নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ০৩ অগাস্ট, ২০২০
শোকের মাসে স্বাভাবিক কারণেই বিচ্ছিন্ন অনেক ঘটনা মনে পড়ছে। মনটা খুব বিক্ষুব্ধ হয়ে আছে। আর মাত্র কয়েকদিন পরেই ১৫ আগস্ট, জাতীয় শোক দিবস। যারা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ভালোবাসে, সম্মান করে এবং যারা মনে করে যে, বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ, তাদের মনে হয়তো নানা ধরনের চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। আমিও এর ব্যতিক্রম নই।
আমার বারবার একটা বিষয় নিয়েই ভাবছি যে, ১৫ আগস্ট যে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছিল তার পেছনে যারা ছিল, তাদের মুখোশটা কেন খুলে দেওয়া হচ্ছে না? জাতির পিতার কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার নিশ্চিত করেছেন। যারা এখনও সাজা এড়িয়ে দেশের বাইরে অবস্থান করছে, সেখান থেকে তাদের নিয়ে আসার প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। নিশ্চয়ই তারাও শাস্তি পাবে। কিন্তু যে বিষয়টি নিয়ে আমার মন বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে, সেটা হলো যারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরিবেশ যারা সৃষ্টি করলো, যারা বঙ্গবন্ধু হত্যার নেপথ্য কারিগর সেই ব্যক্তিরা ধরা ছোঁয়ার বাইরেই থেকে গেল। শুধু যারা গুলিটা চালিয়েছে বা সাধারণভাবে যারা ষড়যন্ত্র করেছে বলে আমরা জেনেছি, তাদেরকে সাধারণ নিয়মে বিভিন্ন সাক্ষী সাবুদ নিয়ে অনেক কঠিন পথে বিচার করা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু ষড়যন্ত্রের পেছনে ছিল, তাদেরকে এই সাধারণ আইনের মাধ্যমে যেভাবে বিচার করা হলে তারা ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকবে।
আমি নিজে মনে করি যে, এই নেপথ্যের ষড়যন্ত্রকারীদের বিচারের জন্য একটি কমিটি বা কমিশন করা দরকার। এটাকে তদন্ত কমিটি বা ফ্যাক্ট ফাইন্ডিংই কমিশন যেটাই বলি না কেন এই কমিটির মূল দায়িত্ব হবে, বিভিন্ন স্তরের লোক নিয়ে তদন্ত করা এবং কারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পেছনে ছিল তা জাতির সামনে উন্মোচন করা। এই কাজে ঐতিহাসিক মুনতাসসীর মামুন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হারুন অর রশিদ নেতৃত্ব দিতে পারেন। এর সাথে সাবেক বিচারপতি মানিক সাহেব, যিনি বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের সময় ছিলেন, তিনিও থাকতে পারেন। এদের সাথে অন্যান্য এজেন্সি যেমন এনএসআই আছে, ডিবি আছে, তাদের সদস্যদের নেওয়া যেতে পারে। তারা সবাই মিলে বিভিন্নভাবে এই ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং করতে পারবেন।
