নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:৫৯ পিএম, ০৯ জুলাই, ২০২০
রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক সাহেদের আওয়ামী লীগ পরিচয় নিয়ে বিব্রত আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা প্রকাশ্যেই বলেছেন যে এই সমস্ত অনুপ্রবেশকারীদের কঠোর হস্তে দমন করতে হবে। তাঁরা যে দরজা দিয়ে আওয়ামী লীগে ঢুকছে সেই দরজা বন্ধ করে দিতে হবে।
আওয়ামী লীগের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে যে, আওয়ামী লীগ এখন এইসমস্ত অনুপ্রবেশকারীদের ব্যাপারে এবং দলের ভেতরে থেকে যারা নানারকম অপকর্ম করছে তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করতে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন যে, করোনা সঙ্কটে একমাত্র রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ মাঠে থেকেছে, জনগণের কাছে গিয়েছে, জনগণের জন্য কাজ করেছে। অথচ আওয়ামী লীগের নাম ব্যবহার করে কিছু দুর্বৃত্ত আওয়ামী লীগের সুনাম নষ্টের পাঁয়তারা করছে। এই অবস্থা আর বরদাশত করা হবেনা, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেছেন যে, এই সমস্ত দুর্বৃত্তদের যারা দলে ঢুকিয়েছে তাঁদেরকে চিহ্নিত করা হবে এবং তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং এই নিয়ে তাঁরা খুব শীঘ্রই বৈঠকে বসবে।
আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষ নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে যে, আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি নষ্ট করে এবং আওয়ামী লীগের ভেতরে থেকে যারা অপকর্ম করে তাঁদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে। এজন্য আপদকালীন ব্যবস্থা নয়, আওয়ামী লীগ তাঁর নীতি-কৌশলে কিছু দীর্ঘমেয়াদী পদক্ষেপ নেওয়ার কৌশল গ্রহণ করছে বলে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সুত্রে জানা গেছে। যে সমস্ত পদক্ষেপগুলো আওয়ামী লীগ নিতে যাচ্ছে তাঁর মধ্যে রয়েছে-
২০০৯ এর পর আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারীদের তালিকা
২০০৯ সালের পর যারা আওয়ামী লীগে ঢুকেছে তাঁদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে এবং তালিকানুযায়ী যারা বিএনপি-জামাত থেকে যারা এসেছে বা দলের ভেতরে বিভিন্ন অপকর্ম করছে তাঁদের চিহ্নিত করা এবং চিহ্নিত করে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
কমিটি গঠনে যাচাইবাছাই
কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে আরো সতর্ক হতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। শুধু অংগসহযোগী সংগঠন নয়, জেলা-উপজেলা থেকে শুরু করে স্থানীয় পর্যায়ের কমিটিতেও যেন অনুপ্রবেশকারীরা ঢুকতে না পারে, বিতর্কিতরা যেন ঢুকতে না পারে এবং যারা ঢুকেছে তাঁদের যেন যাচাইবাছাই করা হয় সে ব্যাপারে আওয়ামী লীগ আরো সতর্কতা অবলম্বন করবে বলে জানা গেছে।
টক শোতে যাওয়ার ক্ষেত্রে সতকর্তা
যে কেউ যেন আওয়ামী লীগের নাম ব্যবহার করে টক শোতে না যায় এবং আওয়ামী লীগের পরিচয় দিয়ে টক শোতে যাওয়ার আগে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে যেন অবহিত করা হয় এই বিষয়টি নিয়েও আওয়ামী লীগ পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষ নেতা বলেছেন যে, যেকোন লোক আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি হিসেবে টক শোতে যাবেনা। এই ব্যাপারে টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর সঙ্গেও আওয়ামী লীগ কথা বলতে পারে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। কারণ দেখা যাচ্ছে যে, সাহেদের মতো অপকর্মকারীরা আওয়ামী লীগের পরিচয় ব্যবহার করে টক শোতে যাচ্ছে। তাই আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কাউকে যদি টকশোতে নিতে হয় তাহলে সেটা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক বা দপ্তর সম্পাদককে অবহিত করে নিতে হবে- এমন একটি ভাবনা আওয়ামী লীগের মধ্যে ক্রমশ জোরালো হচ্ছে।
সাংগঠনিক নজরদারি বাড়ানো
প্রত্যেকটি বিভাগে আওয়ামী লীগের যারা সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বে আছে তাঁদেরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সাংগঠনিক নজরদারি বাড়ানোর। কোথায় কে কি করছে, নেতাকর্মীরা কোন শৃঙ্খলা পরিপন্থি কাজ করছে কিনা, বা দলের ভেতরে হুট করে কেউ ঢুকে যাচ্ছে কিনা সে ব্যাপারে দেখাশোনা করার জন্য সাংগঠনিক সম্পাদকদের নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয় হওয়া
করোনা সঙ্কটের সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানারকম গুজব ছড়ানো হচ্ছে এবং আওয়ামী লীগের নাম ব্যবহার করে নেতাকর্মীদের বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। এর বিপরীতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তেমন একটা সোচ্চার নয়। এই বাস্তবতায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, যেমন ফেসবুকসহ অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়ায় আরো সোচ্চার হওয়ার জন্যে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। যেন তাঁরা এইসব অপপ্রচার-গুজবের সঠিক জবাব দেয় এবং সত্যটাকে সামনে নিয়ে আসে।
আওয়ামী লীগের এই কঠোর অবস্থানের ফলে যারা অপকর্ম করছে তাঁরা দল থেকে তিরোহিত হচ্ছে এবং অপকর্মকারীদের দল থেকে বের করে দেওয়া সহজ হবে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা।
মন্তব্য করুন
বিএনপি আমির খসরু মির্জা ফখরুল রুহুল কবির রিজভী
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রথম দফায় ১৩৯টি উপজেলা নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। যথারীতি বিরোধী দল বিহীন এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয় জয়কার। আওয়ামী লীগের নেতারাই অধিকাংশ উপজেলায় নিরঙ্কুশভাবে বিজয়ী হয়েছে। কিন্তু তারপরেও উপজেলা নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে সন্তুষ্টি নেই। আওয়ামী লীগের মধ্যে এক ধরনের অস্বস্তি এবং শীর্ষ নেতাদের মধ্যে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিরক্তি কাজ করছে।
নানা কারণে উপজেলা নির্বাচন আওয়ামী লীগের জন্য ইতিবাচক ফলাফল আনতে পারেনি বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। তারা উপজেলা নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করে উদ্বিগ্ন এবং দল ও গণতন্ত্রের জন্য সামনের দিনগুলোতে আরও সংকট অপেক্ষা করছে বলেই মনে করছেন আওয়ামী লীগের একাধিক দায়িত্বশীল নেতা।
প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সামনে পাঁচটি সংকটকে উন্মোচন করেছে। এর মধ্যে রয়েছে-
১. ভোটার উপস্থিতি কম: উপজেলা নির্বাচনে ভোটের হার এবার সর্বনিম্ন হয়েছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর যতগুলো উপজেলা নির্বাচন হয়েছে তার মধ্যে এবার ভোট পড়েছে সবচেয়ে কম। ২০০৮ এর ভূমিধস বিজয়ের পর প্রথম আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচন হয় ২০০৯ সালে। সেই উপজেলা নির্বাচনে ৬৮ ভাগের বেশি ভোট পড়েছিল। দ্বিতীয় দফায় ৬১ ভাগ ভোটার উপজেলা নির্বাচনে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছিলেন। ২০১৯ সালে এই হার ছিল ৪০ শতাংশের বেশি।
কিন্তু এবার নির্বাচন কমিশনের হিসেব অনুযায়ী ৩৬ দশমিক ১০ শতাংশ ভোটার উপজেলা নির্বাচনে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছে। এটি কখনোই স্বস্তি দেওয়ার খবর নয়। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সাধারণত ভোটাররা উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে ভোট দেয়। কিন্তু এবার উপজেলা নির্বাচনে ভোটাররা উৎসাহ নেয়নি। এমনকি আওয়ামী লীগের যে রিজার্ভ সমর্থক বলে যারা পরিচিত সেই ভোটাররাও ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত ছিল না।
আওয়ামী লীগ সভাপতি দলের নেতা কর্মীদেরকে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করা, তারা যেন ভোটকেন্দ্রে যায় সে জন্য উৎসাহিত করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই নির্দেশ মাঠে প্রতিফলিত হয়নি। ভোটার উপস্থিতি কম থাকার ফলে আওয়ামী লীগের জন্য অস্বস্তির কারণ।
২. অভ্যন্তরীণ কোন্দল: আওয়ামী লীগের জন্য এই নির্বাচন ছিল অভ্যন্তরীণ কোন্দল মেটানোর মাধ্যম। এ কারণেই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরপরই আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপজেলা নির্বাচন উন্মুক্ত করে দেন। তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে, দলীয় প্রতীক উপজেলা নির্বাচনে ব্যবহার করা যাবে না। আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা আশা করেছিলেন, এ ধরনের সিদ্ধান্তের ফলে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের যে কোন্দল এবং বিভক্তি প্রকাশ্য রূপ নিয়েছিল তার কিছুটা হলেও অবসান ঘটবে।
কিন্তু বাস্তবে ঘটেছে উল্টো। উপজেলা নির্বাচন আওয়ামী লীগকে আরও বিভক্ত করেছে। বিশেষ করে যে সমস্ত স্থানে স্বতন্ত্রদের সাথে আওয়ামী লীগের বিরোধ ছিল, সেই বিরোধে গুলো আরও সহিংস রূপ নিয়েছে। এটি আওয়ামী লীগের জন্য একটি অশনী সংকেত।
৩. কেন্দ্রের নির্দেশ অমান্য করার প্রবণতা: আওয়ামী লীগের জন্য উপজেলা নির্বাচনে একটি বড় অস্বস্তির বিষয় ছিল কেন্দ্রের নির্দেশ অমান্য করা। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনদেরকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই নির্দেশ মাঠে প্রতিফলিত হয়নি। দু একজন মন্ত্রী-এমপি ছাড়া অধিকাংশই তাদের আত্মীয় স্বজনদেরকে নির্বাচনে প্রার্থী করেছেন এবং প্রভাব বিস্তার করে জিতিয়ে এনেছেন। এটি আওয়ামী লীগের জন্য একটি সতর্কবার্তা। কেন্দ্রীয় নির্দেশ অমান্য করার এই প্রবণতা যদি বাড়তে থাকে সেটি ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগের জন্য একটি খারাপ পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে বলেও অনেকে মনে করছেন।
৪. এলাকায় এলাকায় জমিদারতন্ত্র-পরিবারতন্ত্র কায়েম: এবার উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত মন্ত্রী-এমপিরা তাদের আত্মীয় স্বজনদেরকে মনোনয়ন দিয়েছেন, তারা এলাকায় এলাকায় একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করার চেষ্টা করছেন। এর ফলে বিভিন্ন এলাকায় একটি গোষ্ঠীতন্ত্র, পরিবারতন্ত্র বা জমিদারতন্ত্র কায়েম হচ্ছে। এটিও আওয়ামী লীগের জন্য একটি খারাপ সংবাদ বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
৫. অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনে অনীহা: আওয়ামী লিগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারবার নেতাকর্মীদেরকে বলেছিলেন যে- অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে হবে। কিন্তু দেখা গেছে, নির্বাচনে যারা শক্তিশালী প্রার্থী হয়েছেন তারা প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেছেন। পেশিশক্তির প্রয়োগ ঘটিয়েছেন, কালো টাকা ছড়িয়েছেন। আর এগুলো আওয়ামী লীগের ইমেজ নষ্ট করেছে এবং জনগণের কাছে ভুল বার্তা দিয়েছে। এই সমস্ত অস্বস্তিগুলো উপজেলা নির্বাচনের মাধ্যমে স্পষ্ট হয়েছে। এখন ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগ কীভাবে এই সংকটগুলো কাটিয়ে উঠবে, সেটাই দেখার বিষয়।
উপজেলা নির্বাচন আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি ওবায়দুল কাদের
মন্তব্য করুন
বিএনপিতে নতুন মহাসচিব নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া বিভিন্ন জেলার স্থানীয় পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে নৈশ বৈঠকের আয়োজন করছেন। এ পর্যন্ত নোয়াখালী, কুমিল্লা, সিলেট, বরিশালসহ অন্তত দশটি জেলায় এই ধরনের জুম বৈঠক আয়োজন করা হয়েছে। যে বৈঠকগুলোতে লন্ডনে পলাতক তারেক জিয়া সরাসরি তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলছেন। তৃণমূলের নেতাকর্মী ছাড়াও ছাত্রদল, যুবদল, কৃষক দলের মতো বিভিন্ন অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের স্থানীয় পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ তারেক জিয়ার সঙ্গে কথা বলছেন।
প্রথম দফায় ১৩৯টি উপজেলা নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। যথারীতি বিরোধী দল বিহীন এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয় জয়কার। আওয়ামী লীগের নেতারাই অধিকাংশ উপজেলায় নিরঙ্কুশভাবে বিজয়ী হয়েছে। কিন্তু তারপরেও উপজেলা নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে সন্তুষ্টি নেই। আওয়ামী লীগের মধ্যে এক ধরনের অস্বস্তি এবং শীর্ষ নেতাদের মধ্যে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিরক্তি কাজ করছে।