ইনসাইড আর্টিকেল

অনার্জিত রয়ে গেছে স্বপ্নপূরণ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯:০০ এএম, ০২ অগাস্ট, ২০২০


Thumbnail

শোকের মাস আগস্ট। এই মাসেই জাতি হারিয়েছে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। স্বাধীন দেশের মাটিতে ষড়যন্ত্রকারীদের নির্মম হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়েছেন বঙ্গবন্ধু সপরিবারে। শোকের মাসে বাঙালি জাতি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে জাতির পিতা ও অন্যান্য শহীদদের। এ উপলক্ষে বাংলা ইনসাইডারের নিয়মিত আয়োজনে আজ থাকলো  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি লেখার কিছু অংশ -

তখন আমি আজিমপুর স্কুলের ছাত্রী। ক্লাস নাইনে পড়ি।সমাজবিদ্যা একটা বিষয় ছিল আর ছিল পৌরনীতি।পরীক্ষায় একবার পৌরনীতিতে পাশের চাইতে এক নম্বর কম পেলাম।আমাদের গৃহশিক্ষক পি,কে,সাহা প্রত্যেক পরীক্ষার পর স্কুলের খাতাগুলো দেখতেন,পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতেন।আমি খুব মেধাবী ছাত্রী না হলেও একেবারে ফেল করার মতো অবস্থা ছিল না।বিশেষ করে পৌরনীতিতে ফেল করব,এটা সত্যিই অকল্পনীয় ছিল।মোটামুটি মাঝারি ধরনের ছাত্রী ছিলাম।একটু পড়াশোনা মন দিয়ে করলে ভালোই করতাম।কিন্তু বাসায় রাজনীতি চর্চা।সরকারি হয়রানি।আব্বাকে নানা ঝামেলায় থাকতে হতো।ঠিক পড়াশোনা চর্চা করার মতো পরিবেশই তেমন ছিল না।রাজনীতির খবরা-খবরের দিকে মনটা পড়ে থাকত বলে আরও অবহেলা হতো।কিন্তু আমার গৃহ শিক্ষক অত্যন্ত কড়া ও উপযুক্ত ছিলেন এবং খুবই যত্ন নিয়ে পড়াতেন।কাজেই উনি খুবই বিস্মিত হলেন যখন দেখলেন একটা বিষয় খারাপ করেছি।আর তাই তিনি স্কুলে গিয়ে হেডমাস্টারের অনুমতি নিয়ে খাতা দেখলেন।আমি ভয়ে অস্থির,কি ব্যাপার,কি হবে,আব্বা শুনলে তো মেরেই ফেলবেন।যদিও বকাবকি করবার সময়ও পেতেন না,তবুও ভয়।তার উপর মাকে তো আমরা আরও ভয় পেতাম।মার হাতে দুই-চার ঘা যে খেতে হবে তাতে কোন সন্দেহ নেই।কি অন্যায় করে ফেললাম,কে জানে।ভূগোল.ইতিহাসে মোটামুটি ভালো নম্বর।ভূগোলে প্রথম বিভাগের নম্বর থাকতো।কিন্তু পৌরনীতির অবস্থা শোচনীয়।খাওয়া-দাওয়া বন্ধ প্রায়।স্যার খাতায় কী দেখে আসেন,কী ভুল করলাম।স্যার এলেন এবং এসেই খুব হাসতে থাকলেন।খাতায় লেখা আছে,‘এই মেয়ে বড় বড় নেতাদের বক্তৃতা অনুসরণ করে,বইয়ের সঙ্গে সম্পর্ক রাখে না।’

যে প্রশ্নের উত্তরের জন্য আমার উপর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে,তা হলো আইয়ুব খান সংক্রান্ত।তদানীন্তন রাষ্ট্রপতি মিলিটারি ডিক্টেটর আইয়ুব খানের ক্ষমতার কথা লিখতে গিয়ে বইতে যেসব প্রশংসাসূচক কথা লেখা ছিল,সেগুলো আমি লিখিনি। বরং একদিন আলোচনা প্রসঙ্গে আব্বা কিছু কথা বলেছিলেন,সেই কথাগুলোই আমি লিখে দিয়ে এসেছি।আমি সেই সঙ্গে তার বক্তৃতায় যে সমস্ত কথা ছিল,তাও উল্লেখ করি এবং যথারীতি সেটাই হলো কাল।তাই খাতাসহ নম্বর বাতিল। অবশ্য দুঃখ নেই,আমি ঘটনাটি আব্বাকে বলি এবং বই নিয়ে আব্বার কাছে যাই।আব্বাকে বইগুলো দেখাই। সমাজবিদ্যা নামে আরেকটি বিষয় ছিল,যেখানে `পাকিস্তান`চ্যাপ্টার ছিল,যাতে নম্বর ছিল কুড়ি। আব্বা সবগুলো দেখলেন,অনেকক্ষণ আলাপ হলো এবং উনি বলে দিলেন পাকিস্তান চ্যাপ্টার পড়তে হবে না।এখানে অজস্র মিথ্যা কথা লেখা আছে, কাজেই মিথ্যা কথা শেখার প্রয়োজন নেই। আমিতো ভীষন খুশি। আমার সেই বইটা নেই।১৯৭১ সালে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী যখন বাড়ি লুট করে তখন জিনিসপত্র হারিয়ে যায়।নইলে সেই বইগুলো থাকতো,থাকতো সেই সমাজবিদ্যা বইটিও।