একটি জিনিস আমার কাছে পরিষ্কার যে, বঙ্গবন্ধুর হত্যার পেছনে আসল ষড়যন্ত্রকারী অথবা মূল কাজটি যারা করেছিল, তারা হচ্ছে আমলারা। আমার বক্তব্যের প্রমাণ স্বরূপ আমি হাজির করতে চাই যে, মাহাবুবুল আলম চাষী একজন ঝানু আমলা ছিল। এই মাহাবুবুল আলম চাষী পেছন থেকে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার জন্য সর্বোতভাবে চেষ্টা করেছে। আমার ধারণা, বিপথগামী কিছু আর্মি, রাজনৈতিক নেতা, আমলাসহ বিভিন্ন মহলের বিভিন্নজনকে সে এই হত্যাকাণ্ড ঘটাতে উদ্বুদ্ধ করেছে এবং সংঘবদ্ধ করেছে। তার সাথে একজন গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী আমলা ছিল হোসেন আলী। যিনি ছিলেন কলকাতায় মুক্তিযুদ্ধকালীন ডেপুটি হাই কমিশনার। সবসময় আমি দেখেছি যেকোনো ষড়যন্ত্র থেকে শুরু করে সবকিছুতেই আমলারা এমনভাবে থাকে যে ধরা ছোঁয়ার ভেতরে তারা থাকে না। উঁচুদরের আমলারা এই কাজগুলো করেন। এদেরকে যদি ধরা হয় তাহলেই বের হবে জিয়াউর রহমানসহ অন্যরা ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডে কে কি ভূমিকা পালন করেছিল। মাহবুবুল আলম চাষী যে খুনী মোশতাককে উদ্বুদ্ধ করেছে এর কিছু কিছু ইঙ্গিত বিভিন্ন জন দিয়েছে। এভাবে অনেকেই ওই ষড়যন্ত্রের অংশ ছিলেন। যখনই দেশকে সংবিধান থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়, তখন মূল নায়ক থাকে এই সিভিল আমলারা। কিন্তু এরা কখনই সামনে আসে না। যারা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকে তারাই এই কলকাঠিটা নাড়ে।
একটা গানের কথা আছে যে, ‘তোর মিষ্টি কথায় ভুলি না’। কিন্তু আমাদের সবার চরিত্র হচ্ছে এর উল্টোটা। আমরা সবাই কম বেশি মিষ্টি কথায় ভুলি। আমলাদের কথাবার্তা এত মিষ্টি এবং এত ভালো যে সবাই তাদের দ্বারা ভুল পথে চলে। ফলে এই ষড়যন্ত্রকারীরা সফল হয়।
আমরা অনেকেই পত্রিকায় দেখি রাজণীতিবিদরা বিদেশে বাড়ি গাড়ি করেছে। কিন্তু আমরা যদি একটু লক্ষ্য করি তাহলে দেখতে পাবো যে, বাস্তবক্ষেত্রে রাজনীতিবিদদের কারোরই সেভাবে বাড়ি ঘর বিদেশে নেই। যাদের বাড়ি ঘর আছে, তারা উঁচু পর্যায়ের আমলা। যারা মোটামুটি দেশে একা বসে কাজ করেন। আর তাদের পরিবারকে পাঠিয়ে দেন বিদেশে। তাদের বাড়িঘর ছেলেমেয়ে সব বিদেশে। তারা যে বেতন পায়, যেই বেতনে অত দামি বাড়িই বা কেনে কীভাব আর ছেলে মেয়েই বা কীভাবে চলে। আমার মনে হয় এগুলো ভালো করে দেখা উচিৎ। তাহলে অন্তত পক্ষে ভবিষ্যতে আমাদের দেশ বিভিন্ন বিপদ থেকে রক্ষা পাবে।
আমি মনে করি যে, বঙ্গবন্ধুর আসল খুনি যারা তাদের খুজে বের করতে হবে। হয়তো অনেকে মারা গেছে। কিন্তু জীবিতও কিন্তু আছে, যারা সেদিন সমস্ত ষড়যন্ত্রের পেছনে ছিল। এই ধরনের একটি গবেষণা বা তদন্ত যদি করা হয়, তাহলেই বঙ্গবন্ধুর আসল খুনিদের পরিচয় দেশবাসী জানতে পারবে। নাহলে শুধু অল্প কয়েকজনের নামই জাতি জানবে কিন্তু ইতিহাসে আসল খুনিরা বঙ্গবন্ধু হত্যার ইতিহাস থেকে বাইরে থেকে যাবে। এটা আমরা কেউ চাই না। আমাদের আকংক্ষা হচ্ছে, প্রকৃত যারা এই হত্যাযজ্ঞের পেছনে ছিল তাদের চেনা। যেমন জাসদ বঙ্গবন্ধু হত্যায় সরাসরি জড়িত ছিল না। কিন্তু জনগণ যেন বঙ্গবন্ধু নেতৃত্বাধীন সরকারকে ভুল বোঝে সে রকম একটা পরিবেশ তারা সৃষ্টি করেছিল। এই পার্থক্যটা আমাদের বোঝার দরকার আছে। এজন্যই আমাদের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিশন দরকার। প্রকৃত সত্য জানতে এর বিকল্প নেই।
লেখক: প্রধানমন্ত্রীর সাবেক স্বাস্থ্য বিষয়ক উপদেষ্টা, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিকল্প নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদের (বিএমআরসি) চেয়ারম্যান।
মন্তব্য করুন
