নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:৫৯ পিএম, ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৯
বেগম খালেদা জিয়া তার বর্তমান অবস্থা জন্য বিএনপি এবং বিএনপির নেতৃবৃন্দদের দায়ী করলেন। তিনি মনে করেন বিএনপি নেতৃবৃন্দদের আপসকামিতা, সরকারের সঙ্গে গোপন আঁতাত এবং রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বের জন্যই আজ তার এই অবস্থা। তার পরিবারের আত্বীয় স্বজন দেখা করলে তাদেরকে এ মন্তব্য করেন তিনি। বেগম খালেদা জিয়ার পরিবারের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
উল্লেখ্য, আজ বেগম খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যরা বিকেল ৩ টা থেকে ৪ টা পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন বেগম জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় বেগম খালেদা জিয়ার ছোট বোন সেলিনা ও তার স্বামী, ভাই শামীম ওসমানসহ আর কয়েকজন নিকট আত্বীয় দেখা করেন। প্রায় এক ঘন্টা সেখানে তারা অবস্থান করেন।
যদিও তারা বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। তাকে ঠিক মতো ঔষধ দেওয়া হচ্ছে না। তার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রিত নয়। তারা আরো বলেছেন, গত দুই দিন ধরে বেগম খালেদা জিয়ার পেটের ব্যথায় ভুগছেন। বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতে মূলত উদ্দেশ্য ছিল জামিনে মুক্তি এবং তার ভবিষ্যৎ পরিণতি নিয়েই আলোচনা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, বেগম খালেদা জিয়া তার পরিবারের কাছে দলের ব্যাপারে তিন ধরণের ক্ষোভ এবং অসন্তোষ জানান। গত দুই বছর ধরে বিএনপির নেতৃবৃন্দ তার মুক্তির ব্যাপারে কিছুই করছে না বরং তারা সরকারের সঙ্গে গোপন আঁতাত করে নিজেদের আখের গোছাচ্ছে। এমন মন্তব্য বেগম খালেদা জিয়া করেছেন বলে তার পরিবার সূত্রে জানা গেছে।
বিশেষ করে বেগম খালেদা জিয়া দলের সিনিয়র নেতা এবং দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের উপর অত্যন্ত ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে সরকারের ক্রীতদাস ও আজ্ঞাবহ দালাল হিসেবেও অভিহিত করেছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, তিনি বিএনপি নেতৃবৃন্দের সাথে সাক্ষাতের ব্যাপারেও অসঙ্গতি জানিয়েছেন এবং বলেছেন কোন প্রয়োজন নেই।
বেগম খালেদা জিয়া মনে করেন, দল যদি শক্তিশালী আন্দোলন করতো এবং দল যদি ঠিক থাকত তাহলে তাকে এতদিন আটকে রাখা যেত না। দলের দিক থেকে কোন চাপ নেই বলেই তাকে এরকম দীর্ঘদিন আটকে রাখা সম্ভব হচ্ছে বলে বেগম খালেদা জিয়া তাঁর আত্মীয়দের কাছে মন্তব্য করেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, বিএনপি এখন পুরোপুরি সরকার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে এবং এই বিএনপিকে দিয়ে কোন আন্দোলন সম্ভব হচ্ছে না। বিএনপির নেতৃত্বের পরিবর্তন নিয়ে কোন উদ্যোগ নেবেন কিনা বেগম খালেদা জিয়াকে তাঁর পরিবারের সদস্যরা এরকম জিনিস জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যা করার আমি করবো, দেখা যাক কি হয়।’
বেগম খালেদা জিয়া মনে করেন যে, দলের নেতারা সবসময় সবকিছু নিয়ে সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করছে এবং তারাই চান না বেগম খালেদা জিয়া মুক্ত হোক।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি দূর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হয়ে বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে যান। পরবর্তীতে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় হাইকোর্ট তাঁর সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করে। এছাড়া জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় তাঁর ৭ বছরের সাজা হয়েছে। দুটি মামলায় সর্বমোট ১৭ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত বেগম খালেদা জিয়া এখন জেল খাটছেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য গত বছরে তাকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে আসা হয়।
যদিও বিএনপি নেতৃবৃন্দ বারবার বলছে আন্দোলনের মাধ্যমে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করবেন কিন্তু এখন পর্যন্ত আন্দোলনের কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। তাছাড়া খালেদা জিয়ার মুক্তির ব্যাপারে বিএনপি নেতৃবৃন্দের খাপছাড়া এবং পরস্পরবিরোধী বক্তব্য পাওয়া যাচ্ছে।