আব্বা সেদিন যে কথাগুলো বলেছিলেন,সে কথাগুলো আমি লিখে নিয়েছিলাম।এরপর সিদ্ধান্ত নেই আর পাকিস্তান সম্পর্কে ঐসব ছাইপাশ পড়রো না বা এ-বিষয়ে লিখবো না।পড়ার অংশ থেকে বাদ পড়ে সেই `পাকিস্তান`চ্যাপ্টার।এমনকি ম্যাট্রিক পরীক্ষায়ও ঐ কুড়ি নম্বর বাদ রেখেই, প্রায় রিস্ক নিয়েই পরীক্ষা দেই এবং পাশ করতে তেমন কোন আসুবিধাই হয়নি।আব্বা আমাদের একটা কথা সব সময়ই বলতেন,রাজনীতি হলো দেশের মানুষের জন্য কিছু করা।এখানে ব্যক্তিগত লাভ লোকসান বড় কথা নয়।নীতি ও আদর্শই হল মূল্যবান। আইয়ুব খা ছিল সামরিক জান্তা।সব সময় জান্তার শাসনের বিরুদ্ধে একটা জন্মগত বিদ্বেষ জন্মে গিয়েছিল।যে কারণে পরবর্তীকালে জান্তার শাসনকে কখনোই মেনে নিতে পারিনি।১৯৭০ সালের নির্বাচনের পর আমার আব্বা যদি ইচ্ছে করতেন ইয়াহিয়ার অধীনে প্রধানমন্ত্রী হতে পারতেন।আর আমরা পিণ্ডি থেকে পি-আই-এ’র বিমানে এসে ঢাকায় পা দিতে পারতাম।হয়তো একদিন এই মাটির মানুষগুলিকে দেখতাম করুণার চোখে।কিন্তু আমার আব্বা কখনও যেনতেন প্রকারে ক্ষমতায় যাবার রাজনীতি করেননি,বারবার চেয়েছেন এদেশের মানুষের অধিকার। ছোট্ট বেলা থেকেই গ্রামের দরিদ্র মানুষের প্রতি ছিল তার মমত্ববোধ। সব সময় বলতেন আমি বড় হলে এই দরিদ্র মানুষের দুঃখ ঘোচাবো।তিনি সব সময় নিজের টাকা পয়সা দুহাতে বিলিয়ে দিতেন। নিজের আরাম-আয়েশ হারাম করেছিলেন দেশের মানুষের জন্য। গ্রামের পরিবেশে ছোটবেলা মানুষ হয়েছেন,দেখেছেন গ্রামে মানুষের দারিদ্রতা, দুঃখ-কষ্ট, এসব তাকে খুবই পীড়া দিত। তাই পাকিস্তানি আধা ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে তিনি সোচ্চার ছিলেন। তাদের শোষণ কখনও মেনে নেননি।

তিনি চেয়েছিলেন বিনা রক্তপাতে রাজনৈতিকভাবে বাংলার মানুষকে স্বাধীনতা অর্জন করিয়ে দেবেন এবং অর্থনৈতিক মুক্তি আনবেন। সেই লক্ষ্যে তিনি ছয় দফা দিয়েছিলেন। এই ছয় দফাই পরবর্তীকালে এক দফায় রূপান্তরিত হয়। আমার মনে আছে ১৯৭১ এর মার্চ মাসে আমরা যখন এক সঙ্গে খেতে বসতাম, কথা প্রসঙ্গে ছয় দফার কথা উঠত। হাতের ছয়টি আঙুল তুলে পাঁচটি নামিয়ে ফেলতাম, একটি থাকত। এটা আমাদের সবারই অভ্যাস ছিল, শুধু মুখে উচ্চারণ করা বারণ ছিল। অবশ্য এই ইশারাই যথেষ্ট ছিল যে আমরা আসলে কি চাই।

১৯৬১ সাল হবে। চট্টগ্রামে বেড়াতে গিয়েছি। ওখানে আওয়ামী লীগের নেতা আজিজ সাহেব আব্বার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। চট্টগ্রামে সেবার আমাদের প্রথম যাত্রা। তাই খুব ঘুরে বেড়িয়েছি। আজিজ কাকার ছেলে মঞ্জু (বর্তমানে জাসদ নেতা) ও মেয়ে বিলকিস, আমি ও কামাল, আমাদের খুব বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছিল। আমরা খুব বেড়াতাম, পাহাড় বেয়ে উঠতাম। আমরা সমতল ভূমির মানুষ, জীবনে প্রথম পাহাড় দেখছি। পাহাড়ের উচ্চতা তাই আমাদের অবাক করে দিত। এছাড়া ঐতিহাসিক চট্টগ্রাম। মাস্টারদার বিপ্লবের কাহিনী ছড়িয়ে আছে। যদিও পাকিস্তান আমলে সে সব বই নিষিদ্ধ ছিল তবুও চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন বা প্রীতিলতা ওয়াদ্দার কল্পনাসহ সব কাহিনী খুবই আগ্রহ নিয়ে পড়তাম। তাই কোর্ট বিল্ডিং, জালালাবাদ পাহাড়, চট্টগ্রাম ক্লাব সব ঘুরে ঘুরে দেখছি। কোর্ট বিল্ডিং থেকে রাতের সমুদ্রের অপূর্ব রূপও একদিন দেখলাম।