দেখতে দেখতে স্বাধীন বাংলাদেশের বয়স তিপান্ন
বছর পার করলো স্বাধীন বাংলাদেশ। এই দীর্ঘ সময়ে দেশে ঘটে গেছে নানা ঘটনা দূর্ঘটনা।
আছে সাফল্যের কথা সাথে আছে বেদনার উপাখ্যান। একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে যখন জাতির পিতা
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পুনর্গঠনে ব্যস্ত ঠিক তখনই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে একদল
ঘাতক তাঁর ধানমন্ডির নিজ বাসভবনে তাঁকে সপরিবারে হত্যা করে। ঘটনাচক্রে বেঁচে যান বিদেশে
অবস্থানরত তাঁর দুই কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা।
শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা তখন ছুটি কাটাতে শেখ হাসিনার স্বামী ড. ওয়াজেদ মিয়াসহ গিয়েছিলেন
বেলজিয়ামে। ড. ওয়াজেদ মিয়ার কর্মস্থল ছিল জার্মানি। উঠেছিলেন বেলজিয়ামের রাষ্ট্রদূত
সানাউল হকের বাসায়। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করার সংবাদটি বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা
ও ড. ওয়াজেদ জার্মানিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হুমায়ূন রশিদের মারফত পান।
এমন একটি ভয়াবহ সংবাদ তাঁদের কাছে শুধু চরম একটি বিয়োগান্তাক ঘটনাই ছিল না, অবিশ্বাস্যও
ছিল। বেলজিয়ামে অবস্থানকালে সবচেয়ে অমানবিক আচরণটি করেছিলেন রাষ্ট্রদূত সানাউল হক।
তিনি জার্মানিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীকে ফোনে বলেন, তিনি যেন
বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের তাঁর বাড়ি থেকে সত্বর নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন। অনেকটা
জোরপূর্বক বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার মতোই। দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা শেখ হাসিনা ও
তাঁর পরিবারকে বেলজিয়াম সীমান্তে পৌঁছে দিতে রাজি হন। এক রাতেই একটি দেশের জন্মদাতার
পরিবারের একান্ত ঘরের মানুষ হয়ে যান গৃহহীন। এক কথায় উদ্ভাস্তু।
জার্মানিতে অবস্থানকালে হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী
জার্মানিতে দায়িত্বরত ভারতের রাষ্ট্রদূত ওয়াই কে পুরির সহায়তায় ভারতের তৎকালীন
প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে যোগাযোগ করে শেখ হাসিনাকে ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয়
দিতে অনুরোধ করলে ইন্দিরা গান্ধী তাতক্ষণিক রাজি হয়ে যান। আগস্টের ২১ তারিখ শেখ হাসিনা
দিল্লির উদ্দেশে জার্মানি ত্যাগ করেন। ইন্দিরা গান্ধী তাঁদের মাতৃস্নেহে গ্রহণ করেন।
নিরাপত্তা বিবেচনা করে তাঁদের নাম বদলে নাম রাখা হয় মি. ও মিসেস মজুমদার। ইন্দিরা
গান্ধী দিল্লিতে ড. ওয়াজেদ মিয়ার জন্য একটি গবেষকের চাকরিরও ব্যবস্থা করে দেন। শেখ
হসিনা প্রথমবারের মতো ইন্দিরা গান্ধীর কাছেই ঢাকার পুরো ঘটনার বর্ণনা শুনতে পান।
শেখ হাসিনা যখন দিল্লিতে তখন জেনারেল জিয়া
বাংলাদেশকে মোটামুটি মিনি পাকিস্তানে রূপান্তর করে ফেলেছেন। শাহ আজিজের মতো চিহ্নিত
রাজাকারকে দেশের প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছেন। ঘাতক আবদুল আলিমকে বানিয়েছেন মন্ত্রীসভার
সদস্য। জামায়াতের প্রধান গোলাম আযমকে বাংলাদেশে আসতে দিয়েছেন। বাহাত্তরের সংবিধানকে
কাটাছেঁড়া করে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোকে রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর
হত্যাকারীদের বিচার করা যাবে না বলে একটি ধারা সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করে তাদের বিভিন্ন
দূতাবাসে উচ্চ পদে পদায়ন করেছেন। পাকিস্তানি আদলে বাংলাদেশ জিন্দাবাদ স্লোগান চালু
করেছেন। বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে ১১ হাজার পাকিস্তানি দালাল রাজাকার—আলবদর বিচারের অপেক্ষায়
কারাগারে ছিল। জিয়া তাদের মুক্ত করে দেন। বাতিল করেন দালাল আইন। যে দেশ প্রতিষ্ঠা
করার জন্য ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হয়েছে, তাদের আত্মত্যাগকে জিয়া পদদলিত করেছেন।
জিয়া ক্ষমতা গ্রহণ করেই আওয়ামী লীগের সব
শীর্ষস্থানীয় নেতাকর্মীকে জেলে পুরেন। দল হিসেবে আওয়ামী লীগ অনেকটা ছত্রভঙ্গ। এই
সময় দলের হাল ধরেছিলেন শহীদ তাজউদ্দীনের স্ত্রী বেগম জোহরা তাজউদ্দীন। সঙ্গে ছিলেন
দলের কিছু তরুণ নেতা। কিন্তু সবাই জানতেন দলকে নবজীবন দেওয়ার জন্য প্রয়োজন বঙ্গবন্ধুর
একজন উত্তরাধিকার। ১৯৮১ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে ড.
কামাল হোসেন দলের সভাপতি হিসেবে শেখ হাসিনার নাম প্রস্তাব করলে তা সর্বসম্মতক্রমে গৃহীত
হয়। দলের সিনিয়র কয়েকজন নেতা দিল্লি গিয়ে শেখ হাসিনাকে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরিয়ে
আনেন। শেখ হাসিন দেশ ফিরবেন এই সংবাদ জানাজানি হয়ে গেলে জিয়ার পরিকল্পনা অনুযায়ি
গঠিত হয় ‘শেখ হাসিনা স্বদেশ প্রত্যাবর্তন প্রতিরোধ কমিটি’। নেতেৃত্বে মির্জা গোলাম
হাফিজ, জিয়ার আমলের সংসদের স্পিকার। বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশে ফিরবেন এই সংবাদে দেশের
মানুষ এমন উজ্জিবিত হয়ে উঠেছিলেন যে শেষ পর্যন্ত মির্জা গোলাম হাফিজ তার কর্মসূচী
বতিল করে ঘরে ঢুকে যান।
যেদিন শেখ হাসিনা দেশে ফিরেন, তখন তা বঙ্গবন্ধু
আর বাঙালির বাংলাদেশ ছিল না। যখন ফিরলেন তখন তা পরিণত হয়ে গিয়েছিল জেনারেল জিয়া
আর পাকিস্তানি প্রেতাত্মাদের বাংলাদেশ। যে শেখ হাসিনার ১৯৭৫ সালে বিদেশ যাওয়ার সময়
সব কিছু ছিল, সেই শেখ হাসিনা যখন স্বদেশ ফিরলেন তখন তাঁর কিছু নেই। তিনি সত্যিকার অর্থেই
একজন সর্বহারা। এ রকম পরিস্থিতিতে যেকোনো মানুষের মানসিক বিপর্যয় ঘটতে পারে। সম্পূর্ণরূপে
ভেঙে পরাটা স্বাভাবিক। প্রাথমিক ধাক্কাটা সামলে উঠে শেখ হাসিনা মনোযোগ দিলেন আওয়ামী
লীগ পুনর্গঠনে। জন্মের পর থেকে আওয়ামী লীগের প্রাণশক্তি দলের তৃণমূল নেতাকর্মীরা।
দলটি একাধিকবার ভাঙনের মুখে পড়েছে। নিষিদ্ধ হয়েছে কয়েকবার। কিন্তু আবার সমহিমায়
ফিরে এসেছে নতুন অবয়বে আর শক্তিতে। যার পিছনে ছিল দলের তৃণমূল নেতা কর্মীদের আত্মত্যাগ
।
জিয়ার বাংলাদেশে শেখ হাসিনার থাকার জায়গাও
নেই। উঠলেন এক ফুফুর বাড়িতে। স্বজনদের জন্য দোয়া করতে যেতে চাইলেন ধানমণ্ডি বত্রিশ
নম্বরের নিজ বাড়িতে। অনুমতি মিলল না। সামনের রাস্তায় বসে দলের কয়েকজন নেতাকর্মীকে
