নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:০১ এএম, ১৫ জানুয়ারী, ২০২০
জাতিসংঘের হিসেব অনুযায়ী জনসংখ্যার দিক থেকে এক লাখ ৪৭ হাজার বর্গকিলোমিটার আয়তনের বাংলাদেশ পৃথিবীর দশম বৃহত্তম দেশ। এই দেশের অন্যতম প্রধাণ আয় হচ্ছে ফরেন রেমিট্যান্স। গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এখন পর্যন্ত দেশে প্রবাসীদের পাঠানো বৈদেশিক মুদ্রা বা রেমিট্যান্স ১৬শ’ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আহরণ। বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশের সুস্থ, সবল, আধা দক্ষ ও দক্ষ জনশক্তি আমাদের জন্য এই মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান উৎস। তাই অর্থনৈতিকভাবে উন্নত জাতি গঠনে সুস্থ, সবল, আধা দক্ষ ও দক্ষ জনশক্তি আমাদের সম্পদ।
স্বাধীনতা পরবর্তী এই বাংলাদেশ ছিল দারিদ্র পীড়িত একটা জনপদ। ফলে জনস্বাস্থ্যের অবস্থাও ভালো ছিল না। আমরা খাদ্যে স্বনির্ভরতা অর্জন করলেও ইদানীং নিরাপদ খাদ্য ও পানীয়ের সংস্থান নিয়ে লড়াই করছি। পাশাপাশি জীবনাচরণের পরিবর্তন এনে ধাপে ধাপে শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ জাতি গঠনের দিকে এগিয়ে নিতে অবিরাম চেষ্টা করে চলেছি।
বিশ্বের অন্যতম বায়ু দূষিত নগর হচ্ছে আমাদের রাজধানী ঢাকা। ফলে নগরীতে হৃদরোগ, কাশি, নিউমোনিয়াসহ ফুসফুসের দীর্ঘমেয়াদী রোগ, ফুসফুসের সংক্রমণ, ফুসফুসের ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, অ্যাজমা ও শ্বাসকষ্ট জনিত নানা রোগ, স্ট্রোক, চোখে ছানি পড়া, শিশু ও গর্ভবতী নারীদের সমস্যার মত অসুখগুলো ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। বায়ু দূষণের অন্যতম ৫ টি প্রত্যক্ষ কারণের দুইটি হচ্ছে যানজট, গাড়িতে অনুন্নত জ্বালানীর ব্যবহার।
এক হিসেবে দেখা গেছে, ৮১৬ বর্গকিলোমিটারের ঢাকা শহরে বাস করে দেড় কোটিরও বেশি মানুষ। কর্মঘন্টায় এই মানুষের সংখ্যা প্রায় দুই কোটির কাছাকাছি চলে যায়। যানজটের কারণে রাজধানীতে একটি যানবাহন ঘণ্টায় যেতে পারে গড়ে ৫ কিলোমিটার। ১২ বছর আগেও এই গতি ছিল ঘণ্টায় ২১ কিলোমিটার। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকার ফলে যাত্রীদের মানসিক চাপ তৈরি হচ্ছে। এই চাপ আবার কাজ করছে অন্যান্য রোগের উৎস হিসেবে। পাশাপাশি যানজটের কারণে শুধু ঢাকায় দৈনিক ৫০ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। যার আর্থিক ক্ষতি বছরে প্রায় ৩৭ হাজার কোটি টাকা। যানজটের পরিস্থিতি দিন দিন যেভাবে খারাপ হচ্ছে, তাতে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণও বাড়বে বলে ২০১৮ সালের এক সমীক্ষায় বলা হয়।
নগরীর যানজট কমানো, কর্মঘন্টা বাড়ানো আর রোগ বালাই কমাতে উন্নত দেশগুলো কী কী করছে তা দেখে নেওয়া যেতে পারে।
ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেনকে বলা হয় ‘বিশ্বের সাইকেলিং রাজধানী’। সেখানে প্রতি ৩ জনের ২ জন তাদের দৈনন্দিন চলাচলে গন্তব্যে পৌঁছাতে সাইকেল ব্যবহার করে নিজেদের শরীর স্বাস্থ্য যেমন ঠিক রাখেন তেমনি যানজট কমিয়ে কর্মঘন্টা বাড়িয়ে ফেলেন। এটা দেখে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের মেয়রের উদ্যোগে নতুন যানবাহন পরিকল্পনা নিয়েছেন। যার ফলে, প্যারিসে ২০১৯ সালে বাই সাইকেলের ব্যবহার ৫৪ শতাংশ বেড়ে গেছে। দেশের অন্য এলাকায় এই হার কম থাকলেও প্যারিসে তা খুব জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
