নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:০০ পিএম, ১৮ নভেম্বর, ২০১৯
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে চিঠি দিয়েছেন গতকাল ১৭ নভেম্বর। এই চিঠিতে ভারতের সঙ্গে চুক্তি জনসম্মুখে প্রকাশের পাশাপাশি সংসদ ও রাষ্ট্রপতির কাছে প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন। এই টিঠিটি গণমাধ্যমে প্রকাশের পর বিএনপিতে তোলপাড় শুরু হয়েছে। বিএনপি বলছে যে, হঠাৎ করে ভারতের সঙ্গে চুক্তি নিয়ে এ চিঠি দেওয়া কেনো তা বিএনপি নেতাদের বোধ্যগম্য নয়। এই চিঠির বিষয় নিয়ে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে কোনো আলোচনাই হয়নি। বরং প্রধানমন্ত্রীর কাছে যদি চিঠি দিতে হয় তাহলে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, দ্রব্য মূল্যের উর্ধ্বগতি, রেল দুর্ঘটনাসহ ইত্যাদি বিষয় নিয়ে চিঠি দেওয়া প্রয়োজন।
হঠাৎ করে কোনো ভারতের সঙ্গে চুক্তি জনসম্মুখে প্রকাশ করার বিষয়ে চিঠি দেওয়া হলো তা নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা বিস্ময় প্রকাশ করেছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেছেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংসদ সদস্য নন। কাজেই এই বিষয়টি যদি সংসদে উপস্থাপন করা হয়, তাহলে গত ৭ নভেম্বর পর্যন্ত সংসদ অধিবেশন ছিল। তাহলে কেনো সেই সময় বিএনপির এমপিরা সংসদে বিষয়টি উপস্থাপন করলেন না। সংসদীয় বিষয় নিয়ে কোনো প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি দিতে হবে? এই চিঠি যদি দেওয়া হয় তাহলে সংসদ নেতাকে চিঠি দিতে হবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে নয়।
বিএনপির আরেকজন নেতা বলেছেন, আমাদের স্থায়ী কমিটিতে সুনিদিষ্ট সিদ্ধান্ত আছে সরকারের সঙ্গে নতুন করে কোনো বিষয় নিয়ে আলাপ আলোচনা হবে না। একমাত্র খালেদা জিয়ার জামিনের বিষয় নিয়েই সরকারের সঙ্গে আলাপ আলোচনা হতে পারে। সেখানে ভারতের সঙ্গে চুক্তি নিয়ে কোনো আলাপ আলোচনার উদ্দেগ নেওয়া হলো সেটা একটা বিবেচ্য বিষয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য এটা নিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে তীব্র ভৎসনা করে তার সমালোচনা করেছেন।
সূত্রগুলো বলছে, ড. কামাল হোসেন এবং তারেক জিয়ার পরামর্শে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই চিঠি দিতে বাধ্য হয়েছেন। গোয়েন্দা সূত্র বলছে, তারেক জিয়া দীর্ঘদিন থেকেই পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের মদদে চলেন। লন্ডনে তাকে নিয়মিত মাসোহারা দেন আইএসআই। তাদের নির্দেশেই তারেক জিয়া মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে এই চিঠি দেওয়ার কথা বলেছেন। অন্যদিকে বিএনপির আরেক জন নেতা বলেছেন, এই সময় ভারত বিরোধী অবস্থান দলের জন্য আরো দুর্ভোগ বয়ে নিয়ে আসবে। বিএনপির সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে যে, তারেক জিয়ার নির্দেশেই এই চিঠিটি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এ ধরনের চিঠির পরিণতি কি হবে তা বিবেচনা না করে এ ধরণের চিঠি দেওয়া হাস্যকর এবং অরাজনৈতিকসূলভ। কারণ বিএনপি যদি সত্যি সত্যি এই সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে চায় তাহলে ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলতে হবে। এই সরকারের বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন তুলতে হবে। সেটা না করে এই ধরনের চিঠির মাধ্যমে সরকারকে বৈধতা দেওয়া হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে যে, বিএনপিতে এই চিঠি নিয়ে এখন নতুন টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়েছে।
বিশেষ করে একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো স্থায়ী কমিটিকে আড়াল করে নেওয়া হচ্ছে যেটা বিএনপির গঠনতন্ত্রের পরিপন্থি। বিএনপির নেতারা মনে করছেন যে, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে যেভাবে তারেক জিয়া চালাচ্ছে এর ফলে বিএনপির পরিণতি আরেকটি মুসলিম লীগের মত হবে বলেই অধিকাংশ নেতা মনে করে। এরকম অরাজনৈতিক ভাবনা বিএনপির দেউলিয়া রাজনীতির এক বহি:প্রকাশ বলেই মনে করছেন বিএনপির একাধিক নেতা।