নিয়ে দোয়া পড়লেন। কাকতালীয়ভাবে জিয়া এক সামরিক অভ্যুত্থানে চট্টগ্রামে ৩১ মে ১৯৮১
সালে নিহত হন। তারপর জিয়ার উপরাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তারের হাত ঘুরে ক্ষমতা
দখল করলেন জেনারেল এরশাদ। তিনিও তাঁর পূর্বসূরির রেখে যাওয়া বাংলাদেশকে মিনি পাকিস্তানে
রূপান্তর করার কাজে মনোনিবেশ করার দিকে নজর দিলেন। জিয়া স্বাধীনতাবিরোধীদের পুনর্বাসন
করে বাংলাদেশকে মিনি পাকিস্তান বানানোর কাজ সমাপ্ত করেছিলেন আর স্বৈরশাসক এরশাদ সংবিধানে
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম যোগ করে বাংলাদেশকে একটি সাম্প্রদায়িক রাষ্টে্র পরিণত করেন। অবস্য
সম্প্রতি দেশের উচ্চ আদালত সংবিধানে এই অন্তর্ভূক্তিকে বহাল রাখার পক্ষে মত দিয়েছে।
আশির দশকের মাঝামাঝি দেশের ছাত্রসমাজ প্রথমে
শুরু করল এরশাদবিরোধী আন্দোলন। কিছুদিনের মধ্যে তাতে যোগ দিল বিভিন্ন রাজনৈতিক দল আর
দেশের শ্রমিক সংগঠনগুলো। কিন্তু এরশাদের চাতুর্য আর রাষ্ট্রীয় পেশিশক্তির সঙ্গে তারা
ঠিক পেরে উঠছিল না। তখনো আওয়ামী লীগ দল গোছাতে ব্যস্ত। দলের অনেকেই এরশাদের সঙ্গে
আগেই হাত মিলিয়েছে। জিয়ার সঙ্গে চলে গিয়েছিল বেশ কজন। কিন্তু অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা
গেছে, আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ করা ছাড়া এই দেশে কোনো গণ—আন্দোলন সফল হয়নি। কিছুদিন
পরই শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণের পরে এই গণ—আন্দোলন সফল হয় এবং
১৯৯০ সালের ডিসেম্বর মাসে এরশাদ একটি অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য
হন। এই সরকারের একমাত্র কাজ ছিল একটি অবাধ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা আর নির্বাচিত সরকারের
কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা।
১৯৯১ সালের নির্বাচনে ভুল নির্বাচনী কৌশল,
প্রতিপক্ষকে সঠিক মূল্যায়ন না করা, জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির গোপনে নির্বাচনী আঁতাত
আর শেখ হসিনার নেতৃত্বের জোট থেকে আলাদা হয়ে বাকশালের পৃথক প্রার্থী দেওয়ার কারণে
সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয় লাভ করতে ব্যর্থ হয়। এই পরাজয়ে অনেকের মনোবল ভেঙে
গেলেও শেখ হাসিনা তাঁর পূর্বের অভিজ্ঞতা ‘আবার ফিরে আসিব’র মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে শক্ত
হাতে দলকে পুনরুজ্জীবিত করার দিকে মনোনিবেশ করেন। ১৯৯১ সালে সরকার গঠন করেন খালেদা
জিয়া। এই সরকারের একমাত্র উল্লেখযোগ্য অর্জন ছিল দেশের শাসনব্যবস্থা রাষ্ট্রপতি পদ্ধতি
থেকে সংসদীয় পদ্ধতিতে ফিরে যেতে সংবিধান সংশোধন করা।
১৯৯৬ সালের নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে
আওয়ামী লীগ দীর্ঘ ২১ বছর পর আবার ক্ষমতায় ফিরে আসে। তবে নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা
না পাওয়ায় সরকার গঠন করতে তাদের প্রয়োজন হয় জাসদ (রব) আর জাতীয় পার্টির সমর্থন।
সরকারের নাম হয় মহাজোট সরকার। উত্তরাধিকারসূত্রে শেখ হাসিনা পান একটি আওয়ামী লীগবিরোধী
প্রশাসন আর খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে মারাত্মক প্রতিক্রিয়াশীল বিরোধী দল, যারা সুযোগ
পেলেই সংসদে চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করত আর নানা অজুহাতে হরতাল ডেকে দেশকে অচল করে দেওয়ার
চেষ্টা করত। বিষয়টা এমন হয়ে দাঁড়াল যে ‘ক্ষমতায় নেই কেন দেশবাসী জবাব চাই’র মতো
অবস্থা। দেশ শাসনে পদে পদে বাধা। শেখ হাসিনার এই মেয়াদে তিনি বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের
সদস্যদের হত্যাকারীদের বিচার না করার জন্য জিয়া যে ইনডেমনিটি আইন সংবিধানে সংযোজন
করেছিলেন তা সংসদে বাতিল করে উন্মুক্ত বিচারিক আদালতে পঁচাত্তরের খুনিদের বিচার শুরু
করতে পেরেছিলেন, যা ২০০১ সালে খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে বন্ধ করে দিয়েছিলেন।
অনেক ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে শেখ হাসিনা ২০০৯
সাল থেকে বর্তমানে টানা চারবারের প্রধানমন্ত্রী। যে শেখ হসিনা ১৭ মে ১৯৮১ সালে নিজের
জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দীর্ঘ ছয় বছর পর দেশে ফিরেছিলেন, প্রাথমিক ধাক্কা সামলে উঠে যে
শেখ হাসিনা বাবার গড়ে তোলা দলটিকে নিজের মেধা, ও
মননে গড়ে তুলেছেন, আর একাধিকবার জীবন—মৃত্যুর সন্ধিক্ষণ থেকে ফিরে এসেছেন,
সেই শেখ হাসিনা এখন শুধু বাংলা নামের দেশটির একজন প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি বিশ্বনন্দিত
একজন রাষ্ট্রনায়কও বটে। তাঁর টানা চার দফার
মেয়াদে সফলতার সঙ্গে তিনি সামলেছেন একাধিক প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বিডিআর বিদ্রোহ আর খালেদা
জিয়া পরিচালিত ২০১৩—১৪ সালের পেট্রলবোমার সন্ত্রাস। দেশে ফেরার পর হতে শেখ হাসিনাকে
হত্যা করার চেষ্টা হয়েছে একাধিকবার যার সব থেকে ভয়ঙ্করটা ছিল ২০০৪ সালে তার জনসভাস্থলে
বেগম জিয়ার পূত্র তারেক রহমানের পরিকল্পনা ও নেতৃত্বে গ্রেনেড হামলা। আল্লাহর রহমতে
সেই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতে হতে সেই যাত্রায় শেখ হাসিনা বেঁচে গিয়েছিলেন। বলতে দ্বিধা নেই এসব দুর্যোগ
মোকাবেলায় অনেক সময় তিনি দলের অনেক নেতার সহায়তাও পাননি। শেখ হাসিনা তাঁর পিতার
যোগ্য উত্তরাধিকার। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা যখন সরকার গঠন করেন, তখন বাংলাদেশ ছিল একটি
নিম্ন আয়ের দেশ। ২০০৯ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ছিল চার শ ডলারের নিচে আর বৈদেশিক
মুদ্রার রিজার্ভ ছিল সাড়ে তিন বিলিয়ন ডলার। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সেই বাংলাদেশে বর্তমান
মাথাপিছু আয় দাঁড়িয়েছে ২৮০০ ডলারের বেশী আর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বর্তমনে সাত
গুন। কৃষিতে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ। বিশ্বব্যাংক যখন পদ্মা সেতুর অর্থায়ন নিয়ে
তাদের ষড়যন্ত্রতত্তে্ব লিপ্ত, তখন এই শেখ হাসিনাই সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন পদ্মা
সেতু নিজেদের অর্থেই হবে। অনেকের সে কী ঠাট্টা! আজ সেই পদ্মা সেতু বাস্তবে পরিণত হয়েছে।
সামনের বছর তা চালু হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। শেখ হাসিনার পক্ষেই বলা সম্ভব এখন থেকে