সরকারিভাবে নগরবাসীকে বাই সাইকেল ব্যবহারে উৎসাহিত করে এটা ব্যবহারের নানা উপকারিতার কথা বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে। ফলে শুধু গত বছর অক্টোবরে ২ লাখ বাই সাইকেল বিক্রি হয়েছে সেখানে। বাইকারদের সুবিধার জন্য নানা সমালোচনার পর নগরীতে ১ হাজার কিলোমিটার নতুন বাইক লেন তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছে যার ৩৭ ভাগ কাজ ইতোমধ্যেই শেষ হয়ে গেছে। ১০ হাজার সাইকেল পার্কিং এর জায়গা তৈরি করা হয়েছে। তারা দেখেছেন যে, বাই সাইকেলে গাড়ির চেয়ে দ্রুততার সাথে গন্তব্যে পৌঁছানো সম্ভব।
পরিবেশ-বান্ধব বাহন হিসেবে বিশ্বজুড়েই বাইসাইকেলের কদর বেশ। যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) ২৮ দেশে বাইসাইকেল রপ্তানিতে বাংলাদেশ এখন তৃতীয় অবস্থানে। শীর্ষ দুই অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে তাইওয়ান ও কম্বোডিয়া। ইউরোপিয়ান কমিশনের তথ্যানুযায়ী, ইইউর বাইরের বিভিন্ন দেশ থেকে ২০১৭ সালে ১০৮ কোটি ইউরোর বাইসাইকেল কিনেছে ইইউভুক্ত ২৮ দেশ।
ইউরোপের দেশগুলোতে সাইকেল কেন জনপ্রিয় হচ্ছে তার কারণ হিসেবে মোটা-দাগে যা জানা গেছে তা হচ্ছে: ব্যায়ামের জন্য আলাদা সময় বের না করেই তা সম্পন্ন করে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হবার তীব্র আকাঙ্ক্ষা, নগরীর যানজট কমিয়ে স্বল্প সময়ে গন্তব্যে পৌঁছানো, নগরের বা শহরের পরিবেশ রক্ষা, গাড়ি কেনা ও মেইনটেন করার মত খরচ বাঁচিয়ে পারিবারিক ব্যয় কমানো, বায়ূ দুসন জনিত রোগ থেকে নিজেদের রক্ষা করা, দেশের বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয়ের মাধ্যমে নিজের উপর থেকে সরকারি করের বোঝা কমানো, জীবনের কর্মক্ষম সময়কে লম্বা করে নেওয়া, দেশের জিডিপি বৃদ্ধিতে অবদান রাখা, ইত্যাদিই প্রধান।
আগামী ৩০শে জানুয়ারি ঢাকা নগরীর নির্বাচন হতে যাচ্ছে। নতুন নগর প্রধান পেতে যাচ্ছি আমরা। যারাই নির্বাচিত হউন না কেন তাদের জ্ঞান আর অভিজ্ঞতার কোন কমতি নেই। তারা আমাদের নগরীকে কীভাবে গড়ে তুলতে চান তার পরিকল্পনার মধ্যে এমন কিছু আছে কি না তা আমরা জানি না। কিন্তু ভালো কিছুর প্রত্যাশা করার অধিকার আমাদের আছে, তাই আমরা প্রত্যাশা করতেই পারি একটা যানজট মুক্ত কম বায়ু দূষিত সুন্দর ঢাকা মহানগরীর।
সায়েদুল আরেফিন
উন্নয়নকর্মী, কলামিস্ট
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৮:১৫ এএম, ১৬ মে, ২০২৪
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৮:১২ এএম, ১৬ মে, ২০২৪
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৮:০৭ এএম, ১৬ মে, ২০২৪
মন্তব্য করুন
সবার জন্য স্বাস্থ্য নিশ্চিতে বিশেষ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর দোরগোড়ায় স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দেয়ার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিক অভাবনীয়, অনন্য এবং যুগান্তকারী একটি মডেল। শিশু স্বাস্থ্য, মাতৃ স্বাস্থ্য এবং কিশোরীদের স্বাস্থ্য পরিসেবা প্রদানের ক্ষেত্রে এটি একটি অসাধারণ উদ্যোগ। নবজাতকের মৃত্যু, মাতৃ মৃত্যু কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিক মডেল আজ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ অনুসরণ শুরু করেছে। গত বছর ১৭ মে কমিউনিটি ক্লিনিক ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিসিয়েটিভ’ হিসেবে জাতিসংঘের স্বীকৃতি পায়। ‘কমিউনিটি ক্লিনিক’ সারা বিশ্বের প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা প্রত্যাশী জনগণের জন্য ‘আলোক বর্তিকা’।
আজকে আমরা ১৭ মে নিয়ে কথা বলছি। যেদিন বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেছিলেন। আবার গত বছর এই দিনে তাঁর চিন্তা প্রসূত কমিউনিটি ক্লিনিককে জাতিসংঘ ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। আজকে আমরা যে ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বলছি, উন্নয়নশীল বাংলাদেশের কথা বলছি, যে স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন আমরা দেখছি, একদিন উন্নত বাংলাদেশ হব বলে স্বপ্ন দেখছি এই সবকিছু শেখ হাসিনার স্বপ্ন, শেখ হাসিনার ইনিশিয়েটিভ। বঙ্গবন্ধু স্বপ্নের বাংলাদেশকে এগিয়ে নিচ্ছেন তাঁরই সুযোগ্য কন্যা আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
১৭৮১ সালে পলাশি যুদ্ধে ইতিহাসের ঘৃণিত সেনাপতি মির্জাফরের বিশ্বাসঘাতকতায় নবাব সিরাজ উদ্দৌলার বিদায়ের মধ্য দিয়ে ২০০ বছরের গোলামী আমাদের ললাটে এসেছিল। ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ স্বাধীন হলেও বাঙালী এবং বাংলাদেশ স্বাধীনতা পায়নি। যার পটভূমিতে বীরদর্পে আবির্ভূত হন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭১ থেকে ৭৫’ বাঙালি জাতির ভাগ্যাকাশে স্বাধীনতার লাল পতাকা উড়েছিল বাঙালী আশায় বুক বেধেছিল।
পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বিয়োগান্তের ঘটনায় জাতি ছিল দিক নির্দেশনাহীন। নারকীয় এই ঘটনায় জনগণ হয়ে পড়েন দিশেহারা। প্রতিবাদ, প্রতিরোধ করার কোন শক্তি সাহস ছিল না। দলের অনেক বড় বড় নেতাও ছিলেন কিংকর্তব্যবিমূঢ়। ধানমন্ডির ৩২ বাড়ি ছিল কবরের নীরবতা। সমগ্র জাতি তখন অন্ধকারে। সামরিক বুটে পিষ্ঠ গণতন্ত্র। নির্বাসনে সংবিধান আর মানুষের মৌলিক অধিকার। বাক স্বাধীনতা বলতে কিছুই ছিল না। এমনকি বঙ্গবন্ধু নাম উচ্চারণ ছিল নিষিদ্ধ।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে দেশের মৌলিক চরিত্রকেই বদলে ফেলা হয়। বিশেষ করে পাকিস্তানি ধারায় সামরিক শাসনের সংস্কৃতির প্রবর্তন ঘটে দেশে। সাম্প্রদায়িকতা ফিরে আসে রাজনীতি, প্রশাসন, শিক্ষা, সংস্কৃতিসহ সমাজের বিভিন্ন স্তরে। একের পর এক স্বপ্নভঙ্গের ঘটনা ঘটতে থাকে দেশে। বাঙালি জাতির জীবনে জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসে ঘোর অমানিশার অন্ধকার। ঠিক এমন প্রতিকূল সময় ১৯৮১ সালের ১৭ মে সামরিক শাসকের রক্তচক্ষু ও নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে বঙ্গবন্ধুর রক্তস্নাত মাতৃভূমিতে ফিরে আসেন বাঙালির মুক্তির মহানায়কের যোগ্য উত্তরসূরি জননেত্রী শেখ হাসিনা।