নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:৫৯ পিএম, ২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২০
- হ্যালো ডার্লিং আমার কাজটার কি করলা?
- করে দেবো সুইটহার্ট, দাওয়াত দেও..
- ওয়েস্টিনে আসো, তোমারে খুশি করাইয়া দেবো।
এটি কোন সিনেমার সংলাপ নয়, একজন প্রভাবশালী সাবেক আমলার সঙ্গে পাপিয়ার হোয়াটসঅ্যপের মেসেজ এখন গোয়েন্দাদের হাতে। ১৫দিনের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের সময় আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা পাপিয়ার ক্ষমতার উৎস সম্বন্ধে অনুসন্ধান করছে। এই ক্ষমতার উৎস অনুসন্ধান করতে গিয়ে অনেক হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার, ভাইবারের মেসেজ এখন আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাদের হাতে।
জানা গেছে, প্রশাসনে এমন অনেক বন্ধু ছিল পাপিয়ার। যাদের কারণেই পাপিয়া ক্ষমতাশালী হয়ে উঠেছিলেন। আর এই সমস্ত বন্ধুদের খুশি করার জন্যই ওয়েস্টিনে প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুট প্রায় দুই মাস ধরে ভাড়া নিয়েছিলেন পাপিয়া। ওয়েস্টিনে প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুটে পাপিয়ার কাছে আসতেন বিভিন্ন আমলা, প্রকৌশলী এবং প্রকল্প পরিচালক। অনুসন্ধানে জানা গেছে যে, অবসরে যাওয়া ৬ সচিবের সঙ্গে পাপিয়ার সখ্যতা ছিল। বর্তমানে দায়িত্ব পালন করা ৪ আমলার সঙ্গেও পাপিয়ার ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের তথ্য আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার কাছে আছে। বলা হচ্ছে যে, পাপিয়া রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় বেড়ে উঠেছিলেন। কিন্তু দেখা যাচ্ছে যে, পাপিয়া রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক রেখেছিলেন ক্ষমতা দেখানোর জন্য। সরকারী দলে পদ পদবি পাওয়ার জন্য। রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করে বিভিন্ন অপকর্ম করার জন্য। কিন্তু পাপিয়া বিভিন্ন আমলা, প্রকৌশলী, প্রকল্প পরিচালকদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে নানা রকম টেন্ডার বাণিজ্য, নিয়োগ বাণিজ্যসহ বিভিন্ন ব্যবসার দেনদরবার করার জন্য এবং এই কাজের জন্যই পাপিয়া ওয়েস্টিন হোটেল ব্যবহার করতেন।
ওয়েস্টিন হোটেলে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের থেকেও বেশি যাতায়াত ছিল বিভিন্ন সস্থা, অধিদপ্তর, প্রকল্প পরিচালকদের মতো উর্ধ্বতন ব্যক্তিরা। সংস্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, এই সমস্ত প্রকল্পের ঠিকাদারি টেন্ডারের কাজ পাইয়ে দেবার জন্য প্রথমে পাপিয়ার সাথে ব্যবসায়ীরা যোগাযোগ করতো, এরপর সেখান থেকে মোটা অংকের টাকা পেত পাপিয়া। এরপর পাপিয়া তাঁর নিজস্ব নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ফাঁদে ফেলত ওই আমলাকে। তারপর পাপিয়ার আমন্ত্রণে তাঁরা ওয়েস্টিন কিংবা অন্য কোথাও অতিথি হতেন। এসময় মদের আসরে এবং অনৈতিক কর্মকাণ্ডের ভিডিওচিত্র ধারণ করে ঐ আমলাকে ব্লাকমেইল করতেন। তখন ঐ আমলা চক্ষুলজ্জার কারণে এবং ভয়ে ঐ কাজ করে দিতেন। এ কারণে অনেক বড় বড় ঠিকাদারদের মক্ষীরানী ছিলেন পাপিয়া এবং ঠিকাদারদের অর্থেই আসলে ওয়েস্টিন হোটেলে আসর চালাতেন পাপিয়া। আর এই মূল কাজ ছিল ঠিকাদারদের সঙ্গে প্রভাবশালী আমলাদেরকে মধ্যস্ততা করার।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে যে, পাপিয়া রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতো আমলাদের বশে আনতে এবং রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করে ঠিকাদারসহ বিভিন্ন ধনাঢ্য ব্যক্তিদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতো। সবাই মনে করতো যে, যেহেতু পাপিয়ার সঙ্গে বড় বড় রাজনীতিবিদদের সম্পর্ক রয়েছে, সেহেতু সে হয়তো এইসব কাজগুলো করে দিতে পারবে। আর এটা করার জন্য পাপিয়া তাঁর ফেসবুক একাউন্টসহ বিভিন্ন জায়গায় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতার সঙ্গে ছবি তুলতেন এবং এই ছবির মাধ্যমে পাপিয়া নিজের ক্ষমতা জাহির করার চেষ্টা করতেন।
