নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:৩০ পিএম, ১০ ডিসেম্বর, ২০১৯
নেদারল্যান্ডের হেগে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নিজের দেশের মানুষের বিরুদ্ধে নৃশংসতার বর্ণনা যখন তুলে ধরা হচ্ছিল, শুনে গা শিউরে উঠছিল। সেই সহিংসতার শিকার রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ । আমরা সেই বাঙালি জাতি যারা ১৯৭১ সালে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর হাতে গণহত্যার শিকার হয়েছিলাম। হেগের আর্ন্তজাতিক আদালতে গাম্বিয়ার মামলায় মিয়ানমারের বিরুদ্ধে জাতিগত সহিংসতা ,তথা গণহত্যার অভিযোগ তুলে ধরেছেন গাম্বিয়ার আইনজীবীরা। প্রথম দিনের শুনানিতে অংশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ আরো কয়েকটি দেশের আইনজীবীরা হেগের আর্ন্তজাতিক আদালতের ১৭ জন বিচারকের সামনে রাখাইনে রোহিঙ্গা নিধনে র্মমস্পর্শী বর্ণনা তুলে ধরেন । বারবারই সেই বিবরন শুনে মনে পড়ছিল একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের কথা। বাংলাদেশের গতহত্যার স্মৃতির কারনেই বাংলাদেশের মানুষ রোহিঙ্গাদের আশ্রয দেওয়ার সরকারী সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছিল কোনোরকম বিরোধিতা ছাড়াই।
ডিসেম্বর আমাদের বিজয়ের মাস । এই উপলক্ষে গত কয়েকদিন পড়ছিলাম ১৬ ডিসেম্বর `৭১ আত্মসর্মপনকারী পাকিস্তানের ইস্টার্ণ কমান্ডের প্রধান লে. জে. এ এ কে নিয়াজির লেখা ‘দ্য বিট্রেয়াল অব ইষ্ট পাকিস্তান’’ বইটি। ১৬ ডিসেম্বর আমাদের চূড়ান্ত বিজয় হলেও ডিসেম্বরের শুরুতেই হার মেনেছিল পাকিস্তানীরা। নিয়াজি তার বইতে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহটি তারিখ উল্লেখ করেও অনেক কিছু লিখেছেন। ১০ ডিসেম্বর ১৯৭১ এর বিবরনটা এমন ‘গভর্নর যুদ্ধবিরতি , ক্ষমতা হস্তান্তর ও পশ্চিম পাকিস্তানী সৈন্যদের পশ্চিম পাকিস্তানে প্রত্যাবাসনের একটি প্রস্তাব জাতিসংঘ প্রতিনিধির কাছে হস্তান্তর করে প্রেসিডেন্টের অনুমতি কামনা করেন। প্রেসিডেন্টের অনুমতি ছাড়াই রাও ফরমান আলি এই অতি গোপনীয় বার্তা জাতিসংঘ প্রতিনিধির কাছে হস্তান্তর করেন। জাতিসংঘ প্রতিনিধি এ বার্তা তাৎক্ষণিক জাতিসংঘে পাঠিয়ে দেন। "
জেনারেল নিয়াজি আরো লিখেছেন " রাও ফরমান আমাকে বা গর্ভণরকে না জানিয়ে ভারতীয় সেনাবাহিনী প্রধানের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছিলেন।একইভাবে আমাকে অথবা গভর্নরকে অবহিত না করে তিনি উপরে উল্লেখিত বার্তা জাতিসংঘ প্রতিনিধির কাছে হস্তান্তর করেন। রুশ কন্সাল-জেনারেলের সঙ্গেও তার যোগাযোগ সম্পর্কেও আমাদের দুজনকে অন্ধকারে রাখা হয় "। বোঝা যায় ডিসেম্বরের শুরুতেই পাকিস্তান সরকার বুঝে যায় যে তারা হেরে যাচ্ছে এবং বাংলাদেশের দখল তাদের ছেড়ে দিতে হবে।
১৯৭১ সালের ১১ ডিসেম্বরের কথা জেনারেল নিয়াজি লিখেছেন ‘‘সেনাবাহিনী প্রধান আমাকে গভর্নরের নির্দেশ মেনে নিতে বলেন। সোজা কথা,আমাকে আত্মসমর্পণ করতে হবে। আত্মসমর্পণের ক্ষেত্রে সৈন্যদের নিরাপত্তা ও অস্ত্রশস্ত্র ধ্বংস করার প্রশ্ন ওঠে।’’