আমরা যেদিন টাইগার পাস দেখতে গেলাম, সেদিন আজিজ কাকা একটা কথা বললেন। টাইগার পাস তখন এত জনবহুল ছিল না, তখনও বেশ গাছপালা ছিল শহর থেকে বেশ দূরেই। আজিজ কাকা বললেন, “দেখো মা একদিন এখান থেকেই আমাদের স্বাধীনতার যুদ্ধ শুরু হবে। আর প্রথম ঘোষণা হবে কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে।” আমাদের তিনি সেদিন কালুরঘাটও নিয়ে গেলেন। তখন খুব ফাঁকা জায়গা। কেবল একটা বিল্ডিং হয়েছে, রেডিও অফিস তখনও শহরে। দুঃখজনক হলো আজিজ কাকা স্বাধীনতা দেখে যেতে পারেননি। ১৯৬৯ সালে হঠাৎ হার্টফেল করে মারা যান। তাঁর সঙ্গী ছিলেন হান্নান সাহেব, জহুর চৌধুরী, মানিক চৌধুরী। আজ আর কেউই বেঁচে নেই। তাঁর দূরদর্শিতা বা পরিকল্পনা যে দশ বছর পর এভাবে বাস্তবে পরিণত হবে, তা তখন ভাবতেও পারিনি। কিন্তু একটা কথা আব্বার কাছ থেকে বুঝে নিয়েছিলাম, পাকিস্তান নামের দেশ থেকে আমরা একদিন মুক্তি পাবই। সেই লক্ষ্য স্থির রেখেই তিনি কাজ করে গেছেন, সফলও হয়েছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের, এই বাঙালি জাতির রাজনৈতিক স্বাধীনতা তিনি দিয়ে গেছেন। কিন্তু যে স্বপ্ন তিনি দেখেছিলেন এদেশের মানুষকে দুঃখ-দরিদ্রতা থেকে মুক্তি দেবেন এবং সেই লক্ষ্য স্থির করে পা-ও বাড়িয়েছিলেন, কিন্তু তা সমাপ্ত করতে পারেননি। স্বাধীনতার পরাজিত শক্তি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তাঁকে হত্যা করল। এই হত্যার মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার চেতনাকেই হত্যা করে দিল। আজ আমাদের জন্য স্বাধীনতা শব্দটাই শুধু আছে। অনার্জিত রয়ে গেছে আব্বার স্বপ্নপূরণ।

রচনাকাল : ১৪ আগস্ট ১৯৯১



মন্তব্য করুন


ইনসাইড আর্টিকেল

প্রেম মানে না বয়সের গণ্ডি

প্রকাশ: ০৭:৫৬ এএম, ১১ মে, ২০২৪


Thumbnail

প্রেমের কোনো বয়স হয় না। গল্প, উপন্যাস ও বাস্তব জীবনে এর আগে বহুবার তা প্রমাণ হয়েছে। আরও একবার সে কথা মনে করিয়ে দিল নিউইয়র্কের বাসিন্দা হ্যারল্ড টেরেন্স (১০০) ও জেনি শার্লিনের (৯৬) প্রেমকাহিনি। তাদের এই প্রেম পরিণতিও পেতে চলেছে। কিছু দিন পরেই দুজনে সংসার পাতবেন। তারই প্রস্তুতি চলছে।

হ্যারল্ড বিমানবাহিনীতে কাজ করতেন। এখন অবসরপ্রাপ্ত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধেও অংশ নিয়েছিলেন তিনি। পড়াশোনা চলাকালীন বিমানবাহিনীতে যোগ দেন হ্যারল্ড। তখন হ্যারল্ডের বয়স ২০। চাকরি সূত্রে ইংল্যান্ড পাড়ি দেন। কয়েক বছর সেখানেই ছিলেন। হঠাৎই ইংল্যান্ড ছেড়ে যাযাবর হয়ে যান।

ইউক্রেন, বাগদাদ, তেহরানসহ বিভিন্ন দেশে ঘুরে কাজ করতে থাকেন। বেশ কয়েক বছর এভাবে চলার পর জীবনে থিতু হতে চান তিনি। তাই আবার আমেরিকায় ফিরে আসেন। নিজের মাটিতে ফিরে নতুন জীবনও শুরু করেন। সংসার পাতেন দীর্ঘ দিনের বন্ধু থেলমার সঙ্গে।

বছর দুয়েকের মধ্যে দুই সন্তান আসে। স্ত্রী, সন্তানকে ছেড়ে কাজে ফেরার ইচ্ছা ছিল না হ্যারল্ডের। কিন্তু স্ত্রীর জোরাজুরিতেই আবার কাজে যোগ দিয়েছিলেন। হ্যারল্ড চলে যাওয়ার পর সংসার ও সন্তানের সমস্ত দায়িত্ব গিয়ে পড়ে থেলমার ওপর। দায়িত্ব পালনে অবশ্য কোনো ত্রুটি রাখেননি তিনি। সন্তানরাও বড় হয়ে নিজেদের মতো জীবন গুছিয়ে নেয়।

জীবনের অধিকাংশ সময় পরিজনদের সঙ্গ পাননি। জীবনের শেষটা এমন হোক, তা চাননি হ্যারল্ড। তাই ২০২১ সালে চাকরি থেকে পুরোপুরি অবসর নিয়ে বাড়ি ফিরে আসেন।  কিন্তু নিয়তিতে যা লেখা থাকে, তার অন্যথা হওয়ার জো নেই। হ্যারল্ড বাড়ি ফেরার মাসখানেকের মধ্যে মারা যান থেলমা। দুই ছেলে কাজের সূত্রে ভিন দেশে।

স্ত্রীর মৃত্যুর পর আবার একা হয়ে যান বৃদ্ধ হ্যারল্ড। তার এই নিঃসঙ্গ জীবনে হঠাৎই আলাপ জেনির সঙ্গে। জেনি অবিবাহিত ছিলেন। মনের মতো কাউকে পাননি, তাই সংসারও পাতা হয়নি। ৯৬ বছর বয়সে হ্যারল্ডের সঙ্গে আলাপ হওয়ার পর জেনির মনে হয়েছিল, এই মানুষটির জন্যই অপেক্ষা করছিলেন।

তাই সময় নষ্ট না করে নিজেই মনের কথা খুলে বলেন হ্যারল্ডকে। একা থাকতে আর কে চায়! তাই আর দেড়ি করেননি, জেনির সঙ্গে জীবনের বাকি দিনগুলো হেসেখেলে কাটিয়ে দিতে চেয়ে আবার নতুন করে শুরু করেন।