অপরাধ বিজ্ঞানীরা বলছেন, এটা একটা চেইন। রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করে পাপিয়া নিজেকে বড় প্রমাণ করার চেষ্টা করতেন এবং এটা প্রমাণের মাধ্যমে পাপিয়া আমলাদের সঙ্গে সখ্যতা করতেন। এরপরে তিনি ঠিকাদারদের ধরতেন। ঠিকাদারদের সাথে তাঁর চুক্তি হতো কাজ পাইয়ে দেবার বিনিময়ে।
অবশ্য খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অনেকের কাজ তিনি করে দিবেন বলে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে সেই কাজ করে দেননি, আবার অনেকের কাজ করে দিয়েছেন। একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে যে, কোন কোন আমলা পাপিয়ার সঙ্গে ওয়েস্টিন হোটেলে গেছেন তাঁর তালিকাও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার কাছে আছে।
মন্তব্য করুন
ডোনাল্ড লু বিএনপি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ চীন সফর ভারত যুক্তরাষ্ট্র
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছিল বিএনপির আশা ভরসার কেন্দ্রস্থল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করবে; মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নির্দলীয়, নিরপেক্ষ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায়ে সরকারকে বাধ্য করবে; মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কারণ সরকার শেষ পর্যন্ত নির্বাচন করতে পারবে না- এমন বক্তব্যগুলো বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচনের আগে বহুল প্রচারিত ছিল। বিএনপির সব নেতারা প্রকাশ্যেই এ কথা বলত।
বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যখন র্যাবের উপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, বাংলাদেশকে গণতন্ত্র সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানায় না তখন বিএনপি নেতারা উল্লাসে ফেটে পড়েছিলেন। তারা দলীয় কার্যালয়ে মিষ্টিমুখের ব্যবস্থাও করেছিলেন।
আবার ডোনাল্ড লু নির্বাচনের আগে যখন বাংলাদেশ সফর করেছিলেন এবং ভিসা নীতি প্রয়োগ করেছিলেন তখন বিএনপি নেতাদের প্রকাশ্যে মার্কিন বন্দনা করতে দেখা গেছে। ২৮ অক্টোবরের আগ পর্যন্ত প্রায় প্রতিদিনই মার্কিন দূতাবাসে বা মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসের বাসভবনে বিএনপির নেতাদের আনাগোনা ছিল। তারা সেখানে চা চক্রে মিলিত হয়েছেন, নৈশভোজে মিলিত হয়েছেন এবং বিভিন্ন রকমের শলাপরামর্শ করেছেন।
পিটার ডি হাস গত বছরের ১০ অক্টোবর বিএনপি যখন সমাবেশ করতে পারেনি তখনও একতরফা বিবৃতি দিয়েছিলেন। এছাড়াও তিনি বিতর্কিত সংগঠন মায়ের ডাকের এক নেতার বাসায় গিয়েছিলেন এবং সেখানে তিনি বিএনপির প্রতি এক ধরনের সহানুভূতি জানিয়েছিলেন। এভাবেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির উপর এক ধরনের প্রচ্ছন্ন সমর্থন এবং সহানুভূতি দেখিয়েছিল।
অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই সহানুভূতি এবং পরোক্ষ সমর্থনের কারণেই বিএনপির আন্দোলনের পালে হাওয়া লেগেছিল। নেতাকর্মীদের মধ্যে একটি চাঙ্গা ভাব তৈরি হয়েছিল। কিন্তু ২৮ অক্টোবরের পর থেকে পরিস্থিতি পাল্টে যেতে শুরু করে। যদিও ২৮ অক্টোবরের পর এই ডোনাল্ড লু শর্তহীন সংলাপের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন এবং এই আহ্বানের চিঠি নিয়ে পিটার ডি হাস তিনটি দলের নেতাদের কাছে গিয়েছিলেন এবং একটি সংলাপ আয়োজনের শেষ চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সেই সংলাপ আয়োজনে বিএনপি বা আওয়ামী লীগ কেউই সাড়া দেয়নি।