জেনারেল নিয়াজির বইটি পড়লে সামরিক কর্তৃপক্ষের ভেতরের দ্বন্দ্ব যেমন স্পষ্ট ধরা পড়ে , তেমনি পিপলস পার্টির নেতা জুলফিকার আলী ভূট্টো সম্পর্কে তার নেতিবাচক মনোভাবও স্পষ্ট হয়। রাজনৈতিক দলের নেতা হয়েও সামরিক বাহিনীর একাংশের সাথে ষড়যন্ত্র করে পাকিস্তানের ক্ষমতায় বসাই ছিল জুলফিকার আলী ভূট্টোর একমাত্র উদ্দেশ্য। এই আমলে এসে আমরা শান্তির জন্য নোবেল জয়ী অং সান সুচিকেও একই কায়দায় রাজনীতি করতে দেখছি। এমনকি নেদারল্যন্ডের হেগের আর্ন্তজাতিক আদালতে তিনি বুধবার কথা বলবেন সেনাকতৃপক্ষকে সমর্থন করেই। প্রথম দিনের শুনানীতে গাম্বিয়ার প্রাথমিক বক্তব্য শেষ করেছে। দ্বিতীয় দিন বৃহস্পতিবার বলবেন অং সান সুচি। কেমন জানি মিলে যাচ্ছে একাত্তরের পাকিস্তানী রাজনীতির সাথে মিয়ানমারের রাজনীতির। নিজের দেশের মানুষকে নৃশংসতার সাথে দেশছাড়া করেছে যে সামরিক কর্মকর্তারা আজ তাদের পক্ষেই দাড়াচ্ছেন গনতন্ত্রের জন্য লড়াই করা এক রাজনীতিক। হায় আজ ১০ ডিসেম্বরেই সারাবিশ্বে পালিত হচ্ছে আর্ন্তজার্তিক মানবাধিকার দিবস।হেগের আদালতে গাম্বিয়া যে মামলা করেছে তা মানবাধিকারের পক্ষেই। হয়তো সেজন্যই কানাডা ও নেদারল্যান্ড তাদের সমর্থন করে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে। বাংলাদেশও সমর্থন জানিয়ে একটি প্রতিনিধিদল পাঠিয়েছি।
এ কে নিয়াজি যেমনটা তার বইয়ে লিখেছেন যে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের সামরিক কর্তৃপক্ষের একটি অংশ নিজেদের আত্মসমর্পন এড়াতে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় একটি ‘‘যুদ্ধবিরতি’’ চাইছিল। আবার আমরা একথাও জানি যে একাত্তরেই খন্দকার মোশতাক গং জাতিসংঘে যেতে চেয়েছিলেন কিছু একটা করার জন্য। আইসিসি সনদে স্বাক্ষরকারী দেশ মিয়ানমারও নানাভাবে রোহিঙ্গা ইস্যুতে নিজেদের আত্মহননের বিষয়টিকে জাতিসংঘে নিচ্ছে। এমনকি হেগের আদালতের রায় কার্যকরের বিষয়টিও শেষ পর্যন্ত হয়তো জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে গিয়ে পৌছবে। বাংলাদেশও জাতিসংঘের গুরুত্বপুর্ণ সদস্য। আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা সারাবিশ্বে শান্তিরক্ষায় গৌরবময় অবদান রাখছে জাতিসংঘের মাধ্যমেই। নিশ্চয় হেগের আদালতে গাম্বিয়া জয়ী হবে বলেই আমরা আশাবাদী।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৮:১৫ এএম, ১৬ মে, ২০২৪
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৮:১২ এএম, ১৬ মে, ২০২৪
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৮:০৭ এএম, ১৬ মে, ২০২৪
মন্তব্য করুন