তাঁরা বলেছিল যে, আন্দোলনের মাধ্যমে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করবে, কিন্তু সর্বশেষ জিয়া চ্যারিটেবল দূর্নীতি মামলায় আপিল বিভাগ বেগম খালেদা জিয়ার জামিনের আবেদন নাকচ করে দেয়। বেগম খালেদা জিয়া আপাতত আইনিভাবে মুক্ত হবার কোন সম্ভাবনা নেই। তবে এই বৈঠকে প্যারোল নিয়ে কোন আলোচনা হয়েছে কিনা বেগম খালেদা জিয়ার আত্মীয়রা বলেন, বেগম খালেদা জিয়া প্যারোল না নেয়ার ব্যাপারে অনড় অবস্থানে রয়েছেন।
বাংলা ইনসাইডার/এমআরএইচ
মন্তব্য করুন
কাউন্সিল বিএনপি তারেক জিয়া মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বেগম খালেদা জিয়া
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
চার ধাপে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এ পর্যন্ত (তৃতীয় ধাপ) ২০৪ জনকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় তাদের বহিষ্কার করা হয়।
এরমধ্যে তৃতীয় ধাপের নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় তৃণমূলের ৫৫ নেতাকে বহিষ্কার করে বিএনপি। আর প্রথম ধাপে ভোটের জন্য ৮০ জন, দ্বিতীয় ধাপে ৬৯ জনকে বহিষ্কার করে দলটি।
বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে উপজেলাসহ কোনো নির্বাচনে অংশ না নিচ্ছে না বিএনপি। গত ১৬ এপ্রিল দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, শেখ হাসিনার সরকার ও তার আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন, বেসামরিক ও পুলিশ প্রশাসন একটি অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করতে পারে না। অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিবেশ নেই। তাই উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেবে না দল।
দেশে চার ধাপে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তফসিল অনুযায়ী, গত ৮ মে প্রথম ধাপে ১৩৯টি উপজেলায় ভোট গ্রহণ হয়। এই ধাপের নির্বাচনে বিএনপির বহিষ্কৃত ৭ জন চেয়ারম্যান পদে, ৩ জন ভাইস চেয়ারম্যান পদে জয়লাভ করে বলেও জানা যায়।
দ্বিতীয় ধাপের ১৬১টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের ভোট গ্রহণ করা হবে ২১ মে। তৃতীয় ধাপে ১১২টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচন ২৯ মে অনুষ্ঠিত হবে। চতুর্থ ধাপের উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ৫ জুন।
মন্তব্য করুন
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরে যেতে পারেন এমন গুঞ্জন রয়েছে। তিনি জেল থেকে বেরিয়ে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে মহাসচিবের দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। বেগম খালেদা জিয়া এই বিষয়টি নিয়ে তাকে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন। তবে তারেক জিয়া এ বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া দেননি বলে জানা গিয়েছে। বরং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যদেরকে তারেক জিয়া জানিয়েছেন, কাউন্সিলের আগে বিএনপিতে নেতৃত্বের পরিবর্তন নয়। তবে বিএনপির কাউন্সিল কবে, কীভাবে হবে- এ সম্পর্কে কোন বিস্তারিত তথ্য জানা যায়নি।
সরকারের বিরুদ্ধে নতুন করে আন্দোলন শুরু করার লক্ষ্যে প্রস্তুতি গ্রহণ করছে দীর্ঘ দিন ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি। তারা সাম্প্রতিক সময়ে আবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক শুরু করেছে। তবে এসব বৈঠকে যুগপৎ আন্দোলনের কথা বলা হলেও বিএনপি এখন পর্যন্ত সরকার বিরোধী কোন জোট করতে রাজি নয়। ২০ দলীয় জোট আনুষ্ঠানিকভাবে ভেঙে যাওয়ার পর বিএনপি এখন পর্যন্ত জোটগত ভাবে কোন আন্দোলন করেনি। তবে বিভিন্ন সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তারা সম্পর্ক রেখেছে। ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত এই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তারা যুগপৎ আন্দোলন করেছিল। এখন আবার নতুন করে যুগপৎ আন্দোলন শুরু করার জন্য বিএনপির পক্ষ থেকে এই সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে যোগাযোগ করা হচ্ছে। তবে রাজনৈতিক দলগুলো বিএনপির ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব দেখাচ্ছে না।