নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:৫৯ পিএম, ০৮ অগাস্ট, ২০২০
রাজনীতিতে তিনি বড় তারকা নন। বরং শেখ হাসিনার নিজস্ব সহযোদ্ধা হিসেবেই তার পরিচিতি বেশি। আওয়ামীলীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ১৯৮১ যখন এক প্রতিকূল পরিস্থিতিতে দেশে ফেরেন, তখন সুরক্ষার জন্য তার চারপাশে যে বিশ্বস্ত ও আস্থাভাজন কর্মীরা ছিল তাদের অন্যতম আ. ফ. ম. বাহাউদ্দিন নাছিম। আর এই কারণেই তিনি আওয়ামীলীগের কোন নেতা বা কোন পদে আছেন তারচেয়ে শেখ হাসিনার নিজস্ব লোক, নিজস্ব কর্মী হিসেবেই সমধিক পরিচিত। বাহাউদ্দিন নাছিম হলেন শেখ হাসিনার একজন নিকট সহযোদ্ধা।
শেখ হাসিনার এই নিকট সহযোদ্ধা চারপাশে যারা থাকতেন তাদের নানা রকম উত্থান পতন হয়েছে। অনেকেই ছিটকে পড়েছেন, কেউ বেশিদিন থাকতে পারেননি। কিন্তু বাহাউদ্দিন নাছিম চলমান, তিনি আছেন। এখন হয়তো তিনি শেখ হাসিনার পার্সোনাল স্টাফ নন। কিন্তু শেখ হাসিনার সঙ্গে তার সম্পর্ক যেমন অটুট আছে তেমনি আওয়ামীলীগে তিনি বিশ্বাস ও আস্থার প্রতীক হয়ে এসেছেন। বাহাউদ্দিন নাছিম শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেছেন দিনের পর দিন। কেউ জানতে চাননি যে তার কি পদ বা পদবি। এই সময়ে তিনি রাজনীতিটাকেই ঊর্ধ্বে তুলে ধরেছেন। রাজনীতিবিদরাই রাজনীতি করুক এই মতবাদকেই তিনি ধারণ করেছেন। এবং সবসময় এই মতবাদের পক্ষেই দৃঢ় চিত্তে অবস্থান গ্রহণ করেছেন।
১৯৯৬ সালে দীর্ঘ ২১ বছর পর আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসে। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হন। এই সময়ে বাহাউদ্দিন নাছিম শেখ হাসিনার সহকারী একান্ত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এখন পর্যন্ত আওয়ামীলীগ সভাপতি চারবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন, কিন্তু বাহাউদ্দিন নাসিমকে তিনি ভুলতে পারেননি। ওই সময়ে রাজনৈতিক কর্মীরা যেভাবে গণভবনে যেতে পারতেন প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা সাক্ষাৎ করতে পারতেন, বাহাউদ্দিন নাসিমের কাছে তাদের সমস্যার কথা বলতে পারতেন, তা এখনো রাজনৈতিক নেতা কর্মীদের মুখে মুখে। বাহাউদ্দিন নাছিম সবাইকে সময় দিতেন। সবার সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করতেন। সব সমস্যার সমাধান তিনি পেরেছেন কি পারেন নাই সেটা বড় বিষয় না। বড় বিষয় হল রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ কর্মীদের দরজা তারজন্য সবসময় খোলা ছিল।
এরপর ২০০১ সালে বিএনপি জামাত জোট সরকারের তাণ্ডব শুরু হয় সারাদেশে। এই তাণ্ডবে আওয়ামী লীগের যে সমস্ত বিশ্বস্ত এবং আস্থাভাজন নেতারা বিএনপি জামাতের নির্মমতার শিকার হন তাদের মধ্যে বাহাউদ্দিন নাছিম অন্যতম। বাহাউদ্দিন নাছিমকে অমানবিকভাবে নির্যাতন করা হয়। যে পৈচাশিকতা তার সঙ্গে দেখিয়েছিল বিএনপি- জামাত জোট, তা গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ইতিহাসে শুধুমাত্র নিন্দনীয়ই নয়, গর্হিতও বটে।
২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বাহাউদ্দিন নাছিম আওয়ামী লীগের একজন কর্মী এবং শেখ হাসিনার বিশ্বস্ত ব্যক্তি হিসাবেই নিজেকে বিকশিত করেছেন। এর মধ্যে তিনি আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হয়েছেন, এমপি হয়েছেন, এখন তিনি আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক। এসব পরিচয়ের চেয়েও তার সবচেয়ে বড় পরিচয় হলো তিনি বিশ্বস্ত এবং আস্থার প্রতীক। শেখ হাসিনার বিশ্বস্ত কর্মীর তালিকা করলে বাহাউদ্দিন নাছিমের নাম থাকবে উপরের দিকে। শেখ হাসিনার যে কোন সঙ্কট কংবা দু:সময়ে যারা তার পাশে থাকেবে বলে নিশ্চিত আস্থা রাখা যায়, তাদের মধ্যে বাহাউদ্দিন নাছিম অন্যতম। তিনি কি পেলেন না পেলেন সেটা নিয়ে ভাবেন না। বরং শেখ হাসিনার একজন বিশ্বস্ত কর্মীর পরিচয়েই নিজেকে পরিচিত করাতে চান। আর তাই যখন রাজনীতিকে গ্রাস করে ফেলেছে অবিশ্বাস, নানা রকম সিন্ডিকেট, দুর্বৃত্তায়ন, দুর্নীতি তখন বাহাউদ্দিন নাছিমের মতো রাজনৈতিক আদর্শে বিশ্বাসী মানুষের রাজনীতিতে আরো বেশি প্রয়োজন বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
মন্তব্য করুন
ডোনাল্ড লু বিএনপি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ চীন সফর ভারত যুক্তরাষ্ট্র
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছিল বিএনপির আশা ভরসার কেন্দ্রস্থল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করবে; মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নির্দলীয়, নিরপেক্ষ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায়ে সরকারকে বাধ্য করবে; মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কারণ সরকার শেষ পর্যন্ত নির্বাচন করতে পারবে না- এমন বক্তব্যগুলো বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচনের আগে বহুল প্রচারিত ছিল। বিএনপির সব নেতারা প্রকাশ্যেই এ কথা বলত।
বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যখন র্যাবের উপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, বাংলাদেশকে গণতন্ত্র সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানায় না তখন বিএনপি নেতারা উল্লাসে ফেটে পড়েছিলেন। তারা দলীয় কার্যালয়ে মিষ্টিমুখের ব্যবস্থাও করেছিলেন।
আবার ডোনাল্ড লু নির্বাচনের আগে যখন বাংলাদেশ সফর করেছিলেন এবং ভিসা নীতি প্রয়োগ করেছিলেন তখন বিএনপি নেতাদের প্রকাশ্যে মার্কিন বন্দনা করতে দেখা গেছে। ২৮ অক্টোবরের আগ পর্যন্ত প্রায় প্রতিদিনই মার্কিন দূতাবাসে বা মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসের বাসভবনে বিএনপির নেতাদের আনাগোনা ছিল। তারা সেখানে চা চক্রে মিলিত হয়েছেন, নৈশভোজে মিলিত হয়েছেন এবং বিভিন্ন রকমের শলাপরামর্শ করেছেন।
পিটার ডি হাস গত বছরের ১০ অক্টোবর বিএনপি যখন সমাবেশ করতে পারেনি তখনও একতরফা বিবৃতি দিয়েছিলেন। এছাড়াও তিনি বিতর্কিত সংগঠন মায়ের ডাকের এক নেতার বাসায় গিয়েছিলেন এবং সেখানে তিনি বিএনপির প্রতি এক ধরনের সহানুভূতি জানিয়েছিলেন। এভাবেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির উপর এক ধরনের প্রচ্ছন্ন সমর্থন এবং সহানুভূতি দেখিয়েছিল।
অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই সহানুভূতি এবং পরোক্ষ সমর্থনের কারণেই বিএনপির আন্দোলনের পালে হাওয়া লেগেছিল। নেতাকর্মীদের মধ্যে একটি চাঙ্গা ভাব তৈরি হয়েছিল। কিন্তু ২৮ অক্টোবরের পর থেকে পরিস্থিতি পাল্টে যেতে শুরু করে। যদিও ২৮ অক্টোবরের পর এই ডোনাল্ড লু শর্তহীন সংলাপের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন এবং এই আহ্বানের চিঠি নিয়ে পিটার ডি হাস তিনটি দলের নেতাদের কাছে গিয়েছিলেন এবং একটি সংলাপ আয়োজনের শেষ চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সেই সংলাপ আয়োজনে বিএনপি বা আওয়ামী লীগ কেউই সাড়া দেয়নি।
এখন নির্বাচন সমাপ্ত হয়েছে এবং ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর ১১ জানুয়ারি নতুন সরকার গঠিত হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচনকে ত্রুটিপূর্ণ বলার পরও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়া এবং নতুন সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের বার্তা দিয়েছেন। ডোনাল্ড লু’র আগে আফরিন আক্তার নির্বাচনের পরে বাংলাদেশ সফর করেছিলেন এবং সেই সময় তিনি হোটেল ওয়েস্টিনে বিএনপি নেতৃবৃন্দের সাথে সাক্ষাৎ করেছিলেন। তখন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং শামা ওবায়েদ আফরিন আক্তারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। যদিও সেই সাক্ষাতের পর তারা কোনও কিছুই সাংবাদিকদেরকে জানাননি। কিন্তু এবার ডোনাল্ড লু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেননি। আর এটি বিএনপির মধ্যে হতাশা সৃষ্টি করেছে।
বিএনপি মনে করছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন তাদেরকে আর আগের মতো গুরুত্ব দিচ্ছেন না, পাত্তা দিচ্ছে না। বরং সরকারের সঙ্গে সম্পর্কের কারণে বিএনপিকে এড়িয়ে যাচ্ছে। এ নিয়ে বিএনপির মধ্যে হতাশা তৈরি হয়েছে। বিএনপি নেতারা দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ, শামা ওবায়েদ, তাবিথ আউয়ালসহ যারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন এবং মার্কিন দূতাবাসে যাদের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে তাদেরকে দুষছেন। তারা মনে করছেন যে, বিএনপির মধ্যেই সমস্যা রয়েছে। বিএনপির নেতারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে পারেননি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বিএনপির বক্তব্যগুলো তারা সঠিকভাবে ও যথাযথভাবে উপস্থাপন করতে পারেননি। আর একারণেই ডোনাল্ড লু’র সফরের পর বিএনপির মধ্যে চলছে এক ধরনের হতাশা।
ডোনাল্ড লু বাংলাদেশ রাজনীতি বিএনপি
মন্তব্য করুন
আগামী ২৩ জুন আওয়ামী লীগের ৭৫ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পর্যন্ত আওয়ামী লীগ দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গকারী, দলের ভেতর সুবিধাবাদী, লুটেরা এবং দলের নাম ভাঙিয়ে বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করবে না। কিন্তু ২৩ জুনের পর আওয়ামী লীগের ক্র্যাশ প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ক্র্যাকডাউন হবে দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গকারী এবং দলের সুনাম নষ্টকারীদের বিরুদ্ধে। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ব্যাপারে শূন্য সহিষ্ণুতা নীতি অনুসরণ করবে। আওয়ামী লীগের একটি দায়িত্বশীল সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
আওয়ামী লীগ এবং তার আদর্শিক জোট ১৪ দলের নেতাদের চীন সফরে হিড়িক পড়েছে। আওয়ামী লীগ এবং তার সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর এই চীন সফরকে ঘিরে কূটনৈতিক অঙ্গনে চলছে নানামুখী আলাপ আলোচনা। ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উভয় দেশই ১৪ দল এবং আওয়ামী লীগের নেতাদের চীন সফরের ব্যাপারে দৃষ্টি রাখছেন। তবে তারা এই বিষয় নিয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হচ্ছেন না। বিষয়টি তারা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিষয় হিসেবেই মনে করছেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছিল বিএনপির আশা ভরসার কেন্দ্রস্থল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করবে; মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নির্দলীয়, নিরপেক্ষ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায়ে সরকারকে বাধ্য করবে; মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কারণ সরকার শেষ পর্যন্ত নির্বাচন করতে পারবে না- এমন বক্তব্যগুলো বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচনের আগে বহুল প্রচারিত ছিল। বিএনপির সব নেতারা প্রকাশ্যেই এ কথা বলত।