নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০০ পিএম, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৯
সরকারের বিরুদ্ধে নানা ইস্যুতেই জনরোষ তৈরি হচ্ছিল। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, ডেঙ্গু মোকাবেলায় সরকারের নানা রকম সমস্যা, প্রিয়া সাহার ঘটনা ইত্যাদি নানা ইস্যুতে সরকার যখন কোণঠাসা তখন বিএনপি দুটি স্থায়ী কমিটির বৈঠকের মাধ্যমে নতুন করে আন্দোলন শুরু করার পরিকল্পনা এটেছিল। আর সেই আন্দোলন শুরু করার জন্য দু’সপ্তাহ আগে বিএনপি দাতা দেশগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছিল। বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে একরাশ অভিযোগও সেখানে পেশ করা হয়েছিল।
সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের জন্যই বিএনপির স্থায়ী কমিটির দুটি বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। সে আন্দোলনের জন্য বিএনপি কিছু কর্মসূচী গ্রহণ করেছিল। একই সাথে সাংঠনিকভাবে নিজেদেরকে সংগঠিত করার জন্য ছাত্রদলসহ বিভিন্ন অঙ্গসহযোগী সংগঠন এবং বিএনপির কাউন্সিলের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছিল। অর্থাৎ বিএনপি নিজেকে গুছিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতি শুরু করেছিল এবং জনগণের সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল। সেসময়ই দাবার ছক উল্টে দিলেন শেখ হাসিনা।
ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে অপসারণ, যুবলীগের নেতাকে গ্রেপ্তার, ক্যাসিনো বন্ধের জন্য আইনশৃংখলা বাহিনীর সাড়াশি অভিযান এবং আওয়ামী লীগের মধ্যে শুদ্ধি অভিযানে কেবল আওয়ামী লীগের মধ্যেই অস্বস্তি তৈরি হয়নি বিএনপিতেও টালমাটাল অবস্থা চলছে। সাধারণ জনগণের দৃষ্টি এখন বিএনপির আন্দোলনের দিকে নেই। খালেদা জিয়ার মুক্তি নিয়েও কারও কোনো মাথাব্যাথা নেই। এমনকি ছাত্রদলের কাউন্সিলের খবরও মানুষের নজরে আসেনি। সবকিছু ছাপিয়ে শেখ হাসিনার সাহসিকতা এবং আওয়ামী লীগের শুদ্ধি অভিযানের দিকে মানুষের দৃষ্টি। এর মাধ্যমে আওয়ামী লীগ তার হারানো জনপ্রিয়তা পুনরুদ্ধারে যেমন অনেকটাই সফল হয়েছে, তেমনি বিরোধীদলের পরিকল্পনাকে তছনছও করে দিয়েছে।
শেখ হাসিনার কৌশলে হতবাক হয়ে গেছে বিএনপি। দলটির একাধিক শীর্ষ নেতার সঙ্গে কথা বললে তারা নিজেদের হতাশার কথা জানিয়েছেন। বিএনপির একজন নেতা বলেছেন, আমরা সর্বাধুনিক ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে ভোট করে ছাত্রদলের নেতৃত্ব নির্বাচন করলাম। অথচ এই খবরটি আড়ালে চলে গেল ক্যাসিনো অভিযানের খবরে।
বিএনপির ওই নেতা আর বলেন, আমরা যখন নিজেদেরকে সংগঠিত করছি, সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু করেছি এবং কিছু কর্মসূচী দিয়েছি, ঠিক তখনই শেখ হাসিনার এই কৌশল আমাদেরকে বিভ্রান্ত করে দিয়েছে। এর ফলে জনগণ আমাদের দিক থেকে আরেকবার মুখ ফিরিয়ে নিয়ে আওয়ামী লীগের ভিতরে কী হচ্ছে, শেখ হাসিনা কী করছেন তা নিয়েই চর্চা শুরু করেছে। দেশের আলোচনার কেন্দ্রে এখন আওয়ামী লীগের শুদ্ধি অভিযান। কাজেই খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনে জনগণকে সম্পৃক্ত করার সম্ভাবনা এখন নেই।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, শেখ হাসিনার কৌশলের কাছে বার বার পরাস্ত হচ্ছে বিএনপি। অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষার পর আমরা যখন আন্দোলনের সুনির্দিষ্ট কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি এবং আস্তে আস্তে আন্দোলন শুরু করছি ঠিক তখনই শেখ হাসিনা বোমা ফাটালেন। তিনি আওয়ামী লীগে বোমা ফাটালেন এবং সারাদেশের জনগণ এখন তাকে বাহবা দিচ্ছে। এর ফলে এখন আন্দোলন করলে তার ফল পাওয়া যাবে না। কারণ জনগণের দৃষ্টি এখন আওয়ামী লীগের দিকে।