প্রেম   বয়স   গণ্ডি  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড আর্টিকেল

পৃথিবীর সবচেয়ে উত্তপ্ত জায়গায় যেভাবে থাকে মানুষ

প্রকাশ: ০৮:০০ এএম, ১১ মে, ২০২৪


Thumbnail

এইতো কয়েকদিন পূর্বেও ৪৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রার ফলে নাভিশ্বাস উঠেছিল সারা দেশের মানুষের। সারা দেশব্যাপী হিট অ্যালার্ট জারি করা থেকে শুরু করে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা- কত কিছুই না হয়েছে এই তীব্র তাপদাহের কারণে। তবে পৃথিবীতে এমন স্থানও রয়েছে যেখানে তাপমাত্রা থাকে ১২৭ ডিগ্রী ফরেনহাইট।

স্থানটি হচ্ছে ডেথ ভ্যালি। নাম শুনেই নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন, স্থানটি কতটা ভয়ংকর। বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক স্থানের মধ্যে অন্যতম স্থান এটি। ২০১৮ সালের জুলাইয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে উষ্ণতম স্থানের তকমা অর্জন করে ডেথ ভ্যালি। সবচেয়ে উষ্ণতম মাসের রেকর্ড হিসেবে, ওই বছরের একটানা চার দিন ১২৭ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রা ধরা পড়ে। যা তাপমাত্রার সর্বোচ্চ রেকর্ড।

ডেথ ভ্যালি ক্যালিফোর্নিয়া এবং নেভাদা সীমান্তে অবস্থিত। বিশ্বের সবচেয়ে তাপমাত্রা বিরাজ করে ডেথ ভ্যালির মরুভূমিতে। এটি বিশ্বের অন্যতম উষ্ণ স্থান হিসেবে পরিচিত। মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকাতে কেবল কয়েকটি মরুভূমি আছে। যেখানে গ্রীষ্মে তাপমাত্রায় শীর্ষে পৌঁছায়।

ডেথ ভ্যালি ন্যাশনাল পার্কে কাজ করেন ব্রান্ডি স্টুয়ার্ট। পার্কের কমিউনিকেশন বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে তিনি। তিনি বলেন, ‘এখানে এখন যেরকম গরম পড়েছে, আমরা সবাই আমাদের ধৈর্য হারিয়ে ফেলছি। আপনি যখন বাইরে যাবেন, মনে হবে যেন আপনার মুখে অনেকগুলো হেয়ার ড্রায়ারের গরম বাতাস এসে পড়ছে।’

তিনি আর বলেন, ‘এখানে এত গরম যে, আপনার গায়ে যে ঘাম হচ্ছে তা আপনি টেরই পাবেন না। কারণ খুব দ্রুত এটি বাষ্প হয়ে উবে যাচ্ছে। ঘামে যখন কাপড় ভিজে যায়, সেটা টের পাওয়া যায়, কিন্তু গায়ের চামড়ায় ঘাম শুকিয়ে যায় খুব দ্রুত। এই বিষয়টিতে অভ্যস্ত হয়ে উঠতে আমার সময় লেগেছে।’

ডেথ ভ্যালি এক বিস্তীর্ণ মরুভূমি। মাঝে মাঝে বালিয়াড়ি আর গভীর খাদ রয়েছে। পার্শ্ববর্তী রাজ্য নেভাডা পর্যন্ত বিস্তৃত। বিশ্বের উষ্ণতম জায়গা হওয়ার পরও এই জায়গাতে থাকে কয়েকশ’ মানুষ। মিজ স্টুয়ার্ট তাদের একজন।

মিজ স্টুয়ার্ট বলেন, গ্রীস্মের সময় তাদের বেশিরভাগ সময় ঘরের ভেতরেই কাটে। তবে অনেকে পাহাড়ের দিকে চলে যায়, যেখানে তাপমাত্রা একটু কম। যখন লোকে এতে অভ্যস্ত হয়ে যায়, তখন এটা স্বাভাবিক বলেই মনে হয়। তখন তাপমাত্রা ৮০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের (২৬ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস) নীচে নামলে সেটাকেই মনে হয় খুব ঠান্ডা।

ডেথ ভ্যালির লোকজনের বাড়িতে এয়ার কন্ডিশনিংয়ের ব্যবস্থা আছে। এটি তাদের ঘর ঠান্ডা রাখে। কাজেই ঘুমাতে অসুবিধা হয় না। তবে বিদ্যুৎ যদি চলে না যায়। যখন প্রচণ্ড গরম পড়ে, তখন সবাই সারাক্ষণ এয়ারকন্ডিশনিং চালিয়ে ঘর ঠান্ডা রাখার চেষ্টা করে। তখন বিদ্যুৎ সরবরাহে সমস্যা তৈরি হয়।

ডেথ ভ্যালির বেশিরভাগ মানুষ থাকেন এবং কাজ করেন ফার্নেস ক্রীকে। এখানেই সাম্প্রতিক সময়ে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল। এই জায়গাটা সমুদ্র সমতল থেকে প্রায় ২৮০ ফুট নীচু একটা বেসিনের মতো। চারিদিকে উঁচু এবং খাড়া পাহাড় দিয়ে ঘেরা।

জেসন হেসার এই ফার্নেস ক্রীকেই থাকেন। তার আসল বাড়ি মিনেসোটাতে। কাজ করেন এখানকার একটি গলফ কোর্সে। এটি বিশ্বে সমুদ্র সমতল থেকে সবচেয়ে নীচু কোনো গলফ কোর্স। সামরিক বাহিনীর এই সাবেক সদস্য বলেন, ‘আমি দুবার ইরাকে ছিলাম। যদি ইরাকে থাকতে পারি, তাহলে ডেথ ভ্যালিতেও থাকা যায়।’