বিএনপির একজন নেতা বলেছেন, এই বিষয়টি নিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে কথা বলা হবে এবং তার কাছ থেকে এ বিষয়ে কৈফিয়ত চাওয়া হবে।
বাংলা ইনসাইডার/এমআরএইচ
মন্তব্য করুন
কাউন্সিল বিএনপি তারেক জিয়া মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বেগম খালেদা জিয়া
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
চার ধাপে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এ পর্যন্ত (তৃতীয় ধাপ) ২০৪ জনকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় তাদের বহিষ্কার করা হয়।
এরমধ্যে তৃতীয় ধাপের নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় তৃণমূলের ৫৫ নেতাকে বহিষ্কার করে বিএনপি। আর প্রথম ধাপে ভোটের জন্য ৮০ জন, দ্বিতীয় ধাপে ৬৯ জনকে বহিষ্কার করে দলটি।
বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে উপজেলাসহ কোনো নির্বাচনে অংশ না নিচ্ছে না বিএনপি। গত ১৬ এপ্রিল দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, শেখ হাসিনার সরকার ও তার আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন, বেসামরিক ও পুলিশ প্রশাসন একটি অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করতে পারে না। অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিবেশ নেই। তাই উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেবে না দল।
দেশে চার ধাপে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তফসিল অনুযায়ী, গত ৮ মে প্রথম ধাপে ১৩৯টি উপজেলায় ভোট গ্রহণ হয়। এই ধাপের নির্বাচনে বিএনপির বহিষ্কৃত ৭ জন চেয়ারম্যান পদে, ৩ জন ভাইস চেয়ারম্যান পদে জয়লাভ করে বলেও জানা যায়।
দ্বিতীয় ধাপের ১৬১টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের ভোট গ্রহণ করা হবে ২১ মে। তৃতীয় ধাপে ১১২টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচন ২৯ মে অনুষ্ঠিত হবে। চতুর্থ ধাপের উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ৫ জুন।
মন্তব্য করুন
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরে যেতে পারেন এমন গুঞ্জন রয়েছে। তিনি জেল থেকে বেরিয়ে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে মহাসচিবের দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। বেগম খালেদা জিয়া এই বিষয়টি নিয়ে তাকে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন। তবে তারেক জিয়া এ বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া দেননি বলে জানা গিয়েছে। বরং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যদেরকে তারেক জিয়া জানিয়েছেন, কাউন্সিলের আগে বিএনপিতে নেতৃত্বের পরিবর্তন নয়। তবে বিএনপির কাউন্সিল কবে, কীভাবে হবে- এ সম্পর্কে কোন বিস্তারিত তথ্য জানা যায়নি।
সরকারের বিরুদ্ধে নতুন করে আন্দোলন শুরু করার লক্ষ্যে প্রস্তুতি গ্রহণ করছে দীর্ঘ দিন ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি। তারা সাম্প্রতিক সময়ে আবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক শুরু করেছে। তবে এসব বৈঠকে যুগপৎ আন্দোলনের কথা বলা হলেও বিএনপি এখন পর্যন্ত সরকার বিরোধী কোন জোট করতে রাজি নয়। ২০ দলীয় জোট আনুষ্ঠানিকভাবে ভেঙে যাওয়ার পর বিএনপি এখন পর্যন্ত জোটগত ভাবে কোন আন্দোলন করেনি। তবে বিভিন্ন সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তারা সম্পর্ক রেখেছে। ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত এই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তারা যুগপৎ আন্দোলন করেছিল। এখন আবার নতুন করে যুগপৎ আন্দোলন শুরু করার জন্য বিএনপির পক্ষ থেকে এই সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে যোগাযোগ করা হচ্ছে। তবে রাজনৈতিক দলগুলো বিএনপির ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব দেখাচ্ছে না।