সবার জন্য স্বাস্থ্য নিশ্চিতে বিশেষ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর দোরগোড়ায় স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দেয়ার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিক অভাবনীয়, অনন্য এবং যুগান্তকারী একটি মডেল। শিশু স্বাস্থ্য, মাতৃ স্বাস্থ্য এবং কিশোরীদের স্বাস্থ্য পরিসেবা প্রদানের ক্ষেত্রে এটি একটি অসাধারণ উদ্যোগ। নবজাতকের মৃত্যু, মাতৃ মৃত্যু কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিক মডেল আজ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ অনুসরণ শুরু করেছে। গত বছর ১৭ মে কমিউনিটি ক্লিনিক ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিসিয়েটিভ’ হিসেবে জাতিসংঘের স্বীকৃতি পায়। ‘কমিউনিটি ক্লিনিক’ সারা বিশ্বের প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা প্রত্যাশী জনগণের জন্য ‘আলোক বর্তিকা’।
আজকে আমরা ১৭ মে নিয়ে কথা বলছি। যেদিন বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেছিলেন। আবার গত বছর এই দিনে তাঁর চিন্তা প্রসূত কমিউনিটি ক্লিনিককে জাতিসংঘ ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। আজকে আমরা যে ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বলছি, উন্নয়নশীল বাংলাদেশের কথা বলছি, যে স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন আমরা দেখছি, একদিন উন্নত বাংলাদেশ হব বলে স্বপ্ন দেখছি এই সবকিছু শেখ হাসিনার স্বপ্ন, শেখ হাসিনার ইনিশিয়েটিভ। বঙ্গবন্ধু স্বপ্নের বাংলাদেশকে এগিয়ে নিচ্ছেন তাঁরই সুযোগ্য কন্যা আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
১৭৮১ সালে পলাশি যুদ্ধে ইতিহাসের ঘৃণিত সেনাপতি মির্জাফরের বিশ্বাসঘাতকতায় নবাব সিরাজ উদ্দৌলার বিদায়ের মধ্য দিয়ে ২০০ বছরের গোলামী আমাদের ললাটে এসেছিল। ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ স্বাধীন হলেও বাঙালী এবং বাংলাদেশ স্বাধীনতা পায়নি। যার পটভূমিতে বীরদর্পে আবির্ভূত হন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭১ থেকে ৭৫’ বাঙালি জাতির ভাগ্যাকাশে স্বাধীনতার লাল পতাকা উড়েছিল বাঙালী আশায় বুক বেধেছিল।
পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বিয়োগান্তের ঘটনায় জাতি ছিল দিক নির্দেশনাহীন। নারকীয় এই ঘটনায় জনগণ হয়ে পড়েন দিশেহারা। প্রতিবাদ, প্রতিরোধ করার কোন শক্তি সাহস ছিল না। দলের অনেক বড় বড় নেতাও ছিলেন কিংকর্তব্যবিমূঢ়। ধানমন্ডির ৩২ বাড়ি ছিল কবরের নীরবতা। সমগ্র জাতি তখন অন্ধকারে। সামরিক বুটে পিষ্ঠ গণতন্ত্র। নির্বাসনে সংবিধান আর মানুষের মৌলিক অধিকার। বাক স্বাধীনতা বলতে কিছুই ছিল না। এমনকি বঙ্গবন্ধু নাম উচ্চারণ ছিল নিষিদ্ধ।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে দেশের মৌলিক চরিত্রকেই বদলে ফেলা হয়। বিশেষ করে পাকিস্তানি ধারায় সামরিক শাসনের সংস্কৃতির প্রবর্তন ঘটে দেশে। সাম্প্রদায়িকতা ফিরে আসে রাজনীতি, প্রশাসন, শিক্ষা, সংস্কৃতিসহ সমাজের বিভিন্ন স্তরে। একের পর এক স্বপ্নভঙ্গের ঘটনা ঘটতে থাকে দেশে। বাঙালি জাতির জীবনে জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসে ঘোর অমানিশার অন্ধকার। ঠিক এমন প্রতিকূল সময় ১৯৮১ সালের ১৭ মে সামরিক শাসকের রক্তচক্ষু ও নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে বঙ্গবন্ধুর রক্তস্নাত মাতৃভূমিতে ফিরে আসেন বাঙালির মুক্তির মহানায়কের যোগ্য উত্তরসূরি জননেত্রী শেখ হাসিনা।