ফিক্সড ডিপোজিট-সংক্রান্ত প্রচারণা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান।
বিশেষ অতিথি থাকবেন নিউইয়র্কে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মুহাম্মদ আবদুল মুহিত, ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমান, নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল মোহাম্মদ নাজমুল হুদা।
ওই অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেবেন ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি সেলিম আর এফ হোসেন, ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের এমডি আবুল কাশেম মো. শিরিন, ব্যাংক এশিয়ার এমডি সোহেল আর কে হুসেইন, অগ্রণী ব্যাংকের এমডি মুরশেদুল কবীর ও সিটি ব্যাংকের এমডি মাসরুর আরেফিন। জানা গেছে, এ অনুষ্ঠানের খরচও বহন করবে উল্লিখিত ব্যাংকগুলো।
পাশাপাশি একই সময়ে ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিসের আয়োজনে আন্তর্জাতিক ব্যাংক সম্মেলনে অনুষ্ঠিত হবে। এ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন আরও ২৫ জন এমডি। জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে এসব ব্যাংক এমডির বিদেশ যাওয়াসংক্রান্ত নথি অনুমোদন করেছে। ব্যাংক খাতে ডলারের জোগান বাড়াতে বিভিন্ন ব্যাংক অফশোর ব্যাংকিংকে বিশেষ জোর দিয়েছে। এ জন্য নানা প্রচারণাও চালাচ্ছে ব্যাংক। তারই অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রচারণামূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
বাংলাদেশিদের প্রায় ৫ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলারের অফশোর সম্পদ আছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। যা বাংলাদেশের মোট জিডিপির প্রায় ১ দশমিক ৩ শতাংশ। এই সম্পদের মধ্যে ৫ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ এশিয়ার ট্যাক্স হেভেনগুলোতে, বাকিটা ইউরোপ ও আমেরিকায়।
সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ট্যাক্স
অবজারভেটরির প্রকাশিত অ্যাটলাস অফ অফশোর ওয়ার্ল্ড শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এসব জানা গেছে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের অফশোর
বিনিয়োগের ২০২২ সালের তথ্য দিয়ে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। ট্যাক্স হেভেনে বিদেশি
ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান স্বল্প কর দিয়ে বা বিনা করে বিনিয়োগ করতে পারেন। আর বিনিয়োগকৃত
এই সম্পদকে অফশোর সম্পদ বলা হয়।
২০২১ সালে ট্যাক্স হেভেনে বাংলাদেশিদের
মালিকানাধীন অফশোর সম্পদের পরিমাণ ছিল ৮ দশমিক ১৪৫ বিলিয়ন ডলার, যা
এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। এর মধ্যে ৭ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছিল সিঙ্গাপুর, আরব
আমিরাত, হংকংসহ
এশিয়ার ট্যাক্স হেভেনগুলোতে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, না
জানিয়ে এই অফশোর বিনিয়োগে শূন্য দশমিক ৫ বিলিয়ন কর পাওয়া যায়নি বলে অনুমান করা যায়।
এতে আরও দেখা গেছে, ট্যাক্স
হেভেনে রিয়েল এস্টেট খাতে বাংলাদেশিদের বিনিয়োগ করা মোট অফশোর সম্পদের পরিমাণ শূন্য
দশমিক ৬৬ বিলিয়ন ডলার যা বাংলাদেশের জিডিপির শূন্য দশমিক ১৮ শতাংশ।
রিয়েল এস্টেট বিনিয়োগের বেশিরভাগই
সিঙ্গাপুর ও দুবাইতে। এছাড়া লন্ডন ও প্যারিসে কিছু বিনিয়োগ হয়েছে এ খাতে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, 'অফশোর রিয়েল এস্টেট
শেষ পর্যন্ত বিদেশি বিনিয়োগকারীর মালিকানাধীন হয় কিংবা জটিল অফশোর কাঠামোর মাধ্যমে
ভিন্ন দেশের কোনো বাসিন্দার মালিকানাধীন হয়ে থাকে যেখানে প্রকৃত মালিকের পরিচয় অস্পষ্ট
থাকে।'
অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং
প্রজেক্টের (ওসিসিআরপি) সাম্প্রতিক একটি অনুসন্ধানে দেখা গেছে, অন্তত
৩৯৪ জন বাংলাদেশি দুবাইয়ের ৬৪১টি আবাসিক সম্পত্তির মালিক, যার আনুমানিক মূল্য প্রায়
২২৫ দশমিক ৩৫ মিলিয়ন ডলার। সংস্থাটি ২০২২ সাল থেকে এ অনুসন্ধান পরিচালনা করেছে।
ওসিসিআরপি বলছে, দুবাই
অফশোর বিনিয়োগের জন্য জনপ্রিয় কারণ 'পলাতক অপরাধীদের গ্রেপ্তার ও ফিরিয়ে দেওয়ার
ক্ষেত্রে বিদেশি রাষ্ট্রের প্রতি আমিরাত যথাযথ প্রতিক্রিয়া দেখায় না।'
এ প্রসঙ্গে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, 'তদন্তাধীন বা অন্য কোথাও নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ
হাই-প্রোফাইল ব্যক্তিরা কীভাবে যাচাই-বাছাই ছাড়াই এই সম্পদ কিনতে পারে এবং মালিক হয়ে
যেতে পারে তা বোঝা কঠিন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নিজেদেরই এসব ঘটনা চিহ্নিত করতে পারা
উচিত এবং সম্পদগুলো টার্গেট করে সন্দেহজনক কিছু মনে হলে বিদেশি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে গোয়েন্দা
তথ্য শেয়ার করা উচিত।'
মন্তব্য করুন
প্রায় এক মাস হতে চলল বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ। সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে গতকাল এ ব্যাপারে আলটিমেটাম দেওয়া হয়েছে। এই সময়ে সাংবাদিকরা কেন প্রবেশ করবে না বাংলাদেশ ব্যাংকে, তার কোন যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যাও দেওয়া হয়নি বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে। যখন আর্থিক খাতে নানা রকম বিশৃঙ্খলা, ব্যাংক একীভূত করা নিয়ে তালগোল পাকাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক, ডলার নিয়ে চলছে তেলেসমাতি কারবার; তখন বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা নানা রকম গুজবকে উস্কে দিচ্ছে। এর ফলে সংবাদমাধ্যমগুলোতে আর্থিক খাত নিয়ে নানা রকম নেতিবাচক খবর প্রকাশিত হচ্ছে এবং এই সমস্ত খবরগুলো সরকারের ইমেজ নষ্ট করছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। সরকারের নীতি নির্ধারক মহলে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
একলাফে ডলারের মূল্য বাড়িয়ে দেওয়া, সুদের হারের নিয়ন্ত্রণ উঠিয়ে দেওয়া কিংবা ব্যাংক একীভূতকরণ; সবগুলো নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক এক লেজেগোবরে অবস্থায় চলে গেছে। এই পরিস্থিতিতে সাংবাদিকদের কাছে প্রকৃত পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করা এবং প্রত্যেকটি কাজের যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করাটা জরুরি। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক অদৃশ্য কারণে সে পথে হাঁটছে না। এই না হাঁটার ফলে নানা রকম গুজব এবং নেতিবাচক সংবাদ উস্কে দেওয়া হচ্ছে।
কদিন আগেই রিজার্ভ চুরি নিয়ে এক গুজব ছড়ানো হয়েছিল। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে এই তথ্য নাকচ করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সমস্যা হল, বাংলাদেশ ব্যাংকে যখন গণমাধ্যমের অবাধ প্রবেশাধিকার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে তখন মানুষ গুজবকে বিশ্বাস করা শুরু করেছে। যেকোন একটি প্রতিষ্ঠানের জবাবদিহিতা এবং স্বচ্ছতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সরকার তথ্য অধিকার আইন করেছে। এদেশের প্রধানমন্ত্রী গণমাধ্যমবান্ধব। তিনি যে কোন বিদেশ সফর করে এসে সংবাদ সংবাদ সম্মেলন করেন এবং এই সংবাদ সম্মেলনে গণমাধ্যমের সঙ্গে সব বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা করেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী যদি গণমাধ্যমের জন্য অবাধ তথ্য প্রবাহ নিশ্চিত করেন, তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংক কেন এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে?
বর্তমান সরকার গণমাধ্যমের অবাধ স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছে। বিশেষ করে টকশোগুলোতে সরকার বিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা এবং ব্যক্তিরা এসে নানা রকম সমালোচনা করছে এবং এই সমস্ত সমালোচনা কোনরকম সেন্সরশিপ ছাড়াই করা হচ্ছে। সরকারের যখন এই অবস্থান তখন বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের অবস্থান সম্পূর্ণ বিপরীত। তাহলে কি বাংলাদেশ ব্যাংকে কোন ভূত আছে? যারা সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট, সরকারের বিশ্বাসযোগ্যতা ক্ষুণ্ন করার জন্য কাজ করছে।
কারণ বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রায় এক মাস ধরে এই পদক্ষেপের ফলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সরকার। দেশে অর্থনৈতিক সংকট রয়েছে, এ কথা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে অর্থনৈতিক সংকট নিরসনের জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। আর এ রকম একটা বাস্তবতায় বাংলাদেশ ব্যাংক গণমাধ্যমকে কোন তথ্য দেবেন না, গণমাধ্যম বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রবেশ করতে পারবে না- এটি এটির পেছনে কোনো যৌক্তিক কারণ নেই।
অনেকেই মনে করছেন, কেউ কেউ বাংলাদেশ ব্যাংকের ভিতরে থাকা কোন ষড়যন্ত্রকারী গোষ্ঠী ইচ্ছাকৃতভাবে এই সব ঘটনা ঘটাচ্ছে। এতে যেন সরকারের ইমেজ ক্ষুন্ন হয়, গুজব ছড়ানো সহজ হয় এবং অসত্য মিথ্যা তথ্য যারা পরিবেশন করছে তাদেরকে উস্কে দেওয়া হয়। অবাধ তথ্য প্রবাহের যুগে কোন তথ্যই গোপন রাখা যায় না। বাংলাদেশ ব্যাংক সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার বন্ধ করে কোন তথ্য গোপন করতে পারেনি। তারা ডলারের দাম বৃদ্ধির আগেই সব খবর প্রকাশ করেছে। স্ক্রলনীতির সংবাদ বাংলাদেশ ব্যাংকের ঘোষণার আগেই প্রকাশিত হয়েছে। কাজেই বাংলাদেশ ব্যাংক যদি এভাবে গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় তাহলে সরকারই ক্ষতিগ্রস্থ হবে। সরকারকে ক্ষতিগ্রস্থ করার জন্যই কী বাংলাদেশ ব্যাংকের কোন কোন মহল সক্রিয়?
বাংলাদেশ ব্যাংক সাংবাদিক গণমাধ্যম অর্থনীতি
মন্তব্য করুন
দেশের সরকারি-বেসরকারি প্রায় ৩০টি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন। তাদের সঙ্গে যাচ্ছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমান। অফশোর ব্যাংকিং হিসাবের আওতায় প্রবাসীরা যাতে দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে ডলার জমা রাখতে উদ্বুদ্ধ হন, সেজন্য আয়োজিত নানা প্রচারণায় অংশ নেবেন তারা। পাশাপাশি অর্থ পাচার প্রতিরোধ- সংক্রান্ত একটি অনুষ্ঠানেও তাদের যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে।
সরকারি-বেসরকারি প্রায় ৩০টি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন । অফশোর ব্যাংকিং হিসাবের আওতায় প্রবাসীরা যাতে দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে ডলার জমা রাখতে উদ্বুদ্ধ হন, সে জন্য আয়োজিত নানা প্রচারণায় অংশ নেবেন তারা। ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সঙ্গে যাচ্ছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমানও।
প্রায় এক মাস হতে চলল বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ। সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে গতকাল এ ব্যাপারে আলটিমেটাম দেওয়া হয়েছে। এই সময়ে সাংবাদিকরা কেন প্রবেশ করবে না বাংলাদেশ ব্যাংকে, তার কোন যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যাও দেওয়া হয়নি বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে। যখন আর্থিক খাতে নানা রকম বিশৃঙ্খলা, ব্যাংক একীভূত করা নিয়ে তালগোল পাকাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক, ডলার নিয়ে চলছে তেলেসমাতি কারবার; তখন বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা নানা রকম গুজবকে উস্কে দিচ্ছে। এর ফলে সংবাদমাধ্যমগুলোতে আর্থিক খাত নিয়ে নানা রকম নেতিবাচক খবর প্রকাশিত হচ্ছে এবং এই সমস্ত খবরগুলো সরকারের ইমেজ নষ্ট করছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। সরকারের নীতি নির্ধারক মহলে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।