বিএনপির আরেকজন প্রভাবশালী নেতা বলেছেন, অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলো মিটিয়ে আমরা যখন সংগঠিত হচ্ছি, যখন আওয়ামী লীগের ওপর থেকে জনগণ মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছে, তখনই শেখ হাসিনা এই আইওয়াশটি দিলেন। তিনি বলেন যে, আসলে এর মাধ্যমে কিছুই হবে না। এটা হলো জনগণকে বিভ্রান্ত করার কৌশল। এই কৌশলের মূল লক্ষ্য বিএনপির আন্দোলন ব্যর্থ করে দেওয়া এবং জনগণের আস্থা অর্জন করা। তিনি মনে করেন যে, সরকারের যে নাজুক অবস্থা হয়েছিল, এ ঘটনার মাধ্যমে সরকার আগের অবস্থার থেকে নিজেদের উন্নততর অবস্থায় নিয়ে যেতে পারলো।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাহবুবুর রহমান বলেন, একজন নেতার কাছে জনগণ প্রত্যাশা করে যে তিনি সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। শেখ হাসিনা সেই কাজটি করেছেন। তিনি দেখিয়েছেন যে, ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়। এর মাধ্যমে তিনি জনগণের আস্থা পুনর্বার অর্জন করলেন। একই সঙ্গে বিরোধীদলের সিদ্ধান্তহীনতারও জবাব দিলেন তিনি।
বিএনপির অন্য একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, আমরা যখন ক্ষমতায় ছিলাম তখন আমরা যদি এরকম কৌশল অবলম্বন করতে পারতাম তাহলে জনগণের আস্থা আমরা হারাতাম না।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, বিএনপির নেতারা আওয়ামী লীগের সভাপতির সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তগুলোর ব্যাপারে মাঠ পর্যায়ে খোঁজ-খবর নিয়েছেন। সাধারণ মানুষ এই সিদ্ধান্তের প্রশংসা করছে এবং সারাদেশেই ইতিবাচক ধারণার সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে এটা বিএনপির জন্যে নেতিবাচক। জনগণ বিএনপির আন্দোলনে আপাতত তেমন একটা সাড়া দেবে না বলে আভাস পাওয়া গেছে। এর মাধ্যমে বিএনপির আন্দোলন আরও একবার পিছিয়ে গেল বলেই বিএনপির নেতারা মনে করছেন।
বাংলা ইনসাইডার/এএইচসি
মন্তব্য করুন
চার ধাপে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এ পর্যন্ত (তৃতীয় ধাপ) ২০৪ জনকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় তাদের বহিষ্কার করা হয়।
এরমধ্যে তৃতীয় ধাপের নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় তৃণমূলের ৫৫ নেতাকে বহিষ্কার করে বিএনপি। আর প্রথম ধাপে ভোটের জন্য ৮০ জন, দ্বিতীয় ধাপে ৬৯ জনকে বহিষ্কার করে দলটি।
বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে উপজেলাসহ কোনো নির্বাচনে অংশ না নিচ্ছে না বিএনপি। গত ১৬ এপ্রিল দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, শেখ হাসিনার সরকার ও তার আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন, বেসামরিক ও পুলিশ প্রশাসন একটি অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করতে পারে না। অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিবেশ নেই। তাই উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেবে না দল।
দেশে চার ধাপে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তফসিল অনুযায়ী, গত ৮ মে প্রথম ধাপে ১৩৯টি উপজেলায় ভোট গ্রহণ হয়। এই ধাপের নির্বাচনে বিএনপির বহিষ্কৃত ৭ জন চেয়ারম্যান পদে, ৩ জন ভাইস চেয়ারম্যান পদে জয়লাভ করে বলেও জানা যায়।
দ্বিতীয় ধাপের ১৬১টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের ভোট গ্রহণ করা হবে ২১ মে। তৃতীয় ধাপে ১১২টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচন ২৯ মে অনুষ্ঠিত হবে। চতুর্থ ধাপের উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ৫ জুন।
