নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:৫৯ পিএম, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৯
ক্যাসিনো অভিযানের পর বাগানবাড়ি অভিযানে নামছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং র্যাব। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই বিভিন্ন বাগানবাড়িতে অভিযান চালানো হবে বলে একাধিক গোয়েন্দাসূত্রে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে। প্রধানমন্ত্রী দলের মধ্যে শুদ্ধি অভিযানের ঘোষণা দিয়েছেন। দলের মধ্যে যারা অপকর্ম করে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর শনিবার দলের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে তিনি এই যুদ্ধের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন। তিনি বলেছেন, দলের মধ্যে যারা দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাসী, ক্যাডার, যারা বিভিন্ন রকম অপকর্ম করে, তাদেরকে কখনো কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে। ঐ কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে তিনি ছাত্রলীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদককে অপসারণের নির্দেশ দেন। তিনি বৈঠকে এটাও বলেন যে আরও কিছু অঙ্গসংগঠনের ছত্রছায়ায় বেশকিছু নেতা বিভিন্ন অপকর্ম করছে, ঢাকায় ক্যাসিনো পরিচালনা করছে- এরকম অভিযোগ গোয়েন্দা মাধ্যমেই এসেছে বলে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন। তার এই আনুষ্ঠানিক ঘোষণার কয়েকদিনের মাথায়ই গতকাল র্যাব ঢাকার বিভিন্ন অবৈধ ক্যাসিনোতে অভিযান পরিচালনা করে যুবলীগের ঢাকা দক্ষিণ মহানগর শাখার সাংগঠনির সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে গ্রেপ্তার করে। এছাড়াও অন্তত চারটি ক্যাসিনো সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে। র্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ক্যাসিনোগুলো বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, শুধু ক্যাসিনো নয়, ঢাকার বিভিন্ন উপকণ্ঠে গাজীপুর, নরসিংদী, পূবাইল ইত্যাদি স্থানে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গসহযোগী এবং ভাতৃপ্রতিম সংগঠনের অনেক নেতাকর্মীই বাগানবাড়ি বানিয়েছেন। সেই বাগানবাড়িগুলোতে রমরমা মাদক ব্যবসা, অনৈতিক কর্মকাণ্ড চলে বলে জানা গেছে। প্রায় বৃহস্পতি এবং শুক্রবার এসব বাগানবাড়িতে নানারকম প্রভাবশালী ব্যক্তিরা যান এবং বিভিন্ন অবৈধ কর্মকাণ্ড তৎপরতায় নিজেদেরকে জড়িয়ে ফেলেন। প্রধানমন্ত্রীর কাছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এরকম ঢাকার বিভিন্ন উপকণ্ঠে ১২৫টি বাগানবাড়ির সন্ধান দিয়েছেন। যেগুলো আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দের। সেসব বাগানবাড়িতে নানারকম অপরাধ তৎপরতা চলে বলেও গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। উল্লেখ্য, বিএনপি আমলে তারেক রহমানের বন্ধু গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের গাজীপুরে ‘খোয়াব ভবন’ নামে একটি বাগানবাড়ি হতো। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় সেখানে নানা অপকর্ম হতো। আওয়ামী লীগের নামে এরকম অভিযোগ আসুক এটা শেখ হাসিনা চান না।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্যাসিনোর পর এসব বাগানবাড়িতে অভিযান চালানোরও নির্দেশ দিয়েছেন। পুলিশের আইজি, র্যাবের মহাপরিচালকসহ উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছে প্রধানমন্ত্রী একটি পরিস্কার বার্তা দিয়েছেন যে, অপরাধী যে-ই হোক না কেন, যেই দলেরই হোক না কেন, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে, তার প্রতি কোনোরকম সহানুভূতিও দেখানো যাবে না। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো এটাও বলছে যে, ক্যাসিনো অভিযানের পাশাপাশি বাগানবাড়ি অভিযানও পরিচালনা করা হবে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এ ব্যাপারে আরও তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করছে। সুর্নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে এসব বাগানবাড়িতে অভিযান পরিচালনা করা হবে।