জেসন গলফ কোর্সে কাজ শুরু করেন ভোর পাঁচটার একটু আগে এবং দুপুর একটা পর্যন্ত কাজ করে যান। তিনি বলেন, ‘ওরা আমাদের জানিয়েছে, যখন গরম আরও বেশি পড়বে, তখন আমাদের আরও ভোরে কাজ শুরু করতে হবে। একেবারে ভোর চারটায়। আর সেই ভোরেও কিন্তু তাপমাত্রা প্রায় ১০০-১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৩৭ দশমিক ৭ হতে ৪০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস)।’

হেসার এখানে এসেছিলেন ২০১৯ সালে। তিনি তার কাজটা বেশ পছন্দ করে ফেলেছেন। আরও কয়েক বছর তিনি এখানে থাকার পরিকল্পনা করছেন। অবসরে তিনি গলফ কোর্সে গলফ খেলতে পছন্দ করেন। তবে সেজন্য উঠতে হয় বেশ সকালে এবং খেলা শুরু করতে হয় সকাল সাতটায়। কারণ এরপর গরম খুবই অসহনীয় হয়ে উঠে।

তিনি বলেন, ‘আমি যখন এখানে এসেছি, তখন তাপমাত্রা বেশ ভালোই ছিল। শর্টস আর পোলো শার্ট পরে একটা কোল্ড বিয়ার বা কোল্ড সোডা। আপনার সাথে যদি ঠান্ডা পানীয় থাকে, আপনাকে আগে সেটা পান করে নিতে হবে। নইলে গলফের মাঠ থেকে ফিরে কিন্তু দেখবেন সেটা আর ঠান্ডা নেই। আর আগে পান করে নিলে গলফ খেলাটাও জমে ভালো।’

ক্রিসটোফার বার্ট আবহাওয়া বিষয়ক ইতিহাস নিয়ে কাজ করেন। ১৯১৩ সালে ডেথ ভ্যালিতে রেকর্ড করা তাপমাত্রা নিয়ে কেন এই সংশয়, সে সম্পর্কে তিনি বলেন, ঐ এলাকার আশেপাশের অন্যান্য এলাকার রেকর্ডের সঙ্গে এটি মিলছিল না। ফার্নেস ক্রীকের তাপমাত্রা আশে-পাশের এলাকার চেয়ে প্রায় দু্ই বা তিন ডিগ্রি বেশি ছিল।

কেউ কেউ যুক্তি দেন যে, ডেথ ভ্যালির চেয়েও হয়তো বেশি গরম পড়ছে বিশ্বের আরো অন্য কোনো জায়গায়। কিন্তু আবহাওয়ার ওপর যারা নজর রাখেন, তারা এই দাবিকে গুরুত্ব দেন না। কারণ এসব জায়গায় তাপমাত্রা রেকর্ড করার জন্য নির্ভরযোগ্য কোনো আবহাওয়া কেন্দ্র নেই।


তীব্র তাপদাহ   গরম   ডেথ ভ্যালি  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড আর্টিকেল

'এপ্রিল ফুল' এর ট্র্যাজেডিতে কি জড়িয়ে আছে?

প্রকাশ: ০৮:০০ এএম, ০১ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

এপ্রিল মাসের প্রথম দিনটি পশ্চিমা দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে বেশ ঘটা করে পালন করা হয়। এদিনে একে অপরকে চমকে দিয়ে 'বোকা বানাতে' চায়। যদিও বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে এই প্রচলন খুব একটা দেখা যায় না।

পহেলা এপ্রিল পশ্চিমা দেশগুলোতে অনেকে কিছুটা বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করে। অন্যথায় কারো না কারো কাছে তাকে বোকা হিসেবে পরিচিত হতে হবে এবং এটি নিয়ে হাস্যরস তৈরি হতে পারে।

এ দিনটিকে তাই বলা হয় অল ফুলস ডে, বাংলায় বোকা বানানোর দিনও বলতে পারেন। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ফলাও করে ভুয়া ও ভুল সংবাদ ছাপায়। পরদিন অবশ্য সেটার সংশোধনী দিয়ে জানিয়ে দেয় খবরটা আসলে এপ্রিল ফুল ছিল।

একই সাথে এদিন পরিবারের ছোটরা সাধারণত বড়দের সাথে নানাভাবে মজা করে বোকা বানানোর চেষ্টা করে। আবার বন্ধু বা কলিগরাও একে অন্যের সাথে মজা করে। তবে যাকে বোকা বানানো হয়, তাকে শেষে সবাই মিলে চিৎকার করে জানিয়ে দেয় 'এপ্রিল ফুল'।

ধারণা করা হয়, ইউরোপে এপ্রিল ফুলের প্রসার ফ্রেঞ্চ জাতির মধ্যে। ফ্রেঞ্চরা ১৫০৮ সাল, ডাচরা ১৫৩৯ সাল থেকে এপ্রিল মাসের প্রথম দিনকে কৌতুকের দিন হিসেবে পালন শুরু করে। ফ্রান্সই প্রথম দেশ হিসেবে সরকারিভাবে নবম চার্লস ১৫৬৪ সালে এক ফরমানের মাধ্যমে ১ জানুয়ারিকে নববর্ষ হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন । অর্থাৎ তিনি এটি করেন ১৫৮২ সালে ইতালীয়ান পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরী প্রবর্তিত গ্রেগরীয়ান ক্যালেন্ডার হিসেবে প্রচলন হওয়ারও আগে। পাশাপাশি ১ এপ্রিল বন্ধুদের উপহার আদানপ্রদানের প্রথা বদলে যায় ১ জানুয়ারি। কারণ তখন বিভিন্ন দেশে জুলিয়ীও ক্যালেন্ডার অনুযায়ী নিউইয়ার পালিত হত ১ এপ্রিলে। অনেকেই এই পরিবর্তনকে মেনে নিতে না পেরে এদিনই তাদের পুরনো প্রথাসমূহ চালিয়ে যেতে থাকে। কিন্তু ১ জানুয়ারির পক্ষের লোকজন এদেরকে ফাঁকি দিতে ১ এপ্রিলে ভুয়া উপহার পাঠানোর প্রথা চালু করে।