কোনো বৈদেশিক ঋণ বা সহায়তা ছাড়া বাংলাদেশ তার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। কর্ণফুলী
নদীর নিচ দিয়ে তৈরি হলো সুড়ঙ্গপথ, যা ছিল মানুষের কল্পনারও বাইরে। সাড়ে তিন হাজার
মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা নিয়ে ২০০৯ সালে যাত্রা শুরু। সেই বাংলাদেশ এখন ২৭
হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সক্ষম। রূপপুরে নির্মিত হচ্ছে পারমাণবিক বিদ্যুৎ
কেন্দ্র রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরূ হয়েছে। কিছু
দিনের মধ্যে বাণিজ্যিক ভাবে সচল হবে রূপপুর। বাংলাদেশের উপগহ্র মহাকাশে ঘুরছে। আগামী
তিন বছরের মধ্যে মহাকশে যাবে বাংলাদেশের দ্বিতীয় উপগ্রহ। জাতিসংঘ স্বীকৃতি দিয়েছে
বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের সিঁড়ি অতিক্রম করার পথে। ২০৪১ সাল নাগাদ দেশটি উন্নত বিশে^র
তালিকায় উঠে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। শেখ হাসিনার টানা চার মেয়দে ক্ষমতায় থাকার
সুবাদে বাংলাদেশ এখন বিশে^ তেত্রিশতম অর্থনীতির দেশ। গত ১৫ বছরে বদলে গেছে বাংলাদেশ।
একজীবনে একজন মানুষের পক্ষে যা করা সম্ভব,
তা শেখ হাসিনা করে ফেলেছেন যদিও করতে পারতেন আরো অনেক কিছু। তাঁর সামনে সব সময় পথ
আগলে দাঁড়িছে দেশের সবজান্ত সর্বনাশা আমলাতন্ত্র ও কিছু চাটুকার । তাঁর সামনে এই মুহূর্তে
কয়েকটি বড় চ্যালেঞ্জ আছে। প্রথম চ্যালেঞ্জ দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করা। এই ভয়াবহ রোগটি
দেশের প্রশাসন যন্ত্রকে গিলে খেয়েছে। এটি
করতে হলে যথাযথ মানুষকে যথাযথ জায়গায় পদায়ন করতে হবে। দেশটিকে অর্ধশিক্ষিত মোল্লাদের
হাত থেকে উদ্ধার করতে হবে। তার জন্য ধর্মীয় শিক্ষাসহ সব শিক্ষাব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন
করা দরকার।
শেখ হাসিনা এই দেশকে বিশ্বদরবারে একটি পরিচিতি
দিয়েছেন। তিনি বাংলাদেশের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর। শেখ হাসিনা আরো দীর্ঘায়ু হোন এই
প্রার্থনা করি। দেশকে দিয়েছেন তিনি অনেক কিছু। যা দিয়েছেন তার চেয়ে বেশী কিছু চাওয়াটা
হয়তো সমীচিন হবে না। কিন্তু বাস্তবতা বিবেচনা করে চাওয়ারমতো এখন আর কাওকে দেখা যাচ্ছে
না। ১৯৮১ সালের ১৭ মে শেখ হাসিনা নয়, দেশে ফিরেছিল বাংলাদেশ। ৭ মে ২০০৭ সালে সেনাসমর্থিত
ফখরুদ্দীন সরকারের বাধা উপেক্ষা করে শেখ হাসিনা যখন বিদেশ থেকে দেশে ফিরেছিলেন, সেদিন
গণতন্ত্র দেশে ফিরেছিল। তাঁর শাসনামলের সব অর্জন ধরে রাখতে হলে প্রয়োজন যোগ্য মানুষের
যথার্থ মূল্যায়ন। আর জরুরী ভিত্তিতে দেশকে আমলাতন্ত্রের সর্বনাশা অভিশাপ হতে মুক্ত
করা, দূর্নীতেকে সমূলে উৎপাটন করা।
জয়তু শেখ হাসিনা। জয়তু বাংলাদেশ।
লেখক: সাবেক চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয়
মঞ্জুরী কমিশন । ১৫ মে ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৮:১৫ এএম, ১৬ মে, ২০২৪
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৮:১২ এএম, ১৬ মে, ২০২৪
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