মন্তব্য করুন
সরকারবিরোধী আগামীর আন্দোলন শুরুর আগে কর্মসূচি প্রণয়ন ও আন্দোলন পরিচালনায় শক্তিশালী লিয়াজোঁ কমিটি চায় বিএনপির মিত্ররা। তারা মনে করে, লিয়াজোঁ কমিটি না থাকায় বিগত আন্দোলন পরিচালনায় এক ধরনের সমন্বয়হীনতা ছিল।
কারণ, যুগপতের সব দল ও জোটের সঙ্গে বিএনপির পৃথক বৈঠক শেষে তাদের স্থায়ী কমিটিতে কর্মসূচি চূড়ান্ত হওয়াকে যথাযথ প্রক্রিয়া এবং আন্দোলনের সঠিক প্ল্যাটফর্ম বলে মনে করে না শরিকরা, বিশেষ করে গণতন্ত্র মঞ্চ। তাই এবার এ প্রশ্নে একটা সিরিয়াস মীমাংসা চান মঞ্চের নেতারা।
বিএনপির সঙ্গে বুধবার (১৫ মে) রাতে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে লিয়াজোঁ কমিটি গঠনের পরামর্শ দিয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা বলেন, প্রতিটি জোট ও দল থেকে একজন করে নিয়ে ১০-১২ সদস্যবিশিষ্ট একটি লিয়াজোঁ কমিটি গঠন করতে হবে। সেই লিয়াজোঁ কমিটিতে আলোচনার ভিত্তিতে আন্দোলনের কর্মসূচি প্রণীত হবে। তার আগে নিজ নিজ দল ও জোটের সিদ্ধান্ত নিয়ে সংশ্লিষ্ট নেতারা বৈঠকে উপস্থিত হবেন।
নব্বইয়ে এরশাদবিরোধী আন্দোলনসহ অতীতের আন্দোলনগুলোতে লিয়াজোঁ কমিটি এভাবে কাজ করেছে। কিন্তু বিগত আন্দোলনে এ প্রক্রিয়ায় কর্মসূচি প্রণীত হয়নি। পাঁচ-দশ মিনিট আগে মিত্রদের কর্মসূচির বিষয়ে জানানো হতো এবং কর্মসূচির সঙ্গে সহমত না হলেও সেটাই তারা ঘোষণা করতেন। বৈঠক সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।
যুগপৎ আন্দোলন পুনরুজ্জীবিত করে সরকারের পদত্যাগ ও নতুন নির্বাচনের দাবিতে ঈদুল আজহার পর মাঠে নামার পরিকল্পনা করছে বিএনপি। সেই আন্দোলনের কর্মকৌশল নির্ধারণে পরামর্শ নিতে গত রোববার থেকে মিত্রদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করছে দলটি। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর এ ধরনের বৈঠক এবারই প্রথম। এর অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার (১৬ মে) এনডিএম, বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ এবং মিয়া মসিউজ্জামান ও ফারুক হাসানের নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গণতন্ত্র মঞ্চ ছাড়াও এর আগে গত সোমবার বিএনপির সঙ্গে বৈঠকে আন্দোলনের কর্মসূচি প্রণয়নে সমন্বয়হীনতা দূরীকরণে যুগপতের সব দল ও জোট থেকে দু-একজন করে নিয়ে শক্তিশালী লিয়াজোঁ কমিটি গঠনের ওপর জোর দেন সমমনা জোটের নেতারা।
মন্তব্য করুন
শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন বিএনপি
মন্তব্য করুন
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জাতীয় প্রেস ক্লাব
মন্তব্য করুন
বিএনপি ভারত বিরোধী মার্কিন বিরোধী মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
মন্তব্য করুন
১৯৮১ সালের ১৭ মে। স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ সভাপতি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেছিলেন এক বৃষ্টিমুখর দিনে। সেই দিনে লাখো মানুষ মানিক মিয়া এভিনিউতে জড়ো হয়েছিল জাতির পিতার কন্যাকে দেখার জন্য। তাদের শোক এবং আবেগ ছিল হৃদয়স্পর্শী। সারা বাংলাদেশ উত্তাল হয়েছিল। জাগরণের এক গান গেয়ে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বাংলাদেশের জন্ম হওয়ার পর থেকেই প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছে। এই সরকার পুরোপুরিভাবে নতজানু সরকারে পরিণত হয়েছে। শুধু ফারাক্কা নয়, গঙ্গার পানি নয়, বাংলাদেশের ১৫৪টি নদীতে পানি দিতে তারা গড়িমসি করে যাচ্ছে। তিস্তা নদীর পানি বণ্টন, এ করছি, এ হচ্ছে এমন করে সময় শেষ করছে সরকার। এ যে ব্যর্থতা এর মূল কারণ হচ্ছে, সরকারে যারা আছে তারা পুরোপুরিভাবে একটা নতজানু সরকার।