ফ্রান্সে কাউকে বোকা বানালে বলা হত এপ্রিল মাছ (April fish), ফ্রেঞ্চ ভাষায় poisson d’avril. এই্ নামকরণের কারণ, রাশিচক্র অনুযায়ী স্বর্গের কাল্পিক রেখা অতিক্রম করলে এপ্রিলে সূর্যকে মাছের মত দেখায়। এইদিনে তারা ছুটি কাটাত এবং মরা মাছ এনে তাদের বন্ধুদের পেছনে সেটে দিয়ে মজা করত।

ডাচদের আরও কারণ রয়েছে। স্পেনের রাজা দ্বিতীয় ফিলিপ ১৫৭২ সালে নেদারল্যান্ড শাসন করতেন। যারা তার শাসন অমান্য করেছিল তারা নিজেদেরকে গুইযেন বা ভিখারী বলে পরিচয় দিত । ১৫৭২ সালের এপ্রিলের ১ তারিখে গুইযেন বা বিদ্রোহীরা উপকূলীয় ছোট শহর ডেন ব্রিয়েল করায়ত্ব করে ফেলে। তাদের এই সফলতায় বিদ্রোহের দাবানল দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। শেষমেষ স্প্যানিশ সেনাপ্রধান বা দ্যা ডিউক অব অ্যালবা প্রতিরোধ করতে ব্যর্থ হন। সেই থেকে দিনের প্রচলন।

মুসলমানদের জন্য ট্র্যাজেডির?

বাংলাদেশে একটা প্রচলিত ধারণা এপ্রিল ফুলের সঙ্গে আসলে মুসলমানদের বোকা বানানোর ইতিহাস জড়িয়ে আছে।

অনেকেই মনে করেন ১৫শতকের শেষ দিকে স্পেনে মুসলিম শাসনের অবসান ঘটান রাজা ফার্দিনান্দ ও রানি ইসাবেলা। তারা স্পেনের মুসলিম অধ্যুষিত গ্রানাডায় হামলা করেন এবং পরাজিত অসংখ্য মুসলিম নারী, পুরুষ ও শিশুকে মসজিদে আটকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারেন। আর সেদিনটি ছিল পহেলা এপ্রিল।

কিন্তু এর কোন ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই বলছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান।

"এটি আমরাও শুনেছি এবং এটি একরকম আমাদের বিশ্বাসের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু আমি ইতিহাসের ছাত্র হিসেবে যখন স্পেনের ইতিহাস পড়েছি, দেখেছি যে সেসময় গ্রানাডার শাসক ছিলেন দ্বাদশ মোহাম্মদ। তার কাছ থেকেই ফার্দিনান্ড ও ইসাবেলা গ্রানাডা দখল করে নেন। আর এ ঘটনাটি ঘটেছিল জানুয়ারি মাসের ২ তারিখে। কোন কোন সূত্র বলে জানুয়ারি মাসের ১ তারিখ। এবং এটি দুই পক্ষের মধ্যে আনুষ্ঠনিক চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে হয়েছিল।"

তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক বলছেন, সেসময় ফার্দিনান্ড ও ইসাবেলা মুসলমানদের উপর নির্যাতন করেছে, ইহুদিদের উপরও করেছে, কিন্তু এপ্রিল ফুলের যে ট্র্যাজেডির কথা বলা হয় সেটার সাথে তার কোন সত্যতা পাওয়া যায় না।

"ইতিহাসে আমরা যে বইগুলো পড়েছি সেখানে কোথাও ঐ বর্ণনা পাইনি। আমাদের কাছে মনে হয় এই ঘটনা নিয়ে একটা মিথ তৈরী করা হয়েছে, যার সাথে কোন ঐতিহাসিক সংযোগ নেই।"

মি. ছিদ্দিক বলেন অন্যদিকে গূরুত্ব দিয়ে অবশ্য মুসলমানরা এটি উদযাপন নাও করতে পারে। কারণ ইসলাম ধর্ম মিথ্যা বলা, প্রতারিত করা বা কাউকে বোকা বানানো সমর্থন করে না।

মজা আনন্দের জন্য তো কোনো বিশেষ দিন আমাদের না হলেও চলে। সেখানে কোনো ছক কষে কাউকে ঘাবড়ে, কোনো কঠিন পরিস্থিতির মুখে ফেলে দিয়ে আনন্দ নেওয়াটা সুস্থ মানসিকতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে দিতেই পারে।

মজা করে কাউকে বোকা বানাতে চাইলে সেটা বিশেষ কোনোদিনেই করতে হবে এমনটা তো নয়। মজা করুন, তবে সেটা বোকা বানিয়ে নিজের বিমলানন্দ নেওয়ার মাধ্যমে নয়। কারণ আপনি যাকে বোকা বানাতে চান, সে যে আপনাকে কখনো বোকা বানানোর চেষ্টা করতে না, এটা ভাববেন না। আর এই বোকা বানাতে গিয়ে আপনার স্বভাব, সম্পর্কগুলো যে নষ্টের দিকে যেতে পারে, সেটাও তো আপনাকে ভাবতে হবে। 


এপ্রিল ফুল   পহেলা এপ্রিল  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড আর্টিকেল

