নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০০ পিএম, ২৯ মে, ২০২০
করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলা নিয়ে আওয়ামী লীগের শরিক রাজনৈতিক দলগুলোর মাঝে টানাপড়েন শুরু হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৪ দলের যে জোট রয়েছে, সেই জোটের প্রায় সব দলই মনে করে যে করোনা মোকাবেলার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ ভুল পথে পরিচালিত হচ্ছে। আমলা নির্ভর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছে এবং রাজনৈতিক দলগুলোকে গুরুত্ব দিচ্ছেনা। এর ফলে যে খারাপ পরিস্থিতি হবে, সেই খারাপ পরিস্থিতির দায়দায়িত্ব ১৪ দল বা আওয়ামী লীগের শরিক দলগুলোর উপর পড়তে পারে। আর এই নিয়ে চাপা অসন্তোষ প্রকাশ হতে শুরু করেছে। আওয়ামী লীগের শরিক সংগঠনগুলোর একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপ করে এই তথ্য জানা গেছে।
উল্লেখ্য, ২০০১ সালে বিএনপি-জামাত জোট ক্ষমতায় এসে যখন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করা শুরু করে, যখন হত্যা এবং দূর্নীতি চরম আকার ধারণ করে তখন সেই বাস্তবতায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে লালন করে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে ১৪ দলীয় জোট গঠিত হয়। ১৪ দলের অন্যতম শরিক জাসদের হাসানুল হক ইনু মনে করেন যে, ১৪ দল হচ্ছে একটি আদর্শিক দল, এটা কোন নির্বাচনের দল নয়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে ১৪ দল গঠিত হয়েছিল।
কিন্তু ২০১৮ সালের ৩০শে ডিসেম্বরের নির্বাচনের প্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট বিপুল ভোটে জয়লাভ করে, সেই বিজয়ের পরে আওয়ামী লীগ শুধু মহাজোটকে নয়, ১৪ দলকেই উপেক্ষা করেছে। ঐ নির্বাচনের পর থেকে ১৪ দলের শরিকদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ সভাপতির কোণ আনুষ্ঠানিক সভা অনুষ্ঠিত হয়নি। মন্ত্রিসভায় রাখা হয়নি ১৪ দলের কোন সদস্যকে। এমনকি সরকারের কোন নীতিনির্ধারকের সিদ্ধান্তে ১৪ দলকে পাত্তাই দেওয়া হয়নি। এটা নিয়েই শুরু থেকেই ১৪ দলের মাঝে চাপা অসন্তোষ ছিল যা এখন প্রকাশ্য হতে ১৪ দল মনে করছে যে করোনা মোকাবেলায় সরকার যে সিদ্ধান্তগুলো নিচ্ছে তাতে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার অভাবে রয়েছে এবং চিন্তাভাবনাপ্রসূত নয় এবং একের পর এক স্ববিরোধী সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। ১৪ দলের অনেক শরিকরাই এই নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চাইছে এবং সরকার যদি শেষ পর্যন্ত করোনা মোকাবেলায় ব্যর্থ হয় তাহলে সেই ব্যর্থতার দায়দায়িত্ব নিতে আগ্রহী নন।
উল্লেখ্য যে, ১৪ দলের শরিকদের মধ্যে তিনটি রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ববৃন্দই সরব এবং জাতীয়ভাবে পরিচিত। এদের মধ্যে রয়েছে রাশেদ খান মেননের নেতৃত্বাধীন ওয়ার্কাস পার্টি, হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বাধীন জাসদ এবং দীলীপ বড়ুয়ার নেতৃত্বাধীন সাম্যবাদী দল। এছাড়াও শরিফ নুরুল আম্বিয়ার নেতৃত্বাধীন জাসদের আরেকটি অংশ ১৪ দলের শরিক হিসেবে আছে। তবে মজার ব্যাপার হলো যে, ১৪ দলের সব শরিকরাই এখন মনে করছেন যে, সরকারের যে সিদ্ধান্তগুলো হচ্ছে তা নিয়ে জনমনে আতঙ্ক, উৎকণ্ঠা বাড়ছে। তবে এখনো ১৪ দলের নেতারা প্রকাশ্যে সরকারের সমালোচনা করতে রাজি নন। তবে তাঁরা নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনায় হা-হুতাশ এবং দীর্ঘশ্বাস ফেলছেন একাধিক নেতা বলছেন যে, খুব শীঘ্রই হয়তো তাঁরা মুখ খুলতে পারে।
১৪ দলের একজন শরিক নেতা ‘বাংলা ইনসাইডার’ এর সাথে আলাপকালে বলেছেন যে, আমরা সরকারের কাছে বার্তাগুলো দিচ্ছি এবং করোনা মোকাবেলায় রাজনৈতিক দলগুলোকে সম্পৃক্ত করার কথা বলছি। কিন্তু সরকার আমাদের কথা শুনছে না। ঐ নেতা এটাও মনে করেন যে, করোনা মোকাবেলায় যে আমলাতান্ত্রিক সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া হচ্ছে, সেই সিদ্ধান্তগুলো অনেক ক্ষেত্রেই সঠিক হচ্ছেনা। ১৪ দলের অন্য একজন নেতা বলেছেন যে, এখন পর্যন্ত করোনা মোকাবেলায় সরকার কিভাবে কাজ করা উচিত, সে ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর কোন পরামর্শ নেওয়া হয়নি। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন যে, অথচ ভারতের সকল রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এটা নিয়ে আলাপ-আলোচনা হচ্ছে, তাঁদের মতামত নিচ্ছে। তিনি আরো বলেন যে, করোনা একটি বৈশ্বিক সমস্যা এবং একটি জাতীয় সমস্যাও বটে। এবং তা মোকাবেলা করার জন্য সকল রাজনৈতিক দলকে একসঙ্গে নিয়ে এবং সকলের মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা উচিত।