এখন নির্বাচন সমাপ্ত হয়েছে এবং ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর ১১ জানুয়ারি নতুন সরকার গঠিত হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচনকে ত্রুটিপূর্ণ বলার পরও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়া এবং নতুন সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের বার্তা দিয়েছেন। ডোনাল্ড লু’র আগে আফরিন আক্তার নির্বাচনের পরে বাংলাদেশ সফর করেছিলেন এবং সেই সময় তিনি হোটেল ওয়েস্টিনে বিএনপি নেতৃবৃন্দের সাথে সাক্ষাৎ করেছিলেন। তখন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং শামা ওবায়েদ আফরিন আক্তারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। যদিও সেই সাক্ষাতের পর তারা কোনও কিছুই সাংবাদিকদেরকে জানাননি। কিন্তু এবার ডোনাল্ড লু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেননি। আর এটি বিএনপির মধ্যে হতাশা সৃষ্টি করেছে।
বিএনপি মনে করছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন তাদেরকে আর আগের মতো গুরুত্ব দিচ্ছেন না, পাত্তা দিচ্ছে না। বরং সরকারের সঙ্গে সম্পর্কের কারণে বিএনপিকে এড়িয়ে যাচ্ছে। এ নিয়ে বিএনপির মধ্যে হতাশা তৈরি হয়েছে। বিএনপি নেতারা দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ, শামা ওবায়েদ, তাবিথ আউয়ালসহ যারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন এবং মার্কিন দূতাবাসে যাদের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে তাদেরকে দুষছেন। তারা মনে করছেন যে, বিএনপির মধ্যেই সমস্যা রয়েছে। বিএনপির নেতারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে পারেননি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বিএনপির বক্তব্যগুলো তারা সঠিকভাবে ও যথাযথভাবে উপস্থাপন করতে পারেননি। আর একারণেই ডোনাল্ড লু’র সফরের পর বিএনপির মধ্যে চলছে এক ধরনের হতাশা।
ডোনাল্ড লু বাংলাদেশ রাজনীতি বিএনপি
মন্তব্য করুন
আগামী ২৩ জুন আওয়ামী লীগের ৭৫ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পর্যন্ত আওয়ামী লীগ দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গকারী, দলের ভেতর সুবিধাবাদী, লুটেরা এবং দলের নাম ভাঙিয়ে বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করবে না। কিন্তু ২৩ জুনের পর আওয়ামী লীগের ক্র্যাশ প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ক্র্যাকডাউন হবে দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গকারী এবং দলের সুনাম নষ্টকারীদের বিরুদ্ধে। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ব্যাপারে শূন্য সহিষ্ণুতা নীতি অনুসরণ করবে। আওয়ামী লীগের একটি দায়িত্বশীল সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
আওয়ামী লীগ এবং তার আদর্শিক জোট ১৪ দলের নেতাদের চীন সফরে হিড়িক পড়েছে। আওয়ামী লীগ এবং তার সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর এই চীন সফরকে ঘিরে কূটনৈতিক অঙ্গনে চলছে নানামুখী আলাপ আলোচনা। ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উভয় দেশই ১৪ দল এবং আওয়ামী লীগের নেতাদের চীন সফরের ব্যাপারে দৃষ্টি রাখছেন। তবে তারা এই বিষয় নিয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হচ্ছেন না। বিষয়টি তারা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিষয় হিসেবেই মনে করছেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছিল বিএনপির আশা ভরসার কেন্দ্রস্থল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করবে; মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নির্দলীয়, নিরপেক্ষ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায়ে সরকারকে বাধ্য করবে; মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কারণ সরকার শেষ পর্যন্ত নির্বাচন করতে পারবে না- এমন বক্তব্যগুলো বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচনের আগে বহুল প্রচারিত ছিল। বিএনপির সব নেতারা প্রকাশ্যেই এ কথা বলত।