দেখতে দেখতে স্বাধীন বাংলাদেশের বয়স তিপান্ন বছর পার করলো স্বাধীন বাংলাদেশ। এই দীর্ঘ সময়ে দেশে ঘটে গেছে নানা ঘটনা দূর্ঘটনা। আছে সাফল্যের কথা সাথে আছে বেদনার উপাখ্যান। একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে যখন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পুনর্গঠনে ব্যস্ত ঠিক তখনই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে একদল ঘাতক তাঁর ধানমন্ডির নিজ বাসভবনে তাঁকে সপরিবারে হত্যা করে।
সবার জন্য স্বাস্থ্য নিশ্চিতে বিশেষ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর দোরগোড়ায় স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দেয়ার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিক অভাবনীয়, অনন্য এবং যুগান্তকারী একটি মডেল। শিশু স্বাস্থ্য, মাতৃ স্বাস্থ্য এবং কিশোরীদের স্বাস্থ্য পরিসেবা প্রদানের ক্ষেত্রে এটি একটি অসাধারণ উদ্যোগ। নবজাতকের মৃত্যু, মাতৃ মৃত্যু কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিক মডেল আজ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ অনুসরণ শুরু করেছে। গত বছর ১৭ মে কমিউনিটি ক্লিনিক ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিসিয়েটিভ’ হিসেবে জাতিসংঘের স্বীকৃতি পায়। ‘কমিউনিটি ক্লিনিক’ সারা বিশ্বের প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা প্রত্যাশী জনগণের জন্য ‘আলোক বর্তিকা’।
আজকে আমরা ১৭ মে নিয়ে কথা বলছি। যেদিন বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেছিলেন। আবার গত বছর এই দিনে তাঁর চিন্তা প্রসূত কমিউনিটি ক্লিনিককে জাতিসংঘ ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। আজকে আমরা যে ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বলছি, উন্নয়নশীল বাংলাদেশের কথা বলছি, যে স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন আমরা দেখছি, একদিন উন্নত বাংলাদেশ হব বলে স্বপ্ন দেখছি এই সবকিছু শেখ হাসিনার স্বপ্ন, শেখ হাসিনার ইনিশিয়েটিভ। বঙ্গবন্ধু স্বপ্নের বাংলাদেশকে এগিয়ে নিচ্ছেন তাঁরই সুযোগ্য কন্যা আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
১৭৮১ সালে পলাশি যুদ্ধে ইতিহাসের ঘৃণিত সেনাপতি মির্জাফরের বিশ্বাসঘাতকতায় নবাব সিরাজ উদ্দৌলার বিদায়ের মধ্য দিয়ে ২০০ বছরের গোলামী আমাদের ললাটে এসেছিল। ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ স্বাধীন হলেও বাঙালী এবং বাংলাদেশ স্বাধীনতা পায়নি। যার পটভূমিতে বীরদর্পে আবির্ভূত হন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭১ থেকে ৭৫’ বাঙালি জাতির ভাগ্যাকাশে স্বাধীনতার লাল পতাকা উড়েছিল বাঙালী আশায় বুক বেধেছিল।
পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বিয়োগান্তের ঘটনায় জাতি ছিল দিক নির্দেশনাহীন। নারকীয় এই ঘটনায় জনগণ হয়ে পড়েন দিশেহারা। প্রতিবাদ, প্রতিরোধ করার কোন শক্তি সাহস ছিল না। দলের অনেক বড় বড় নেতাও ছিলেন কিংকর্তব্যবিমূঢ়। ধানমন্ডির ৩২ বাড়ি ছিল কবরের নীরবতা। সমগ্র জাতি তখন অন্ধকারে। সামরিক বুটে পিষ্ঠ গণতন্ত্র। নির্বাসনে সংবিধান আর মানুষের মৌলিক অধিকার। বাক স্বাধীনতা বলতে কিছুই ছিল না। এমনকি বঙ্গবন্ধু নাম উচ্চারণ ছিল নিষিদ্ধ।