রাতে মশা দিনে মাছি, এই নিয়ে ঢাকাবাসী

প্রকাশ: ০৯:১৪ এএম, ৩১ মার্চ, ২০২৪


Thumbnail

ঋতু বদলে শীত শেষে বসন্ত, আসছে গ্রীস্ম। ঋতু পরির্বতনের সাথে সাথে মশার প্রবল উপদ্রবে অতিষ্ঠ রাজধানীবাসী। মশা নিধনে বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করেও মিলছেনা স্বস্তি। কয়েল, স্প্রেসহ কোন কিছুতেই কমছে না মশার উৎপাত। যিদিও ঢাকা দুই সিটি কর্পোরেশনই মশা নিধনে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে তা কার্যক্রম করছে। তবুও নিধন কমছে না মশার। রাজধানীবাসীর জন্য আতংক হিসেবে যোগ হয়েছে মশার যন্ত্রণা। ঢাকার জলাশয় ও নালা নর্দমাগুলোয় জমে থাকা পানিতে মশার প্রজনন বেড়েছে কয়েকগুন। মশা নেই এমন জায়গা খুঁজে পাওয়া দুস্কর।

গবেষণা অনুযায়ী, গত চার মাসে রাজধানীতে কিউলেক্স মশার ঘনত্ব বেড়েছে। এ গবেষণার জন্য পাতা ফাঁদে জানুয়ারিতে প্রতিদিন গড়ে ৩০০ টিরও বেশি পূর্ণবয়স্ক মশা ধরা পড়েছে। যার মধ্যে ৯৯ শতাংশই কিউলেক্স মশা এবং বাকি ১ শতাংশ এডিস, অ্যানোফিলিস, আর্মিজেরিস ও ম্যানসোনিয়া।

মশাবাহিত বিভিন্ন রোগের মধ্যে ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়া উল্লেখযোগ্য। বর্তমানে সবচেয়ে আলোচিত রোগ হচ্ছে মাইক্রোসেফালি, যা মশাবাহিত জিকা ভাইরাসের কারণে হয়ে থাকে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই ভাইরাসের কারণে গর্ভের সন্তানের মস্তিষ্ক অপরিপক্ব থাকে এবং শিশুর মাথা স্বাভাবিকের চেয়ে আকারে ছোট হয়। এই রোগের জন্য ব্রাজিলে সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

সম্প্রতি দেশে জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। তবে মশাবাহিত বিভিন্ন রোগের আশঙ্কা থেকে জনজীবনকে রক্ষা করতে হলে সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদসহ বিভিন্ন স্থানীয় প্রশাসন মশা নিধনের কার্যকরী আরও পদক্ষেপ নেওয়া উচিৎ। মশার উপদ্রব ও জিকা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে জনজীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনবে বলে আশা করি।

অন্যদিকে, মাছির উপদ্রবে জরাজীর্ণ ঢাকার বসবাসরত কোটি মানুষের। সামনে আসছে বর্ষাকাল। প্রবল বৃষ্টি আর পানিতে টইটুম্বুর থাকবে বাড়ীর আঙ্গিনা রাস্তাঘাট কিংবা আশপাশের অনেক স্থান। বর্ষাকাল মানেই মশা-মাছির উপদ্রব। ছোঁয়াচে রোগের জাঁকিয়ে বসার আদর্শ সময় বর্ষাকাল। তাই এই সময় দরকার অতিরিক্ত একটু সতর্কতা, অতিরিক্ত কিছুটা সাবধানতা। খাবার খোলা রাখলে, বা বাড়িতে নোংরা আবর্জনা জমলে, বা খোলা ড্রেনে মাছির উপদ্রব বাড়ে। মাছি থেকে নানা রকম রোগও ছড়ায়। তাই বাড়ি থেকে মাছি তাড়াতে অবশ্যই করুন এই কাজগুলো।

বিজ্ঞান বলছে, মাছি আমরা যা জানি তার থেকেও অনেক বেশি রোগজীবাণু বহন করে। মাছির ডিএনএ বিশ্লেষণ করে।

আমেরিকান গবেষকরা বলছেন, ঘরের মাছি আর নীল মাছি মিলে ৬০০য়ের বেশি বিভিন্নধরনের রোগজীবাণু বহন করে। এর মধ্যে অনেক জীবাণু মানুষের শরীরে সংক্রমণের জন্য দায়ী, যার মধ্যে রয়েছে পেটের অসুখের জন্য দায়ী জীবাণু, রক্তে বিষক্রিয়া ঘটায় এমন জীবাণু এবং নিউমোনিয়ার জীবাণু।

পরীক্ষায় দেখা গেছে, মাছি এসব জীবাণু এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ছড়ায় তাদের পা আর ডানার মাধ্যমে। গবেষকরা বলছেন, মাছি তার প্রত্যেকটি পদচারণায় লাইভ জীবাণু ছড়াতে সক্ষম।

মাছির মাধ্যমে নানা রোগের সংক্রমণ বেড়ে যেতে পারে। কারণ এটি নর্দমায় বসে, ক্ষতিকর জীবাণু ও ব্যাকটেরিয়া বহণ করে। মাছি দূর করার জন্য বাজারে যেসব স্প্রে কিনতে পাওয়া যায়, সেগুলোতে রাসায়নিক পদার্থ থাকে। যা স্বাস্থ্যের জন্য আরো বেশি ক্ষতিকর।