১৪ দলের অন্য একজন নেতা বলেন যে, আমলারা প্রধানমন্ত্রীকে ভুল পথে পরিচালিত করছেন এবং এজন্য সরকারকে মাশুল গুনতে হবে। তিনি এটাও বলেন যে, যেহেতু ১৪ দল সরকারের একটি অংশ এবং সরকার এই ১৪ দলেরই ফসল। কাজেই সরকার যদি ব্যর্থ হয় তাহলে দায়দায়িত্ব ১৪ দলের উপরেও বর্তাবে। আর এই কারণেই তাঁরা সরকারের সঙ্গে কথা বলতে চায়। তাঁরা এই নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে পারে বলেও জানা গেছে।
আওয়ামী লীগের শরিকদের মধ্যে এই টানাপড়েন রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণের সৃষ্টি করেছে। যখন করোনা নিয়ে সরকার অনেকটাই চাপে রয়েছে এবং সে সময় যদি ১৪ দল প্রকাশ্যে সরকারের সমালচোনা করে বা সরকারবিরোধী অবস্থানে যায় তাহলে একটি নতুন সঙ্কট তৈরি হবে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
মন্তব্য করুন
কাউন্সিল বিএনপি তারেক জিয়া মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বেগম খালেদা জিয়া
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
চার ধাপে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এ পর্যন্ত (তৃতীয় ধাপ) ২০৪ জনকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় তাদের বহিষ্কার করা হয়।
এরমধ্যে তৃতীয় ধাপের নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় তৃণমূলের ৫৫ নেতাকে বহিষ্কার করে বিএনপি। আর প্রথম ধাপে ভোটের জন্য ৮০ জন, দ্বিতীয় ধাপে ৬৯ জনকে বহিষ্কার করে দলটি।
বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে উপজেলাসহ কোনো নির্বাচনে অংশ না নিচ্ছে না বিএনপি। গত ১৬ এপ্রিল দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, শেখ হাসিনার সরকার ও তার আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন, বেসামরিক ও পুলিশ প্রশাসন একটি অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করতে পারে না। অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিবেশ নেই। তাই উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেবে না দল।
দেশে চার ধাপে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তফসিল অনুযায়ী, গত ৮ মে প্রথম ধাপে ১৩৯টি উপজেলায় ভোট গ্রহণ হয়। এই ধাপের নির্বাচনে বিএনপির বহিষ্কৃত ৭ জন চেয়ারম্যান পদে, ৩ জন ভাইস চেয়ারম্যান পদে জয়লাভ করে বলেও জানা যায়।
দ্বিতীয় ধাপের ১৬১টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের ভোট গ্রহণ করা হবে ২১ মে। তৃতীয় ধাপে ১১২টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচন ২৯ মে অনুষ্ঠিত হবে। চতুর্থ ধাপের উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ৫ জুন।
মন্তব্য করুন
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরে যেতে পারেন এমন গুঞ্জন রয়েছে। তিনি জেল থেকে বেরিয়ে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে মহাসচিবের দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। বেগম খালেদা জিয়া এই বিষয়টি নিয়ে তাকে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন। তবে তারেক জিয়া এ বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া দেননি বলে জানা গিয়েছে। বরং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যদেরকে তারেক জিয়া জানিয়েছেন, কাউন্সিলের আগে বিএনপিতে নেতৃত্বের পরিবর্তন নয়। তবে বিএনপির কাউন্সিল কবে, কীভাবে হবে- এ সম্পর্কে কোন বিস্তারিত তথ্য জানা যায়নি।
সরকারের বিরুদ্ধে নতুন করে আন্দোলন শুরু করার লক্ষ্যে প্রস্তুতি গ্রহণ করছে দীর্ঘ দিন ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি। তারা সাম্প্রতিক সময়ে আবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক শুরু করেছে। তবে এসব বৈঠকে যুগপৎ আন্দোলনের কথা বলা হলেও বিএনপি এখন পর্যন্ত সরকার বিরোধী কোন জোট করতে রাজি নয়। ২০ দলীয় জোট আনুষ্ঠানিকভাবে ভেঙে যাওয়ার পর বিএনপি এখন পর্যন্ত জোটগত ভাবে কোন আন্দোলন করেনি। তবে বিভিন্ন সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তারা সম্পর্ক রেখেছে। ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত এই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তারা যুগপৎ আন্দোলন করেছিল। এখন আবার নতুন করে যুগপৎ আন্দোলন শুরু করার জন্য বিএনপির পক্ষ থেকে এই সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে যোগাযোগ করা হচ্ছে। তবে রাজনৈতিক দলগুলো বিএনপির ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব দেখাচ্ছে না।