গোয়েন্দা সংস্থার দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে যে তাদের কাছে খবর আছে যে ঢাকার উপকণ্ঠে যে বাগানবাড়ি রয়েছে, সেগুলোতে নানারকম অপকর্ম সংগঠিত হয়। শুধু ক্লাব বা ক্যাসিনোতেই নয়, এসব বাগানবাড়িতেও জুয়ার আড্ডা, রমরমা মাদক ব্যবসাসহ নানারকম অপকর্ম হয়। এজন্যই তারা মনে করছে যে এগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার।
উল্লেখ্য, টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে জনগণের কাছে তাদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার জন্য এবং আওয়ামী লীগ যে দুর্নীতি, অনিয়ম এবং অনৈতিক কার্যক্রমকে কোনোভাবেই প্রশ্রয় দেয় না, সেটা প্রমাণের জন্য উদ্যোগ নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছেন বলে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা নিশ্চিত করেছে।
বাংলা ইনসাইডার
মন্তব্য করুন
ডোনাল্ড লু বিএনপি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ চীন সফর ভারত যুক্তরাষ্ট্র
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছিল বিএনপির আশা ভরসার কেন্দ্রস্থল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করবে; মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নির্দলীয়, নিরপেক্ষ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায়ে সরকারকে বাধ্য করবে; মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কারণ সরকার শেষ পর্যন্ত নির্বাচন করতে পারবে না- এমন বক্তব্যগুলো বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচনের আগে বহুল প্রচারিত ছিল। বিএনপির সব নেতারা প্রকাশ্যেই এ কথা বলত।
বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যখন র্যাবের উপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, বাংলাদেশকে গণতন্ত্র সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানায় না তখন বিএনপি নেতারা উল্লাসে ফেটে পড়েছিলেন। তারা দলীয় কার্যালয়ে মিষ্টিমুখের ব্যবস্থাও করেছিলেন।
আবার ডোনাল্ড লু নির্বাচনের আগে যখন বাংলাদেশ সফর করেছিলেন এবং ভিসা নীতি প্রয়োগ করেছিলেন তখন বিএনপি নেতাদের প্রকাশ্যে মার্কিন বন্দনা করতে দেখা গেছে। ২৮ অক্টোবরের আগ পর্যন্ত প্রায় প্রতিদিনই মার্কিন দূতাবাসে বা মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসের বাসভবনে বিএনপির নেতাদের আনাগোনা ছিল। তারা সেখানে চা চক্রে মিলিত হয়েছেন, নৈশভোজে মিলিত হয়েছেন এবং বিভিন্ন রকমের শলাপরামর্শ করেছেন।
পিটার ডি হাস গত বছরের ১০ অক্টোবর বিএনপি যখন সমাবেশ করতে পারেনি তখনও একতরফা বিবৃতি দিয়েছিলেন। এছাড়াও তিনি বিতর্কিত সংগঠন মায়ের ডাকের এক নেতার বাসায় গিয়েছিলেন এবং সেখানে তিনি বিএনপির প্রতি এক ধরনের সহানুভূতি জানিয়েছিলেন। এভাবেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির উপর এক ধরনের প্রচ্ছন্ন সমর্থন এবং সহানুভূতি দেখিয়েছিল।
অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই সহানুভূতি এবং পরোক্ষ সমর্থনের কারণেই বিএনপির আন্দোলনের পালে হাওয়া লেগেছিল। নেতাকর্মীদের মধ্যে একটি চাঙ্গা ভাব তৈরি হয়েছিল। কিন্তু ২৮ অক্টোবরের পর থেকে পরিস্থিতি পাল্টে যেতে শুরু করে। যদিও ২৮ অক্টোবরের পর এই ডোনাল্ড লু শর্তহীন সংলাপের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন এবং এই আহ্বানের চিঠি নিয়ে পিটার ডি হাস তিনটি দলের নেতাদের কাছে গিয়েছিলেন এবং একটি সংলাপ আয়োজনের শেষ চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সেই সংলাপ আয়োজনে বিএনপি বা আওয়ামী লীগ কেউই সাড়া দেয়নি।
এখন নির্বাচন সমাপ্ত হয়েছে এবং ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর ১১ জানুয়ারি নতুন সরকার গঠিত হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচনকে ত্রুটিপূর্ণ বলার পরও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়া এবং নতুন সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের বার্তা দিয়েছেন। ডোনাল্ড লু’র আগে আফরিন আক্তার নির্বাচনের পরে বাংলাদেশ সফর করেছিলেন এবং সেই সময় তিনি হোটেল ওয়েস্টিনে বিএনপি নেতৃবৃন্দের সাথে সাক্ষাৎ করেছিলেন। তখন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং শামা ওবায়েদ আফরিন আক্তারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। যদিও সেই সাক্ষাতের পর তারা কোনও কিছুই সাংবাদিকদেরকে জানাননি। কিন্তু এবার ডোনাল্ড লু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেননি। আর এটি বিএনপির মধ্যে হতাশা সৃষ্টি করেছে।
বিএনপি মনে করছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন তাদেরকে আর আগের মতো গুরুত্ব দিচ্ছেন না, পাত্তা দিচ্ছে না। বরং সরকারের সঙ্গে সম্পর্কের কারণে বিএনপিকে এড়িয়ে যাচ্ছে। এ নিয়ে বিএনপির মধ্যে হতাশা তৈরি হয়েছে। বিএনপি নেতারা দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ, শামা ওবায়েদ, তাবিথ আউয়ালসহ যারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন এবং মার্কিন দূতাবাসে যাদের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে তাদেরকে দুষছেন। তারা মনে করছেন যে, বিএনপির মধ্যেই সমস্যা রয়েছে। বিএনপির নেতারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে পারেননি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বিএনপির বক্তব্যগুলো তারা সঠিকভাবে ও যথাযথভাবে উপস্থাপন করতে পারেননি। আর একারণেই ডোনাল্ড লু’র সফরের পর বিএনপির মধ্যে চলছে এক ধরনের হতাশা।
ডোনাল্ড লু বাংলাদেশ রাজনীতি বিএনপি
মন্তব্য করুন
আগামী ২৩ জুন আওয়ামী লীগের ৭৫ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পর্যন্ত আওয়ামী লীগ দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গকারী, দলের ভেতর সুবিধাবাদী, লুটেরা এবং দলের নাম ভাঙিয়ে বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করবে না। কিন্তু ২৩ জুনের পর আওয়ামী লীগের ক্র্যাশ প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ক্র্যাকডাউন হবে দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গকারী এবং দলের সুনাম নষ্টকারীদের বিরুদ্ধে। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ব্যাপারে শূন্য সহিষ্ণুতা নীতি অনুসরণ করবে। আওয়ামী লীগের একটি দায়িত্বশীল সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
আওয়ামী লীগ এবং তার আদর্শিক জোট ১৪ দলের নেতাদের চীন সফরে হিড়িক পড়েছে। আওয়ামী লীগ এবং তার সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর এই চীন সফরকে ঘিরে কূটনৈতিক অঙ্গনে চলছে নানামুখী আলাপ আলোচনা। ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উভয় দেশই ১৪ দল এবং আওয়ামী লীগের নেতাদের চীন সফরের ব্যাপারে দৃষ্টি রাখছেন। তবে তারা এই বিষয় নিয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হচ্ছেন না। বিষয়টি তারা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিষয় হিসেবেই মনে করছেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছিল বিএনপির আশা ভরসার কেন্দ্রস্থল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করবে; মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নির্দলীয়, নিরপেক্ষ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায়ে সরকারকে বাধ্য করবে; মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কারণ সরকার শেষ পর্যন্ত নির্বাচন করতে পারবে না- এমন বক্তব্যগুলো বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচনের আগে বহুল প্রচারিত ছিল। বিএনপির সব নেতারা প্রকাশ্যেই এ কথা বলত।