মাছির উপদ্রব কমানো সহজ কাজ নয়। তবে তা কমানোর চেষ্টা তো করতেই হবে। স্বাস্থ্যক্ষাত ও সিটি কর্পোরেশনের সঠিক উদ্যেগে মাছির উপদ্রব কমানোটা অনকে সহজ হতে পারে। এছাড়াও বাসা বাড়িতে বসবাসরত মানুষজন নিজেরে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। মাছির খাবারের উৎসগুলো ফেলে দেওয়া, পোষা প্রাণীর নোংরা দূর করা, মাছি ঢোকার পথ বন্ধ করু, বিশেষ কিছু গাছ রোপণ করুন, এমনকি প্রাকৃতিক ফাঁদ পেতেও মানুষ সতর্ক থাকতে পারে।


মশা. মাছি   রাজধানী   জনজীবন   সিটি কর্পোরেশন  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড আর্টিকেল

সুশিক্ষা প্রয়োগেই হতে পারে প্রজন্মের বিকাশ

প্রকাশ: ০৮:০০ এএম, ০৯ মার্চ, ২০২৪


Thumbnail

বাংলাদেশের শিক্ষার সাথে সুশিক্ষিত কথাটা অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। নৈতিক গুণাবলী না থাকলে যেমন সুশিক্ষার আসল উদ্দেশ্য ব্যাহত হয় তেমনি শিক্ষা পরিণত হয় কুশিক্ষায়। প্রকৃত শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষের মধ্যে আচরণগত পরিবর্তন, মনুষ্যত্ববোধ জাগ্রত করা কিংবা সুনাগরিকে পরিণীত হওয়া। যা চলামান জীবনের প্রতিফলন হয়ে দেশ ও জাতীর উন্নতিতে অবদান রাখবে। তাই শিক্ষিত হওয়ার চেয়ে  সুশিক্ষিত হওয়াটাই গুরুত্বপূর্ণ।

সুশিক্ষিত একজন মানুষের মধ্যে পরিপূর্ণ জ্ঞান থাকবে। মনকে সুন্দর করবে। মানসিকতাকে পরিপূর্ণ করবে মানবিকতায়। অন্ধকার থেকে আলোতে নিয়ে আসবে। এক কথায় প্রজন্মকে পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবে। আর তাই শিক্ষাকে পর্যবসিত করতে হবে সুশিক্ষায়।

 সুশিক্ষার অর্থ হচ্ছে শিক্ষার এমন এক অবস্থা, যে শিক্ষার্থীদের সুনাগরিক হিসাবে গড়ে তোলে। একজন শিক্ষার্থী প্রকৃত মানুষ হিসাবে গড়ে ওঠে সুশিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে।

শিক্ষিত সমাজে অনেক ব্যক্তিই প্রতিনিয়ত হাজারও জঘন্য ঘটনার জন্ম দিচ্ছে। আর নিজেকে শিক্ষিত বলে দাবি করছে একদল স্বার্থপর শিক্ষিত মানুষ। যাদের কাছে জিম্মি দেশের নানান শ্রেণী পেশার মানুষ,বৃদ্ধ,শিশু কিংবা নারীরা।

শিক্ষিতের ব্যানার প্রয়োগ করে হাসিল করছে তাদের নিজস্ব স্বার্থ। যা কিনা দেশ জাতীর সুশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ায় বিঘ্নিত হচ্ছে। এসব নামধারী শিক্ষিত মানুষদের যেন দেখার কেউ নেই।

দেশের বর্তমান ঘটনাবহুল পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, বাবা তার মেয়েকে ধর্ষণ করেছে, আবার তাকে পুলিশ গ্রেফতারও করেছে, শিক্ষক ছাত্রীকে ধর্ষণ করেছে। আবার ছাত্র শিক্ষককে ধর্ষণ করছে তাহলে, শিক্ষিত সমাজে শিক্ষিত ব্যক্তির মানসিকতা কোথায় গিয়ে দাড়িয়েছে। যেখানে বর্তমান সমাজে বাবার কাছেই তার মেয়ে নিরাপদে থাকে না। এটাই কি তাহলে শিক্ষা?

যেখানে বাবা মায়ের কলিজার টুকরা শিক্ষিত সন্তান তার পিতা-মাতাকে রেখে আসে বৃদ্ধাশ্রমে।

শিক্ষা নামক শব্দকে ব্যবহার করে শিক্ষিত নামক লোগো লাগিয়ে ঘুরছে কিছু শিক্ষিত মহল। আর এর মারাত্মক ফলাফল হচ্ছে এসব ঘটনাগুলো। সমাজে সন্তানকে বাবা-মা বড় করছেন। শিক্ষার জন্য মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। কিন্তু সন্তান তার বাবা-মাকে ভরণপোষণ দিচ্ছেন না। তাহলে এখানে আমাদের শিক্ষার আলো কোথায় গেল?

যদি শিক্ষার বদলে মানুষ সুশিক্ষা অর্জন করত, তাহলে হয়তো নারীরা লাঞ্ছিত হতনা, হতনা বিবাহ বিচ্ছেদ, পরকীয়া, শিশু ধর্ষণ, কিংবা পরম মমতাময়ী মা কে থাকতে হত না বৃদ্ধাশ্রমে।

তবে, দেশের বড় বড় দায়িত্বতে থাকা শিক্ষিত ও সুশিক্ষিত দায়িত্ববান ব্যক্তিরা, কিংবা রাজনীতি, সমাজ কিংবা কোন নাম করা প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্বে থাকা ব্যক্তিরা তাদের সুশিক্ষিত মনোভাবে যদি দেশের তরুন প্রজন্মকে শিক্ষিত নয়, বরং সুশিক্ষিত করে গড়ে তোলার জন্য ভূমিকা রাখেন তাহলে হয়ত বাংলাদেশের পরবর্তী প্রজন্মে মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটিয়ে বিশ্বে বাংলাদেশের নাম প্রথম সারিতে নিয়ে যাবে।


সুশিক্ষা   প্রজন্ম   বিকাশ   তরুণ তরুণী   শিক্ষা  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন